March 2019
আপনি যখন কোনো রক্তদানকারী সংস্থার (রেড ক্রস, রেড ক্রিসেন্ট, সন্ধানী ইত্যাদি) আয়োজিত রক্তদান কর্মসূচিতে যোগ দেন ও রক্ত দান করেন, সেই রক্ত কী হয় বলুন তো? আপনি জানেন যে এই রক্ত কারো জীবন বাঁচাতে কাজে আসবে। কিন্তু আপনার শরীর থেকে রক্ত নিয়ে সঙ্গে সঙ্গেই কিন্তু তা কোনো রোগীর শরীরে দেওয়া হয় না। এর মাঝে আছে আরও কিছু ধাপ। জেনে নিন রক্ত দান করার পর সেই রক্ত কী করা হয়।
১) বরফ
রক্ত দান করার কাজটি শেষ হয়ে যায় ১৫ মিনিটের মাঝেই। এরপর ব্লাড ব্যাগ রাখা হয় একটি কুলারে। এ ছাড়া টেস্ট করার জন্য আলাদা একটি টিউবেও কিছু রক্ত রাখা হতে পারে।
২) সংরক্ষণ
যে প্রতিষ্ঠান থেকে রক্ত সংগ্রহ করা হয়েছে, তাদের সংরক্ষণ কেন্দ্রে পাঠানো হয় এই রক্ত। রেড ক্রসের কেন্দ্রে এই রক্ত কখন নেওয়া হয়েছে, তার ওপর নির্ভর করে সাজিয়ে সংরক্ষণ করা হয়। এ সময় টেস্টের জন্য ল্যাবরেটরিতে পাঠানো হয় টেস্ট টিউবের রক্ত।
৩) রক্ত আলাদা করা হয়
রক্তকে এর তিনটি আলাদা উপাদানে ভাগ করা হয়—লোহিত রক্তকণিকা, প্লাজমা বা রক্তরস এবং প্লাটিলেটে। এতে তিন দিনের মতো সময় লাগতে পারে। তিনটি উপাদান ব্যবহার করে আলাদা তিন জন মানুষের জীবন বাঁচানো যায়।
  • লোহিত রক্তকণিকা ৪২ দিন পর্যন্ত ফ্রিজে রাখা হতে পারে।
  • প্লাজমা হিমায়িত করে এক বছর পর্যন্ত রাখা যেতে পারে।
  • প্লাটিলেট মাত্র পাঁচ দিনের মাঝে ব্যবহার করতে হয়।
৪) পরীক্ষা
রক্তকে এর উপাদানে ভাগ করার সময়ে টেস্ট টিউবগুলোকেও পরীক্ষা করা হয়। এতে হেপাটাইটিস বা এইচআইভির মতো রোগ বা অন্য ইনফেকশন আছে কি না দেখা হয়। ইনফেকশন পাওয়া গেলে রক্ত ফেলে দেওয়া হয়।
৫) হাসপাতাল ও রোগী
আপনার রক্ত নিরাপদ বলে প্রমাণিত হলে তা হাসপাতালে পাঠানো হয়। এরপর যে রোগীর এই রক্ত দরকার, তাকে দেওয়া হয়। রক্তের অভাবে একজন মানুষের মৃত্যু হওয়া অসম্ভব নয়। তাই সমর্থ হলে আপনারও নিয়মিত রক্ত দান করা উচিত।
সূত্র: রিডার্স ডাইজেস্ট
মশা তাড়াতে কামানও যেন কাজ করে না। মশা ‍আকারে ছোট তবে তারা বেশ বিপজ্জনক। মশার কামড়ে অ্যালার্জি, জ্বর, ম্যালেরিয়া ও ডেঙ্গু হতে পারে।
মশার যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেতে বাড়িতে যা করতে পারি: 


কফি
বাড়ির কোথাও পানি জমে থাকলে সেখানে মশার আবাস গড়ে ওঠে। স্থির এই পানিতে কফির গুঁড়া ছিটিয়ে দিন। অক্সিজেন না পেয়ে মশার ডিমগুলো মরে যাবে।  
ল্যাভেন্ডার অয়েল
ল্যাভেন্ডার অয়েলের গন্ধ মশা সহ্য করতে পারে না। ঘরে এই তেল স্প্রে করুন বা শরীরের খোলা অংশে এটি স্প্রে করেও মশার কামড় থেকে রক্ষা পেতে পারেন। 
নিমপাতা
নিমপাতা পানিতে সেদ্ধ করুন। ঠাণ্ডা করে তা সারা বাড়িতে স্প্রে করুন। এভাবে কয়েক দিন করলে মশা উধাও হয়ে যাবে।

কালিজিরা ও নারকেল তেল
কালিজিরা ও নারকেল তেল ১:১ অনুপাতে মিশিয়ে হাত-পা ও শরীরের খোলা অংশে লাগিয়ে রাখুন। এতে মশা কামড়াবে না।

চা গাছের তেল(টি ট্রি অয়েল)
চা গাছের তেলে অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়া উপাদান রয়েছে। পানির সঙ্গে কয়েক ফোঁটা টি ট্রি অয়েল মিশিয়ে শরীরে মেখে নিন। মশা কাছেও আসবে না।  
রসুন
কয়েকটি রসুনের কোয়া থেতলে পানিতে সেদ্ধ করতে হবে। ওই পানি সারা ঘরে স্প্রে করে দিলেই মশার যন্ত্রণা থেকে রেহাই পাওয়া সম্ভব। 


লেবু ও লবঙ্গ
একটি লেবু মাঝ থেকে কেটে নিন। এরপর কাটা লেবুর ভেতরের অংশে অনেকগুলো লবঙ্গ গেঁথে দিন। লেবুর টুকরোগুলো একটি প্লেটে রেখে ঘরের কোণায় রেখে দিন। চাইলে লেবুতে লবঙ্গ গেঁথে জানালার গ্রিলেও রাখতে পারেন। এতে করে মশা ঘরেই ঢুকবে না।

রাতে মশারি দিয়ে ঘুমান, বাড়ির চারদিকে পরিষ্কার রাখুন আর থাকুন মশার যন্ত্রণা থেকে মুক্ত।
প্রায়ই এমন হয়, ছোট একটি হিসাব করতে গিয়েও ভুল হয়ে যায়, আবার হয়ত কোনো কাজে রান্নাঘরে যাওয়ার পর কিছুতেই মনে পড়ছে না, কেন এসেছি।
এধরনের আরও কিছু ঘটনা ঘটে। যেমন কারো সঙ্গে কথা বলার সময় নাম মনে না থাকা, প্রিয়জনের জন্মদিন ভুলে যাওয়া, ঘরের চাবি রেখে আসা। প্রতিদিন ব্যবহার করা হয় সেই মেইলের পাসওয়ার্ড ভুলে যাই।
মস্তিষ্ক অ্যাক্টিভ থাকলে এই সমস্যাগুলো কমে আসে। কারণ আমাদের মস্তিস্ক আসলে পেশির মতোই। যত বেশি ব্যবহার করবেন, তত শক্তিশালী হবে।
মস্তিস্ক অ্যাক্টিভ রাখতে জীবন-যাপনে যে বিষয়গুলো রাখতে হবে: 
•    নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে
•    পর্যাপ্ত ঘুম
•    ধূমপানসহ সব ধরনের মাদক থেকে দূরে থাকতে হবে
•    স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে হবে।
কার্যক্ষমতা বাড়াতে মস্তিষ্কের চমৎকার কিছু ব্যায়াম শিখে নিন: 
•    বাজারের লিস্ট করুন। লিখুন ১০/১২টি আইটেম। লিস্ট না দেখে ১০টি আইটেম মনে করার চেষ্টা করুন
•    গবেষণায় দেখা গেছে, কোনো নতুন ও জটিল কিছু যেমন- গিটার, ভায়োলিন, পিয়ানো ইত্যাদি বাজাতে শিখলে মস্তিষ্কের বয়স বাড়ে না
•    কলম, পেন্সিল ও কাগজ ছাড়া মনে মনে হিসাব কষতে শুরু করুন
•    নতুন ভাষা শেখা, শব্দ শোনার সময় মস্তিষ্ক উদ্দীপ্ত হয়
•    ছবি আঁকা, পাজল মেলানো মনোযোগ বাড়াতে সাহায্য করে।
রায়ই শোনা যায় খেলোয়াড়দের পায়ের পেশিতে টান লেগে ইনজুরি হয়েছে। এমনও হতে পারে এজন্য তাকে পুরো ম্যাচ বা সিরিজই মাঠের বাইরে থাকতে হয়। শুধু প্লেয়ারদের নয়, এসমস্যা হয় সাধারণ মানুষেরও।
ঘুমের মধ্যে পায়ের পেশিতে টান বা মাসলপুল হলে অসহ্য ব্যথা হতে পারে। এ সময় ব্যথা থেকে মুক্তি পেতে নিতে পারেন “RICE থেরাপি”।

এই RICE মানে কিন্তু ভাত বা চাল না। “RICE থেরাপি” মানে হচ্ছে,
R- Rest, পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিন
I- Ice, বরফ দিয়ে সেঁক দিতে হবে
C- Compression, আক্রান্ত পেশিতে সহনীয় চাপ দিন
E- Elevation আক্রান্ত স্থানের নিচে বালিশ দিয়ে শরীরের তুলনায় কিছুটা ওপরে রাখতে হবে।
এভাবে ধাপগুলো মেনে চললে ব্যথায় কিছুটা আরাম পাওয়া যায়। একেই RICE থেরাপি বলে।
এছাড়াও নিয়মিত খাবারে পটাশিয়াম সমৃদ্ধ কলা, মিষ্টি আলু ও প্রোটিনযুক্ত খাবার মাছ-মাংস-রাখুন।
পানির ঘাটতির জন্যই মাসলপুল হয়।  সারাদিনে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করুন।

মাসলপুল হলে আক্রান্ত স্থান একেবারেই নাড়াচাড়া করতে না পারলে, সময় নষ্ট না করে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
গত ২০১৭ সালের আগস্ট মাস থেকে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী এবং সেখানকার বৌদ্ধধর্মানুসারীরা রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর যে ভয়াবহ হত্যা, নির্যাতন, অগ্নিসংযোগ এবং গ্যাংরেপ চালিয়েছে তা ধারণার চেয়েও ভয়াবহ ও লোমহর্ষক। গেরুয়া পরিহিত বৌদ্ধ সন্ন্যাসীরাও রোহিঙ্গা নারী ও শিশুদের দলবেঁধে ধর্ষণ করে হত্যা করেছে। ছেলেমেয়ের সামনে মাকে অথবা বাবা-ভাইকে গাছের সঙ্গে হাতপা বেঁধে তরুণীদের সম্ভ্রম ছিনিয়ে নিয়েছে মিয়ানমার সেনাসদস্য ও বৌদ্ধধর্মাবলম্বী যুবকরা। সেনাসদস্য ও তরুণদের সম্মিলিত যৌননির্যাতনের দাপটে রোহিঙ্গা নারী শিশুদের জীবনবিপন্ন হবার পরও রেহাই দেয়া হয়নি। এরপর তাদের টুকরো টুকরো করে কেটে ফেলা হয়। জীবন থাকতেই অনেককে মাটিতে পুঁতে ফেলা হয়। অনেক রোহিঙ্গা তরুণীকে সম্পূর্ণ বিবস্ত্র করে গাছের সঙ্গে বেঁধে গ্যাংরেপ চালানো হয়। এমন ঘটনার বীভৎস ছবিও ইন্টারনেটে দেখা গেছে।
গত ২০১৭ সালের আগস্ট থেকে প্রায় ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা জান বাঁচাতে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নিয়েছেন। তাঁরা সবকিছু ফেলে এসেছেন। অনেক পরিবারের বহু লোককে সেখানকার সেনাবাহিনী ও বৌদ্ধধর্মাবলম্বীরা হত্যা করেছে। মা ও শিশুদের রেপ করে মেরেছে। বাড়িঘর জ্বালিয়ে দিয়েছে। লুটে নিয়েছে তাঁদের সম্পদ, দোকানপাট ও ব্যবসাবাণিজ্য। যারা চলে এসেছে তাদের প্রাণটা ব্যতীত কিছুই নেই। হাজার হাজার বিধবা ও এতিম শিশু প্রতিবেশীদের সঙ্গে চলে এসেছে। বাংলাদেশ সরকারের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে আসিয়ান পার্লামেন্টারিয়ানস ফর হিউম্যান রাইটস (এপিএইচআর) সেসময় জানায়, নিখোঁজ পিতামাতার সংখ্যা ৪৩ হাজার ৭০০। এসংখ্যা কেবল যাদের মা-বাবা সঙ্গে নেই। এর কারণ হচ্ছে এসব মা-বাবাকে মিয়ানমার সেনাসদস্য ও অস্ত্রধারী বৌদ্ধরা হত্যা করেছে অথবা তাঁরা কোথাও রয়েছেন যাদের খোঁজ জানা নেই। এক হিসেবে জানা যায়, নিধনযজ্ঞ শুরুর প্রথম কয়েকদিনেই ৬,৭০০ রোহিঙ্গা নিহত হন।
ফোর্টিফাই রাইটস এর ম্যাথিও স্মিথ বলেন, চলমান নিষ্ঠুরতার মাত্রার প্রকৃত চেহারা উন্মোচন হতে শুরু করেছে নিখোঁজ পিতামাতার সংখ্যার মাধ্যমে। তিনি বলেন, মিয়ানমার সেনাবাহিনী ও অন্যান্য রাষ্ট্রীয় বাহিনী সেসব অঞ্চলে নিষ্ঠুরতা চালিয়েছ তার প্রত্যক্ষদর্শী এবং যারা পালিয়ে এসেছে তাঁদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য দেয়া হয়েছে। হতে পারে, নিখোঁজ পিতামাতার উল্লেখযোগ্য অংশকেই হত্যা করা হয়েছে। ২০১৬ এবং ২০১৭ সালের আগস্টে যে তিনটি শহরতলী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সেখানে নির্বিচারে গণহত্যা ও গ্যাংরেপ চালানো হয়।
উল্লেখ্য, এসোসিয়েটেড প্রেস গত ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে সহিংসতার কেন্দ্র ও দারপিয়িনের কাছে একই স্থানে কমপক্ষে ৫টি গণকবরের বিস্তারিত সাক্ষ্যপ্রমাণ তুলে ধরেছে। বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গারা বলেছেন, ওই একটি গ্রামেই নিহত রোহিঙ্গার সংখ্যা মিয়ানমার সরকারের দেয়া নিহতের সংখ্যার চেয়ে অনেক বেশি।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের ডেপুটি ডাইরেক্টর (এশিয়া) ফিল রবার্টসন বলেন, সহিংসতায় এ পর্যন্ত ৪০০ নিহত হয়েছে বলে মিয়ানমার সরকারের দেয়া তথ্য একটি ‘বাজে কৌতুক’। প্রকৃত ঘটনা ধামাচাপা দিতে তারা তাদের নিজস্ব অনুসন্ধান চালানো অব্যাহত রেখেছে। আর এটা করা হচ্ছে নিষ্ঠুরতার ঘটনায় স্বাধীন অনুসন্ধানের গুরুত্বকে হালকা করবার জন্য।
গত ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে ৬ লাখ ৭১ হাজার রোহিঙ্গা মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে এসে শিবিরে গাদাগাদি করে ঠাঁই নিয়েছেন। এদের অনেকেই শরীরে বুলেট ও যৌননির্যাতনের ক্ষত সঙ্গে নিয়ে এসেছেন। বাংলাদেশের শিবিরে আশ্রয় নেয়াদের ৬০ শতাংশই শিশু। এদের সিংহভাগেরই মা-বাবা নেই। এরা মিয়ানমার সেনাবাহিনী কর্তৃক তাদের মা-বোনদের যৌননির্যাতনের শিকার হওয়াসহ আত্মীয়-স্বজনদের হত্যা এবং বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেবার ভয়াবহ দৃশ্য প্রত্যক্ষ করেছে।
মালয়েশিয়ান পার্লামেন্ট মেম্বার ও এপিএইচআর এর চেয়ারম্যান চার্লস সান্টিয়াগো বলেন, আমরা অনেক অনেক শিশু প্রত্যক্ষ করেছি, যাদের মা-বাবা উভয়কেই হত্যা করেছে মিয়ানমারের সেনাসদস্য ও তাদের বৌদ্ধ সহযোগিরা। এ হতভাগ্য শিশুদের কক্সবাজার নিয়ে এসেছেন ওদের প্রতিবেশী কিংবা কোনও পথচারী।
জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার মতে, ৫,৬০০ শিশু যাদের বয়স ১৮ বছরের নিচে, তারাই এখন তাদের পরিবারের প্রধান বনে গেছে। তারাই এখন ছোটছোট ভাইবোনদের দেখভাল করছে। এছাড়া তাদের উপায়ও নেই। আগে মনে করা হচ্ছিল, ২,৬৮০ শিশু তাদের মা-বাবার কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন, নিঃসঙ্গ কিংবা এতিম। কিন্তু বাংলাদেশ সরকারের দেয়া নতুন তথ্য বলছে, এসংখ্যা আরও অনেক বেশি।
মানবাধিকার সংস্থাগুলো সতর্ক করে বলছে, শিবিরের পরিস্থিতি ভয়াবহ। পলিথিন ও কাঁচাবেড়ার ঘর অল্প বৃষ্টিবাতাসে উড়ে যায়। অনেকের মাথার ওপর সামান্য ছাউনিও নেই।
চার্লস সান্টিয়াগো আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, শিবিরগুলো থেকে শুরু হবে মানবপাচার। এর কারণ হচ্ছে, রোহিঙ্গারা ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া কিংবা অন্য যেকোনও দেশে চলে যাবার জন্য বদ্ধপরিকর।
যুক্তরাজ্যভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা এমনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলেছে, সেনানির্যাতনের মুখে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের ফেলে আসা গ্রাম ও জমিতে ঘাঁটি স্থাপন করছে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। মানবাধিকার সংস্থাটি জানায়, স্যাটেলাইট থেকে ধারণ করা ছবি ও প্রত্যক্ষদর্শীদের কাছ থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
উল্লেখ্য, গত ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে রোহিঙ্গাদের ফেলে আসা বাড়িঘর বাজারহাট বুলডোজার দিয়ে নিশ্চিহ্ন করে দেবার পর সেখানে এখন সেনাঘাঁটি স্থাপন করা হয়েছে। রোহিঙ্গাদের জায়গাজমি দখল করে নেয়া হয় সেনাঘাঁটি স্থাপনের নামে। অন্তত ৩ টি সেনাঘাঁটি নির্মাণ করা হয়েছে বলে গত ১২ মার্চ এমনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়। -দৈনিক ইত্তেফাক, ১৩ মার্চ, ২০১৮।
বলতে দ্বিধা নেই, মিয়ানমার থেকে এখনও রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে ঢুকছে। সেখানে এখনও জুলুম-নির্যাতন, ধর্ষণ, হত্যা ও অগ্নিসংযোগ অব্যাহত রেখেছে মিয়ানমার সেনাবাহিনী এবং তাদের সহযোগী বৌদ্ধ অস্ত্রধারীরা। অথচ বিশ্ববাসীকে দেখানো হচ্ছে মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের ফেরৎ নিতে প্রস্তুত হচ্ছে।
জাতিসংঘসহ বিশ্ববাসীর চাপের মুখে বসতভিটা ও দেশ থেকে অবর্ণনীয় নির্যাতন চালিয়ে রোহিঙ্গাদের উচ্ছেদ করে বাংলাদেশে ঠেলে দেবার পর আর যাতে ফেরৎ নিতে না হয় বা রোহিঙ্গারা নিজেই না ফেরে সেজন্য সব ফন্দিফিকির করছে মিয়ানমার সরকার এবং সেনাবাহিনী। নোবেল বিজয়ী মিয়ানমার নেত্রী অং সান সুচি মুখে কুলুপ এঁটে আছেন। বিশ্ব তাঁকে ধিক্কার জানালেও তিনি নির্বিকার। বরং মিয়ানমার সেনাবাহিনী ও সেখানকার বৌদ্ধদের নরহত্যা এবং নারীশিশু ধর্ষণের মতো মানবতাবিরোধী কর্মকা- সমর্থন করে যাচ্ছেন। অথচ সেদেশের সেনাশাসিত সরকার যখন তাঁকে বছরের পর বছর কারাগারে বন্দী করে রেখেছিল তখন বিশ্ববাসী সুচির পক্ষে ছিল সোচ্চার। কী অদ্ভুত দ্বৈতনীতির প্রতিভূ হয়ে দাঁড়ালেন এখনকার মিয়ানমার নেত্রী অং সান সুচি! নিজেকে তিনি এতোটা ‘অশুচি’ করে তুলবেন তা কি কারুর জানা ছিল এদ্দিন?
বৌদ্ধরা তাদের ধর্মবিশ্বাসকে অহিংসার ধর্ম বলেন। বুদ্ধদেবকে অহিংসার দেবতা বা ভগবান বলে সম্মান করেন। পূজো করেন তাঁর। কিন্তু একী নারকীয় আচরণ তাঁর অনুসারীদের? সত্যই লজ্জাজনক মনে হয় গেরুয়া ঘাগরার ভেতর ধারাল কৃপাণ লুকিয়ে বৌদ্ধ সন্ন্যাসীরা যখন রোহিঙ্গা নারীশিশু ধর্ষণসহ নরহত্যার হোলিউৎসবে মেতে ওঠেন। বৌদ্ধদের রক্তমাখা হাত দেখে বিবেকবান মানুষের মুখ লুকোবার জায়গা থাকে না।
মিয়ানমার সেনাবাহিনী ও সেখানকার বৌদ্ধসন্ন্যাসীরা ব্রাসফায়ার করে রোহিঙ্গা পুরুষ ও যুবকদের হত্যা করে নদীতে নিক্ষেপ করেছে। কুকুর দিয়ে খাইয়েছে তাদের ক্ষতবিক্ষত লাশ। গণকবর দেয়া হয়েছে হাজার হাজার রোহিঙ্গাকে। গর্ভবতী রোহিঙ্গানারীদের পেটে লাথি অথবা বেয়নেটের খোঁচা মেরে বাচ্চা বের করে দেয়া হয়েছে। রোহিঙ্গা শিশু, তরুণী কিংবা বৃদ্ধাকেও রেহাই দেয়নি বৌদ্ধ পশুরা। ২০/৩০ জন সেনাসদস্য ও বৌদ্ধ অস্ত্রধারী পর্যায়ক্রমে ঝাঁপিয়ে পড়েছে একেক নারীর ওপর। আঘাতে আঘাতে ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছে অনেকেরই মাতৃদ্বার। এমন অমানবিক জুলুম-নিপীড়নের শিকার হয়েই রোহিঙ্গারা পালিয়ে এসে আশ্রয় নিয়েছেন বাংলাদেশে। কবে তারা দেশে ফিরতে পারবেন কে বলবে? ওদেরতো সবই শেষ করে দেয়া হয়েছে সেখানে।
বাংলাদেশ মানবতার খাতিরে সাময়িকভাবে আশ্রয় দিলেও এভাবে আর কদ্দিন সম্ভব হবে রোহিঙ্গাদের ভরণপোষণ করা? এছাড়াও প্রতিদিন হাজার হাজার রোহিঙ্গাশিশু জন্মগ্রহণ করছে শরণার্থীশিবিরগুলোতে। এদের অনেকেই তখন মাতৃগর্ভে আসে মিয়ানমার সেনাসদস্য, বৌদ্ধযুবক ও গেরুয়া ঘাগরা পরিহিত সন্ন্যাসীদের যৌননিপীড়নের ফলে। এখন স্বাভাবিকভাবেই বহু শিশু জন্ম নিচ্ছে প্রতিদিন শিবিরগুলোতে। তার মানে রোহিঙ্গাদের সংখ্যা প্রতিদিন বাড়ছে। পক্ষান্তরে ধীরেধীরে বিদেশি সাহায্য-সহযোগিতা হ্রাস পাচ্ছে। অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে রোহিঙ্গাদের জীবনযাপন। বাড়ছে উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠা! কীভাবে এদের সামলাবে বাংলাদেশ? রোহিঙ্গাদের জন্য জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সংস্থার সাহায্য পাওয়া যায় বটে। কিন্তু তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। তাও যা আসে তা ওদের কাছে যায় না। অভিযোগ উঠেছে, ওরা পায় মাত্র ২৫ শতাংশ। বাকিটা খায় ভুতে এবং এনজিও কর্মকর্তারা। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন যতো বিলম্ব হবে এনজিওগুলো ততো লাভবান হবে। এছাড়া প্রকৃত অর্থে মিয়ানমারও চায় না বিতাড়িত রোহিঙ্গারা আবার নিজবাসভূমে ফিরুক। এই হচ্ছে রোহিঙ্গা ট্র্যাজেডির রহস্য। রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে মূলত বাংলাদেশ এখন একা। চীন ও রাশিয়া নেই। বৃহৎ প্রতিবেশী দেশটি পাশে না পেছনে তাও রহস্যঘেরা। অর্থাৎ রোহিঙ্গাদের এখন অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে চেয়ে থাকতে হচ্ছে।
লেখক :  ইসমাঈল হোসেন দিনাজী 
 সৌজন্যে : দৈনিক সংগ্রাম
গত শুক্রবার ১৫ মার্চ নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চ শহরের আল নূর মসজিদে সন্ত্রাসী হামলায় ঐ মসজিদের ইমামসহ ৫০ জন মুসল্লি প্রাণ হারিয়েছেন বলে পত্র-পত্রিকায় খবর প্রকাশিত হয়েছে (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজেউন)। এই হামলায় আরো ৪৮ জন আহত হন। হামলাকারী একজন অস্ট্রেলিয়ান নাগরিক এবং খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী। ইউরোপের অভিবাসন প্রক্রিয়ায় মুসলমানরা সেখানে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করছে এবং এর ফলে খ্রিস্টানদের আধিপত্য হ্রাস পাচ্ছে এটাই তার মূল আপত্তি। নিহতদের মধ্যে চারজন বাংলাদেশী ছিলেন। এই সন্ত্রাসী হামলায় দুঃখ ও সহানুভূতি প্রকাশ করে নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী এবং পুলিশ প্রধান যে বক্তব্য প্রকাশ করেছেন তা প্রশংসনীয়। এই হামলার ব্যাপারে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় বিভিন্ন রকমের বিশ্লেষণ প্রকাশিত হচ্ছে। আমি আমার আলোচনায় বর্তমান বিশ্বের জনসংখ্যার কাঠামো এবং অভিভাসন নিয়েই নিউজিল্যান্ড ঘটনার সামান্য বিশ্লেষণের চেষ্টা করবো।
জাতিসংঘের ২০১৭ সালের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, গত ১২ বছরে সারা বিশ্বে মানুষ বেড়েছে ১০০ কোটি এবং তাদের প্রক্ষেপণ অনুযায়ী আগামী ১৩ বছরে এর সাথে যোগ হবে আরো ১০০ কোটি। ২০১৭ সালের সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী বিশ্বের জনসংখ্যা হচ্ছে ৭৬০ কোটি। সংস্থাটির প্রক্ষেপণের চিত্রানুযায়ী এই শতাব্দীর শেষেই বিশ্বের বহু জনবহুল অঞ্চল মানুষের অভাবে বিরাণভূমিতে পরিণত হবে। এর কারণ সেসব দেশের দ্রুত জনসংখ্যা হ্রাস। অনেক দেশে প্রতি দুজন মৃতের বদলে জন্ম নিচ্ছে একজন মানুষ। জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী ক্রমাগতভাবে মানুষ কমছে সারা দুনিয়ায় এমন দেশের সংখ্যা বর্তমানে ৫১টি। এর মধ্যে অনেক দেশে গত ৫০ থেকে ৬০ বছরে জনসংখ্যা বাড়েনি বরং কমেছে। জাতিসংঘের এই হিসাবে আরো বলা হয়েছে যে, ২০৫০ সালের মধ্যে অনেক দেশের জনসংখ্যা বর্তমানের তুলনায় এক তৃতীয়াংশে নেমে আসবে। এটা উবসড়মৎধঢ়যরপ ঃরসব নড়সন হিসাবে গণ্য হবে। এসব দেশে যদি অভিবাসী হিসেবে বিদেশীদের গ্রহণ করা না হয় এক সময় মানুষের অভাবে কোন কোন দেশ বিরাণভূমিতে পরিণত হতে পারে। অনেক সভ্যতা বিলুপ্ত হতে পারে। রিপোর্টে বলা হয়েছে যে, গত কয়েক দশক ধরে জন্ম হার না বাড়ার কারণে বুলগেরিয়া, স্পেন, জাপান এবং ইউরোপের প্রায় সব দেশের অনেক গ্রাম ও লোকালয় উজাড় হয়ে গেছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাটবাজার ও যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে গেছে। বুলগেরিয়ার কোন কোন পাড়া ও গ্রামে মাত্র ৩০ জন লোক পাওয়া গেছে, এক সময়ে যেসব স্থান মানুষের কোলাহলে পূর্ণ ছিল। দেশটিতে প্রতি হাজারে মারা যায় ১৬ জন, জন্ম নেয় ৯ জন। পর্তুগালে ২০১৮ সালের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত মারা গেছে ৫২,৩৬৩ জন এবং জন্ম নিয়েছে ৩৪,৪৮৩ জন। ইতালিতে একই সময়ে মারা গেছে ১,৮৫,০০০ মানুষ, জন্ম নিয়েছে ১,০৮,০০০ শিশু। জাতিসংঘের প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে যে, ১৯৭০ সালে বিশ্বে একজন নারীর গড়ে ৪.৫ জন সন্তান ছিল; ২০১৫ সালে এই সংখ্যা ২.৫ জনে হ্রাস পেয়েছে (ঋবৎঃরষরঃু ৎধঃব)। জনসংখ্যা স্থিতিশীল রাখার জন্য জন্মহার প্রয়োজন ২.১ জন। ইউরোপে এই হার হচ্ছে গড়ে ১.৫৫ জন, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া এবং যুক্তরাষ্ট্রেও তাই। জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা দ্রুত জনসংখ্যা কমছে এমন দশটি শীর্ষ দেশের তালিকা তৈরি করেছে। এসব দেশে একজন নারীর সন্তান সংখ্যা ১.৩ জন, স্পেনে ১.২ জন। জার্মানির মতো অনেক দেশে ৫০/৬০ বছর ধরে অব্যাহতভাবে স্থানীয় জনসংখ্যা কমলেও তারা তাদের জনসংখ্যা অভিবাসনের মাধ্যমে স্থিতিশীল রেখেছে। এসব দেশে দীর্ঘকাল জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হয়েছে। মানুষকে ভোগ বিলাসের দিকে ঠেলে দিয়ে সন্তান ধারণ ও পালনের প্রতি বিতৃষ্ণ করে দেয়া হয়েছে। ফলে এখন জনসংখ্যা বৃদ্ধির শত চেষ্টা করেও তারা সফল হতে পারছে না। অর্ধশতাধিক দেশ এই চেষ্টা করছে। মানুষের অভাবে শিল্পের চাকা ঘুরছে না। অর্থনীতিতে ধস নামছে। শিল্প ও সেবা খাত বিদেশীদের হাতে চলে যাচ্ছে। এই প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, ২০১৭ থেকে ২০৫০ পর্যন্ত যেসব দেশের জনসংখ্যা বেশি হ্রাস পাবে সেসব দেশ হচ্ছে বুলগেরিয়া, লাটভিয়া, লিথুনিয়া, পোল্যান্ড, মলডোবা, রুমানিয়া, সার্বিয়া, ইউক্রেন, হাঙ্গেরী এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়া দ্বীপপুঞ্জ। দ্রুত জনসংখ্যা এমন এশীয় দেশগুলোর মধ্যে জাপান প্রধান। এর পরে জর্জিয়া, পর্তুগাল, বসনিয়া, হার্জেগোবিনা এবং বেলারুশ। নি¤œ জন্মহার বিশিষ্ট জনবহুল দেশসমূহ হচ্ছে, চীন, যুক্তরাষ্ট্র, ব্রাজিল, রাশিয়া, জাপান, ভিয়েতনাম, এস্তোনিয়া, লেবানন, গ্রীস, দক্ষিণ কোরিয়া, আলবেনিয়া ও বেলারুশ প্রভৃতি।
নগরায়ন, শিল্পায়ন, শিক্ষা ও কর্মসংস্থানে নারীর অগ্রযাত্রা, ক্যারিয়ার, শিশু লালন পালন ও শিক্ষার ব্যয় বৃদ্ধি, কাজের সন্ধানে দেশ ত্যাগ, ভোগবাদিতা, জীবনযাত্রা কঠিন থেকে কঠিন হওয়া প্রভৃতি কারণে ইউরোপ আমেরিকাসহ উন্নত দেশের বহু নারী সন্তান গ্রহণে অনিচ্ছুক, অনেকে বিয়ে করতে রাজি নয় এসব কারণে জনসংখ্যা কমছে।
তথাকথিত উন্নত দেশগুলোতে এখন ভোগবাদিতা এত চরমে উঠেছে যে, তার বেদিতে পারিবারিক শৃঙ্খলা এমনকি পরিবার ব্যবস্থা ভেঙ্গে খান খান হয়ে যাচ্ছে। ক্যালিফোর্নিয়ার একটি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক সম্পাদিত একটি গবেষণা সমীক্ষা অনুযায়ী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শতকরা ৫৪ ভাগ নারী তাদের স্বামীদের তুলনায় কুকুরকে বেশি ভালোবাসে। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, ফ্রান্স প্রভৃতিসহ উন্নত দেশসমূহে এখন পরিবার নিশ্চিহ্ন হবার পথে। বিয়ের স্থান দখল করছে লিভটুগেদার, জারজ সন্তান এত বেশি হয়ে গেছে যে, কোনটি জারজ নয় অনেক দেশে তা নির্ণয় করা কঠিন হয়ে পড়েছে। উবঢ়ড়ঢ়ঁষধঃরড়হ, জনসংখ্যা হ্রাস অথবা মানুষের অভাবে দেশের পর দেশ বিরাণভূমিতে পরিণত হবার যে আশঙ্কা ও বাস্তবতা জাতিসংঘের রিপোর্টে উঠে আসছে তাকে আল্লাহর একটি গজব বলে সহজেই চিহ্নিত করা যায়। এই গজব শুরু হয়েছে গত শতাব্দীর মাঝামাঝি সময় থেকে। মালথাসের পপুলেশন থিওরি বাস্তবায়নের মাধ্যমে।
৬০ এর দশকের শুরুতে জনসংখ্যাকে দায় এবং উন্নয়নের প্রধান প্রতিবন্ধক হিসেবে গণ্য করার মাত্রা চরমে উঠেছিল। তখন এই ধারণার সমর্থনে ম্যালথাসের জনসংখ্যা তত্ত্বকে প্রধান ভিত্তি হিসেবে উপস্থাপন করা হতো। বলা হতো যে, উন্নয়ন প্রবৃদ্ধি ঘটে গাণিতিক হারে এবং জনসংখ্যা বৃদ্ধি পায় জ্যামিতিক হারে। ফলে দেশে দেশে অর্থনৈতিক উন্নয়ন মানুষের ভোগ-বিলাসের যে সুযোগ-সুবিধা সৃষ্টি করে তা এতই সীমিত হয়ে যায় যে, ক্রমবর্ধিষ্ণু জনসংখ্যার জন্য তা খুব একটা অবশিষ্ট থাকে না। অভাব-অনটন, দারিদ্র্য মানুষের নিত্যসঙ্গী হয়ে দাঁড়ায় এবং রাষ্ট্র তার নাগরিকদের বাঞ্ছিত সুযোগ-সুবিধা ও কল্যাণ নিশ্চিত করতে পারে না। এর একমাত্র সমাধান হচ্ছে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ দুনিয়ার সব ধনী দেশগুলোই জনসংখ্যা বৃদ্ধির বিপক্ষে অবস্থান নেয়। এসব দেশের বড় বড় শিল্পপতি-ব্যবসায়ীরা লক্ষ-কোটি ডলার বিনিয়োগ করে জনসংখ্যা বিধ্বংসী উপকরণ  সামগ্রী ও সাহিত্যভা-ার সৃষ্টি করে তৈরি করে বিনামূল্যে বা নামমাত্র মূল্যে দুনিয়াতে বিতরণ করতে থাকে। জন্ম নিয়ন্ত্রণ সামগ্রি মানুষের লজ্জা-শরম তুলে দেয় এবং ব্যভিচারের প্রসার ঘটায়। বিনোদনের নামে অশ্লীলতা ও বেহায়াপনা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পায়। এর পথ ধরে আসে পর্নোগ্রাফি। এখন সামাজিক এমন কোনো মাধ্যম নেই যেখানে মানুষের চরিত্র ধ্বংসের উপকরণ নেই।
ষাটের দশকের শুরুতে আমাদের দেশে স্বৈরতান্ত্রিক একটি রাষ্ট্রব্যবস্থার সুযোগ নিয়ে মুসলিম বিশ্বসহ আমাদের দেশে জন্মনিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা চালু হয়েছিল। এই দেশের আলেম সমাজ এর বিরুদ্ধে একমাত্র প্রতিবাদী কণ্ঠ ছিল। এশিয়ান দেশগুলোর মধ্যে ফিলিপাইন এই ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেনি। ঐ দেশের ক্যাথলিক পাদ্রীরা সম্মিলিতভাবে এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ সৃষ্টি করেছিলেন।
খ্যাতনামা আলেমে দ্বীন ও ইসলামী আন্দোলনের নেতা পাকিস্তান জামায়াতে ইসলামীর তৎকালীন আমীর মাওলানা সাইয়েদ আবুল আলা মওদুদী তার রচিত ‘ইসলাম আওর জবতে বেলাদত’ ইসলামের দৃষ্টিতে জন্ম নিয়ন্ত্রণ পুস্তকে এর কঠোর সমালোচনা করেছিলেন। তিনি বিশ্বখ্যাত অর্থনীতিবিদ কলিন ক্লার্কসহ পাশ্চাত্যের অসংখ্য বিশেষজ্ঞের উদ্ধৃতি দিয়ে প্রমাণ করেছিলেন যে, জন্মনিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা রাষ্ট্রের জন্য ক্ষতিকর। এর ফলে জনসংকট ও মেধা সংকটের সৃষ্টি হবে এবং রাষ্ট্রব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়বে। ইসলামের দৃষ্টিতে চরম স্বাস্থ্যগত কারণ ছাড়া জন্ম নিয়ন্ত্রণ নিষিদ্ধ। তাকে তখন মোল্লা বলা হয়েছিল এবং তার পুস্তকটি পাকিস্তানে নিষিদ্ধ ঘোষিত হয়েছিল। মজার ব্যাপার হচ্ছে এই যে, তার পুস্তকটি লেখার চার দশক পার না হতেই তার ভবিষ্যদ্বাণীসমূহ ফলতে শুরু হয়েছিল। জনসংখ্যা হ্রাসের ফলে প্রথমত বেশ কিছু দেশ উপলব্ধি করতে শুরু করল যে, তাদের দেশে বয়স্ক মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে করে তাদের বয়স্ক সুবিধা প্রদানের জন্য যে অর্থোপার্জন প্রয়োজন তা করার জন্য যে যুব জনশক্তির দরকার তা নেই। তাদের মধ্যে উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে। এখন দেখা যাচ্ছে লোকের অভাবে দেশই বিরাণ হয়ে যাচ্ছে। অনেক দেশ অভিবাসনের মাধ্যমে ঘাটতি পূরণের চেষ্টা করছে। এর বিরুদ্ধে আবার স্থানীয়রা সন্ত্রাসী হয়ে উঠছে। এই অভিবাসীদের মধ্যে সবাই যে মুসলমান তা নয়। আবার মুসলিম নামধারী অভিবাসীরা সবাই যে ইসলাম প্রচারের জন্য অভিবাসী হয়েছেন তাও নয়, অনেকে গেছেন ভাগ্যের অন্বেষণে। জন্ম নিয়ন্ত্রণের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর সামনে অভিবাসী না নিয়ে সমস্যা সমাধানের বিকল্প কোনো সমাধান নেই। এখন এক্ষেত্রে আন্তর্জাতিকভাবে করণীয় কিছু আছে কিনা সেটাই হচ্ছে প্রশ্ন। আমার মনে হয় অনেক কিছুই করার আছে। সমস্যা চিহ্নিত হয়ে গেছে। সমাধানও আপাতত অভিবাসন। নিউজিল্যান্ডে মসজিদে হামলাকারী হামলাপূর্ব তার বিবৃতিতে নিজেকে মার্কিন প্রেসিডেন্টের অনুসারী বলে দাবি করেছে। মুসলিম বিদ্বেষটি সে জাতিগতভাবেই ইহুদি-খ্রিস্টানদের কাছ থেকেই পেয়েছে। বর্তমানে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ইসলাম ও মুসলিম বিদ্বেষী শুরু থেকেই পরিচিতি লাভ করেছেন এবং সে সূত্রে সম্ভবত হামলাকারী তাকে স্বগোত্রীয় বলে ধারণ াকরে থাকবেন। মুসলমানদের টার্গেট করা তার অন্যতম যুক্তি হচ্ছে অভিবাসন। ইউরোপ অভিবাসনের কারণে তাদের হাত ছাড়া হয়ে যাচ্ছে এবং মুসলিম অভিবাসীরা তা দখল করে নিচ্ছে। এই উৎকণ্ঠা স্বাভাবিক। এর জবাব সন্ত্রাস নয়, ফিতরাতে প্রত্যাবর্তন। ইউরোপকে মুসলমানরা পথ দেখিয়েছে, সভ্যতা শিখিয়েছে। আন্তর্জাতিকভাবে ইসলামকে জানার সুযোগ সৃষ্টি করা দরকার। ইসলামী ব্যবস্থার সৌন্দর্য সম্পর্কে যদি পথভ্রষ্ট নির্বিশেষে সকল মানুষকে অবহিত করা যায় তাহলে অবস্থার পরিবর্তন অবশ্যম্ভাবী। অভিবাসন প্রক্রিয়ায় যদি ইসলামী আন্দোলন ও সংগঠনগুলো অংশ নেয় এবং দাওয়া ও তরবিয়া মিশন হিসেবে গ্রহণ করে তাহলে ইসলাম ও ইসলামপন্থীদের চরিত্রমাধুর্য দেখে মানুষ তাদের প্রতি আকৃষ্ট হবে। অভিবাসন কেন প্রয়োজন হলো? ইসলামী পরিবার ও সমাজ ব্যবস্থায় ফিরে আসলে অনেক সমস্যারই সমাধান হয়ে যাবে।
ইসলাম সন্ত্রাসের ধর্ম নয়। মুসলমানদের উপর সন্ত্রাসী হামলার জবাব সন্ত্রাস নয়, বরং ধৈর্য্য ও সহনশীলতার মাধ্যমেই দিতে হবে। মসজিদে হামলায় নিহত সকল ভাইবোনের আত্মার আমরা মাগফেরাত কামনা করি। শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি আমারা সমবেদনা জানাই।
লেখক ড. মো. নূরুল আমিন 
সৌজন্যে : দৈনিক সংগ্রাম 
ভারতবর্ষে উচ্চশিক্ষার শুরু ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহের পর। ১৮৫৭ সালে ভারতের বড় লাট লর্ড ক্যানিং 'দ্য অ্যাক্ট অফ ইনকরপোরেশন' পাশ করে তিনটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন।
বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হল কোলকাতা, বোম্বে এবং মাদ্রাজ বিশ্ববিদ্যালয়। এর আগে থেকেই ভারতবর্ষে উচ্চশিক্ষার ব্যবস্থা ছিল কিন্তু এই তিনটি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা হয় ইউরোপিয় মডেলে।
অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের মত কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের মান ছিল উঁচু। আর এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ছিলেন মূলত পশ্চিম বঙ্গের উঁচুতলার হিন্দু সন্তানরা।
১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গের আগে অবিভক্ত বাংলায় ১৯টি কলেজ ছিল। তার মধ্যে পূর্ব বাংলায় নয়টি। তবে সেটাই পর্যাপ্ত ছিল বলে মনে করেননি তখনকার পূর্ব বাংলার মানুষ।

কেন পূর্ববঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রয়োজন ছিল:

১৯০৫ সালে বাংলা প্রেসিডেন্সি ভাগ করে পূর্ববঙ্গ ও আসাম নামে নতুন এক প্রদেশ করা হয়। যার প্রচলিত নাম বঙ্গভঙ্গ।
পূর্ববঙ্গে পিছিয়ে পরা জনগোষ্ঠী বিশেষ করে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানদের সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে আসা ছিল এই উদ্যোগের একটি অংশ।
বঙ্গভঙ্গের এই সময়টা ছিল খুব অল্প সময়ের জন্য, মাত্র ছয় বছর। কারণ এর মধ্যেই পশ্চিম বঙ্গের হিন্দু নেতারা প্রবল আন্দোলন করেন এই বঙ্গভঙ্গের।

এদিকে মুসলমান নেতারা নতুন প্রদেশ হওয়াতে শিক্ষাসহ নানা সুবিধা পাবেন এই আশায় উজ্জীবিত হন।
কিন্তু গোটা ভারতবর্ষে হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ এবং তাদের বিরোধিতার মুখে ১৯১১ সালে বঙ্গভঙ্গ রদ করা হয়।
ফলে মুসলমানদের ক্ষোভ আরো পুঞ্জিভূত হতে থাকে। তারা মনে করে অর্থনৈতিক বৈষম্যের সাথে সাথে শিক্ষা ক্ষেত্রেও তারা বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন।
লেখক এবং গবেষক সৈয়দ আবুল মকসুদ তাঁর 'ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষা' বই এ লিখেছেন "কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর বাঙালী মুসলমানদের ক্ষোভ ছিল ১৯০৫- এ পূর্ব বাংলা এবং আসাম প্রদেশ গঠনের অনেক আগে থেকেই। ... ক্ষোভের কারণ শুধু হিন্দু প্রাধান্য নয়, শিক্ষাক্রমে হিন্দুধর্ম প্রাধান্য পাওয়ায় মুসলমানদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দেয়"।
যারা বিরোধিতা করেছিলে:
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সবচেয়ে বিরোধী হিসেবে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায় আর রাজনীতিক সুরেন্দ্রনাথ ব্যানার্জীর নাম সৈয়দ আবুল মকসুদের 'ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষা' বইতে উঠে এসেছে। হিন্দু সম্প্রদায়ের কিছু লোকজনও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা করেন বলে উল্লেখ করা হয়।
ভারতের ভাইসরয় লর্ড হার্ডিঞ্জ ১৯১২ সালে তাঁর ঢাকা সফর শেষে কলকাতা প্রত্যাবর্তন করলে ১৯১২ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি ড. রাসবিহারী ঘোষের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল তার সাথে সাক্ষাৎ এবং ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের বিরোধিতামূলক একটি স্মারকলিপি পেশ করেন।
এসংক্রান্ত বিভিন্ন বইতে উঠে এসেছে, লর্ড হার্ডিঞ্জ স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায়ের কাছে জানতে চেয়েছিলেন, কী মূল্যে অর্থাৎ কিসের বিনিময়ে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের বিরোধিতা থেকে বিরত থাকবেন?
শেষ পর্যন্ত স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায় কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য চারটি নতুন অধ্যাপক পদ সৃষ্টির বিনিময়ে তার বিরোধিতার অবসান করেছিলেন। পরবর্তীতে স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য শিক্ষক নিয়োগে সহযোগিতা করেন।

তার সঙ্গে ছিলেন স্যার নীলরতন সরকার।

কেন এই বিরোধিতা?:

কথা সাহিত্যিক এবং প্রাবন্ধিক কুলদা রায় তাঁর 'ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা ও রবীন্দ্রনাথ' নামক প্রবন্ধে লিখেছেন মূলত-বিরোধিতা করেছিলেন তিন ধরনের লোকজন-
এক. পশ্চিমবঙ্গের কিছু মুসলমান-তারা মনে করেছিলেন, ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হলে পশ্চিমবঙ্গের মুসলমানদের কোনো লাভ নেই। পূর্ববঙ্গের মুসলমানদেরই লাভ হবে। তাদের জন্য ঢাকায় নয় পশ্চিমবঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় হওয়াটাই লাভজনক।
দুই. পূর্ব বাংলার কিছু মুসলমান-তারা মনে করেছিলেন, পূর্ব বঙ্গের মুসলমানদের মধ্যে ১০০০০ জনের মধ্যে ১ জন মাত্র স্কুল পর্যায়ে পাশ করতে পারে। কলেজ পর্যায়ে তাদের ছাত্র সংখ্যা খুবই কম। বিশ্ববিদ্যালয় হলে সেখানে মুসলমান ছাত্রদের সংখ্যা খুবই কম হবে।
পূর্ববঙ্গে প্রাইমারী এবং হাইস্কুল হলে সেখানে পড়াশুনা করে মুসলমানদের মধ্যে শিক্ষার হার বাড়বে। আগে সেটা দরকার। এবং যদি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয় তাহলে মুসলমানদের জন্য যে সরকারী বাজেট বরাদ্দ আছে তা বিশ্ববিদ্যালয়েই ব্যয় হয়ে যাবে। নতুন করে প্রাইমারী বা হাইস্কুল হবে না। যেগুলো আছে সেগুলোও অর্থের অভাবে বন্ধ হয়ে যাবে। সেজন্য তারা বিশ্ববিদ্যালয় চান নি।
তিন. পশ্চিমবঙ্গের কিছু হিন্দু মনে করেছিলেন যে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হলে কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেট বরাদ্দ কমে যাবে। সুতরাং কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় চলবে কীভাবে? এই ভয়েই তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা করেছিলেন।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কি বিরোধিতা করেছিলেন:

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভূমিকা কী ছিল সেটা নিয়ে বিস্তর লেখা-লেখি হয়েছে বছরের পর বছর ধরে।
যারা বলেছেন তিনি এর বিরোধিতা করেছিলেন তারা স্বপক্ষে দালিলিক কোন তথ্য প্রমাণ দেন নি।
সেই সময়কার সামাজিক এবং রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বিবেচনা এবং রবীন্দ্রনাথের সেই সময় যাদের সাথে উঠা-বসা ছিল তাদের কয়েকজন ছিলেন এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিপক্ষে।
তাই অনেকেই সহজ সমীকরণ মিলিয়ে লিখেছেন তিনিও এর বিপক্ষেই ছিলেন।

সৈয়দ আবুল মকসুদ তাঁর 'ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ও বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষা' বই এ লিখেছেন "শ্রেণীস্বার্থে রবীন্দ্রনাথও ছিলেন কার্জনের (লর্ড কার্জন) ওপর অতি ক্ষুব্ধ। কার্জনের উচ্চশিক্ষাসংক্রান্ত মন্তব্যের তীব্র বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেয় কলকাতার হিন্দু সমাজে। তাতে রবীন্দ্রনাথও অংশগ্রহণ করেন। তিনি যে প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করেন,তাতে কিছু ছিল যুক্তি, বেশির ভাগই ছিল আবেগ এবং কিছু ছিল ক্ষোভ"।
আবার যারা রবীন্দ্রনাথ বিরোধিতা করেননি বলেছেন তাঁরা এর স্বপক্ষে বেশ কিছু ঘটনা এবং এবং দিন তারিখের কথা উল্লেখ করেছেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক বিশ্বজিৎ ঘোষ বলেছেন " কেউ কেউ কোনো প্রমাণ উপস্থিত না করেই লিখিতভাবে জানাচ্ছেন যে, ১৯১২ খ্রিষ্টাব্দের ২৮ মার্চ কলকাতায় গড়ের মাঠে রবীন্দ্রনাথের সভাপতিত্বে এক বিরাট জনসভা হয়। ও রকম একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছিল বটে, কিন্তু তাতে রবীন্দ্রনাথের উপস্থিতি ছিল অসম্ভব, কেননা সেদিন তিনি কলকাতাতেই ছিলেন না। ১৯১২ সালের ১৯ মার্চ সিটি অব প্যারিস জাহাজযোগে রবীন্দ্রনাথের বিলাতযাত্রার কথা ছিল। তাঁর সফরসঙ্গী ডাক্তার দ্বিজেন্দ্রনাথ মিত্র জাহাজে উঠে পড়েছিলেন, কবির মালপত্রও তাতে তোলা হয়ে গিয়েছিল; কিন্তু আকস্মিকভাবে ওইদিন সকালে রবীন্দ্রনাথ অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে মাদ্রাজ থেকে তাঁর মালপত্র ফিরিয়ে আনা হয়। কলকাতায় কয়েক দিন বিশ্রাম করে ২৪ মার্চ রবীন্দ্রনাথ শিলাইদহে চলে আসেন এবং ২৮ মার্চ থেকে ১২ এপ্রিলের মধ্যে সেখানে বসে ১৮টি গান ও কবিতা রচনা করেন"।
 আবার সেই সময়কার সামাজিক, রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বিবেচনা করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং গবেষক তৌহিদুল হক বলছিলেন " ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে যে তিন শ্রেণীর মানুষ বিরোধিতা করেছিলেন তাদের মধ্যে আমরা রবীন্দ্রনাথকে তৃতীয় কাতারে রাখতে চাই। কারণ তারা ছিলেন পশ্চিমবঙ্গের উচ্চবর্ণের কিছু হিন্দু সমাজ। তাঁদের সাথে বিশেষ করে কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায় আর রাজনীতিক সুরেন্দ্রনাথ ব্যানার্জীর সাথে রবীন্দ্রনাথের একাধিকবার বৈঠক,আলোচনা হয়েছে শিলাইদহ যাওয়ার আগেও।এ থেকে আমরা অনুধাবন করতে চাই সেখানে পূর্ববঙ্গের সার্বিক উন্নতি নিয়ে তাদের মধ্যে আলোচনা হতে পারে। তবে এরও কোন স্পষ্ট তথ্য প্রমাণ নেই"।

যারা পক্ষে কাজ করেছিলেন:

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় বিরোধিতা যে হয়েছিল নানা পক্ষ থেকে সেটা ইতিহাস ঘাটলে তথ্য পাওয়া যায়।
কিন্তু এই বিশ্ববিদ্যালয়ের যে আবশ্যকতা রয়েছে সেটা বোঝাতে এবং প্রতিষ্ঠার ব্যাপার অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিলেন যাঁরা তাদের কথা না বললেই নয়।
এ ক্ষেত্রে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য ঢাকার নবাব স্যার সলিমুল্লাহ। কিন্তু, হঠাৎ করে ১৯১৫ সালে নবাব সলিমুল্লাহের মৃত্যু ঘটলে নবাব সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরী শক্ত হাতে এই উদ্যোগের হাল ধরেন।
অন্যান্যদের মধ্যে আবুল কাশেম ফজলুল হক উল্লেখযোগ্য।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় পূর্ব বাংলার হিন্দুরাও এগিয়ে এসেছিলেন।
এদের মধ্যে ঢাকার বালিয়াটির জমিদার অন্যতম। জগন্নাথ হলের নামকরণ হয় তাঁর পিতা জগন্নাথ রায় চৌধুরীর নামে।
আমাদের জাতীয় ইতিহাসের এক স্বপ্ন পূরণের দিন ছিল ৮৮ বছর আগের এক পহেলা জুলাই। সেদিন ১৯২১ সালের ১ জুলাই প্রতিষ্ঠিত হয় এদেশের শ্রেষ্ঠতম বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। দেশের এই সর্বপ্রথম বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রতিষ্ঠা নিয়ে আমাদের সেকালের নেতৃবৃন্দের যে কত ধরনের প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হতে হয়েছিল তা আজকের দিনে কল্পনা করাও সম্ভব নয়। প্রশাসনিক প্রয়োজনে বিশাল বেঙ্গল প্রেসিডেন্সীকে বিভক্ত করে ঢাকায় রাজধানীসহ ‘পূর্ববঙ্গ ও আসাম' নামের একটি নতুন প্রদেশ গঠন করা হয়। এই পদক্ষেপ গ্রহণের ফলে দীর্ঘদিন অবহেলিত মুসলিম অধ্যুষিত পূর্ববঙ্গের উন্নতির কিছুটা সুযোগ হয়।
পাঁচ-ছয় বছরের মধ্যে এই অঞ্চলের অবহেলিত জনগোষ্ঠীর মধ্যে শিক্ষা-দীক্ষা ও অন্যান্যক্ষেত্রে বেশ কিছুটা উন্নতির ভাব পরিলক্ষিত হয়। দীর্ঘদিন ধরে কায়েমী স্বার্থভোগী কলিকাতাপ্রবাসী জমিদাররা ১৯০৫ সাল থেকেই এই নতুন প্রদেশ সৃষ্টির বিরুদ্ধে বিরাট আন্দোলন গড়ে তোলে। ফলে মাত্র ছয় বছরের মাথায় ইংরেজ সরকার এ নতুন প্রদেশ বাতিল করে দিতে বাধ্য হয়। সরকারের এ সর্বশেষ সিদ্ধান্ত পূর্ববঙ্গের জনগণ বিশেষ করে, মুসলমানদের মধ্যে বিপুল ক্ষোভ ও হতাশা দানা বেঁধে ওঠে। তাদের ক্ষোভ প্রশমনের লক্ষ্যে পূর্ববঙ্গের অন্যতম দাবি ঢাকায় একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেয় সরকার। এর বিরুদ্ধেও কলিকাতা প্রবাসী কবি-সাহিত্যিক-বুদ্ধিজীবীরা এই উদ্ভট যুক্তিতে প্রতিবাদ জানায় যে, পূর্ববঙ্গের অধিকাংশ মানুষ মুসলমান চাষাভুষা, তাই তাদের উচ্চশিক্ষার জন্য ঢাকায় কোনো বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রয়োজন নেই। তারা ইংরেজ সরকারের কাছে সভা-সমাবেশ, মেমোরেন্ডাম প্রভৃতির মাধ্যমে ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিরুদ্ধে জোর প্রতিবাদ জানাতে থাকে। ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিরুদ্ধে তিনটি যুক্তি তখন বড়ভাবে দেখানো হয়। তিনটি যুক্তিই খুব অদ্ভুত। প্রথমত: ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হলে নাকি শিক্ষার মান ক্ষুণ্ণ হবে। দ্বিতীয়ত: ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয় হলে শিক্ষা-সংস্কৃতি ক্ষেত্রে বিভাজন সৃষ্টি হবে। তৃতীয়ত: ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হবে উলুবনে মুক্তা ছড়ানোর শামিল। কারণ পূর্ববঙ্গের অধিকাংশ মানুষ মুসলমান চাষাভুষা, তাই তাদের উচ্চশিক্ষার জন্য ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার কোনো প্রয়োজন নেই। এই শেষোক্ত যুক্তির মাধ্যমেই বিশ্ববিদ্যালয় বিরোধীদের আসল মনোভাব, আসল মতলব বেরিয়ে এলো। অর্থাৎ মুসলমানরা পিছনে পড়ে আছে, তারা পিছনেই পড়ে থাক। যারা এগিয়ে আছে, তাদেরই আরো এগিয়ে নেয়া হোক। এই যে দেশের একটি জনগোষ্ঠীকে পেছনে ঠেলে দিয়ে আরেকটি জনগোষ্ঠীকে আরো এগিয়ে নেয়ার মনোভাব, এই সংকীর্ণ সাম্প্রদায়িক মনোভাবই কাজ করেছে বৃটিশ শাসনামলে অধিকাংশ হিন্দু কবি, সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবী, রাজনীতিকের মধ্যে। বঙ্গভঙ্গকালে অবিভক্ত বঙ্গদেশে মোট ৪৫টি কলেজ ছিল। তার ৩০টিই ছিল পশ্চিমবঙ্গে। পূর্ববঙ্গ ও আসামে ছিল মাত্র ১৫টি। আসামে ছিল দু'টি, একটি গৌহাটিতে, অপরটি সিলেটে। মুসলিম অধ্যুষিত সমগ্র পূর্ববঙ্গে ছিল মাত্র ১৩টি কলেজ, যদিও পূর্ববঙ্গের জনসংখ্যা ছিল পশ্চিমবঙ্গের চেয়ে অনেক বেশি। শুধু কলিকাতায়ই ছিল একটি বিশ্ববিদ্যালয়, ১৩টি কলেজ এবং মেডিকেল কলেজ, ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজসহ ৭টি পেশাজীবী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
অথচ ঢাকায় একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রস্তাবেই এমন হৈ চৈ শুরু করে দেয়া হয় যেন এর ফলে দেশের মহা সর্বনাশ হয়ে যাচ্ছে। ১৯২২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি কলিকাতায় বিডন স্কোয়ারে সুরেন্দ্রনাথ সমাজপতির সভাপতিত্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিরুদ্ধে যে প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয় তাতে সভাপতির ভাষণে তিনি বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হলে বাংলা সাহিত্য বিভক্ত হয়ে পড়বে, কেননা পূর্ববঙ্গের অর্ধশিক্ষিত ও মুসলিম লেখকরা আরবি, ফার্সি, উর্দু শব্দযোগে যে সাহিত্য রচনা করবেন তা পশ্চিমবঙ্গের ভাষা থেকে স্বতন্ত্র হবে। ফলে বাংলাভাষা ও সাহিত্য দ্বিধাবিভক্ত হবে। সাহিত্য যদি বিভক্ত হয় তাহলে বাঙ্গালী জাতি আবারো বিভক্ত হবে এবং তা ১৯০৫ সালের বঙ্গভঙ্গ থেকে আরো মারাত্মক হয়ে উঠবে। সবচাইতে মজার ব্যাপার হলো, ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা করেন খোদ ঢাকার হিন্দুপ্রধান উকিলসমাজও। ৫ ও ১০ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বার লাইব্রেরি হলে ঢাকা উকিল সমিতি দু'টি প্রতিবাদ সভার অনুষ্ঠান করে ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রশ্নে এই যুক্তিতে বিরোধিতা করে যে, এতে করে শিক্ষার মান অবনত হবে। দু'টি সভায়ই সভাপতিত্ব করেন উকিল ত্রৈলোক্য নাথ বসু। শিক্ষিত হিন্দুদের সৃষ্ট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বিরোধী এই আন্দোলনের ফলে ইংরেজ সরকার খুব বিব্রতকর অবস্থায় পড়ে যায়। বঙ্গভঙ্গ রদ করায় মুসলমানরা এমনিতেই ভয়ংকর ক্ষুব্ধ হয়ে আছে, এখন যদি ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ওয়াদা থেকেও সরকারকে সরে আসতে হয়, তাহলে তা মুসলমানদের আরো বিক্ষুব্ধ করে তুলবে। এ অবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয় বিরোধী হিন্দু নেতারাই সমস্যার সমাধান হিসেবে নতুনভাবে আন্দোলনের দাবি উত্থাপন করেন। তারা বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত না হওয়াই ভালো। অগত্যা যদি ঢাকায় একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়ই তা হলে তা শুধু শিক্ষাদান কার্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে, ঢাকা মিউনিসিপ্যালিটির বাইরে তার কোনো কর্তৃত্ব থাকবে না এবং অন্য কোনো কলেজের এফিলিয়েটিং ক্ষমতাও তার থাকবে না। অর্থাৎ অবিভক্ত বিশাল বেঙ্গল প্রেসিডেন্সীর সীমানার মধ্যে সমস্ত কলেজ ও মাধ্যমিক স্কুলকে পূর্ববৎ কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতাধীনেই রেখে দিয়ে জন্মলগ্ন থেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি পঙ্গু বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য চাপ সৃষ্টি করা হলো। সরকার হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো। সরকার মুসলমানদের ঢাকায় একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ওয়াদা দিয়েছে, সে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষমতা ও এখতিয়ার নিয়ে তো আর কোনো কথা বলেনি। মুসলিম নেতারাও অগত্যা যা পেলেন, তা নিয়েই খুশি থাকতে চেষ্টা করলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার মূল উদ্যোক্তা নবাব সলিমুল্লাহ বঙ্গভঙ্গ রদের আঘাতে সেই যে শোকাহত হন, সেই শোক-দুঃখে তিনি রাজনীতি থেকেই ১৯১২ সালে অবসর নিলেন। এরপর তিনি আরো তিন বছর বেঁচে ছিলেন। তাঁর স্বপ্নের বিশ্ববিদ্যালয় তিনি দেখে যেতে পারেননি, কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে কোনো অসুবিধা যাতে না হয়, সেজন্য তিনি তার জমিদারি থেকে একশ' বিঘারও অধিক জমি দান করে যান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য। এরপর ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে বৃটিশ শাসিত ভারত সরকারের সুপারিশ বৃটিশ সরকারের ভারত-সচিব কর্তৃক অনুমোদিত হয়। ১৯১২ সালেই ব্যরিস্টার রবার্ট নাথনকে সভাপতি এবং ডিএস ফ্রেজারকে সদস্য-সচিব করে ১৩ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিস্তারিত বিষয়াদি নির্ধারণের লক্ষ্যে। এই ১৩ সদস্য বিশিষ্ট নাথন কমিটির অন্যতম সদস্য ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বিরোধ আন্দোলনের অন্যতম হোতা রাসবিহারী ঘোষসহ ৭ জন অমুসলিম সদস্য। এই কমিটিতে নওয়াব আলী চৌধুরী, মোহাম্মদ আলী, নওয়াব সিরাজুল ইসলাম ও আবু নসব ওয়াহিদ প্রমুখ ৪ জন মুসলিম সদস্য থাকলেও তাদের করার কিছুই ছিল না। কারণ বৃটিশশাসিত ভারত সরকারের পরিষ্কার দিকনির্দেশনা ছিল: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হবে একটি শিক্ষাদানমূলক আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় এবং শুধু ঢাকা নগরীর কলেজগুলোর সমন্বয়ে এফিলিয়েটিংয়ের ক্ষমতারহিত একক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানরূপে গড়ে উঠবে এ বিশ্ববিদ্যালয়। ১৯১৩ সালে নাথন কমিটির রিপোর্ট প্রকাশিত হয়। ১৯১৪ সালে প্র্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়ে যাওয়ার অজুহাতে সরকার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাকার্য স্থগিত করার সুযোগ পেয়ে যান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল স্বপ্নদ্রষ্টা নবাব সলিমুল্লাহ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠা দেখে যেতে পারেননি। ১৯১৫ সালে তিনি অল্প বয়সে ভগ্নহৃদয়ে ইন্তিকাল করেন। তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর দুই কৃতী সহযোগী ধানবাড়ির জমিদার সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরী এবং উদীয়মান জননেতা একে ফজলুল হক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে একটানা চেষ্টা চালিয়ে যেতে থাকেন। অতপর প্রধানত সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরী অব্যাহত চেষ্টায় ১৯১৯ সালে ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যবস্থাপক সভায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বিল উত্থাপিত হয় এবং তা ১৯২০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আইন হিসেবে অনুমোদিত হয়। ১৯২০ সালের ১ ডিসেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ভাইস চ্যান্সেলর ফিলিপ জেহার্টস তার দায়িত্ব গ্রহণ করেন। অতপর ১৯২১ সালের ১ জুলাই থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাকালে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে মুসলমানদের সংখ্যার তুলনায় হিন্দুদের সংখ্যা বহুদিন পর্যন্ত বেশি ছিল। শিক্ষকদের অবস্থাও তথৈবচ। প্রথমদিকের বেশ কয়েকজন ভাইস চ্যান্সেলরই ছিলেন ইংরেজ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম এ দেশি ভাইস চ্যান্সেলরও ছিলেন হিন্দু। স্যার এএফ রহমানের আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো মুসলমান ভাইস চ্যান্সেলরপদে নিয়োগ পাননি। প্রতিষ্ঠাকালে যে তিনটি আবাসিক হল নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যাত্রা শুরু করে সেগুলো ছিল সকল সম্প্রদায়ের শিক্ষার্থীদের জন্য উন্মুক্ত ঢাকা হল, হিন্দুদের জন্য জগন্নাথ হল এবং মুসলিম ছাত্রছাত্রীদের জন্য সলিমুল্লাহ মুসলিম হল। এই তিন হলে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ছিল যথাক্রমে ৩৮৬, ৩১৩ ও ১৭৮ জন। মাত্র ৮৭৭ জন ছাত্রছাত্রী নিয়ে যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যাত্রা শুরু করেছিল তা এককালে শিক্ষা-দীক্ষায় এতটাই উন্নত ছিল যে, একে প্রাচ্যের অক্সফোর্ড বলে অভিহত করা হতো।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার যারা বিরোধী ছিল তাদের চক্রান্তেই ১৯২১ সালের ১ জুলাই এফিলিয়েটিংয়ের ক্ষমতাবিহীন একটি ঠুঁটো জগন্নাথ প্রতিষ্ঠান হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। বিশ্ববিদ্যালয় তার এ রুগ্নদশা থেকে মুক্তি পায় সাতচল্লিশের পার্টিশনের পর। তখন তদানীন্তন পূর্ববঙ্গ বা পূর্ব পাকিস্তানের সমস্ত কলেজ কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের আধিপত্য থেকে মুক্ত হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতাধীনে আসে। সাতচল্লিশের আগে এদেশের স্কুল ও কলেজই কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতাভুক্ত ছিল। সাতচল্লিশের পার্টিশনের পর সাবেক পূর্ব পাকিস্তানের সকল কলেজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতাধীন আসে এবং সমস্ত স্কুল ঢাকা বোর্ডের এখতিয়ারভুক্ত হয়। এই হিসাবে বলা যায়, সাতচল্লিশের পার্টিশনের ফলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তার জন্মকালীন পঙ্গুদশা থেকে মুক্তি লাভ করে।
শনি গ্রহকে ঘিরে একটি বলয় আছে, যা তাকে অন্যদের থেকে আলাদা করে দিয়েছে।



আমাদের এই সৌরজগতের গ্রহগুলির মধ্যে পৃথিবীর পর সম্ভবত শনিই সবচেয়ে সুন্দর গ্রহ। অন্তত শনিগ্রহের অপূর্ব সুন্দর বলয়গুলো দেখে সবাই তাই বলে থাকে। যদিও শনি গ্রহে এখনও মানুষের পা রাখার সৌভাগ্য হয়নি। তবে, বিজ্ঞানীরা দীর্ঘদিনের গবেষণার ফলে শনিগ্রহের আবহাওয়া ও ভূপ্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে আমাদের বেশ কিছু ধারণা দিতে পেরেছেন। চল আজ আমরা জেনে নেই শনিগ্রহের সম্পর্কে বিজ্ঞানীদের আবিষ্কৃত সেইসব মজার তথ্য--
১। শনি আমাদের সৌরজগতের দ্বিতীয় বৃহত্তম গ্রহ। আয়তনের দিক থেকে বৃহস্পতির পরেই এর স্থান। তবে শনি গ্রহটি গ্যাসে পরিপূর্ণ।

২। শনিগ্রহের কেন্দ্র পাথুরে বস্তু দ্বারা গঠিত যার আশেপাশের বেশিরভাগ অংশই তরল গ্যাস দ্বারা আবৃত।
৩। সমগ্র শনিগ্রহ বিভিন্ন বলয় দিয়ে ঘেরা, এই বলয়গুলি মহাশুন্যে কয়েক হাজার কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত।
৪। শনির এই বলয়গুলো অসংখ্য কেলাসিত বরফ দ্বারা তৈরি। তাদের আকার আকৃতিও বৈচিত্র্যময়। এগুলোর কোনো কোনোটা একটা বাড়ির সমান বড়, কোনোটা আবার ধূলিকণার মতো ক্ষুদ্র।
৫। শনিগ্রহ খুবই হালকা। হিলিয়ামের চেয়ে এই গ্রহে হাইড্রোজেনের পরিমাণ বেশি থাকার কারণে এর ঘনত্ব কম। সমগ্র শনিগ্রহকে যদি আমরা একটা বাথটাবে রাখতে পারতাম তাহলে সেটা ভাসতে শুরু করত; এতই হালকা এই গ্রহ। অবশ্য সেক্ষেত্রে বাথটাবটার আকারও হতে হত সেই পরিমাণ বিশাল।
৬। সৌরজগতের আরেক গ্রহ জুপিটারের মতো শনিগ্রহের অনেকগুলো চাঁদ আছে যেগুলো তাকে কেন্দ্র করে ঘুরছে।
৭। শনিগ্রহ অবশ্য মোটেও শান্তির কোনো গ্রহ নয়। প্রবল ঝড়-বাতাস এই গ্রহের আবহাওয়ার অন্যতম বৈশিষ্ট্য। ঝড়ের গতিবেগ থাকে সাধারণত ৮০০ কি.মি./ঘণ্টা।
৮। শনিগ্রহে প্রচন্ড শক্তিশালী চৌম্বকক্ষেত্র অবস্থিত যা শক্তিকণাকে আকৃষ্ট করে ও আটকে ফেলে। এর ফলে গ্রহটি উচ্চশক্তির তেজস্ক্রিয়তা উৎপন্ন করতে পারে।




ব্ল্যাকহোল শব্দটি দ্বারা কিন্তু কোন গর্ত বোঝায় না। ব্ল্যাকহোল এমন একটি জায়গা যেখানে খুবই অল্প জায়গায় অনেক অনেক ভর ঘনীভূত হয়ে রয়েছে। এতই বেশী যে, কোন কিছুই এর কাছ থেকে রক্ষা পায় না এমনকি সর্বোচ্চ গতি সম্পন্ন আলোও নয়!

মহাকাশের এক অনন্ত বিস্ময় এই ব্ল্যাকহোল। ব্ল্যাকহোলকে কৃষ্ণবিবর, কৃষ্ণগহ্বর ইত্যাদি বলা হয়। জেনারেল থিওরি অব রিলেটিভিটি অনুসারে, কৃষ্ণগহ্বর মহাকাশের এমন একটি বিশেষ স্থান যেখান থেকে কোন কিছু, এমনকি আলো পর্যন্ত বের হয়ে আসতে পারে না। মহাকাশীয় এই দানবের কাছে পথ হারায় আলোকতরঙ্গ। ব্ল্যাকহোলের ধারণা নিয়ে আমাদের অনেকের মধ্যেই একটা ধোঁয়াশা কাজ করে। হয়তো ভালোভাবে জানার সুযোগ হয় না কিংবা শেষমেষ নিজেদের এই বলে সান্ত্বনা দেই যে, জগতে এমন অনেক কিছুই আছে যা আমাদের জানার দরকার নেই।

কিন্তু না, অজানা সবকিছুই জানার আগ্রহ থাকতে হবে এবং জানতে হবে। আসলেই তো! কী এই ব্ল্যাকহোল? ব্ল্যাকহোলের রহস্যই বা কী? চলো তবে, আজকের লেখাটি পড়ে জেনে নেয়া যাক, মহাবিশ্বের এই ব্ল্যাকহোলের রহস্য!

ব্ল্যাকহোল কী?
মহাবিশ্বের এমন কিছু তারকা বা নক্ষত্র আছে, যারা এমন শক্তিশালী মহাকর্ষ বল তৈরি করে যে এটি তার কাছাকাছি চলে আসা যেকোন বস্তুকে একেবারে টেনে নিয়ে যায়, হোক তা কোন গ্রহ, ধুমকেতু বা স্পেসক্রাফট, তা-ই ব্ল্যাক হোল। পদার্থবিজ্ঞানী জন হুইলার এর নাম দেন ‘ব্ল্যাক হোল’।

এই তারাদের অস্বাভাবিক আকার, ভর ও ঘনত্ব থাকে, আর এর জন্যে এই সব তারকা থেকে নির্গত আলো বাইরে আসতে পারে না। সহজ ভাষায় বলতে গেলে- যখন একটি তারকার জীবনকাল শেষ হয়ে যায়, সেই মুহূর্তে তার অভিকর্ষ শক্তি এতই প্রবল হয় যে আলো ওখান থেকে বের হতে পারে না। আর এই ঘটনা তখনই ঘটে যখন একটি তারার জীবনকাল অর্থাৎ তার নির্দিষ্ট জ্বালানি শেষ হয়ে যায়। তারকাটি পরিণত হয় ব্ল্যাকহোলে। এভাবেই একটি ব্ল্যাকহোলের সৃষ্টি হয়।

ব্ল্যাকহোল বা কৃষ্ণগহ্বর হল মহাকাশের এমন এক জায়গা যেখানে মহাকর্ষ এত শক্তিশালী যেখান থেকে আলোও বিচ্ছুরিত হতে পারে না। ভিতরের জ্বালানি ফুরিয়ে গেলে মৃত্যু হয় তারাদের। সেইসময় মৃত তারার ভর আমাদের সূর্যের ভরের তিনগুণ হলে সেটা ব্ল্যাকহোলে পরিণত হতে পারে। কয়েক লক্ষ সূর্যের ভরের সমান হতে পারে একটি ব্ল্যাকহোল।

১৯১৫ সালে আলবার্ট আইনস্টাইন তার জেনারেল রিলেটিভিটি তত্ত্বের সাহায্যে প্রমাণ করেন যে মহাকর্ষের টানে আলোর গতিপথ প্রভাবিত হয়।

ব্ল্যাকহোল-এর জন্ম কীভাবে?
কৃষ্ণগহ্বরের জন্ম ইতিহাস অনেকটা কবিতার মতো। একটি তারার মৃত্যু থেকে জন্ম নেয় একটি কৃষ্ণগহ্বর। বিজ্ঞানীদের মতে- সব চেয়ে ছোট ব্ল্যাকহোলটির জন্ম ঠিক এই মহাবিশ্বের জন্মের সময়। একটি নক্ষত্রের নির্দিষ্ট জ্বালানি নিঃশেষ হয়ে গেলে এর মৃত্যু ঘটে। যতক্ষণ পর্যন্ত এর অভ্যন্তরীণ হাইড্রোজেন গ্যাস অবশিষ্ট থাকে, ততক্ষণ পর্যন্ত এর ভিতরে নিউক্লিয়ার বিক্রিয়া চলতে থাকে। হাইড্রোজেন শেষ হয়ে গেলে এর কেন্দ্রীয় মূলবস্তু সংকুচিত হতে থাকে। এভাবে একটি তারার মৃত্যু হয়।

ব্ল্যাকহোলে রয়েছে শক্তিশালী মহাকর্ষীয় ক্ষেত্র। প্রত্যেক ব্ল্যাকহোলের চারদিকে একটি সীমা আছে যেখানে একবার ঢুকলে আর বের হওয়া যায় না। এইভাবেই মহাকাশের মহাবিস্ময় হয়ে বেঁচে আছে ব্ল্যাকহোল। একে নিয়েই চলছে বিজ্ঞানের নিরন্তর চর্চা। আলোকে গিলে খাওয়া এই মহাকাশীয় দানবকে নিয়ে তাই আজও কৌতূহলের শেষ নেই।

কৃষ্ণগহ্বর গবেষণার ইতিহাস:
ব্ল্যাকহোল হলো বিপুল পরিমাণ ভর বিশিষ্ট কোন বস্তু, যার মহাকর্ষের প্রভাবে আলোক তরঙ্গ পর্যন্ত পালাতে পারে না- এ ধারণা সর্বপ্রথম প্রদান করেন ভূতত্ত্ববিদ জন মিচেল (John Michell)। ১৭৯৬ সালে গণিতবিদ পিয়েরে সিমন ল্যাপলেস একই মতবাদ প্রদান করেন তাঁর ‘Exposition du systeme du Monde‘ বইয়ের প্রথম ও দ্বিতীয় সংস্করণে।

১৯১৬ সালে আইনস্টাইন তার “জেনারেল রিলেটিভিটি তত্ত্ব ” দিয়ে ধারনা করেন ব্ল্যাকহোল থাকা সম্ভব। আর ১৯৯৪ সালে এসে নভোচারীরা প্রমাণ করেন আসলেই ব্ল্যাকহোল আছে। এটি কোন সায়েন্স ফিকশন নয়। জার্মান বিজ্ঞানী কার্ল শোয়ার্জস্কাইল্ড ১৯১৬ সালেই দেখান, যেকোন তারকা ব্ল্যাকহোলে পরিণত হতে পারে।

কতো বড় এই ব্ল্যাকহোল?
ব্ল্যাকহোল ছোট হতে পারে আবার বড়ও হতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে ক্ষুদ্রতম ব্ল্যাকহোল একটি পরমাণুর সমান হতে পারে। এই জাতীয় ব্ল্যাকহোলগুলো অনেক ক্ষুদ্র কিন্তু তাদের এক একটার ভর হতে পারে বিশাল কোন পর্বতের সমান। অন্য এক ধরনের ব্ল্যাকহোলকে বলা হয় “স্টেলার” বা “নাক্ষত্রিক”। এর ভর আমাদের সূর্যের ভর এর চেয়েও ২০ গুণ বেশি হতে পারে।
খুব সম্ভবত অনেক অনেক বেশি ভরেরও নক্ষত্র রয়েছে পৃথিবীর ছায়াপথে। আর পৃথিবীর এই ছায়াপথকে বলা হয় “মিল্কিওয়ে”। সবচেয়ে বৃহৎ ব্ল্যাকহোলকে বলা হয় “সুপারমেসিভ”। কৃষ্ণবিবরকে ভাগ করা হয় তার মাঝে থাকা ভর, আধান, কৌণিক ভরবেগের উপর ভিত্তি করে। ভরের উপর ভিত্তি করে কৃষ্ণবিবর চার ধরনের। যেমন-
১. Super Massive Blackhole (সুপার মেসিভ ব্ল্যাকহোল)
২. Intermediate Blackhole (ইন্টারমিডিয়েট ব্ল্যাকহোল)
৩. Micro Blackhole (মাইক্রো ব্ল্যাকহোল)
৪. Steller Blackhole (স্টেলার ব্ল্যাকহোল)

ব্ল্যাক হোল যদি ব্ল্যাক অর্থাৎ কালো হয়, তাহলে বিজ্ঞানীরা কিভাবে তা দেখতে পান?
সাধারণভাবে, একটি ব্ল্যাকহোলকে দেখা প্রায় অসম্ভব। কারণ এর অতি শক্তিশালী অভিকর্ষীয় শক্তির সবটুকু আলোর কেন্দ্রের দিকে টানে। কিন্তু এর আশেপাশের তারকা এবং গ্যাস কীভাবে এর দ্বারা প্রভাবিত হয় বা হচ্ছে বিজ্ঞানীরা এটা দেখতে পারেন। যেসব তারকারা ব্ল্যাকহোলকে ঘিরে উড্ডয়মান অথবা ঘূর্ণায়মান, গবেষকরা সেই সব তারকাদের উপর স্টাডি করতে পারেন।
ব্ল্যাকহোলকে মহাকাশের দানব বলে আখ্যায়িত করা হয়
যখন একটি ব্ল্যাকহোল ও তারকারা পরস্পরের খুব কাছাকাছি আসে, তখন অনেক উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন আলো উৎপন্ন হয়। বিজ্ঞানীরা স্যাটেলাইট এবং কিছু বিশেষ ক্ষমতা সম্পন্ন টেলিস্কোপ ব্যবহার করেন এই উচ্চ ক্ষমতার আলোকে পর্যবেক্ষণ করতে।

ব্ল্যাকহোল নিয়ে এত দিন আমরা যা জানতাম সেসব কি ভুল? ব্ল্যাকহোল থেকে কোন কিছু বের হতে পারে না, এমনকি আলোও। এটাই চিরায়ত পদার্থবিদ্যার স্বীকার্য। তবে এই নীতিকে আর মানতে পারছেন না গবেষকরা, যাঁদের কাতারে প্রথমে আছেন ব্রিটিশ পদার্থবিদ প্রফেসর স্টিফেন হকিং । বর্তমানে এই ব্ল্যাকহোল নিয়ে পদার্থবিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং তাঁর “এ ব্রিফ হিস্ট্রি অফ টাইম ” বইয়ে বিভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করেছেন। যা প্রমাণিত হলে যুগান্তকারী সৃষ্টি বলে প্রমাণিত হবে এই পৃথিবীতে।
পৃথিবীর জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা কৃষ্ণগহ্বর সম্পর্কে এ পর্যন্ত যা জানতে পেরেছেন তা সামান্যই। তবে অতি সম্প্রতি যতটা তথ্য উদ্ধারে সক্ষম হয়েছেন- তা যথার্থই অভাবনীয়, সাধারণ চিন্তার বাইরে। অতএব, ব্ল্যাকহোল নিয়ে আমাদের ধারণা ভুল নয়। এর অস্তিত্ব আছে!

ব্ল্যাকহোল কি পৃথিবীতে বিপর্যয় বা ধ্বংস সৃষ্টি করতে পারে?
ব্ল্যাকহোল মোটেও স্পেস বা মহাশুন্যের এতটা কাছে ভ্রমণ করে না যে, তা কোন তারকা, চাঁদ বা গ্রহ কে তার শিকার বানাতে পারে। আর পৃথিবীও কোন দিন ব্ল্যাকহোলে গিয়ে পতিত হবে না। কারণ, কোন ব্ল্যাকহোলই কিন্তু পৃথিবীর সৌরজগতের এতটা কাছাকাছি নয়। যদি একটি সূর্যের সমান ভরের একটি ব্ল্যাকহোল সূর্যের জায়গায় প্রতিস্থাপিত হয়, তবুও নয়।

কোন কোন ব্ল্যাকহোলের ভর সূর্যের সমতুল্য হতে পারে। কিন্তু তখনও পৃথিবী এবং অন্যান্য গ্রহগুলো ঐ ব্ল্যাকহোলকে কেন্দ্র করে ঘূর্ণায়মান থাকবে। যেমনটা আগে ছিল! সুতরাং, দেখা যাচ্ছে যে- ব্ল্যাকহোল আমাদের জন্য এখনো কোনো হুমকির সংবাদ বয়ে আনেনি এবং অদূর ভবিষ্যতেও আনবে না বলে আশা করা হচ্ছে!

বিখ্যাত নারী জ্যোতির্বিদ Hlavacek- Larrondo বলেন, “মনে হয় আমরা যেই ধরনের আশা করেছিলাম তার চেয়ে বড় ও শক্তিশালী ব্ল্যাকহোল পাচ্ছি এবং তা যথেষ্ট কৌতূহলোদ্দীপক।”
ব্ল্যাকহোলকে মহাকাশের দানব বলে আখ্যায়িত করা হয়। ব্ল্যাকহোল এই মহাবিশ্বের অতি রহস্যময় ব্যাপার! আর বিজ্ঞানীরা নিরন্তর লেগেই আছেন এই রহস্যের পেছনে এবং আশা করা যায়, আস্তে আস্তে রহস্যের জাল থেকে একদিন বেড়িয়ে আসবে এই রহস্যময় ব্ল্যাকহোল। তখন অনেক কিছুই হয়তো ব্যাখ্যা করা যাবে যা এখন আমরা খুঁজে বেড়াচ্ছি!
আধুনিকায়নের বিশ্বে এবং তথ্য-প্রযুক্তির যুগে প্রায়ই শোনা যায় ইমেইল অথবা ফেসবুক অ্যাকাউন্ট হ্যাক হওয়ার কথা। বিজ্ঞানমনস্ক এই হ্যাকাররা সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে দেশ-বিদেশের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ও সংস্থার এ জাতীয় অ্যাকাউন্ট কব্জা করার মাধ্যমে তাদের গোপনীয় তথ্য, অর্থ হাতিয়ে নিতে সক্ষম হচ্ছে। পাশাপাশি এসব ব্যক্তি বা সংস্থাকে জালিয়াতির মাধ্যমে রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত— এই তকমা লাগাতেও তৎপর রয়েছে। সম্প্রতি এই জালিয়াত চক্রের কয়েকজনকে র্যাব-২-এর সদস্যরা ধরতে সক্ষম হয়েছেন। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগটি গুরুতর। তারা স্বয়ং আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামে ভুয়া ফেসবুক অ্যাকাউন্ট খোলার মাধ্যমে ‘প্রতারণা ও রাষ্ট্রবিরোধী প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছিল।

একুশ শতকের তথ্যপ্রযুক্তির যুগে ফেসবুক একটি শক্তিশালী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। ফেসবুকের মাধ্যমে মানুষ সংবাদপত্র ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার আগেই জেনে যাচ্ছে অনেক খবরাখবর। বিপন্ন মানবতার পাশে সহায়তার হাত বাড়ানোর ক্ষেত্রেও ফেসবুক প্রশংসনীয় ভূমিকা রেখে চলেছে। তবে স্বীকার করতেই হবে ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপব্যবহার ব্যক্তি, পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনে নানা অকল্যাণও ডেকে আনছে। বিগত বছরে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার দায়ে রংপুরে সনাতন হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের ওপর চলে নারকীয় অত্যাচার। অথচ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যারা এ ধরনের ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত হানছে, তারা যেমন রয়ে যাচ্ছে ধরাছোঁয়ার বাইরে, তেমনি আইন নিজ হাতে তুলে নিচ্ছে যারা তাদেরকেও শাস্তির আওতায় আনা জরুরি।
আজকাল বিজ্ঞানের এসব নতুন নতুন আবিষ্কার ও তথ্যপ্রবাহের অবাধ যুগে নিজস্ব ইমেইল অ্যাকাউন্ট, ফেসবুক ইত্যাদি হ্যাক হওয়ারও সম্ভাবনা থেকে যাচ্ছে। আবার ফেসবুকে প্রকৃত বন্ধু নির্বাচনেও কতখানি সতর্ক থাকা যায়, সেটিও আজ প্রশ্নবিদ্ধ। যে কেউ এখন যে কারো ফেসবুক অথবা ইমেইল অ্যাকাউন্টে ঢুকে পড়তে পারে যদি তার কম্পিউটার বিজ্ঞান সম্পর্কে পর্যাপ্ত ধারণা থাকে। এহেন পরিস্থিতিতে আমাদের যেমন ফেসবুকে বন্ধু নির্বাচনে সতর্ক থাকতে হবে, তেমনি আবার মাঝেমধ্যেই ইমেইল ও ফেসবুকের মতো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর পাসওয়ার্ড পরিবর্তনও আবশ্যক। পাশাপাশি কারো নামে ভুয়া অ্যাকাউন্ট খুলে অপপ্রচারে লিপ্ত রয়েছে কি না, তাও পর্যবেক্ষণ ও খতিয়ে দেখা জরুরি হয়ে উঠেছে। আর এক্ষেত্রে ব্যক্তির পাশাপাশি রাষ্ট্রকেই তৎপর থাকতে হবে সবচেয়ে বেশি।
তবে সবার আগে এ ধরনের অপকর্মের সঙ্গে যে বা যারা জড়িত, তাদের খুঁজে বের করা জরুরি। রাষ্ট্রবিরোধী অপপ্রচার রুখে দিয়ে সমাজে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখা আমাদের নাগরিক দায়িত্ব। তাই এ ধরনের কুচক্রী মহল ও গোষ্ঠীকে চিহ্নিত করে আইনের আওতায় নিয়ে আসা এখন সময়ের দাবি। এগুলো কোনো রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের অংশ কি না, তাও বিবেচনার বিষয়। ফেসবুককে যারা সংঘাতের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে, তাদের বিরুদ্ধে সরকারকে কঠোর হতে হবে নিঃসন্দেহে।
গেম বা গেমের আদলে চ্যালেঞ্জের নামে অনলাইনভিত্তিক বেশ কিছু খেলা খেলছে কিছু কিশোর-তরুণ। এ ব্যাপারে সতর্কতা ও সচেতনতা তৈরি করা এখনই দরকার।
এই খেলাগুলো কতটা ভয়াবহ, তা এর ধরন দেখলেই বোঝা যায়। কোনো সুস্থ মানুষের পক্ষে এ ধরনের খেলা চালিয়ে যাওয়া সম্ভব না। রোমাঞ্চের নেশায় তরুণদের কেউ কেউ ‘দেখি না কী হয়’ কৌতূহল থেকে এ ধরনের খেলা শুরু করে। মূলত এখানে একজনকে দুঃসাহসী কিছু করার চ্যালেঞ্জ দেওয়া হয়, যার অনেকগুলোই সহিংস, আক্রমণাত্মক। মানসিকতার দিক দিয়ে অসুস্থ। তাই সেটি শুধু নেহাত খেলার মধ্যে থাকে না।
এ ধরনের খেলা বা চ্যালেঞ্জের ব্যাপারে আগেই ধারণা পাওয়া গেলেও আরও বেশি ছড়িয়ে পড়তে পারে ভেবে তা নিয়ে সেভাবে লেখা হয়নি। কিন্তু মূলধারার সংবাদমাধ্যমই তো এখন তথ্য পাওয়ার একমাত্র উৎস নয়। ফেসবুকের বিভিন্ন ক্লোজড গ্রুপ থেকে পাওয়া তথ্যে জানা গেছে, সামাজিক মাধ্যম যেহেতু তরুণদের খুব প্রিয়, তারই সূত্র ধরে এরই মধ্যে এ ধরনের কিছু কিছু চ্যালেঞ্জের খেলা শুরু হয়ে গেছে। ভারতে এই খেলাগুলো নিয়ে অভিভাবক মহলে দুশ্চিন্তা বাড়ছে বলে জানা গেছে টাইমস অব ইন্ডিয়ার একটি প্রতিবেদনে। বাংলাদেশে এখনো অনেকটা সীমিত আকারেই আছে এসব ভয়ানক খেলা। কিন্তু এখনই সবার সতর্কতা জরুরি। একটা বারুদের কাঠি থেকেও বিশাল অগ্নিকাণ্ড ঘটতে পারে।
এই চ্যালেঞ্জগুলোর ব্যাপারে বিস্তারিত কিছু লেখা হলো না অনিবার্য কারণেই। শুধু সতর্কতার জন্য গেমগুলো সম্পর্কে কিছুটা ধারণা দিয়ে রাখা হলো। আপনার কাছের কেউ এই চ্যালেঞ্জগুলোয় জড়িয়ে পড়ছে কি না, খোঁজ নিয়ে তাকে বিরত রাখুন।

দ্য চোকিং গেম/চ্যালেঞ্জ

দ্য চোকিং গেম/চ্যালেঞ্জ

বন্ধুর গলা চেপে তাকে বেহুঁশ করতে হবে। এমন বিদঘুটে চ্যালেঞ্জ সামাজিক গণমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে বেশ কিছুদিন ধরে। উদ্দেশ্য জ্ঞান ফেরার পর নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়া। স্পেস মাঙ্কি, ব্ল্যাকআউট, নকআউট ইত্যাদি নামেও এই গেমের চল রয়েছে।

ডাক্ট টেপ চ্যালেঞ্জ
ডাক্ট টেপ চ্যালেঞ্জ

ডাক্ট টেপ পেঁচিয়ে ব্যবহারকারীকে একটি চেয়ারে আটকে রাখা হয়। ১৮০ সেকেন্ডের মধ্যে পালাতে হবে এর থেকে। পালানোর পুরো ঘটনা ভিডিও করে আপলোড করা হয় বিভিন্ন পোর্টালে। বেমক্কা চেয়ার উল্টে অনেকেই গুরুতর আহত হয়েছে।

ঘোস্ট পেপার চ্যালেঞ্জ
ঘোস্ট পেপার চ্যালেঞ্জ

মরিচের সবচেয়ে ঝাল একটি প্রজাতির নাম ‌‘ভূত জোলোকিয়া’, বাংলায় বলতে পারেন ভুতুড়ে মরিচ। এই মরিচ মুখে রেখে নিজেদের প্রতিক্রিয়া রেকর্ড করে কিশোর-কিশোরীরা। এই চ্যালেঞ্জ নিয়ে মুখে জ্বালাপোড়াসহ শ্বাসরুদ্ধ হয়ে অনেকেই হাসপাতালে গিয়েছে।

আইস সল্ট চ্যালেঞ্জ

                                   আইস সল্ট চ্যালেঞ্জ

হাতের মুঠোয় লবণ ও বরফ ধরে রাখতে হয়। অসহ্য যন্ত্রণার এই অনুভূতি কে সবচেয়ে বেশিক্ষণ সহ্য করতে পারে, সেটাই দেখা হয়। হাতে ক্ষত সৃষ্টি হওয়া থেকে শুরু করে ইনফেকশনও হতে পারে।

আইবল চ্যালেঞ্জ

                                        আইবল চ্যালেঞ্জ

চোখ মদের বোতলে রেখে বোতল উপুড় করে ধরে রাখা হয়। আবারও সেই একই ব্যাপার। যন্ত্রণা কতক্ষণ সহ্য করা যায়, তারই পরীক্ষা।

দারুচিনি চ্যালেঞ্জ
দারুচিনি চ্যালেঞ্জ

দারুচিনি গুঁড়ো পানি ছাড়া মুখে পুরে রাখা হয়। মুখের ইনফেকশন ঘটার আশঙ্কা থাকে। এ ধরনের সব চ্যালেঞ্জই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করা হয়। তরুণ প্রজন্মকে রক্ষা করতে হলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এসব কর্মকাণ্ডকে নিরুৎসাহিত করতে হবে। পাশাপাশি অনলাইনে যাতে এসব গেম না পাওয়া যায়, তারও ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।
মার্কিন সমর্থিত সিরিয়ান ডেমোক্রেটিক ফোর্সেস বা এসডিএফ বলছে, বাঘুসে পরাজয়ের মধ্যে দিয়ে ইসলামিক স্টেটের পাঁচ বছরের 'খিলাফতের' অবসান হয়েছে।
কুর্দি-নেতৃত্বাধীন বাহিনী এসডিএফ বলছে, সিরিয়ার ছোট্ট একটি গ্রাম বাঘুসে ছিল আইএসের শেষ ঘাঁটি - এবং সেখানে তারা নিজেদের পতাকা উড়িয়েছে।
বাঘুজের একটি ভবনের ওপর এসডিএফের পতাকা ওড়াচ্ছে তাদের সৈন্যরা
এসডিএফের মিডিয়া অফিসের প্রধান মুস্তাফা বালি এক টুইট বার্তায় 'তথাকথিত খিলাফতের সম্পূর্ণ উচ্ছেদ' এবং 'আইসিসের দখল করা সব এলাকা শত ভাগ মুক্ত করার' খবর জানান।
একসময় আইএস-এর শক্তি যখন তুঙ্গে - তখন তারা সিরিয়া এবং ইরাকের ৮৮ হাজার বর্গ কিলোমিটার ভূখন্ড নিয়ন্ত্রণ করতো। আয়তনের দিক থেকে সেটি ছিল ব্রিটেনের সমান।
সেখানকার বাসিন্দা এক কোটি লোকের ওপর তারা জঙ্গি ধর্মীয় রাষ্ট্রব্যবস্থা কায়েম করেছিল। তেল বিক্রি, চাঁদাবাজি, অপহরণ এবং ডাকাতি করে তারা শত শত কোটি ডলার আয় করেছিল।
সারা বিশ্ব থেকে হাজার হাজার যোদ্ধা আইএস-এর পক্ষে লড়াইয়ে যোগ দিয়েছিল।
বাঘুজে আই এসের ফেলে যাওয়া অস্ত্র

কিন্তু সিরিয়ার সরকারি বাহিনী এবং কুর্দি-প্রধান এসডিএফ বাহিনীর সাথে যুদ্ধে হারতে হারতে তারা শেষ অবস্থান নিয়েছিল পূর্ব সিরিয়ার বাঘুসে। এখন তাদের সেই ঘাঁটিরও পতন ঘটলো।
এসডিএফ আইসএস-এর বিরুদ্ধে চুড়ান্ত লড়াই শুরু করে গত মার্চ মাসে।
কিন্তু সেই অভিযানের তীব্রতা কিছুটা কমে আসে যখন জানা যায় যে আইএস-নিয়ন্ত্রিত এলাকায় বিভিন্ন ভবন, তাঁবু আর সুড়ঙ্গগুলোতে বহু বেসামরিক মানুষ আশ্রয় নিয়ে আছেন।
একসময় ইরাক ও সিরিয়ার বিস্তীর্ণ এলাকা দখল করেছিল আইএস


লড়াই থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য হাজার হাজার নারী ও শিশু সেখান থেকে পালিয়ে যায়।
বিবিসির সংবাদদাতারা জানাচ্ছেন, ভূখন্ডের নিয়ন্ত্রণ চলে গেলেও আইএস-কে এখনও বিশ্ব নিরাপত্তার বিরুদ্ধে একটা প্রধান হুমকি বলে মনে করা হয়।
আইএস-এর প্রভাব ঐ এলাকায় এখনও নি:শেষ হয়ে যায়নি।
ইস্তাম্বুল নগরী। দেড় হাজার বছরেরও বেশি সময় ধরে এই নগরী পরিচিত ছিল কনস্ট্যান্টিনোপল নামে।
কাজাখাস্তানের মানুষ যখন এই সপ্তাহটা শুরু করেন, তখন তাদের একজন প্রেসিডেন্ট ছিলেন, যার নাম ছিল নুরসুলতান। তাদের রাজধানীর নাম ছিল আস্টানা। সেখান থেকে দেশ শাসন করতেন নুর সুলতান।
তবে এই সপ্তাহটা যখন শেষ হচ্ছে তখন নুরসুলতান ক্ষমতা থেকে বিদায় নিয়েছেন। তবে এর মধ্যে কাজাখাস্তানের রাজধানীর নামটা বদলে গেছে। তাদের রাজধানীর নতুন নাম 'নুরসুলতান।'
নুরসুলতান নাজারবায়েভ ছিলেন বিশ্বে সোভিয়েত যুগের সর্বশেষ নেতা। তিনি ক্ষমতায় ছিলেন তিরিশ বছর। মঙ্গলবার তিনি হঠাৎ করে পদত্যাগের ঘোষণা দেন।
আর তার পরদিনই কাজাখাস্তানের পার্লামেন্টে ভোটাভুটিতে রাজধানীর নাম পাল্টে নুরসুলতান রাখার সিদ্ধান্ত হয় বিদায়ী প্রেসিডেন্টকে শ্রদ্ধা জানাতে।
সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙ্গে যাওয়ার পর কাজাখাস্তান যখন স্বাধীন রাষ্ট্র হলো, তখন থেকেই ক্ষমতায় ছিলেন ৭৮ বছর বয়সী নুরসুলতান নাজারবায়েভ।
নুরসুলতান নাজারবায়েভ: কাজাখাস্তানের সাবেক প্রেসিডেন্ট
কাজাখাস্তানের রাজধানীর নাম বদলানোর পর এখন আগের নামের জায়গায় নতুন নাম যোগ করতে গিয়ে বিরাট কর্মযজ্ঞ চালাতে হবে দেশটিকে। কিন্তু এরকম নাম পরিবর্তনের ঘটনা একেবারে নতুন কিছু নয়, আগেও বিশ্বের আরও অনেক রাজধানী শহরের নাম বদলানো হয়েছে।
মানুষের নামে রাজধানী শহরের নাম
বিশ্বের আরও অনেক দেশে জাতীয় নেতাদের নামে রাজধানীর নামকরণ করা হয়েছে। সবচেয়ে বড় উদাহারণ যুক্তরাষ্ট্র। ১৭৯১ সালে দেশটির রাজধানীর নাম রাখা হয় প্রেসিডেন্ট জর্জ ওয়াশিংটনের নামে।
শুধু রাজধানী নয়, যুক্তরাষ্ট্রের একটি পুরো রাজ্যের নামও রাখা হয়েছে তার নামে। আর ছোট বড় আরও কত শহর, দূর্গ আর পর্বতচূড়ার নাম যে ওয়াশিংটনের নামে রাখা হয়েছে, তার তালিকা অনেক দীর্ঘ। আর আমেরিকা নামটাও রাখা হয়েছে অভিযাত্রী আমেরিগো ভেসপুচির নামে।
তবে আফ্রিকার একটি দেশও তাদের রাজধানীর নাম রেখেছে যুক্তরাষ্ট্রের একজন প্রেসিডেন্টের নামে। এটি হচ্ছে লাইবেরিয়ার রাজধানী মনরোভিয়া।
লাইবেরিয়ার রাজধানী মনরোভিয়ার নাম রাখা হয় মার্কিন প্রেসিডেন্ট জেমস মনরোর নামে
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জেমস মনরোর নামে ১৮২৪ সালে এই নামকরণ করা হয়। কারণ প্রেসিডেন্ট মনরো মুক্তি পাওয়া ক্রীতদাসদের আফ্রিকায় ফেরত পাঠানোর পক্ষে বেশ জোরালো অবস্থান নিয়েছিলেন।
আমেরিকা থেকে ফিরে আসা কালো মানুষেরা যে বসতি গড়ে তোলেন সেটাই পরে লাইবেরিয়া নামে পরিচিতি পায়, যা ছিল আফ্রিকার প্রথম প্রজাতন্ত্র।
বিশ্বের একেবারে অন্য প্রান্তে নিউজিল্যান্ডের রাজধানীও কিন্তু একজন রাষ্ট্রনায়কের নামে। দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম নগরী ওয়েলিংটনের নাম রাখা হয় বৃটেনের ডিউক অব ওয়েলিংটনের নামে ১৮৪০ সালে। এই দ্বীপে উপনিবেশ গড়ে তোলার ক্ষেত্রে তার অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে।
ভিয়েতনামের হো চি মিন সিটির নাম আগে ছিল সায়গন। ১৯৭৫ সালে যখন ভিয়েতনাম যুদ্ধ শেষ হয়, তখন উত্তর ভিয়েতনামের কমিউনিষ্ট গেরিলাদের হাতে পতন ঘটে সায়গনের। এর এক বছর পর বিপ্লবী নেতা হো চি মিনকে সন্মান জানাতে সায়গনের নতুন নাম রাখা হয় হো চি মিন সিটি। তবে এখনো অনেকে ভিয়েতনামের এই নগরীকে পুরোনো নামেই ডেকে থাকে।
ব্যয়বহুল কাজ
জর্জ ওয়াশিংটনের নামেই যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী শহরের নাম।
কোন নগরীর নাম বদলানো বেশ ব্যয়বহুল কাজ। যারা ম্যাপ তৈরি করেন, তাদের পরবর্তী প্রকাশনাতেই নতুন নাম অন্তর্ভুক্ত করতে হয়। আর যে শহরের নাম বদলানো হলো, সেই শহরের সব সাইনবোর্ড, পথনির্দেশিকা থেকে শুরু করে সরকারি-বেসরকারি নথিতেও নাম বদল করতে হয়।
আন্তর্জাতিকভাবে নতুন নামকে পরিচিত করে তুলতে হয়। এটার খরচ কম নয়।
সোয়াজিল্যান্ড হচ্ছে আফ্রিকার ছোট্ট একটি দেশ। ২০১৮ সালের এপ্রিলে সোয়াজিল্যান্ডের রাজা তৃতীয় এমসোয়াটি তার দেশের নাম বদলে রাখলেন ইসোয়াটিনি।
তিনি এই কাজ করেছিলেন তার দেশের ঔপনিবেশিক আমলের নামটি বাদ দেয়ার জন্য। অনুমান করা হয় এই নাম বদলের পেছনে তাদের খরচ হয়েছে প্রায় ষাট লাখ ডলার।
রাজা তৃতীয় এমসোয়াটি তার দেশের নাম বদলানোর পর এর মিশ্র প্রতিক্রিয়া হয়।
পুরোনো নামে ফেরত যাওয়া
১৯২৪ সালে রুশ বিপ্লবের নেতা ভ্লাদিমির লেনিনের মৃত্যুর ৫ দিন পর পেট্রোগ্রাড শহরের নাম বদলে রাখা হয় লেনিনগ্রাড। কিন্তু ১৯৯১ সালে যখন সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙ্গে গেল, এই নগরীর নাম বদলে গেল আবার। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের আগে এটি পরিচিত ছিল সেন্ট পিটার্সবার্গ নামে। সেই নাম ফিরে এলো।
ভলগোগ্রাডের ক্ষেত্রে নাম অদলবদল হয়েছে বেশ কয়েকবার। সোভিয়েত আমলে ১৯২৫ সালে এটির নাম রাখা হয় স্ট্যালিনগ্রাড, জোসেফ স্ট্যালিনের নামে। কিন্তু স্ট্যালিনের মৃত্যুর পর সোভিয়েত নেতা ক্রুশ্চেভ ক্ষমতায় এসেই এটির নাম বদল করে আবার ভলগোগ্রাড রাখলেন।
সোভিয়েত আমলের নেতাদের নাম বিশ্বমানচিত্রে ছিল ৭০ বছরেরও কম সময়। সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙ্গে যাওয়ার পর তাদের নামে নামকরণ করা শহরগুলোর নাম বদলে যেতে শুরু করে। তবে কোন কোন ক্ষেত্রে একটি জায়গার নাম নিয়ে এই টানাহেঁচড়া চলে শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে। যেমন ধরা যাক তুরস্কের ইস্তাম্বুলের কথা।
কিংবদন্তী আছে, খ্রীষ্টপূর্ব সপ্তম শতকে বোসফরাস প্রণালীর তীরে গ্রীক নগরী বাইজান্টিয়াম গড়ে উঠেছিল।
বাইজাস নামে এক রাজার নামে নাকি ঐ নগরীর নামকরণ করা হয়েছিল। কিন্তু এরপর চতুর্থ শতকে রাজা কনস্ট্যান্টিনের আমলে এটি কনস্ট্যান্টিনোপল নামে পরিচিতি পায়। এটি যখন অটোমান সাম্রাজ্যের অধীনে আসে, তখন তুর্কিরা এর নামকরণ করে ইস্তাম্বুল। তবে আন্তর্জাতিকভাবে বিশ শতকের একেবারে গোড়া পর্যন্ত এটিকে কনস্ট্যান্টিনোপল বলেই ডাকা হতো।
কিন্তু এরপর তুর্কি ডাক বিভাগ সিদ্ধান্ত নেয়, কোন চিঠির খামে ঠিকানার জায়গায় যদি কনস্ট্যান্টিনোপল লেখা হয়, সেই চিঠি তারা বিলি করবে না। তারপরই আসলে এই নামটি ধীরে ধীরে বিলুপ্ত হয়ে যায়।
বিশ্বের রাজনৈতিক নেতাদের জন্য হয়তো এটি একটি শিক্ষা। তারা যত ক্ষমতাশালী বা প্রভাবশালীই হোন না কেন, এমন নিশ্চয়তা নেই যে তাদের নামে নগরীর নাম রাখা হলে তা টিকে থাকবে। এমনটি ১৬০০ বছর পরও এই নাম মুছে যেতে পারে।-বিবিসি বাংলা
ওয়াশিংটন মিউজিয়ামের বিরল ও বিখ্যাত দ্যা হোপ ডায়মন্ডের একটা ইতিহাস আছে। ওয়াশিংটন মিউজিয়ামে এসে পৌঁছনোর আগে তা বহুবার হাতবদল হয়েছে।
তবে ওই নীল হীরার জিয়োলজিকাল ইতিহাস আরও জটিল। বুধবার প্রকাশিত একটা গবেষণা পত্রের এই বহুমূল্য তথ্য জানলে আপনার গায়ে কাঁটা দেবে।
বিজ্ঞানীরা তাদের সমীক্ষায় ৪৬টি নীল হীরা পরীক্ষা করে জানিয়েছেন যে ভূগর্ভের ৪১০ মাইল (৬৬০ কিলো মিটার) অভ্যন্তরে লোয়ার ম্যান্টলে এই হীরা উৎপত্তি হয়।
নীল হীরাতে মাত্র ০.০২ ভাগ খনিজ হীরা থাকে। কিন্তু এটাই বিশ্বের সবচেয়ে বিখ্যাত হীরা। এই হীরা অলঙ্কার হিসাবে ব্যবহৃত হয়। কার্বনের ক্রিস্টালিন হলো হীরা। তবে হীরা অত্যন্ত চাপে ও তাপে ভূগর্ভে উৎপন্ন হয়। বিজ্ঞানীরা আগেই জানিয়েছেন, এই হীরার নীল রঙ হওয়ার কারণ এতে বোরনের উপস্থিতি।
বেশিরভাগ হীরাতেই হালকা হলুদ আভা থাকে। বেশ কিছু বিরল প্রজাতির হীরেতে হালকা হলুদ, বাদামী, পিঙ্ক বা সবুজ রঙ থাকে। প্রায় 99% হীরেই ভূগর্ভের প্রায় ৯-১২০ মাইল (১৫০-২০০ কিমি.) অভ্যন্তরে উৎপন্ন হয়।
হোপ ডায়মন্ড ছাড়াও স্মিথসোনিয়ান ন্যাশনাল মিউজিয়াম অফ ন্যাচারাল হিস্ট্রির অপর নীল হীরে ওপেনহেইমার ব্লু ২০১৬ সালে ৫৭.৫ মিলিয়ন ডলারে বিক্রয় হয়ে যায়, যা ওই সময় কোনো হীরের সর্বোচ্চ নিলামের দাম ছিল।
কারনিগি ইনস্টিটিউশন ফর সাইন্সের জিয়োকেমিস্ট স্টিভেন শিরে জানান, “এই হীরাগুলো এখন পর্যন্ত সবচেয়ে গভীরে আবিষ্কৃত হীরা।“

পার্কে গেলেই মিলবে হীরা!

ভিক্টোরিয়া ব্রডস্কি নামে এক তরুণী পার্কে কুড়িয়ে পেয়েছেন ২ দশমিক ৬৫ ক্যারেটের দামি হীরা। বিশ্ববাজারে ওই হীরকখণ্ডের দাম প্রায় ৪৩ হাজার ৫০০ ডলার যা বাংলাদেশী টাকায় ৩৫ লাখ টাকা। ছুটিতে ওই তরুণী সপরিবারে ঘুরতে যান ক্রাটার অব ডায়মন্ড স্টেট পার্কে। ঘুরতে ঘুরতে পার্কের মধ্যে হঠাৎ তার নজরে পড়ে একটি চকচকে জিনিস।
কৌতূহলী হয়ে তা হাতে তুলে নেন ওই তরুণী। দেখেন উজ্জ্বল বাদামি রঙের একটা পুঁতিগোছের কিছু। প্রথমে ভেবেছিলেন, এটা হয়তো একটা কাচের টুকরা। তবু তা জামার পকেটে ভরে নেন তিনি।
পার্কে পরিবারের সাথে ঘণ্টাখানেক সময় কাটিয়ে সেখান থেকে বেরিয়ে আসেন তিনি। এরপর কী মনে করে কুড়িয়ে পাওয়া বস্তুটি নিয়ে কাছের একটি ডায়মন্ড ডিসকভারি সেন্টারে যান ওই তরুণী।
পরীার পর জানা যায়, তরুণীর পাওয়া ওই উজ্জ্বল বাদামি রঙের জিনিসটা কোনো পুঁতি বা কাচের টুকরা নয়, দু®প্রাপ্য বাদামি হীরা। ‘ক্রাটার অব ডায়মন্ড স্টেট পার্ক’ পৃথিবীর একমাত্র পার্ক যেখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে এমনই অনেক হীরা। এই পার্কের আয়তন ৯০০ একর। ওই পার্ক থেকে হীরা কুড়িয়ে পাওয়ার ঘটনা এই প্রথম নয়। এ বছরের মার্চেই এখান থেকেই প্রায় সাড়ে সাত ক্যারেটের হীরা খুঁজে পায় এক কিশোরী।
ইন্টারনেট।
আজকাল অনেকেই বাড়িতে গ্রিল চিকেন তৈরি করে থাকেন। কিন্তু তাতে শতভাগ রেস্তোরাঁর স্বাদ আসে কি? আসে না। কারণ গ্রিল চিকেন তৈরি করতে চাই বিশেষ ধরনের গ্রিল মেশিন, যাতে আস্তে আস্তে রান্না হয়ে মুরগির মাংস হয়ে যায় নরম ও তুলতুলে। মেশিনের স্বাদে গ্যাসের তুলাতেই আস্ত মুরগি গ্রিল করতে কী করবেন?
যা লাগবে
  • মুরগি বড় সাইজের ১টি
  • আদা বাটা দেড় চা-চামচ
  • রসুন বাটা দেড় চা-চামচ
  • লাল মরিচের গুঁড়ো ১ চা-চামচ অথবা স্বাদ অনুযায়ী
  • পাপরিকা ১ চা-চামচ
  • জিরা গুঁড়ো ১ চা-চামচ
  • ধনিয়া গুঁড়ো ১ চা-চামচ
  • গরম মসলা গুঁড়ো ১ চা-চামচ
  • লবণ ২ চা-চামচ অথবা পরিমাণমতো
  • টমেটো সস ৩ টেবিল চামচ
  • সয়াসস ২ টেবিল চামচ
  • যে কোনো আচারের মসলা ১ চা-চামচ
  • টক দই ২ চা-চামচ
  • পেঁয়াজ বাটা বড় সাইজের ২টি
  • চিনি ১ চা-চামচ
  • সয়াবিন তেল ২ টে চামচ
  • সরিষার তেল ১/৪ কাপ
  • এক টুকরো কয়লা
প্রস্তুত প্রণালি
  • প্রথমে আস্ত চিকেন ভালোভাবে ধুয়ে পরিষ্কার করে একটা কিচেন টাওয়েল দিয়ে পানি মুছে নিন। এবার সবগুলো মসলা দিয়ে ৬ ঘণ্টা মেরিনেট করে রাখুন।
  • একটি পাত্রে সয়াবিন তেল ও সরিষার তেল দিন। তেলটা যখন গরম হবে তাতে আস্ত মুরগি দিয়ে ঢাকনা দিয়ে ডেকে দিন।
  • এবার কম জ্বালে মুরগিটা ১৫ মিনিট করে মোট ৩০ মিনিট এপিঠ-ওপিঠ করে ভাজুন। ঢাকনা সরিয়ে এবার চিকেনের অবশিষ্ট মসলাগুলো তেলে দিন।
  • এবার চুলার জ্বাল বাড়িয়ে কয়লাটা একটা ছোট ফয়েল পেপারে নিয়ে পাত্রের একসাইডে দিন। তার উপর সামান্য তেল দিয়ে ঢাকনা দিয়ে ডেকে আরও ৫ মিনিটের মতো রান্না করুন।
  • মশলা তেলের উপরে উঠে এলে ও চিকেনের গায়ে মাখো মাখো হলে নামিয়ে নিন। পরিবেশন করুন গরম গরম।
শুধু রান্না নয়, পরিবেশন নিয়েও কাজ করেন রেসিপি-ভাবুকরা। পরিবেশনের কারণে খুব সাধারণ পদও অসাধারণ হয়ে উঠে। নিরামিষ থালি তার উত্তম এক উদহারণ।
উপকরণ
  • চিনিগুঁড়া চালের ভাত ১ কাপ
  • আলু ভাজা ৪ টুকরা
  • বেগুন ভাজা ৪ টুকরা
  • পটল ভাজা ৪ টুকরা
  • মিষ্টি কুমড়ো ভাজা ৪ টুকরা
  • করলা ভাজা ৪ টুকরা
পরিবেশন প্রণালিকাঁসার থালার মাঝখানে ভাত রেখে চারদিকে এক এক করে ভাজাগুলো সাজিয়ে পরিবেশন করুন।
ভেবে দেখুন তো, গত এক সপ্তাহে আপনি খাবারের পেছনে কত খরচ করেছেন? বাইরে খাওয়া, বাসায় ডেলিভারি নিয়ে খাওয়া, প্রতিদিন ভারী খাবার খাওয়া—এসব ক্ষেত্রে প্রচুর খরচ হয়ে গেছে, তাই না? এমনকি বাসা ভাড়া বাদ দিলে সবচেয়ে বেশি খরচ হচ্ছে খাবারের পেছনে। কোনো কারণে যদি আপনার আয় কমে যায় (চাকরি চলে যাওয়া বা ব্যবসায় ক্ষতি), তাহলে এমন বিলাসী খাদ্যভ্যাসের কারণে আপনার ঝামেলায় পড়তে হতে পারে। এখন থেকেই খাদ্যাভ্যাসে এমন অপ্রয়োজনীয় বিলাসিতা দূর করুন, হয়ে উঠুন মিতব্যয়ী। দেখে নিন খাবারের খরচ কমানোর ৫টি উপায়—
১) বাসায় খাওয়া
এই কাজটিতে সবচেয়ে বেশি খরচ বাঁচবে। রেস্টুরেন্টে খেতে হলে ইদানীং ওয়েটারকে টিপস দেওয়ার পাশাপাশি বড় অঙ্কের ভ্যাট গুনতে হয়। এরচেয়ে বাসায় রান্না করে খাওয়াটা অনেকগুণে বেশি সাশ্রয়ী। মাঝে মাঝে বাইরে খাওয়া যেতে পারে, কিন্তু ঘন ঘন নয়।
২) পুরো রান্না নিজে করা
রান্নার পেছনে সময় দিতে হয় বলে অনেকে বাইরে খান। কিন্তু তাতে খরচ অনেক বেড়ে যায়। একদম কাঁচামাল থেকে শুরু করে পুরো রান্না নিজে করুন। পাউরুটি না কিনে বাসায় রুটি তৈরি করে খান। ফ্রোজেন খাবার তো একেবারেই খাওয়া যাবে না, তাতে অযথা খরচ হবে। এরচেয়ে সপ্তাহে একদিন কাঁচাবাজারে ঢুঁ মারুন আর তাজা মালমশলা কিনে আনুন।
৩) কোনো কিছুই ফেলনা নয়
খাবারের যেসব অংশ সাধারণত ফেলে দেন, যেমন বিভিন্ন সবজির খোসা, মুরগির হাড় ও গিলা-কলিজা এসব বাদ দেবেন না। অনেক সবজির খোসা দিয়ে ভর্তা ও ভাজি করা যায়, মুরগির গিলা-কলিজা দিয়ে দিব্যি সকালের নাশতা হয়ে যায়, হাড়গোড় দিয়ে স্বাস্থ্যকর স্যুপ রান্না করা যায়।  একটু মাথা খাটালেই কাজটি করতে পারেন। এমনকি বাসায় মরিচ, লেবু বা ধনেপাতার গাছ রাখলে সেদিক থেকেও খরচ কমে আসবে।
৪) মাংস ও দুগ্ধজাত পণ্য কম খান
গরু বা খাসির মাংস, মাখন, পনির, দই, মিষ্টি, আইসক্রিম—এসব খাবার নিয়মিত খাওয়া বন্ধ করে দিন। সপ্তাহে একদিন গরু বা খাসির মাংস খেতে পারেন। প্রোটিনের জন্য মুরগির মাংস, ডিম, ডাল—এগুলো খেতে পারেন।
৫) নতুন নতুন রেসিপি তৈরি করুন
প্রথম প্রথম এমন আঁটসাঁট বাজেটে খাওয়া-দাওয়া করতে বেশ বিরক্তি লাগতে পারে। এ কাজটিকে মজাদার করতে নতুন নতুন রেসিপিতে খাবার তৈরি করতে পারেন। ইন্টারনেটে অনেক রেসিপি পাবেন, যাতে অল্প কিছু উপাদানেই মজার খাবার রান্না করা যায়। এমনকি সবজি রান্নার জন্য কিছু বইও পাওয়া যায়, যা কিনে নিতে পারেন। কত কম খরচে রান্না করা যায়, একে একটা অ্যাডভেঞ্চার মনে করতে পারেন।
সূত্র: অ্যাপার্টমেন্ট থেরাপি