আধুনিকায়নের বিশ্বে এবং তথ্য-প্রযুক্তির যুগে প্রায়ই শোনা যায় ইমেইল অথবা ফেসবুক অ্যাকাউন্ট হ্যাক হওয়ার কথা। বিজ্ঞানমনস্ক এই হ্যাকাররা সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে দেশ-বিদেশের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ও সংস্থার এ জাতীয় অ্যাকাউন্ট কব্জা করার মাধ্যমে তাদের গোপনীয় তথ্য, অর্থ হাতিয়ে নিতে সক্ষম হচ্ছে। পাশাপাশি এসব ব্যক্তি বা সংস্থাকে জালিয়াতির মাধ্যমে রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত— এই তকমা লাগাতেও তৎপর রয়েছে। সম্প্রতি এই জালিয়াত চক্রের কয়েকজনকে র্যাব-২-এর সদস্যরা ধরতে সক্ষম হয়েছেন। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগটি গুরুতর। তারা স্বয়ং আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামে ভুয়া ফেসবুক অ্যাকাউন্ট খোলার মাধ্যমে ‘প্রতারণা ও রাষ্ট্রবিরোধী প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছিল।

একুশ শতকের তথ্যপ্রযুক্তির যুগে ফেসবুক একটি শক্তিশালী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। ফেসবুকের মাধ্যমে মানুষ সংবাদপত্র ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার আগেই জেনে যাচ্ছে অনেক খবরাখবর। বিপন্ন মানবতার পাশে সহায়তার হাত বাড়ানোর ক্ষেত্রেও ফেসবুক প্রশংসনীয় ভূমিকা রেখে চলেছে। তবে স্বীকার করতেই হবে ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপব্যবহার ব্যক্তি, পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনে নানা অকল্যাণও ডেকে আনছে। বিগত বছরে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার দায়ে রংপুরে সনাতন হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের ওপর চলে নারকীয় অত্যাচার। অথচ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যারা এ ধরনের ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত হানছে, তারা যেমন রয়ে যাচ্ছে ধরাছোঁয়ার বাইরে, তেমনি আইন নিজ হাতে তুলে নিচ্ছে যারা তাদেরকেও শাস্তির আওতায় আনা জরুরি।
আজকাল বিজ্ঞানের এসব নতুন নতুন আবিষ্কার ও তথ্যপ্রবাহের অবাধ যুগে নিজস্ব ইমেইল অ্যাকাউন্ট, ফেসবুক ইত্যাদি হ্যাক হওয়ারও সম্ভাবনা থেকে যাচ্ছে। আবার ফেসবুকে প্রকৃত বন্ধু নির্বাচনেও কতখানি সতর্ক থাকা যায়, সেটিও আজ প্রশ্নবিদ্ধ। যে কেউ এখন যে কারো ফেসবুক অথবা ইমেইল অ্যাকাউন্টে ঢুকে পড়তে পারে যদি তার কম্পিউটার বিজ্ঞান সম্পর্কে পর্যাপ্ত ধারণা থাকে। এহেন পরিস্থিতিতে আমাদের যেমন ফেসবুকে বন্ধু নির্বাচনে সতর্ক থাকতে হবে, তেমনি আবার মাঝেমধ্যেই ইমেইল ও ফেসবুকের মতো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর পাসওয়ার্ড পরিবর্তনও আবশ্যক। পাশাপাশি কারো নামে ভুয়া অ্যাকাউন্ট খুলে অপপ্রচারে লিপ্ত রয়েছে কি না, তাও পর্যবেক্ষণ ও খতিয়ে দেখা জরুরি হয়ে উঠেছে। আর এক্ষেত্রে ব্যক্তির পাশাপাশি রাষ্ট্রকেই তৎপর থাকতে হবে সবচেয়ে বেশি।
তবে সবার আগে এ ধরনের অপকর্মের সঙ্গে যে বা যারা জড়িত, তাদের খুঁজে বের করা জরুরি। রাষ্ট্রবিরোধী অপপ্রচার রুখে দিয়ে সমাজে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখা আমাদের নাগরিক দায়িত্ব। তাই এ ধরনের কুচক্রী মহল ও গোষ্ঠীকে চিহ্নিত করে আইনের আওতায় নিয়ে আসা এখন সময়ের দাবি। এগুলো কোনো রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের অংশ কি না, তাও বিবেচনার বিষয়। ফেসবুককে যারা সংঘাতের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে, তাদের বিরুদ্ধে সরকারকে কঠোর হতে হবে নিঃসন্দেহে।
Share To:

Naim Khan

Post A Comment:

0 comments so far,add yours