বিশ্বের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্ট সম্পর্কে কমবেশি সবাই জানি। যার উচ্চতা ৮ হাজার ৮৪৮ মিটার এবং ২৯ হাজার ৩০ ফুট। ১৯৫৩ সালের ২৯ মে নেপালি পর্বতারোহী তেনজিং নোরগে ও নিউজিল্যান্ডের এডমন্ড হিলারি সর্বপ্রথম এই দূর্গম শৃঙ্গটি জয় করেন।
এসব পরিচিত তথ্যের ভীড়ে এভারেস্টের রয়েছে কিছু বিচিত্র ইতিহাস। জেনে নেয়া যাক সেসব বিচিত্র তথ্য সম্পর্কে-
👉 হাওয়াই দ্বীপের মনা কিয়া আগ্নেয়গিরির প্রকৃত উচ্চতা ৩৩ হাজার ফুট। এভারেস্টের চেয়েও অনেকটা বেশি। হিসাব অনুযায়ী পৃথিবীর উচ্চতম পর্বত শৃঙ্গ হওয়া উচিত মনা কিয়ার। কিন্তু এই পর্বতের অনেকটা অংশ অবস্থান করছে সাগরের গভীরে। পর্বতটির মাত্র ১৩ হাজার ৭৯৬ ফুট অংশ পানির উপরে বিদ্যমান বাকিটা সমুদ্রতলে। তাই এভারেস্টের চেয়ে বড় হয়েও মনা কিয়া পায়নি উচ্চতম শৃঙ্গের মর্যাদা!
👉 তেনজিং ও হিলারির আগেই একজন এভারেস্ট জয় করে থাকতে পারেন বলে অনেকের অভিমত। সেই ব্যক্তিটির নাম জর্জ ম্যালোরি। পেশায় স্কুল শিক্ষক ছিলেন এই ব্রিটিশ নাগরিক। ১৯২১ থেকে ১৯২৩ সাল পর্যন্ত প্রথম তিনটি আনুষ্ঠানিক এভারেস্ট বিজয় যাত্রায় অংশ নেন তিনি। বলা বাহুল্য, তিনটি অভিযানই ব্যর্থ হয়। কিন্তু জর্জ ছিলেন নাছোড়বান্দা। তিনি বলতেন, এই পর্বতের চূড়ায় আমার পা পড়বে না। এ কথা অচিন্তনীয়।
চতুর্থ অভিযানের সময় এক সহযাত্রী মাত্র ৯০০ ফুট বাকি থাকতে ফিরে আসলেও জর্জ তখনো আশাবাদী। তিনি আরেক সহযাত্রী অ্যান্ড্রু আরভিনকে নিয়ে ১৯২৪ সালের ৮ জুন সকালে ২৬ হাজার ৮০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত ৬ নম্বর ক্যাম্প থেকে রওনা হন। শেষবার তাঁদের দেখা যায় ওইদিন দুপুরে, চূড়ায় পৌছানোর প্রাণান্তকর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এরপর থেকে তাদের আর কোনো খোঁজ মেলেনি।
তবে অনেকের বিশ্বাস, তারা শেষ পর্যন্ত পেরেছিলেন এভারেস্ট বিজয় করতে। তবে ফেরার পথে মারা যান। ১৯৯৯ সালে দীর্ঘ ৭৫ বছর পরে জর্জ ম্যালোরির কঙ্কাল খুঁজে পাওয়া যায়, তবে তাঁর কাছে থাকা ক্যামেরাটি না পাওয়ায় আসল ঘটনা জানা সম্ভব হয়নি। আরভিনের কোনো পাত্তা আজ পর্যন্ত পাওয়া যায়নি।
👉 এভারেস্ট জয়ের ঠিক আগের বছর তেনজিং নোরগে চূড়ার মাত্র ৮০০ ফুট থেকে নিচ ফিরে আসতে বাধ্য হয়েছিলেন। ওটাই ছিলো তখন পর্যন্ত এভারেস্ট জয়ের লক্ষ্যে পাড়ি দেয়া সর্বাধিক উচ্চতা। পরের বছর নিজের রেকর্ড ভেঙ্গে পুরো এভারেস্ট ডিঙাতে সক্ষম হন তেনজিং। এরপর থেকে এখন পর্যন্ত চার সহস্রাধিক পর্বতারোহী এভারেস্ট বিজয় করতে সক্ষম হয়েছেন।
👉 এডমন্ড হিলারির পুত্র পিটার হিলারি ও তেনজিং নোরগের পুত্র জামলিং তেনজিং নোরগে উভয়েই তাদের বাবার পদাঙ্ক অনুসরণ করে পরবর্তী সময়ে এভারেস্ট জয় করেছেন।
👉 এভারেস্টে উঠতে গিয়ে এ পর্যন্ত মোট ২৪০ জন প্রাণ দিয়েছেন। তুষারঝড়, হিমানী-সম্প্রপাত, পিচ্ছিল পাথর, অতি শীতল তাপমাত্রা, অতিরিক্ত উচ্চতা, প্রয়োজনীয় অক্সিজেনের অভাব ইত্যাদিই মৃত্যুর কারণ।
বিশেষ করে, ২৬ হাজার ফুটের পর থেকে পরিস্থিতি হয় সবচেয়ে বিপজ্জনক। সেই স্থানকে বলা হয় 'ডেথ জোন'। ডেথ জোনে কেউ মারা গেলে মৃতদেহ ফিরিয়ে আনা হয় না। কেননা পথ এতটাই বিপদসঙ্কুল যে বাড়তি কাউকে বয়ে নেয়া হতে পারে নিজের জন্য হুমকি। মৃতদেহগুলো বরফের মধ্যে ভালোভাবেই সংরক্ষিত থাকে এবং পরবর্তী অভিযাত্রীদের জন্য নিশানা হিসেবে কাজ করে।
১৯৯৬ সালের মে মাসের একদিন প্রবল তুষার ঝড়ের মধ্যে এভারেস্টে উঠতে থাকা আট অভিযাত্রী মারা যান। ওই দিনটি ছিলো এভারেস্টের ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ দিন। জন ক্রকারের বই 'ইনটু থিন এয়ার' এ সেদিনকার ঘটনা বেশ ভালোভাবে বর্ণিত আছে।
যদিও এতসব মৃত্যু অভিযাত্রীদের এভারেস্ট জয়ের মিছিলকে থামাতে পারেনি, প্রতিবছর হাজারো সাহসী এভারেস্ট জয়ের নেশায় জমা হন এর পাদদেশে।
Post A Comment:
0 comments so far,add yours