January 2020

মরিচ ঝাল হয়ে ক্যাপসেইসিনের গুণে। মানে ক্যাপসেইসিন নামের একটি উপাদান থাকে বলেই মরিচ ঝাল হয়। মরিচে এর মাত্রা যত বেশি হবে ঝালের মাত্রাও ততই বাড়বে। ভারতীয় বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই উপাদান মানুষের স্থূলত্বের সঙ্গে জড়িত হরমোনের কার্যকারিতার ওপর প্রভাব বিস্তার করতে পারে। তাতে ভবিষ্যতে ঝালের গুণে কেবল খাবার মুখরোচক হয়ে উঠবে না বরং 'মেদ-ভুরি কি করি নিয়ে' যারা হন্যে হয়ে আছেন তারাও দেহের বাড়তি মেদ ঝরানোর পথ সহজেই খুঁজে পাবেন।
ঝাল মরিচ হয় মেদ ঝরানোর সহজ পথ দেখাবে!
ভারতের সেন্ট্রাল ফুড টেকনোলজিক্যাল রিসার্চ ইন্সটিটিউট বা সিএফটিআরআই'এর গবেষকরা দেখতে পেরেছেন অবেসট্যাটিন নামের শরীরের একটি হরমোনের কার্যকারিতা বাড়ায় ক্যাপসেইসিন। এতে শরীরের চর্বি ঝরতে সহায়তা করা হয়। কারণ এ হরমোনই 'পেট ভরে গেছে আর খেতে হবে না' বলে সংকেত পাঠায় মানব মস্তিষ্কে।

মানুষের হজমতন্ত্রে উৎপন্ন হয় অবেসট্যাটিন। মস্তিষ্কে সংকেত পাঠানোর মাধ্যমে আমাদের খাওয়া-দাওয়াকে গ্রহণ করার কাজে প্রভাব ফেলে এটি। এ ছাড়া শরীরের বিপাকীয় তৎপরতা বাড়িয়ে মেদ কমতে সহায়তা করে একই হরমোন। এ জন্য ভিন্ন ধরণের সংকেত অন্য কোষরাজির মাধ্যমে পাঠায়।সব মিলে মেদ কমানোর কাজে ক্যাপসেইসিন ব্যবহারের বিষয়ে আশাবাদী হয়ে উঠেছেন বিজ্ঞানীরা।

তবে অনেক সময়ই রোগীকে বাড়তি ঝাল খেতে নিষেধ করেন চিকিৎসক। এ নিবন্ধ পড়েই মেদ কমানোর আশায় তেমন রোগীরা বাড়তি ঝাল খাওয়া শুরু করবেন না। এতে হিতে বিপরীত হতে পারে। শুধু ঝাল নয়, সুযোগ্য চিকিৎসক রোগীকে অন্যান্য খাওয়ার বিষয়ে যে সব উপদেশ দেন তা কোনও অবস্থায় চিকিৎসকের অনুমতি ছাড়া ভাঙ্গা উচিত নয়। খাদ্য-গবেষণা বিষয়ক যে কোনও নিবন্ধ বা খবর পড়ার সময় মনে রাখবেন, এটি এখনও চিকিৎসাবিদ্যার বইতে অন্তর্ভুক্ত হয় নি। বা সবার জন্যও এটি প্রযোজ্য নয়। এ বিষয়ে শেষ কথা বলবেন, আপনার সুযোগ্য চিকিৎসক।

ক্যাপসেইসিন সংক্রান্ত গবেষণা প্রকাশিত হয়েছে সেল বায়োক্যামেস্ট্রি অ্যান্ড বায়োফিজিক্স সাময়িকীয় সাম্প্রতিক সংখ্যায়।
মধ্য আফ্রিকার দেশ মৌরিতানিয়ায় সাহারা মরুভূমিতে প্রায় ৫০ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে এই নীল চোখ টি অবস্থিত 
অবিকল মানুষের চোখ। তবে তা দেখতে ওখানে গেলে চলবে না,ঐ খানে গেলে আপনি কিছু বুঝতে পারবেন না ! যেতে হবে অনেক ওপরে, মহাশূন্যে। কারণ চোখটি এতোই বিশাল যে, মহাশূন্যে না গেলে আপনি পুরো চোখটি একসঙ্গে দেখতেই পারবেন না।


যদি সেটা সম্ভব না হয় তাহলে গুগুল আর্থ থেকে খানিকটা দেখতে পারেন ।
এমনকি যদি গুগল আর্থ দিয়েও দেখেন তাহলে প্রথমে আপনি চোখের মণির ভেতরের সাদা যে অংশটা, আফ্রিকার বালুরঙা চোখের সেই অংশটা কেবল দেখতে পারবেন। তারপর জুম আউট করলে আপনি দেখতে পাবেন আফ্রিকার চোখের পুরোটা। আফ্রিকার এ চোখটি আছে আফ্রিকার এক গরিব দেশ মৌরিতানিয়ায়।
আফ্রিকার বিখ্যাত সাহারা মরুভূমির নাম তো শুনেছেন। মরুভূমিটির যে অংশ মৌরিতানিয়ায় পড়েছে, তারই এক অংশে আছে আফ্রিকার এই আজব প্রাকৃতিক আশ্চর্য।

 এই চোখটিকে বলে সাহারার চোখ বা রিচ্যাট স্ট্রাকচার কিংবা আফ্রিকার চোখ!

প্রথমে প্রশ্ন আসতে পারে কিভাবে এই চোখের সৃষ্টি হয়েছে ? সত্যি বলতে কি এর সদ্বউত্তর এখনও পাওয়া সম্ভব হয় নি ! অনেকে মনে করে গ্রহানুর বিশেষ প্রভাবে এই চোখাকৃতি টা ধারন করেছে অথবা আগ্নেওগীরির অগ্নিউৎপাত থেকে এই রকম একটি চোখের সৃষ্টি ! কিন্তু নিশ্চিত করে কেউ বলতে পারে না ! কেউ কেউ তো আবার এর পিছনে এলিয়েনদের হাত আছে বলে ধারনা করে !
 আবার অনেক মনে করে কোন দেশ হয়তো গোপনে সেখানে কোন আনবিক বোমার পরীক্ষা চালিয়েছে তাই এর আকৃতি এমন হয়ে গেছে !

সব থেকে মজাদার ব্যাখ্যাটা পাওয়া যায় আরও কিছু বিজ্ঞানীদের কথা শুনে ! অনেকে মনে করেন রিচ্যাট স্ট্র্যাকচারের বর্ণনা প্লেটোর হারিয়ে যাওয়া শহর এটলান্টিসের সাথে অনেকাংশে মিলে যায় ! প্লেটোর বর্ণনানুসারে এটলান্টিস নামের গোলাকৃত্রিট দ্বীপ টি পানি এবং ভুমি দ্বারা সমবিভক্ত ছিল যা দুই ভাগ ছিল ভুমি আর তিন ভাগ ছিল পানি ! যেহেতু এটলান্টিস ছিল সমুদ্রের একটা অংশ সেহেতু যখন ভূমিকম্পে এটলান্টিস তলিয়ে যেতে শুরু করে তখন জল এবং মাটির সংমিশ্রনে একটা অসম্ভব মাটির বাঁধা সৃষ্টি হয়ে দ্বারায় সমুদ্রের জন্য সেটা কে সম্পূর্ন গ্রাস করার ক্ষেত্রে ! প্লেটো এতো বলেন যে এটলান্টিসে চারিপাশে কয়েকটি পাহার ছিল যা সমুদ্র থেকে শহরটিকে আজও বাঁচিয়ে রেখেছে কোথাও ! যাই হোক সেই এটলান্টিসের গঠন বর্ণনা অনেক টাই এই সাহারার এই নীল চোখের বর্ণনার সাথে মিলে যায় ! কিন্তু কোথায় আগরতলা আর কোথায় খাটের তলা ! ঐ শহর মধ্য আফ্রিকায় আসবে কিভাবে ?

 তবে অনেকেই এটাকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেয় ! তারা বলেন যে এই রিচ্যার টি গঠিত হয়েছে প্রকৃতির খেয়ালে এবং সেখানকার ভূমি এবং পাথরের গঠনের জন্যই ! ওখানকার ভূমির গঠনই এরকম ডোমাকৃতির, চোখের আদলে উচু হয়ে পরে আবার নিচু হয়ে এসেছে এবং সময় অতিবাহিত হওয়ার সাথে সাথে উপরের মাটি আর বালু ক্ষয়ে যাওয়ায় মূল গঠনটা বের হয়ে এসেছে যা উপর থেকে দেখলে অনেক টা চোখের মত দেখায় ! নিচের ছবি দুটির মতঃ


তবে এটা সত্য যে এই চোখ টি সম্প্রতিকালের কোন সৃষ্টি নয় ! রিচ্যাট স্ট্র্যাকচারের ভিতরে উত্তর দিককার যে kimberlite plug এবং carbonatite পাথরের সন্ধান পাওয়া গেছে যেগুলো প্রায় ৯৪ ঠে ১০৪ মিলিয়ন বছর পুরানো । সুতরাং আমরা এটা নিঃসন্ধেহে বলতে পারি যে স্ট্র্যাকচার টি কমপক্ষে ১০০ মিলিয়ন বছর পুরানো !
 তবে আমরা জানি যে ৪০০০০ বছর আগে সাহারা একটি বিশাল হ্রদের অস্তিত্ব ছিল আবার 6500BC তেও সাহারায় আদ্রতা বজায় ছিল সুতরাং একেবারে নিশ্চিত করে কিছুই কিন্তু বলা যায় না যে কিভাবে আসলে রিচ্যাট টি গঠিত হয়েছে ! এখনও এটা রহস্যই রয়ে গেছে !


পৃথিবী জুড়েই ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে হাজারো দ্বীপ কিংবা সমুদ্রে জেগে ওঠা চর। একটু ছুটি বা অবসর সময় পেলেই মানুষজন ছুটে যায় এই মনোরম সৌন্দর্যে ঘেরা দ্বীপগুলোতে। তবে প্রকৃতির আশীর্বাদস্বরূপ এগুলো ছাড়াও বেশ কিছু অদ্ভুত ও কিম্ভুতকিমাকার দ্বীপ রয়েছে পৃথিবী জুড়ে। আজ আমরা জানবো সেগুলো সম্পর্কেই।

মরিশাস আইল্যান্ড

মরিশাস উষ্ণপ্রধান এলাকার জন্য স্বর্গীয় স্থান হলেও এটি বিখ্যাত আরো একটি কারণে। প্রকৃতির খামখেয়ালিপনায় আপনাআপনিই এখানে একটি মরীচিকা তৈরী হয়েছে। বালির স্রোত এবং পানির ঢেউ মিলে এমন একটি অবস্থা সৃষ্টি করেছে, যার জন্য উপর থেকে তাকালে মনে হবে পানির নিচে কোনো জলপ্রপাত বয়ে যাচ্ছে। আর তাতেই দ্বীপটির সৌন্দর্য বেড়ে গিয়েছে কয়েক গুণ।
জলের নিচে বয়ে যাওয়া জলপ্রপাত; Image Source: Shutterstock.com

স্নেক আইল্যান্ড

লাতিন আমেরিকার সবচেয়ে বড় দেশ ব্রাজিলে দেখা মিলবে এই অদ্ভুত দ্বীপটির। গোল্ডেন ল্যাঞ্চহ্যাড নামের অন্যতম বিষধর সাপটিতে পরিপূর্ণ এই দ্বীপ। এক পরিসংখ্যানে পাওয়া গিয়েছে যে প্রায় ৪০০০ এর মতো সোনালী রঙের ল্যাঞ্চহ্যাড সাপের অবস্থান এখানে। যার ফলে প্রায় প্রতি বর্গমিটার এলাকাতেই গড়ে একটি সাপের দেখা মিলবে। জায়গাটি এতই বিপদজনক যে ব্রাজিল সরকার দ্বীপটিতে সর্বসাধারণের প্রবেশ নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে।
গোল্ডেন ল্যাঞ্চহেডের আবাসস্থল; Image Source: Shutterstock.com

গোকুই আইল্যান্ড

মূলত চীনে অবস্থিত এই দ্বীপটি ছিলো মৎস্য শিকারীদের আস্তানা। কিন্তু বেশ কয়েক বছর আগেই এই দ্বীপ ত্যাগ করে জেলেরা শহরে ফিরে গেছে। কিন্তু দ্বীপে নির্মিত তাদের বাড়ি কিংবা ছোট ছোট দালানগুলো রয়ে গিয়েছিলো। অনেকদিন ধরে অব্যবহৃত থাকার কারণে তা পুরোপুরি ছেয়ে গেছে সবুজে। পুরো দ্বীপটিই যেন এখন সবুজের আস্তরণ। বাড়িগুলোর ছাদ কিংবা দেয়াল, সব চাপা পড়েছে সবুজের নিচে। প্রকৃতি তার সব সৌন্দর্য ঢেলে দিয়ে নিজে সাজিয়েছে এই গোকুই আইল্যান্ডটি। পুরো দ্বীপটি যেন একটি নরম সবুজ চাদরে জড়ানো।
           শ্যামলিমার চাদরে জড়ানো দ্বীপ; Image Source: Exclusivepix Media/EAST NEWS

বৌভেট আইল্যান্ড

পৃথিবীর সবচেয়ে নিরিবিলি এবং নিস্তব্ধ দ্বীপ হিসেবে পরিচিত এই বৌভেট। এর অবস্থান আটলান্টিক মহাসাগরের সর্ব দক্ষিণে। এই দ্বীপে যেতে হলে আপনাকে সমুদ্রপথে পাড়ি দিতে হবে প্রায় ২৬০০ মাইল। তাছাড়া পুরো দ্বীপটি বরফাচ্ছাদিত। পুরো দ্বীপ জুড়ে মাত্র ৭% এলাকা (৪৯ বর্গ কি.মি) বাদে বাকিটা বরফের নিচে। এমনকি দ্বীপের মাঝখানের সুপ্ত আগ্নেয়গিরির মুখও বরফ দ্বারা জমাটবদ্ধ। তাই পারতপক্ষে কেউই এই দ্বীপমুখী হয় না। 
এই দ্বীপটি সর্বপ্রথম আবিষ্কার করেন ফরাসি নাবিক জিন বাপ্তিস্তে চার্লস বৌভেট। তিনি ১৭৩৯ সালে দ্বীপটি খুঁজে পেলেও তার বর্ণনায় কিংবা অবস্থান নিয়ে সবকিছু পুরোপুরি উল্লেখ না থাকার কারণে ১৮০৮ সালের আগ পর্যন্ত এটি কেউ খুঁজে পায়নি। সেবার দ্বীপটি আবিষ্কার করেন জেমস লিন্ডহে নামক এক ব্রিটিশ ভদ্রলোক। তিনি আইল্যান্ডটির নাম দেন লিন্ডহে আইল্যান্ড। ১৭ বছর পর আরেকজন নাবিক সেটি খুঁজে পেয়ে নাম দেন লিভারপুল আইল্যান্ড অবশেষে অনেক পরে দ্বীপের নামকরণ করা হয় এর প্রথম আবিষ্কারকের নামে।
নিস্তব্ধ দ্বীপ; Image Source: Wikimedia Commons

ক্লিপারটন আইল্যান্ড

ক্লিপারটন আইল্যান্ড একটি কোরাল দ্বীপ, এর অবস্থান প্রশান্ত মহাসাগরে। পৃথিবীর সবচেয়ে ছোট কোরাল দ্বীপ হিসেবেও এটি পরিচিত। আয়তনে এটি মাত্র ৬ বর্গ কিলোমিটার। তবে এই দ্বীপটি বিখ্যাত হয়েছে মর্মান্তিক এক ঘটনার জের ধরে।
১৯০০ সালের শুরুর দিকে দ্বীপটিতে খনি থেকে গুয়ানো উত্তোলন করা হতো। ১৯১০ সালে এই ছোট দ্বীপে বাতিঘর বানানো হয়। তখন সেখানে প্রায় ১০০ জন মানুষ বসবাস করতো। তাদের মধ্যে পরিবার এবং ছোট ছেলেমেয়েরাও ছিলো। প্রতি দু'মাস পর পর জাহাজে এসে খাবার দেওয়া হতো এলাকার লোকজনদের। কিন্তু ১৯১৪ সালে হঠাৎ করে মেক্সিকান যুদ্ধ শুরু হয়ে যাওয়াতে জাহাজ আসা বন্ধ হয়ে যায়। দ্বীপটির মানুষজনের কথাও ভুলে যায় সবাই। ছোট একটি শস্যবিহীন দ্বীপে কোনো খাবার ছাড়া মানুষগুলোও টিকে থাকতে পারেনি। ১৯১৭ সালে আমেরিকান একটি জাহাজ সেই দ্বীপ থেকে সর্বশেষ ৩ নারী ও ৮ জন শিশুকে উদ্ধার করে। তারাই ছিলো দ্বীপের অবশিষ্ট বাসিন্দা।
সবচেয়ে ছোট কোরাল দ্বীপ ক্লিপারটন; Image Source: Shannon Rankin

আর্ন্সট থালমান আইল্যান্ড

আর্ন্সট থালমান দ্বীপটি কিউবায় অবস্থিত একটি ছোট দ্বীপ। ১৯৭২ সালে কিউবান কিংবদন্তি ফিদেল কাস্ট্রো তৎকালীন পূর্ব জার্মানির নেতা এরিক হনেকারকে নিয়ে এই দ্বীপটিতে আসেন এবং তার সম্মানার্থে আইল্যান্ডটির নামকরণ করেন আর্ন্সট থালমান।
মজার ব্যাপার যে পূর্ব ও পশ্চিম জার্মানি এক হওয়ার পর দ্বীপটি নিয়ে কোনো বিবৃতি দেওয়া হয়নি। তাই বলা যায়, বার্লিন দেয়াল ওঠার পরেও পূর্ব জার্মানির একটি অংশ এখনো টিকে আছে।
পূর্ব জার্মানির অংশ আর্ন্সট থালমান দ্বীপ; Image Source: NordNordWest 

পালমাইরা আইল্যান্ড

সম্পূর্ণ প্রবাল দিয়ে তৈরী এই দ্বীপটি পৃথিবীর অন্যতম একটি বিচ্ছিন্ন দ্বীপ। পুরো দ্বীপটি রেইনফরেস্টে ঘেরা। কিন্তু তারপরও এত সুন্দর দ্বীপটি সবাই উপভোগ করতে পারে না। এটিকে ঘিরে বেশ কিছু কুসংস্কার রয়েছে। এ দ্বীপের আশেপাশে থেকে বেশ কিছু জাহাজ উধাও হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এরকম রহস্যজনক সব ঘটনার জন্যই দ্বীপটিকে অনেকে 'ভৌতিক' বলে আখ্যায়িত করে। তাই এখানে আসতে হলে কর্তৃপক্ষের বিশেষ অনুমতি নিয়ে আসতে হয়। একসাথে অনেকজন মিলে এখানে ঘুরতে আসাও নিষিদ্ধ।
 ভৌতিক পালমাইরা আইল্যান্ড; Image Source: imago stock&people/EAST NEWS

ভালকান আইল্যান্ড

এই আইল্যান্ডটি প্রকৃতির খামখেয়ালিপনায় অদ্ভুত সুন্দরভাবে গড়ে উঠেছে। ফিলিপাইন উত্তরে তাল নামক একটি হ্রদ রয়েছে। সেই হ্রদের মাঝখানে রয়েছে তাল ভালকানো নামক একটি দ্বীপ। ভালকানোর মাঝখানেই রয়েছে আরো একটি হ্রদ। মূলত এই হ্রদটি তৈরী হয়েছে ভলকানো থেকে। সেই দ্বীপের মাঝখানে রয়েছে আরো একটি ছোট দ্বীপ। এই দ্বীপটিই ভালকান আইল্যান্ড নামে পরিচিত, এক দ্বীপের মধ্যে আরেক দ্বীপ।
 দ্বীপের ভেতর আরেক দ্বীপ ভালকান; Image Source: Depositphotos.com

ফোর্ট ক্যারল আইল্যান্ড

আপনি কি কখনো একটি দ্বীপের মালিক হওয়ার স্বপ্ন দেখেছেন? কম-বেশি সবাই মনের অজান্তে কখনো না কখনো হয়তো এই স্বপ্ন দেখেছে। কিন্তু সবার তো সে সাধ্য থাকে না। কিন্তু আশ্চর্যজনক হলেও সত্যি, এমন কিছু দ্বীপ রয়েছে, যেগুলো আপনি পেতে পারেন একেবারেই স্বল্পমূল্যে। কিন্তু তারপরও কেউ কিনতে আগ্রহী নয় সেসব দ্বীপ।
এমনই একটি হচ্ছে ফোর্ট ক্যারল। এই দ্বীপটি মূলত বানানো হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীর জন্য। বর্তমানে এই দ্বীপটি একজনের মালিকানাধীন। প্রথমে দ্বীপটি বাল্টিমোর মেয়রের মালিকানাধীন থাকলেও ১৯৫৮ সালে তা বিক্রয় করা হয় বেঞ্জামিন আইজেনবার্গ নামে একজন লোকের কাছে। তার চিন্তা-ভাবনা ছিলো সেখানে ক্যাসিনো ও কিছু হোটেল গড়ে তোলার। কিন্তু পুরো দ্বীপটি ছিলো পাখিদের অভয়ারণ্য। কিছু গড়ে তুলতে গেলে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বিনষ্ট হবে ভেবে এই চিন্তা ভাবনা থেকে সরে আসেন আইজেনবার্গ। বর্তমানে এই দ্বীপটির মালিক আইজেনবার্গের নাতনি মেরিল্যান্ড। তিনি চাইছেন দ্বীপটি বিক্রয় করে দিতে। কিন্তু খরিদ্দারের অভাবে বিক্রয়ও করতে পারছেননা। তাই আপাতত খালিই পড়ে আছে সেটি। চাইলে আপনিও কিনতে পারেন!
ব্যক্তিগত মালিকানাধীন ফোর্ট ক্যারল দ্বীপ; Image Source: East News

সোকোত্রা আইল্যান্ড

এই দ্বীপটিকে দেখলে মনে হবে পৃথিবীর বাইরের কোনো দ্বীপ। কিছু মানুষ বিশ্বাসও করে যে এই দ্বীপটি আদতে ইডেনের গার্ডেন। দ্বীপটি বহু বছর বিচ্ছিন্ন থাকার কারণে এখানে এমন কিছু উদ্ভিদ জন্মেছে, যেগুলো পৃথিবীর কোথাও পাওয়া যায়নি। যেমন- ড্রাগন ব্লাড গাছ। এই গাছকে দেখলে মনে হবে প্রাকৃতিক কোনো ছাতা। তবে গাছটিকে কাটলে এর বাকল থেকে অনেকটা রক্তের মতো লাল রঙের তরল বের হয়ে আসে। সেই হেতু গাছটি পরিচিত পায় ড্রাগন ব্লাড গাছ হিসেবে।
অদ্ভুত দ্বীপ সোকত্রা; Image Source:  East News

ডায়াভিক ডায়ামন্ড আইল্যান্ড

এই পুরো দ্বীপটিই একটি বিশালাকার হীরক উত্তোলনের খনি। কানাডার উত্তরে অবস্থিত এই দ্বীপটিতে খনিটি খোঁড়া হয়েছিলো ১৫ বছর আগে। গত ১৫ বছরে এই একটি খনি থেকেই উত্তোলন করা হয়েছে ১০০ মিলিয়ন ক্যারেটের হীরা, যা ওজন করলে হবে প্রায় ২০ টন।
এই দ্বীপটি ও হীরক উত্তোলনের প্রজেক্টটি এতটাই সফলতা অর্জন করেছে যে এই নিয়ে ইতোমধ্যেই 'ডায়াভিক ফ্যাক্ট বুক: দ্য ডায়াভিক ডায়মন্ড মাইন' নামে একটি বই লেখা হয়ে গেছে।

হীরা উত্তোলনের জন্য বিখ্যাত ডায়াভিক ডায়ামন্ড দ্বীপ; Image Source: Rio Tinto

পৃথিবীর বুকে অজানা রহস্য ঘেরা যত স্থানের নাম সবার কাছেই জানা তার মধ্যে অন্যতম বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল। আজ পর্যন্ত যত গবেষণা হয়েছে কোনো কিছুতেই এ রহস্য উদঘাটনের কোনো সুস্পষ্ট প্রমাণ মেলেনি। মানুষ সর্বদা জ্ঞানপিপাসু তাই অজানাকে জানা আর নতুন কিছু প্রমাণের যে স্পৃহা তা সর্বদা বিজ্ঞানীদের মধ্যে পরিলক্ষিত হলেও তরুণ মহলে আমাদের কাছে তা সর্বদাই আকর্ষণীয় একটা বিষয় হয়ে থাকে।


প্রথমেই বলে আসি বারমুডা ট্রায়াঙ্গল সম্পর্কে। 

বারমুডা ট্রায়াঙ্গল (Bermuda Triangle) : বারমুডা ট্রায়াঙ্গল পৃথিবীর এক রহস্যময় স্থান। বিভিন্ন সময় এ স্থানটিতে সামুদ্রিক জাহাজ ও উড়োজাহাজ হঠাৎ করে এমনভাবে নিরুদ্দেশ হয়ে গিয়েছে, যা পরবর্তিতে এ স্থানটিকে একটি ভৌতিক ও রহস্যময় স্থানে পরিণত করেছে। বহু রূপকথা, কিংবদন্তি এবং প্রামাণ্য গ্রন্থ রচিত হয়েছে এ নিয়ে। এমনকি ফিল্মও তৈরি হয়েছে এ নিয়ে।
রহস্যময় এ স্থানটির অবস্থান উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরের পশ্চিম-উত্তর কোণে, মেস্কিকো সাগরের পূর্বে এবং শৈবাল সাগরের (seargassa sea) পশ্চিমে।


এ স্থানটি ত্রিভূজাকৃতির। যার পূর্ব-উত্তর কোণে রয়েছে ক্ষুদ্র দ্বীপপুঞ্জ বারমুডা। এই দ্বীপের নাম অনুসারেই এর নামকরণ করা হয় বারমুডা ট্রায়াঙ্গল (Bermuda Triangle)। পশ্চিম কোণে আছে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণাঞ্চল ফ্লোরিডা, মায়ামি উপকূল এবং দক্ষিণে পোর্টোরিকো দ্বীপপুঞ্জ (Puerto Rica Island)- এ তিনটি স্থানকে কাল্পনিক রেখা দ্বারা একত্র করলে Triangle বা ত্রিভূজের আকৃতির হয়। কেউ কেউ এর নাম দিয়েছে মৃত্যু ত্রিভূজ (The Devil’s Triangle)। কেউ বলে শয়তানের ত্রিভূজ।
বারমুডা দ্বীপ আবিষ্কার করেন বৃটিশ নাবিক জুয়ান ডি রার্মুডেজ, ১৫১৫ সালে। তারপর থেকে বৃটিশদের দূরপাল্লার সামরিক ও বাণিজ্যিক জাহাজগুলো এখানে কিছুদিন বিশ্রাম নিত। তখন থেকে এই দ্বীপপুঞ্জ আশপাশে নানা দুর্ঘটনা ঘটতে থাকে।


এরপর এই জায়গার কথা বলেন বিখ্যাত নাবিক কলম্বাস। তার বর্ণনামতে, তার জাহাজের নাবিকেরা বারমুডা ট্রায়াঙ্গল পাড়ি দেবার সময় দেখেছিল আলোর নাচানাচি আর আকাশে ধোঁয়া। এছাড়া কলম্বাস আরো লিখেছেন যে এই জায়গায় এসে তার কম্পাসও ভুল নির্দেশনা দিচ্ছিলো। আজ পর্যন্ত অসংখ্য জাহাজ এবং উড়োজাহাজ মিলিয়ে গেছে এই ট্রায়াঙ্গলে যার কোনো চিহ্ন আজও খুঁজে পাওয়া যায়নি। ধারণা করা হয় এ পর্যন্ত ৫০টি বাণিজ্যিক জাহাজ ও ২০ টি বিমান হারিয়ে গেছে এই বারমুডা ট্রায়াঙ্গলে।



সর্বপ্রথম ৫ ডিসেম্বর, ১৯৪৫ সালে আমেরিকার পাঁচটি যুদ্ধবিমান ১৪ জনসহ মিলিয়ে যায় এই ট্রায়াঙ্গলে। সর্বশেষ তথ্যমতে খবর এসেছিল বিমানগুলো যখন এই অঞ্চলের খুব কাছাকাছি এসে পরে তারা বলছিলো তাদের সামনে খুবই ধোঁয়া, তারা কিছুই দেখতে পাচ্ছেনা এবং তাদের শেষ কথা ছিলো ’আমাদের বাঁচাও’। এ ঘটনার পর একদল অনুসন্ধান দল সেখানে পাঠানো হয়েছিল কিন্তু তাদের আজ পর্যন্ত কোনো খবর পাওয়া যায়নি। এছাড়া ১৯৪৭, ১৯৪৮, ১৯৪৯, ১৯৬২, ১৯৬৫, ২০০৫, ২০০৭ এবং ২০১৭ সালে ঘটে আরও বিমান দুর্ঘটনা। ১৮০০ সালে ঘটে প্রথম জাহাজ দুর্ঘটনা যেখানে প্রাণ হারায় ৯০ জনের মতো যাত্রী। এছাড়া ১৮১৪, ১৮২৪, ১৮৪০, ১৯১৮, ১৯২১, ১৯২৫, ১৯৪১, ১৯৬৩ এবং ২০১৫ সালে অসংখ্য প্রানহানি ঘটে এই ট্রায়াঙ্গলে। একটি পরিসংখ্যানে দেখা গেছে যে, আজ অব্দি প্রায় ১০০০ জনের মতো বারমুডা ট্রায়াঙ্গল এর মাঝে প্রান হারিয়েছেন, যা গড়ে প্রতি বছরে ১০ জনের সমান।

এক নজরে দুর্ঘটনাগুলো-

১. ১৭৫০ সালে অক্টোবর মাসে সর্বপ্রথম ক্যাপ্টেন জুয়ানের নেতৃত্বে সেনাবোঝাই ৫টি জাহাজ ঝড়ের কবলে পড়ে ট্রায়াঙ্গল এলাকায় মারাত্মকভাবে বিধ্বস্ত হয়। এরপর ১৮৫৪ সালে বৃটিশ সামুদ্রিক জাহাজ বেল্লা (Bella) নিরুদ্দশ হয়ে যায়।
২. ১৮৬৬ সালে সুইডেনের মালবাহী জাহাজ ‘লুট্টা’ বারমুডা সমুদ্র এলাকায় রহস্যজনকভাবে ডুবে যায়।
৩. ১৮৭২ সালের ডিসেম্বর মাসে বৃটিশ বাণিজ্য তরী ম্যারি কোলেস্টে মারাত্মক দুর্ঘটনায় পড়ে।
৪. ১৮৮৮ সালে স্পেনের একটি বাণিজ্যপোত ভিয়াগো (Viego) নিখোঁজ হয়ে যায়।
৫. ১৯০২ সালে জামানির জাহাজ ফ্রেয়া (Freya) নিরুদ্দেশ হয়ে যায়।
৬. এভাবে একের পর এক দুর্ঘটনা ঘটতে থাকলেও মানুষের চোখে এটি রহস্যজনকভাবে ধরা পড়ে ১৫৪৫ সালে। যখন মার্কিন নৌবাহিনীর পাঁচটি জঙ্গিবিমান এ অঞ্চলে রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হয়ে যায়। কথিত আছে, নিখোঁজ হওয়ার পূর্ব মুহূর্তে পাইলট লেফটেন্যান্ট টয়লার কন্ট্রোল রুমে রাবার্ট কস্কের সাথে কথা বলছিলেন। শেষ মুহূর্তে তার ভয়ার্ত বক্তব্য ছিল এরকম ‘না না কস্ক তুমি সাবধান হও। তুমি কখনোই বিমান নিয়ে আমাদের খুঁজতে বের হবে না। তাহলে তোমরাও আমাদের মতো বিপদে পড়বে, ওরা অবিকল দেখতে অবিকল....।’ এরপর সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
৭. ১৯৬০ সালের দিকে বিপদগ্রস্ত হয় আমেরিকান সাবমেরিন স্করপিয়ন (Scorpion SSN9)। এভাবে বহু সামুদ্রিক জাহাজ, উড়োজাহাজ কখনো জড়ি চরমভাবে বিধ্বস্ত হয়েছিল অথবা অজ্ঞাত কারণে নিখোঁজ হয়েছিল বারমুডা অঞ্চলে বা তার আশপাশে।

একটি ধারণা সবার মধ্যে প্রচলিত আছে যে, বহিঃবিশ্বের কোনো অজানা প্রাণীর বাস সেখানে, যারা সর্বদা বসে আছে আশেপাশের সবকিছু গ্রাস করে নেবার জন্য। ধারণামতে ভিনগ্রহের মানুষেরা পৃথিবীতে এসে এ স্থানটিকে তাদের ঘাঁটি বানিয়ে নেয় এবং এ অঞ্চলের ভিতরে প্রবেশকারী সকল কিছুর চিহ্ন তারা গায়েব করে দেয় যাতে কেউ তাদের ব্যাপারে কিছুই জানতে না পারে। মজার বিষয় হিসেবে এই জায়গাকে তুলনা করা যেতে পারে ব্ল্যাকহোলের সাথে। যেখানে একবার কেউ প্রবেশ করলে বের হওয়া তো দূরের কথা তার কোনো অস্তিত্বও খুঁজে পাওয়া যায় না।


সর্বপ্রথম এই ট্রায়াঙ্গল সম্পর্কে একটি বই রচনা করেন লেখক ভিনসেন্ট এইচ গাদিস ১৯৬৫ সালে। বইটির নাম Invisible Horizon: True Mysteries of the Sea (1965)। এ বইয়ে তিনি নয়টি রহস্যে ঘেরা ঘটনার কথা বর্ণনা করেছেন। আজ পর্যন্ত বারমুডা ট্রায়াঙ্গল রহস্যকে ঘিরে দুইটি ইংরেজি চলচিত্র নির্মাণ হয়েছে। একটি হলো Lost in the Bermuda Triangle (1998) ও আরেকটি হলো Bermuda Tentacles (2014)

যদিও আজ অব্দি অনেক গবেষণা হয়েছে এই ট্রায়াঙ্গল সম্পর্কে, তারপরও সম্প্রতি একদল বিজ্ঞানীদের থেকে উঠে এসেছে বারমুডা ট্রায়াঙ্গল এর আসল রহস্য। তারা বর্ণনা করেছেন যে সমুদ্রের এ জায়গায় ষড়যন্ত্র মেঘ (Hexagonal Cloud) এর কারণে এক বায়ু গোলার সৃষ্টি হয় যার কারনে বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ১৭০ কিলোমিটার ছাড়িয়ে যায়, যার কারনে আশেপাশের সবকিছু এই বিশাল ঢেউ সহ্য করতে না পেরে মিলিয়ে যায় আটলান্টিক সমুদ্রের বারমুডা ট্রায়াঙ্গল এর অতল গহ্বরে। এই গবেষণাটিকেই আজ পর্যন্ত সমস্ত গবেষণার ঊর্ধ্বে স্থান দেওয়া হচ্ছে। 


এছাড়াও সাম্প্রতিক গবেষণায় এর কিছু যৌক্তিক ও প্রাকৃতিক ব্যাখ্যা বের হয়ে এসেছে। যেমন- ট্রায়াঙ্গল এলাকায় জাহাজে নাবিকদের কম্পাস বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়।
এর কারণ পৃথিবীর এমন কিছু অঞ্চল আছে, যেখানে ভৌগোলিক উত্তর আর চুম্বকীয় উত্তর হুবহু এক হয়ে যায়। যদিও চুম্বকীয় মেরু আর ভৌগোলিক মেরু হুবহু এক নয়। এই অস্বাভাবিক চুম্বকীয় ত্রুটির কারণে নাবিকদের ‘কম্পাস ভেরিয়েশনে’ বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়।
কার্ডিফ ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞানীদের সাম্প্রতিক গবেষণায় বেরিয়ে এসেছে চমৎকার একটি তথ্য- সমুদ্রের তলদেশে ব্যাপক মিথেন গ্যাস থাকে।

ধারণ করা হয়, সামুদ্রিক প্রাণিগুলোর মৃতদেহ থেকে এই মিথেন গ্যাস তৈরি হয়।
এই গ্যাস যখন সমুদ্রপৃষ্ঠে উঠে আসে, তখন কোনো জাহাজই সেখানে ভেসে থাকতে পারে না। ফলে জাহাজগুলো পূর্ব সংকেত ছড়ায় হঠাৎ করে ডুবে যেতে পারে। উপর দিয়ে উড়ে যাওয়া বিমানগুলোর এতে মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে। এমনকি আগুনও ধরে যেতে পারে। আর উপসাগরীয় সমুদ্রগুলোয় ক্ষতিগ্রস্ত যানসমূহকে মুহূর্তের মধ্যে ছিন্ন ভিন্ন করে বিলীন করে দিতে পারে।
বিশ্বে থেমে নেই কিছুই। থেমে থাকবে না এ রহস্যও আশা করা যায় সামনে নতুন কিছু কংক্রিট গবেষণার মাধ্যমে বের হয়ে আসবে নতুন আরো অজানা রহস্য, যার ফলশ্রুতিতে বাঁচানো যাবে অসংখ্য নিরীহ প্রাণ।

ছবি: ইন্টারনেট
বিস্ময়ে ভরা এই পৃথিবী শুধু মানুষের জন্যই সৃষ্টি হয়নি। এখানে সর্বত্র জীবন খুঁজে পাওয়া যায়। আর সেই সঙ্গে সাগরতল থেকে শুরু করে বায়ুমণ্ডল সর্বত্রই মানুষের জন্য বিস্ময় আর সৌন্দর্য অপেক্ষা করছে। তবে সবকিছু ছাপিয়ে পাঁচটি স্থান রয়েছে এই বিশ্বে, যা মানুষকে বিস্মিত করার পাশাপাশি অভিভূত করে। কখনো কখনো মনে জন্ম দেয় বিভিন্ন প্রশ্নেরও। এই পাঁচটি স্থান নিয়েই এবারের আয়োজন।
বারমুডা ট্রায়াঙ্গল


আটলান্টিক মহাসাগরে অবস্থিত এই বিস্ময়কর স্থানটি ‘শয়তানের ত্রিভূজ’ নামেই বেশি পরিচিত। প্রচলিত আছে, এখান দিয়ে যাওয়ার সময় অনেক সামুদ্রিক জাহাজ, প্লেন বেমালুম গায়েব হয়ে গেছে। হারিয়ে যাওয়ার পর আর ওইসব জাহাজ, প্লেন কিংবা তাদের যাত্রীদের কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। আটলান্টিক মহাসাগরে বারমুডা, ফ্লোরিডা ও পুয়ের্তোরিকোকে তিনটি বিন্দু ধরে কল্পনা করা এই বারমুডা ট্রায়াঙ্গল সাধারণ মানুষ থেকে বিজ্ঞানী, প্রায় সবার কাছেই একটা বিস্ময়
১৯৬৪ সালে ভিনসেন্ট গ্যাডিস সর্বপ্রথম ‘বারমুডা ট্রায়াঙ্গল’ নামটা ব্যবহার করেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সাহিত্যপত্রিকা ‘আর্গসি’তে তিনি এ নিয়ে একটা প্রতিবেদন লেখেন। প্রতিবেদনটি প্রকাশ হওয়ামাত্র তুমুল আলোচনার সৃষ্টি করে। তখন থেকেই বারমুডা ট্রায়াঙ্গলের বিভিন্ন রহস্য খুঁজতে উঠেপড়ে লাগেন বিজ্ঞানীরা। কিন্তু আজ পর্যন্ত এর কোনো উত্তর খুঁজে পাওয়া যায়নি।
এদিকে ভিনসেন্টের লেখা জনপ্রিয় হওয়ার পর বারমুডা ট্রায়াঙ্গল নিয়ে লেখায় আগ্রহী হয়ে ওঠেন পরবর্তী লেখকরাও। জন্ম হয় বিভিন্ন গল্পের, মানুষের মনে সঞ্চারিত হয় আগ্রহ আর ভীতির। তবে লেখকরা যাই লিখে থাকুন নিজ নিজ গল্পে, বিজ্ঞানীরা তার কোনো উত্তরই খুঁজে পাননি আজ পর্যন্ত।
সবশেষে, পরিচালিত অভিযানে কোনো তথ্যই উদ্ধার করতে না পেরে বারমুডা ট্রায়াঙ্গল বলে কোনোকিছুরই অস্তিত্ব নেই বলে জানায় মার্কিন নৌবাহিনী। এমনকি ‘ইউএস বোর্ড অন জিওমেট্রিক নেমস’ও এই নামে কোনো অঞ্চলকে স্বীকৃতি দেয়নি। ২০১৩ সালে ‘দ্য ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ফান্ড ফর নেচার’ জাহাজ চলাচলে বিশ্বের ১০টি বিপজ্জনক সামুদ্রিক এলাকা চিহ্নিত করে, যার মধ্যেও বারমুডা ট্রায়াঙ্গলের নাম নেই।
এরপরও লেখকদের উল্লিখিত এলাকায় যে সব দুর্ঘটনা বা জাহাজডুবির ঘটনা ঘটেছে, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েই যায় মানুষের মনে।

পামুক্কালে


বারমুডার পর পৃথিবীর বুকে অপর অদ্ভুত জায়গার নাম পামুক্কালে। তুরস্কের এই ঝর্ণাধারা অত্যন্ত জনপ্রিয় ও পর্যটক আকর্ষী একটা জায়গা। তবে এই অসম্ভব সুন্দর অদ্ভুত জায়গাটির জন্ম কীভাবে হয়েছে, তার কোনো সুস্পষ্ট ইতিহাস মানুষের জানা নেই।

তুর্কি শব্দ ‘পামুক্কালে’ অর্থ ‘তুলার দুর্গ’। দুধসাদা হওয়ার কারণেই খুব সম্ভবত এমন নামকরণ। পামুক্কালের দৈর্ঘ দুই হাজার সাতশ’ মিটার, প্রস্থ ছয়শ’ মিটার ও উচ্চতা ১৬০ মিটার। 

প্রচলিত আছে, হাজার বছর আগে তুরস্কের যে স্থানে পামুক্কালে অবস্থিত, সেখানে একের পর এক প্রচণ্ড ভূমিকম্প হয়। ফলে এই অঞ্চল উষ্ণ হয়ে ওঠে, সেই সঙ্গে এখানে ভাঁজ পড়তে শুরু করে। পরে ক্যালসিয়াম কার্বনেট মিশ্রিত জলের ঝর্ণাধারার জন্ম হয়। আস্তে আস্তে ঝর্ণাজলে ক্যালসিয়াম কার্বনেট জমতে শুরু করে। এগুলো জমেই এখানে সোপানের জন্ম হয়েছে বলে প্রচলিত গল্পে জানা যায়।

দুধসাদা এই ঝর্ণাধারা বর্তমানে ইউনেস্কো কর্তৃক ঘোষিত বিশ্ব ঐতিহ্যের একটি অংশ।


সোকত্রা দ্বীপ

ইয়েমেনের সোকত্রা ভারত মহাসাগরে অবস্থিত একটি ছোট দ্বীপ। এই দ্বীপের উদ্ভিদ, প্রাণিজগৎ পর্যবেক্ষণ করে যে কেউ বলবে, এটি আসলেই পৃথিবীর কোনো অংশ নয়। হয়তো অন্য কোনো পৃথিবী থেকে খুলে পৃথিবীতে এসে পড়া একটি ভূখণ্ড। এর সৌন্দর্যে বিমোহিত হয়ে অনেকে তো দাবিই করে বসেন, এটি আসলে স্বর্গেরই খুলে পড়া ছোট্ট একটা অংশ।

সোকত্রার জীববৈচিত্র্য খুবই বিচিত্র। সর্বত্র সুগন্ধে ভরা এই দ্বীপ যে কারো পক্ষেই ছুটি কাটানোর প্রিয় একটি স্থান হতে পারে।

ধারণা করা হয়, প্রায় ৬০ লাখ বছর আগে এই দ্বীপের জন্ম। এখানে প্রাণিজগতের প্রায় নয়শ’ প্রজাতির বাস। তবে অবাক ব্যাপারটি হলো, এই নয়শ’ প্রজাতির বেশিরভাগই সোকত্রা ছাড়া বিশ্বের অন্য কোথাও দেখা যায় না।

এখানের একটি উদ্ভিতের নাম ‘ড্রাগন’স ব্লাড’ বা ড্রাগনের রক্ত। ক্রিস্টাল পদার্থ তৈরিতে এই উদ্ভিদ ব্যবহৃত হয়। এছাড়া এখানে রয়েছে ‘ডেজার্ট রোজ’ বা মরুভূমির গোলাপ, যা যে কাউকে মুগ্ধ করবে। আরো আছে এলিফ্যান্টস লেগ বা হাতীর পা।

বেলিজ ব্লু হোল


মধ্য আমেরিকার বেলিজে অবস্থিত সাগরতলের এই গহ্বর ডুবুরি ও সমুদ্রবিজ্ঞানীদের কাছে দারুণ এক বিস্ময়। সেই সঙ্গে এর অপরূপ সৌন্দর্য বিমোহিত করে যেকোনো মানুষকে।
ব্লু হোলের নামকরণের পেছনে এর বৃত্তাকার আকৃতিই সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে। প্রায় তিনশ’ মিটারজুড়ে এই গহ্বরের গভীরতা প্রায় ১২৪ মিটার। ধারণা করা হয়, প্লাইস্টোসিন যুগে হিমবাহ থেকে এই গহ্বরের উৎপত্তি। সে সময় সাগরতলের উচ্চতা ছিল অনেক কম। বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণে দেখা যায়, অন্তত দেড় লাখ বছর আগে এই গহ্বর সৃষ্টির প্রক্রিয়া শুরু হয়। এরপর ধীরে ধীরে বিভিন্ন সময়ে এর পরিবর্তন আসে, সাগরতলের উচ্চতা বৃদ্ধি পেতে থাকে। বর্তমানে এটি ইউনেস্কো ঘোষিত বিশ্ব ঐতিহ্যের একটি অংশ।

ডুবুরি ও বিজ্ঞানীদের অনুসন্ধানে ব্লু হোলের ভেতর এখন পর্যন্ত অনেক নতুন প্রজাতির প্রানি ও উদ্ভিদ আবিষ্কৃত হয়েছে।  এর ভেতরের অসংখ্য চুনাপাথরের খাম ও ঝুলন্ত দন্ড এই গহ্বরকে আরো বিস্ময়ে ভরে দিয়েছে।

আফ্রিকার চোখ


উত্তর আফ্রিকার দেশ মৌরিতানিয়ায় সাহারা মরুভূমিতে এই বৃত্ত আফ্রিকার চোখ বলে বিশ্বব্যাপী পরিচিত। এটি সাহারার চোখ বলেও অনেকের কাছে পরিচিত। তবে খালিচোখে দেখলে বা কাছে থেকে দেখলে এই বৃত্ত কারোর নজরে পড়বে না। কৃত্রিম উপগ্রহ থেকে তোলা ছবির মাধ্যমেই প্রথম এই অঞ্চল বিজ্ঞানীদের নজরে পড়ে। কীভাবে এই অঞ্চলের উৎপত্তি হল, তা নিয়ে সকল মহলেই বড় ধরণের প্রশ্ন রয়ে গেছে। কয়েকজন বিজ্ঞানী মনে করেন, হাজার বছর আগে পারমাণবিক বিস্ফোরণের কারণেই এমন বৃত্তের উদ্ভব।

গভীরভাবে ক্ষয়প্রাপ্ত, হালকা উপবৃত্তাকার এই আফ্রিকার চোখের ব্যাস প্রায় ৪০ কিলোমিটার। এর ভেতরে ও বাহিরের গঠনপ্রকৃতি ভিন্ন। ভেতরের দিকে এটি আগ্নেয় শিলা, কার্বনাইট ও কিম্বারলাইট পাথর দিয়ে গঠিত। আর বাইরের দিকের বেশিরভাগই কার্বনাইট ও কিম্বারলাইটের পাথর। বিজ্ঞানীরা মনে করেন, এই কার্বনাইট ও কিম্বারলাইট পাথরগুলো অন্তত একশ’ কোটি বছর আগের। এই হিসাবে হাজার বছর আগের পারমাণবিক বিস্ফোরণের তত্ত্ব কিছুতেই সমর্থনযোগ্য নয়।
পামুক্কালে হল বিস্ময়কর এক লেক।এই ঝরনাধারা অত্যন্ত জনপ্রিয় ও পর্যটক আকর্ষণীয় একটি জায়গা। তবে এই অসম্ভব সুন্দর অদ্ভুত জায়গাটির জন্ম কিভাবে হয়েছে, তার কোনো সুস্পষ্ট ইতিহাস মানুষের জানা নেই।

পামুক্কালে এর অর্থ হল তুর্কী ভাষায় “তুলার প্রাসাদ”। ধসাদা হওয়ার কারণেই সম্ভবত এমন নামকরণ। পামুক্কালের দৈর্ঘ্য দুই ২৭০০ মিটার, প্রস্থ ৬০০ মিটার ও উচ্চতা ১৬০ মিটার
পামুক্কালে তুরস্কে অবস্থিত। তুরস্কের এক অংশ এশিয়া মহাদেশে আর বাকি অংশ টুকু হল ইউরোপ মহাদেশে। এই আজব দেশেরই এক আজব জায়গা হল এই পামুক্কালে।


পামুক্কালে মেন্দেরেস নদীর উপত্যকায় অবস্থিত, সেখানকার লেকগুলো দেখলে আশ্চর্য না হয়ে উপায় নেই। সাদা লবনের বিশাল বিশাল স্তরে ছোট্ট ছোট্ট সব জলাধার।   পামুক্কালেতে ১৭টি উষ্ণ জলধারা রয়েছে ।

হাজার বছর ধরে মানুষ পামুক্কালের জলে স্নান করে আসছে।। তারা বিশ্বাস করে ওখানে স্নান করলে শরীর ভালো থাকে। আজকাল আর সেখানে স্নান করতে পারেনা।কারন তুরস্ক সরকার এই পামুক্কালে স্নান করায় নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে, যাতে কেউ সেগুলোর ক্ষতি করতে না পারে।জলের নিচের জমা হওয়া পলিকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষার জন্যে পামুক্কালের জলধারায় জুতো পরে নামা নিষিদ্ধ করা হয়েছে।


অনেক বছর আগে বড় রকমের ভূমিকম্প হয় , সেই ভূমিকম্পে মাটিতে অনেক ফাটল তৈরি হয়েছিল, সেখান থেকে মাটির নিচের ক্যালসিয়াম কার্বোনেটে ভর্তি গরম জল বেরিয়ে এসে ওপরে জমা হতে থাকে। এই গরম জল বাষ্প হয়ে উড়ে গিয়ে শুধু ক্যালসিয়াম কার্বোনেট রয়ে যায়। ক্যালসিয়াম কার্বোনেট হল একপ্রকার লবন। এই লবন গুলোই জমে তৈরি হল লেক গুলোর শক্ত কাঠামো।আর সেখানে বৃষ্টির জল জমে তৈরি হল এই আজব লেক গুলি। এই ভাবেই লেক গুলির জন্ম হয়েছে। এই লেক গুলি প্রায় বিশ লাখ বছরের পুরানো বলে মনে করা হয়।
দুধসাদা এই ঝরনাধারা ১৯৮৮ সালে পামুক্কালে বিশ্বের ঐতিহ্য স্থান হিসাবে স্বীকৃতী পেয়েছে।



ইয়েমেনের সোকত্রা ভারত মহাসাগরে অবস্থিত একটি ছোট দ্বীপ। এই দ্বীপের উদ্ভিদ, প্রাণিজগৎ পর্যবেক্ষণ করে যে কেউ বলবে, এটি আসলেই পৃথিবীর কোনো অংশ নয়। হয়তো অন্য কোনো পৃথিবী থেকে খুলে পৃথিবীতে এসে পড়া একটি ভূখণ্ড। এর সৌন্দর্যে বিমোহিত হয়ে অনেকে তো দাবিই করে বসেন, এটি আসলে স্বর্গেরই খুলে পড়া ছোট্ট একটা অংশ।


সোকত্রার জীববৈচিত্র্য খুবই বিচিত্র। সর্বত্র সুগন্ধে ভরা এই দ্বীপ যে কারো পক্ষেই ছুটি কাটানোর প্রিয় একটি স্থান হতে পারে।
ধারণা করা হয়, প্রায় ৬০ লাখ বছর আগে এই দ্বীপের জন্ম। এখানে প্রাণিজগতের প্রায় ৯০০ প্রজাতির বাস। তবে অবাক ব্যাপারটি হলো, এই ৯০০ প্রজাতির বেশির ভাগই সোকত্রা ছাড়া বিশ্বের অন্য কোথাও দেখা যায় না।
এখানের একটি উদ্ভিদের নাম ড্রাগনস ব্লাড বা ড্রাগনের রক্ত। ক্রিস্টাল পদার্থ তৈরিতে এই উদ্ভিদ ব্যবহৃত হয়। এ ছাড়া এখানে রয়েছে ‘ডেজার্ট রোজ’ বা মরুভূমির গোলাপ, যা যে কাউকে মুগ্ধ করবে। আরো আছে এলিফ্যান্টস লেগ বা হাতির পা।





হ্রদ বা লেক প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এক অনন্য অনুষঙ্গ। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের নিদর্শন হিসেবে লেকের কদর তাই সবসময়ই বেশি। লেকের নজরকাড়া জল আর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে মুগ্ধ হন সৌন্দর্যপিপাসুরা। পৃথিবীজুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে অনাবিল সৌন্দর্যের অসংখ্য লেক। এসকল লেকের মধ্যে কিছু লেক বৈশিষ্ট্য ও সৌন্দর্যে ভিন্ন মাত্রার অধিকারী। তেমনই ভিন্ন সৌন্দর্যের একটি লেক হল কানাডার স্পটেড লেক। আসুন তাহলে জেনে নেয়া যাক স্পটেড লেক সম্পর্কে কিছু তথ্য।


বহু বছর ধরেই ব্রিটিশ কলাম্বিয়ার ওসইউস শহরের স্থানীয় জনগোষ্ঠী ওকানাগান (সিল্কজ) এই লেকটির প্রার্থনা করে আসছে। প্রকৃতিগত বিচিত্র বৈশিষ্ট্য দেখলেই এর কারণ বোঝা যায়।
কানাডার ব্রিটিশ কলম্বিয়ার ওসোয়ো তে একটি মরুভূমির পাশে স্পটেড লেক অবস্থিত। স্থানীয়রা এই লেককে ক্লিলাক নামে ডেকে থাকে। এই লেকটি দেখতে আর দশটি লেকের মত নয়। এর গঠন থেকে শুরু করে পানির রঙ সবকিছুতেই রয়েছে বৈচিত্র্যতার ছোঁয়া। অনেকটা গোলাকৃতির ছোট ছোট জলাধারের সমন্বয়ে গড়ে উঠেছে এই লেক। আর এর জলের রঙও নিয়ত পরিবর্তিত হয়। একেক সময় এই লেকের জলের রঙ একেক রকম হয়। বিভিন্ন রঙের পানি আর বিচিত্র গঠনের জন্য এই লেক হয়ে উঠেছে আকর্ষণীয় এক পর্যটন নিদর্শন। মূলত গ্রীষ্মকালে এই লেকের বিচিত্র রূপ চোখে পড়ে। ছোট ছোট জলাধারগুলোর কোথাও সাদা, কোথাও হলুদ, কোথাও বা সবুজ এরকম নানা রঙে ভাগ হয়ে থাকে লেকের পানি। যা দেখতে অত্যন্ত অপূর্ব লাগে।


এই নানান রঙের পানি ও বিচিত্র বৈশিষ্ট্যের কারণ হল খনিজ লবণ। এই লেকের পানি প্রচুর লবণ আর সামুদ্রিক খনিজে পরিপূর্ণ। এখানে আছে ম্যাগনেসিয়াম সালফেট, টাইটানিয়াম,ক্যালসিয়াম, সোডিয়াম সালফেটসহ আরো নানান খনিজ পদার্থ।

গ্রীষ্মের রোদে এই পানি বাষ্পীভূত হতে থাকার ফলে লেকের পানির ওপরের স্তরে বিভিন্ন খনিজ লবণের নানা নকশা তৈরি হতে থাকে। দূর থেকে তখন সেগুলোকে রঙিন গোল গোল বৃত্তের মতো দেখা যায়। এগুলো একেকটি ছোট জলাধার আর এগুলোর পানির রঙ হয় নানান বর্ণের। একেক খনিজের কম-বেশি উপস্থিতির কারণে একেকটি জলাধারের রং একেক রকম হয়। আবার লেকের পানিতে থাকা ছোট ছোট উদ্ভিদ কণার কারণেও পানির রং কখনো লাল, আবার কখনো নীল বা সবুজ দেখা যায়।



স্থানীয় আদিবাসীরা মনে করেন, এই লেকটির আছে রোগ নিরাময় কারী ক্ষমতা। কাটা জায়গায় এই পানির ছিটা দিলে নাকি ক্ষত ভালো হয়ে যায়। প্রতিটি পুলের পানি আলাদা আলাদা রোগ নিরাময় করতে পারে। এই লেকের পানি নিয়ে তাদের মধ্যে অনেক ধরণের বিশ্বাস রয়েছে। তারা এটিকে পবিত্র লেক বলে মনে করেন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় বিস্ফোরক তৈরিতেও এই লেকের লবণ ব্যবহার করা হয়েছিল। এই লেকটি পূর্বে ব্যক্তিগত মালিকানার অধীনে ছিল। পরবর্তীতে স্থানীয় আদিবাসীরা এটিকে সংরক্ষণের জন্য কিনে নেন। এই লেকটির কাছে ছোট্ট একটি বাড়ি আছে এবং তাতে একটি সাইনবোর্ডে এই লেকের রোগ নিরাময়ের গুন সম্পর্কে নানান কিছু লিখা আছে। এই লেকের খুব কাছে আপনি যেতে পারবেন না। এই লেকটিকে ঘিরে বিভিন্ন রকম কুসংস্কার থাকায় এর পার্শ্ববর্তী উপজাতীয় এলাকায় বা এর ধারের কাছে যাওয়া অনেকটা নিষিদ্ধই বলা চলে। তবে একটু দূর থেকেই এর পরিপূর্ণ সৌন্দর্য দেখা সম্ভব একে। এই লেক দেখতে যাওয়ার সেরা সময় হল জুন থেকে সেপ্টেম্বর।এই সময় গেলে আপনি এর নানান রঙের জলের সৌন্দর্য একসাথে দেখতে পাবেন।

 এই পৃথিবী পরিপূর্ণ নানান বিচিত্রতায়। অদ্ভুত তার রহস্যময় বিন্যাস, একই সাথে সুন্দর, অপূর্ব। রহস্য মানুষকে সবসময়ই টানে। তাই, ভয় পেয়ে, প্রশ্নের উত্তর না পেয়ে থেমে থাকেনি সে। বার বার কাছে গেছে রহস্যের, কখনো প্রাণের বিনিময়ে উত্তর খুঁজে এনেছে আমাদের জন্য। বিশ্বের অগুণতি বিস্ময়ের মধ্যে গ্রেট ব্লু হোল একটি। 

দ্যা গ্রেট ব্লু হোল

দ্যা গ্রেট ব্লু হোল এর অবস্থান মধ্য আমেরিকার দেশ বেলিজ এর সমুদ্র উপকূলে। এটি একটি বৃহৎ সমুদ্রগর্ভস্থ গর্ত। বেলিজ সিটি থেকে প্রায় ৬০ মাইল দূরে বেরিয়ার রিফ রিজার্ভ সিস্টেম অবস্থিত এ এই গর্তের অবস্থান। এটিকে বিশ্বের বৃহত্তম সমুদ্র গর্ত হিসাবে ধরা হয়। এটির আকৃতির প্রায় বৃত্তাকার, ব্যাসার্ধ ৩০০ মিটার (৯৮৪ ফুট) এবং ১২৪ মিটার (৪০৭ ফুট) গভীরতা রয়েছে।

এটি পানির গভীরে একটি গহ্বর। গবেষকদের মধ্যে পৃথিবীতে যে কয়টি এমন গহ্বর রয়েছে এটি তাদের মধ্যে সবচেয়ে বড়। গোলাকৃতির গহ্বরটি চমৎকার নীল রঙের কারণে আলাদা আকর্ষণের তৈরি করে। এটি একটি উপহ্রদের প্রবাল প্রাচীরের মধ্যে অবস্থিত যার নাম লাইটহাউজ রিফ। পুরো গহ্বরটিকে ঘিরে আছে একটি কোরাল দ্বীপ যার তীরে এসে গাঢ় নীল রঙের পানি হালকা ফিরোজায় রূপ নিয়েছে। এখানে পানির গভীরতাও কম। কোরাল দ্বীপটি একটি চমৎকার শেড এনে দিয়েছে গহ্বরটিকে। উপর থেকে দেখলে নীলের এই বর্ণচ্ছটা মুগ্ধ করবে আপনাকে।


ডুবে থাকা গহ্বরটি সৃষ্টি হয় সেই তুষারযুগে। এটি ছিল একটি চুনাপাথরের গুহা আর তখন সমুদ্রের গভীরতা ছিল অনেক কম। যতই সমুদ্রপৃষ্ঠের গভীরতা বাড়তে থাকে ততই গুহাটি ডুবে যেতে থাকে পানির নিচে। আর একসময় পুরোপুরি তলিয়ে যায়, সৃষ্টি হয় সমুদ্রে 'ভার্টিক্যাল কেভ'। সমুদ্রে ডাইভ করে বেড়াতে ভালবাসেন যারা তারাই মূলত এখানে যান এবং উপভোগ করেন গুহাটির ভৌগলিক গঠন যা এখন পরিণত হয়েছে পানির নীচের গহ্বরে। 

এরকমই একজন সমুদ্র তলদেশে বিচরণকারী জ্যাক কস্টিউ, তিনিই এই এলাকাটিকে বিশ্বের কাছে তুলে ধরেন। ১৯৭১ সালে তিনি ঘোষণা করেন, এটি বিশ্বের সবচেয়ে চমৎকার ১০ টি ডাইভিং স্পটের একটি। কস্টিউ যখন ক্যালিপসো ভ্রমণ করছিলেন তখন তিনি এই গহ্বরের গভীরে অনুসন্ধান করেন এবং নিশ্চিৎ করেন যে এটি চুনা পাথরের গুহার গঠন থেকে সৃষ্ট। প্রচুর স্ট্যালাকটাইট এবং স্ট্যালাগমাইট পাওয়া গিয়েছিল গহ্বরটির তলদেশে। কোন কোনটা এমনকি ৯-১২ মিটার দৈর্ঘ্যের ছিল। 
এই অপূর্ব ভৌগলিক গঠন এখনো দেখতে পাওয়া যাবে, কিন্তু ডাইভিং করে যেতে হবে। আর সেজন্য আপনাকে হতে হবে অভিজ্ঞ ডাইভার। বলা হয় যে, গুহাটির যত গভীরে যাওয়া যায়, পানি ততই পরিষ্কার এর গঠন ততই জটিল। দ্যা গ্রেট ব্লু হোল, বেলিজ ব্যারিয়ার রিফ রিজার্ভ সিস্টেমের একটি অংশ। বেলিজ বেরিয়ার রিফ ইউনেস্কো ঘোষিত বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ।

সমুদ্রের বুকে কীভাবে সৃষ্টি হল এই গর্ত?

ধারনা করা হয় ৬৫ হাজার বছর আগে পৃথিবীতে শেষবারের মতো যখন বরফ রাজত্ব করছে, পৃথিবীর সব পানি জমে জমে জড়ো হয়েছিল মেরু অঞ্চলে। সমুদ্রপৃষ্ঠও তাই তখন ছিল এখনকার চেয়ে অনেক নিচুতে। বেলিজে তখন সমুদ্রপৃষ্ঠ ছিল এখনকার চেয়েও আরো ১৫০ মিটার নিচুতে। তখন ক্যালসিয়াম কার্বনেট জাতীয় পদার্থ জমে তৈরি হয় পাথর। আর সেই পাথর দিয়ে সৃষ্টি হয় কেভের বিশাল কাঠামো। কিন্তু যখন বরফ আবার গলতে শুরু করে, সাগরের পানির উচ্চতাও বাড়তে শুরু করল। পানির নিচে ডুবে যায় সেই কাঠামো। মোটামুটি আজ থেকে ১০ হাজার বছর আগে পুরো কেভ নেটওয়ার্কই একেবারে পানির নিচে ডুবে যায়। আর তখনই কয়েক জায়গার পাথর ভেঙে সৃষ্টি হয় এই ব্লু হোলগুলো।

কেমন দেখতে এই গর্তের ভেতরটা?


হোলের ভিতর পুরো আলাদা একটা জগত চলছে।  এই জায়গায় দেখার হচ্ছে স্কুবা কতিপয় জলজ প্রাণী, যারা অতল গভীরে থাকে। নানা বিরল প্রজাতির প্রচুর প্রাণী যা শুধুমাত্র এই স্থানে পাওয়া যায়। সেখানে যে কতো আজব আজব প্রাণী আছে, তার কোনো ইয়ত্তা নেই! এখনো চলছে নতুন প্রাণী খোঁজার প্রক্রিয়া। এটি খুব পর্যটক প্রিয়, প্রতি বছর বিভিন্ন দেশ থেকে মানুষ আসে একবার এই গ্রেট ব্লু হোলকে দেখতে।
জায়ান্টস্ কজওয়ে (Giant’s Causeway) যার বাংলা অর্থ দৈত্যের, বিশালাকার বাঁধানো পথ বা রাস্তা। জায়ান্টস্ কজওয়ে ব্রিটেনের উত্তর আয়ারল্যান্ডে অবস্থিত যা প্রায় ৪০ হাজার হেক্টাগোনাল পাথরের কলামে তৈরী একটি প্রাকৃতিক রাস্তা বা রাস্তার পাশের দালান বা সাওপাওলো শহরের রেপ্লিকা বা যাই বলেন না কেনো। এটা আপনাকে সমান অবাক করবে। আয়ারল্যান্ড এর এটি একটি প্রসিদ্ধ পর্যটন এলাকা যা তাদের অর্থনীতিতে অনেক অবদান রাখে।


আয়ারল্যান্ড এর বাসমিল শহরে থেকে প্রায় ৪.৮ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে এই প্রাকৃতিক রাস্তার অবস্থান। ইউনেস্কো কর্তৃক ১৯৮৭ সালে এটিকে বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী (World Heritage) স্থাপনা  হিসেবে তালিকা ভুক্ত করে আর বিশেষ করে ১৯৮৬ সালের দিকে  উত্তর আয়ারল্যান্ড সরকার এটিকে জাতীয় মর্যাদার স্থানে অন্তর্ভুক্ত করে।  আজ থেকে প্রায় ৬০ মিলিয়ন বছর আগে বিশাল এক অগ্নুৎপাতের ফলে এখানে একটি লাভার মালভূমি তৈরি হয়েছিলো। আর ঐসকল  লাভা ঠাণ্ডা অবস্থায় ভাগ ভাগ হয়ে স্তম্ভে পরিণত হয় এবং এই স্তম্ব একটা সুনিপুণ আকৃতিতে রূপান্তরিত হয়। দেখে মনেই হবে না যে এটা একটি প্রকৃতির খামখেয়ালি।


এই স্তম্ভগুলি দেখতে এত নিখুঁত যে মনে হয় যেন এগুলি মানুষের তৈরি করা কোন শৈল্পিক শহর। প্রায় ৬০ মিলিয়ন বছর আগে এখানে একটি প্রচন্ড আগ্নেয়গিরির বিস্ফারণ হয়। লাভা এক যায়গায় জমা হয় এবং লাভা বিভিন্ন স্তর স্তরে জমাট বাধতে থাকে। যেহেতু এক এক যায়গার তাপমাত্রা এক এক রকম ছিলো, তাই বিভিন্ন স্থানের জমাট বাধার প্রক্রিয়া বিভিন্ন হয় । তবে প্রশ্ন থেকেই যায় যে সব গুলো পাথর একই রকম ভাবে জমাট বাধছে কেন! জমাট বাধার সময়ের তারতম্যের জন্য উপর নীচ হয়েছে, কিন্তু আকৃতিগত মিল কি ভাবে সম্ভব! থাক, কিছু রহস্যা এই প্রকৃতিতে থাক। কিছু জিনিস এর ব্যাখ্যা নেই এবং ব্যাখ্যাটি না থাকাই শ্রেয়।


আপনারা যারা সাওপাওলো শহর দেখেছেন তারা দেখবেন সাওপাওলো শহর কেমন অদ্ভুত সুন্দর লাগে। যেন পুরো পাহাড় কেটে কেটে বাড়ি বানানো। ব্যাপারটি আরো ভাল ভাবে বোঝানো যাবে যদি আপনারা কল্পনা করেন ঢাকা শহর একটি পাহাড়ের উপর অবস্থিত। আবার লাভার জন্য ফ্লাট রাস্তা তৈরি হয়েছে যা দেখে মনে হবে (সবারই এটা  হয়) যে এটা একটি অত্যন্ত পরিকল্পিত রাস্তা। তবে এর পুরুতা অনেক অনেক বেশী। এটা স্থলভাগে যেমন বিস্তৃত ঠিক জলভাগেও বিস্তৃত। এমন কি জল ভাগের মধ্যে আছে ১৮৩ মিটার পর্যন্ত। আর স্তম্ভ গুলো বিভিন্ন আকৃতির যেমন প্রায় গুলোই ১৫ ইঞ্চি ব্যাস থেকে ২০ ইঞ্চি ব্যাস এর মধ্যে। যা সুন্দর ভাবে একটির পরে আরেক টি সাজানো।


পাথর গুলোর স্তর স্তর হয়ে জমাট বেধেছে। দেখতে অনেকটা বাংলাদেশের হিয়ারিং রাস্তার মত (যেন সরকারি প্রজেক্টে তৈরি)। এর তরল পাথরের স্তম্ভগুলো আভ্যন্তরিন লাভার চাপে স্তুপ আকার সেফের আকার ধারণ করেছে যা  দ্বারা সৃষ্টি হয়েছে প্রাকৃত রাস্তা, শহরের সেফ এবং রহস্যময় স্থাপনা। বিভিন্ন স্থানে স্তম্ভগুলোর উচ্চতা বিভিন্ন রকম কোথাও ১২ মিটার আবার কোথাও এর উচ্চতা অনেক কম। আর এটার জন্যই এই রাস্তার সৌন্দর্য এত মনোমুগ্ধকর। আজ এখানে হাজার হাজার পর্যটক যায় এই প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখতে।

 এই রহস্যময় জায়ান্ট কাজওয়ের সৃষ্টি নিয়ে অনেক গল্প, উপকথা প্রচলিত আছে, যেমন  কারো কারো মতে, দৈত্যদের এক বংশ স্টাফাতে যাওয়ার পথে তাদের নিজেদের জন্য চলাচলের পথ হিসেবে এ রাস্তা তৈরি করেছিল। কারণ এই স্টাফাতেও এ রকম দেখতে একটি বাঁধানো পথ রয়েছে। আবার কারো কারো মতে, দুটি দৈত্যের মধ্যে লড়াইয়ের ফলে স্থানীয় জায়ান্টস গ্রেভ নির্মিত হয় আর তা পরে এই সেফে আসে। আবার অনেকে মনে করে, আয়ারল্যান্ডের জায়ান্ট ফিন-ম্যাককোল স্কটল্যান্ডের (ইংল্যান্ড এর অংশ) সাথে যুদ্ধ করার জন্য যখন স্কটল্যান্ড দিকে যাচ্ছিলেন কখন এই পথটি তৈরি করেন।