হ্রদ বা লেক প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এক অনন্য অনুষঙ্গ। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের নিদর্শন হিসেবে লেকের কদর তাই সবসময়ই বেশি। লেকের নজরকাড়া জল আর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে মুগ্ধ হন সৌন্দর্যপিপাসুরা। পৃথিবীজুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে অনাবিল সৌন্দর্যের অসংখ্য লেক। এসকল লেকের মধ্যে কিছু লেক বৈশিষ্ট্য ও সৌন্দর্যে ভিন্ন মাত্রার অধিকারী। তেমনই ভিন্ন সৌন্দর্যের একটি লেক হল কানাডার স্পটেড লেক। আসুন তাহলে জেনে নেয়া যাক স্পটেড লেক সম্পর্কে কিছু তথ্য।


বহু বছর ধরেই ব্রিটিশ কলাম্বিয়ার ওসইউস শহরের স্থানীয় জনগোষ্ঠী ওকানাগান (সিল্কজ) এই লেকটির প্রার্থনা করে আসছে। প্রকৃতিগত বিচিত্র বৈশিষ্ট্য দেখলেই এর কারণ বোঝা যায়।
কানাডার ব্রিটিশ কলম্বিয়ার ওসোয়ো তে একটি মরুভূমির পাশে স্পটেড লেক অবস্থিত। স্থানীয়রা এই লেককে ক্লিলাক নামে ডেকে থাকে। এই লেকটি দেখতে আর দশটি লেকের মত নয়। এর গঠন থেকে শুরু করে পানির রঙ সবকিছুতেই রয়েছে বৈচিত্র্যতার ছোঁয়া। অনেকটা গোলাকৃতির ছোট ছোট জলাধারের সমন্বয়ে গড়ে উঠেছে এই লেক। আর এর জলের রঙও নিয়ত পরিবর্তিত হয়। একেক সময় এই লেকের জলের রঙ একেক রকম হয়। বিভিন্ন রঙের পানি আর বিচিত্র গঠনের জন্য এই লেক হয়ে উঠেছে আকর্ষণীয় এক পর্যটন নিদর্শন। মূলত গ্রীষ্মকালে এই লেকের বিচিত্র রূপ চোখে পড়ে। ছোট ছোট জলাধারগুলোর কোথাও সাদা, কোথাও হলুদ, কোথাও বা সবুজ এরকম নানা রঙে ভাগ হয়ে থাকে লেকের পানি। যা দেখতে অত্যন্ত অপূর্ব লাগে।


এই নানান রঙের পানি ও বিচিত্র বৈশিষ্ট্যের কারণ হল খনিজ লবণ। এই লেকের পানি প্রচুর লবণ আর সামুদ্রিক খনিজে পরিপূর্ণ। এখানে আছে ম্যাগনেসিয়াম সালফেট, টাইটানিয়াম,ক্যালসিয়াম, সোডিয়াম সালফেটসহ আরো নানান খনিজ পদার্থ।

গ্রীষ্মের রোদে এই পানি বাষ্পীভূত হতে থাকার ফলে লেকের পানির ওপরের স্তরে বিভিন্ন খনিজ লবণের নানা নকশা তৈরি হতে থাকে। দূর থেকে তখন সেগুলোকে রঙিন গোল গোল বৃত্তের মতো দেখা যায়। এগুলো একেকটি ছোট জলাধার আর এগুলোর পানির রঙ হয় নানান বর্ণের। একেক খনিজের কম-বেশি উপস্থিতির কারণে একেকটি জলাধারের রং একেক রকম হয়। আবার লেকের পানিতে থাকা ছোট ছোট উদ্ভিদ কণার কারণেও পানির রং কখনো লাল, আবার কখনো নীল বা সবুজ দেখা যায়।



স্থানীয় আদিবাসীরা মনে করেন, এই লেকটির আছে রোগ নিরাময় কারী ক্ষমতা। কাটা জায়গায় এই পানির ছিটা দিলে নাকি ক্ষত ভালো হয়ে যায়। প্রতিটি পুলের পানি আলাদা আলাদা রোগ নিরাময় করতে পারে। এই লেকের পানি নিয়ে তাদের মধ্যে অনেক ধরণের বিশ্বাস রয়েছে। তারা এটিকে পবিত্র লেক বলে মনে করেন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় বিস্ফোরক তৈরিতেও এই লেকের লবণ ব্যবহার করা হয়েছিল। এই লেকটি পূর্বে ব্যক্তিগত মালিকানার অধীনে ছিল। পরবর্তীতে স্থানীয় আদিবাসীরা এটিকে সংরক্ষণের জন্য কিনে নেন। এই লেকটির কাছে ছোট্ট একটি বাড়ি আছে এবং তাতে একটি সাইনবোর্ডে এই লেকের রোগ নিরাময়ের গুন সম্পর্কে নানান কিছু লিখা আছে। এই লেকের খুব কাছে আপনি যেতে পারবেন না। এই লেকটিকে ঘিরে বিভিন্ন রকম কুসংস্কার থাকায় এর পার্শ্ববর্তী উপজাতীয় এলাকায় বা এর ধারের কাছে যাওয়া অনেকটা নিষিদ্ধই বলা চলে। তবে একটু দূর থেকেই এর পরিপূর্ণ সৌন্দর্য দেখা সম্ভব একে। এই লেক দেখতে যাওয়ার সেরা সময় হল জুন থেকে সেপ্টেম্বর।এই সময় গেলে আপনি এর নানান রঙের জলের সৌন্দর্য একসাথে দেখতে পাবেন।

Share To:

Naim Khan

Post A Comment:

0 comments so far,add yours