এই পৃথিবী পরিপূর্ণ নানান বিচিত্রতায়। অদ্ভুত তার রহস্যময় বিন্যাস, একই সাথে সুন্দর, অপূর্ব। রহস্য মানুষকে সবসময়ই টানে। তাই, ভয় পেয়ে, প্রশ্নের উত্তর না পেয়ে থেমে থাকেনি সে। বার বার কাছে গেছে রহস্যের, কখনো প্রাণের বিনিময়ে উত্তর খুঁজে এনেছে আমাদের জন্য। বিশ্বের অগুণতি বিস্ময়ের মধ্যে গ্রেট ব্লু হোল একটি। 

দ্যা গ্রেট ব্লু হোল

দ্যা গ্রেট ব্লু হোল এর অবস্থান মধ্য আমেরিকার দেশ বেলিজ এর সমুদ্র উপকূলে। এটি একটি বৃহৎ সমুদ্রগর্ভস্থ গর্ত। বেলিজ সিটি থেকে প্রায় ৬০ মাইল দূরে বেরিয়ার রিফ রিজার্ভ সিস্টেম অবস্থিত এ এই গর্তের অবস্থান। এটিকে বিশ্বের বৃহত্তম সমুদ্র গর্ত হিসাবে ধরা হয়। এটির আকৃতির প্রায় বৃত্তাকার, ব্যাসার্ধ ৩০০ মিটার (৯৮৪ ফুট) এবং ১২৪ মিটার (৪০৭ ফুট) গভীরতা রয়েছে।

এটি পানির গভীরে একটি গহ্বর। গবেষকদের মধ্যে পৃথিবীতে যে কয়টি এমন গহ্বর রয়েছে এটি তাদের মধ্যে সবচেয়ে বড়। গোলাকৃতির গহ্বরটি চমৎকার নীল রঙের কারণে আলাদা আকর্ষণের তৈরি করে। এটি একটি উপহ্রদের প্রবাল প্রাচীরের মধ্যে অবস্থিত যার নাম লাইটহাউজ রিফ। পুরো গহ্বরটিকে ঘিরে আছে একটি কোরাল দ্বীপ যার তীরে এসে গাঢ় নীল রঙের পানি হালকা ফিরোজায় রূপ নিয়েছে। এখানে পানির গভীরতাও কম। কোরাল দ্বীপটি একটি চমৎকার শেড এনে দিয়েছে গহ্বরটিকে। উপর থেকে দেখলে নীলের এই বর্ণচ্ছটা মুগ্ধ করবে আপনাকে।


ডুবে থাকা গহ্বরটি সৃষ্টি হয় সেই তুষারযুগে। এটি ছিল একটি চুনাপাথরের গুহা আর তখন সমুদ্রের গভীরতা ছিল অনেক কম। যতই সমুদ্রপৃষ্ঠের গভীরতা বাড়তে থাকে ততই গুহাটি ডুবে যেতে থাকে পানির নিচে। আর একসময় পুরোপুরি তলিয়ে যায়, সৃষ্টি হয় সমুদ্রে 'ভার্টিক্যাল কেভ'। সমুদ্রে ডাইভ করে বেড়াতে ভালবাসেন যারা তারাই মূলত এখানে যান এবং উপভোগ করেন গুহাটির ভৌগলিক গঠন যা এখন পরিণত হয়েছে পানির নীচের গহ্বরে। 

এরকমই একজন সমুদ্র তলদেশে বিচরণকারী জ্যাক কস্টিউ, তিনিই এই এলাকাটিকে বিশ্বের কাছে তুলে ধরেন। ১৯৭১ সালে তিনি ঘোষণা করেন, এটি বিশ্বের সবচেয়ে চমৎকার ১০ টি ডাইভিং স্পটের একটি। কস্টিউ যখন ক্যালিপসো ভ্রমণ করছিলেন তখন তিনি এই গহ্বরের গভীরে অনুসন্ধান করেন এবং নিশ্চিৎ করেন যে এটি চুনা পাথরের গুহার গঠন থেকে সৃষ্ট। প্রচুর স্ট্যালাকটাইট এবং স্ট্যালাগমাইট পাওয়া গিয়েছিল গহ্বরটির তলদেশে। কোন কোনটা এমনকি ৯-১২ মিটার দৈর্ঘ্যের ছিল। 
এই অপূর্ব ভৌগলিক গঠন এখনো দেখতে পাওয়া যাবে, কিন্তু ডাইভিং করে যেতে হবে। আর সেজন্য আপনাকে হতে হবে অভিজ্ঞ ডাইভার। বলা হয় যে, গুহাটির যত গভীরে যাওয়া যায়, পানি ততই পরিষ্কার এর গঠন ততই জটিল। দ্যা গ্রেট ব্লু হোল, বেলিজ ব্যারিয়ার রিফ রিজার্ভ সিস্টেমের একটি অংশ। বেলিজ বেরিয়ার রিফ ইউনেস্কো ঘোষিত বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ।

সমুদ্রের বুকে কীভাবে সৃষ্টি হল এই গর্ত?

ধারনা করা হয় ৬৫ হাজার বছর আগে পৃথিবীতে শেষবারের মতো যখন বরফ রাজত্ব করছে, পৃথিবীর সব পানি জমে জমে জড়ো হয়েছিল মেরু অঞ্চলে। সমুদ্রপৃষ্ঠও তাই তখন ছিল এখনকার চেয়ে অনেক নিচুতে। বেলিজে তখন সমুদ্রপৃষ্ঠ ছিল এখনকার চেয়েও আরো ১৫০ মিটার নিচুতে। তখন ক্যালসিয়াম কার্বনেট জাতীয় পদার্থ জমে তৈরি হয় পাথর। আর সেই পাথর দিয়ে সৃষ্টি হয় কেভের বিশাল কাঠামো। কিন্তু যখন বরফ আবার গলতে শুরু করে, সাগরের পানির উচ্চতাও বাড়তে শুরু করল। পানির নিচে ডুবে যায় সেই কাঠামো। মোটামুটি আজ থেকে ১০ হাজার বছর আগে পুরো কেভ নেটওয়ার্কই একেবারে পানির নিচে ডুবে যায়। আর তখনই কয়েক জায়গার পাথর ভেঙে সৃষ্টি হয় এই ব্লু হোলগুলো।

কেমন দেখতে এই গর্তের ভেতরটা?


হোলের ভিতর পুরো আলাদা একটা জগত চলছে।  এই জায়গায় দেখার হচ্ছে স্কুবা কতিপয় জলজ প্রাণী, যারা অতল গভীরে থাকে। নানা বিরল প্রজাতির প্রচুর প্রাণী যা শুধুমাত্র এই স্থানে পাওয়া যায়। সেখানে যে কতো আজব আজব প্রাণী আছে, তার কোনো ইয়ত্তা নেই! এখনো চলছে নতুন প্রাণী খোঁজার প্রক্রিয়া। এটি খুব পর্যটক প্রিয়, প্রতি বছর বিভিন্ন দেশ থেকে মানুষ আসে একবার এই গ্রেট ব্লু হোলকে দেখতে।
Share To:

Naim Khan

Post A Comment:

0 comments so far,add yours