June 2019
প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের ছবির পাশে শিরোনামটি ছিল : 'সাতটি দেশে বড় ব্যবধানে এগিয়ে'। বিবিসি আরবি বিভাগ পরিচালিত যে জরিপটি গত মঙ্গলবার প্রকাশিত হয়েছে, সেটিকে এভাবেই প্রথম পাতায় তুলে ধরেছে তুরস্কের সরকার-পন্থী পত্রিকা আকসাম। যদিও তুরস্কে এরদোয়ানের দীর্ঘ শাসনামল বড় ধরণের ধাক্কা খেয়েছে ইস্তানবুলের মেয়র নির্বাচনে পরাজয়ের মধ্য দিয়ে। তবে বিবিসির এই জরিপ মি: এরদোয়ানের সমর্থকদের জন্য কিছু সান্ত্বনা আনবে। মি: এরদোয়ানের একে পার্টি যখন ইস্তানবুলের মেয়র নির্বাচনে পরাজয়ের ক্ষত নিরাময়ের চেষ্টা করছে, তখন আরব বিশ্বে তুরস্ক নেতার গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে আরো ভালো খবর নিয়ে এসেছে এই জরিপ। এই জরিপে সবগুলো আরব দেশকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। তবে এ পর্যন্ত পরিচালিত জরিপগুলোর মধ্যে এটি সবচেয়ে বড়। মধ্যপ্রাচ্য, উত্তর আফ্রিকা এবং ফিলিস্তিনসহ ১০টি দেশে ২৫ হাজারের বেশি মানুষের উপর এ জরিপ চালানো হয়েছে। জরিপে তাদের কাছে নানা বিষয়ের উপর জানতে চাওয়া হয়েছিল। ২০১৮ সালের শেষ দিকে থেকে শুরু করে ২০১৯ সালের বসন্তকালে পর্যন্ত এ জরিপের সময়কাল ছিল।

২০০২ সাল থেকে ক্ষমতায় আছেন মি: এরদোয়ান

গ্রহণযোগ্যতা 
আরব দেশগুলোর জনগন আমেরিকা, রাশিয়া এবং তুরস্কের নেতাদের কতটা ইতিবাচক ভাবে দেখে সে বিষয়ে মতামত জানতে চাওয়া হয়েছিল জরিপে। ফলাফলে দেখা গেছে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের অবস্থান সবার নিচে এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন দ্বিতীয় অবস্থানে। কিন্তু তাদের দুজনের সম্মিলিত গ্রহণযোগ্যতা তুরস্কের প্রেসিডেন্ট মি: এরদোয়ানের ধারে-কাছেও নেই। ১১টি দেশের মধ্যে সাতটি দেশে ৫০ শতাংশের বেশি উত্তরদাতা মি: এরদোয়ানের পক্ষে মতামত দিয়েছেন। প্রথম দেখায় এটা স্বাভাবিক মনে হতে পারে যে আরব দেশের মানুষ তাদের মতোই মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ আরেকটি দেশ তুরস্কের নেতৃত্বের প্রতি সহানুভূতিশীল হবে। কিন্তু ইতিহাস বলে ভিন্ন কথা।
কঠিন ইতিহাস তুরস্ক এবং আরব - এ দুটো ভিন্ন জাতি। তাদের ভাষাও আলাদা। তুরস্কের অটোম্যান সাম্রাজ্য কয়েকশ বছর ধরে মধ্যপ্রাচ্য এবং উত্তর আফ্রিকার একটি বড় অংশ শাসন করেছে। সে সময় তারা আরব দেশের জনগণকে অধিকার বঞ্চিত করেছে। বর্তমানে আরব দেশগুলোর অন্যতম বিখ্যাত শহর হচ্ছে লেবাননের রাজধানী বৈরুত। এ জায়গাটির 'মার্টার্স স্কয়ার' বা 'শহীদ চত্বর' ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে আছে। তুরস্কের অটোম্যান শাসকদের দ্বারা আরব জাতীয়তাবাদীদের হত্যার স্মৃতি বহন করছে এই চত্বর। অটোম্যান সাম্রাজ্যের পতনের পরেও সম্পর্কের কোন উন্নতি হয়নি। অটোম্যান সাম্রাজ্যেরে ভস্ম থেকে জন্ম নিয়েছে তুরস্ক প্রজাতন্ত্রের। ইস্তানবুলে খিলাফত বিলুপ্ত করে ধর্মনিরপেক্ষতার পথ বেছে নিয়েছে তুরস্ক প্রজাতন্ত্র। এই পরিবর্তন মধ্যপ্রাচ্যে ইসলামপন্থীদের বড় ধাক্কা দিয়েছিল। নতুন তুরস্কের গোড়াপত্তনের পর আরবি বর্ণমালা উঠিয়ে দেয়া হয় এবং ল্যাটিন বর্ণমালা চালু করা হয়। এর মাধ্যমে তুরস্ক পাশ্চাত্য-মুখি হয়ে উঠার পরিষ্কার ইঙ্গিত দেয়। তুরস্কের সেনাবাহিনী, যারা ধর্মনিরপেক্ষতায় ছিল প্রতিশ্রুতি-বদ্ধ এবং যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ সহযোগী। ইসরায়েলের সাথে সে অঞ্চলে যৌথ সামরিক মহড়া করতো তুরস্ক। কিন্তু সেসব দিন এখন আর নেই।
তুরস্ক এবং ফিলিস্তিনের পতাকা সমৃদ্ধ স্কার্ফ নিয়ে তুরস্কের এক র‍্যালিতে প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান।

ইসরায়েলের সমালোচক 
২০০২ সালে প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের জাস্টিস এন্ড ডেভেলপমেন্টে পার্টি ক্ষমতায় আসার পর তুরস্কের সাংস্কৃতিক এবং রাজনৈতিক পরিচয় আবারো ইসলামের দিকে ঝুঁকে পড়ে। মুসলিম বিশ্বের সাথে ঐতিহাসিক সম্পর্ক পুনরায় জাগিয়ে তোলেন তিনি। তুরস্কের অর্থনীতির স্বার্থে আরব দেশগুলোর সাথে ভালো বাণিজ্যিক সম্পর্ক গড়ে তোলার ইচ্ছে ছিল। বর্তমান তুরস্কে দেশটির সেনাবাহিনী পুরোপুরি বেসামরিক নেতৃত্বের নিয়ন্ত্রণে। প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান প্রকাশ্যে আমেরিকার সাথে দ্বিমত পোষণ করেন। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে 'একটি সন্ত্রাসী দেশের নেতা' হিসেব টুইটারের মাধ্যমে উল্লেখ করেন মি: এরদোয়ান। ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলের অবরোধ নিয়ে কড়া সমালোচনা করেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট। গাজাকে একটি 'উন্মুক্ত কারাগার' হিসেবে বর্ণনা করেছেন তিনি। পর্যবেক্ষক মারওয়ান মুয়াশের মনে করেন, ইসরায়েলকে নিয়ে মি: এরদোয়ানের এসব বক্তব্য ফিলিস্তিন এবং জর্ডানে তাঁর ভক্ত বাড়িয়েছে। তিনি বলেন, "এরদোয়ানকে দেখা হয় এমন এক ব্যক্তি হিসেবে যিনি ইসরায়েল এবং আমেরিকার সামনে দাঁড়িয়েছেন এবং নিজ দেশের মানুষের অর্থনৈতিক উন্নয়ন করেছেন। কিন্তু অর্থনৈতিকভাবে তুরস্ক এখন ভালো অবস্থানে নেই। এরদোয়ান এখন কর্তৃত্ববাদী পথ বেছে নিয়েছেন।"
গাজার একটি সমুদ্র সৈকতে মি: এরদোয়ানের ছবি প্রমাণ করে ফিলিস্তিনিদের মাঝে তাঁর জনপ্রিয়তা।

বিনয়ী সূচনা 
তুরস্কের একজন বিশ্লেষক ফেহিম তাসতেকিন, যিনি মধ্যপ্রাচ্যে পড়াশুনা করেন, মনে করেন ইসরায়েলের সাথে প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের যে অচলাবস্থা সেটি বাস্তবে যা দেখা যাচ্ছে তার চেয়েও জটিল। তিনি বলেন, "বাণিজ্যিকভাবে তুরস্ক এবং ইসরায়েলের সম্পর্ক নীরবে এগিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু আরব দেশের জনগণ এবং তুরস্কের রাস্তায় মি: এরদোয়ান আবির্ভূত হয়েছেন এমন একজন নেতা হিসেবে যিনি ইসরায়েলের সমালোচনা করেন।" "কোন পশ্চিমা নেতার মধ্যে তারা এ বিষয়টি লক্ষ্য করেন না" মি: এরদোয়ানের উঠে আসার গল্প তুরস্কের বহু মানুষকে আন্দোলিত করে। একটি ধার্মিক পরিবারে জন্ম নেয়া এরদোয়ান তুরস্কের ধর্মনিরপেক্ষ শাসক গোষ্ঠীকে চ্যালেঞ্জ করেছেন এবং তুরস্কের নীরব সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের পক্ষে কথা বলেছেন।

অটোম্যান সাম্রাজ্যের সৈনিকদের আদলে পোশাক পরিহিত গার্ডদের নিয়ে মি: এরদোয়ান যখন প্রেসিডেন্ট প্রাসাদে প্রবেশ করেন তখন বিষয়টি দেখে অনেকে বিস্মিত হয়েছেন।

মিশরে অস্থিরতা 
"সুদানের ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট ওমর আল বশিরের শাসনামলে দেশটি যখন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় থেকে বিচ্ছিন্ন ছিল, তখন দেশটিতে তুরস্ক বিনিয়োগ করেছিল। এজন্য সুদানের মানুষ কৃতজ্ঞ," বলছিলেন ফেহিম তাসতেকিন। কিন্তু এই জরিপের ফলাফলে দিকে যদি গভীর মনোযোগ দেয়া যায়, তাহলে দেখা যাচ্ছে আরব বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশ মিশরের মানুষ তুরস্কের নেতৃত্বকে নিয়ে সন্দেহ করে। মিশরের মাত্র ১৫ শতাংশ মানুষ এরদোয়ানের পক্ষে। মিশরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল সিসি এবং তুরস্কের নেতা এরদোয়ানের মধ্যে যে উত্তেজনা চলছে এটি তারই প্রতিফলন। আরব ব্যারোমিটারের সিনিয়র গবেষক মাইকেল রবিনস মনে করেন, " তুরস্কের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলার আকাঙ্ক্ষা ব্যাপকভাবে কমে গেছে মিশর এবং লিবিয়ায়। এ দুটো দেশে ইসলামপন্থীদের বিপক্ষে মনোভাব তৈরি হয়েছে।" প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান বেশ স্পষ্টভাবে মিসরের মুসলিম ব্রাদারহুডের পক্ষে দাঁড়িয়েছেন। হুসনি মোবারকের পতনের পর মিশরে প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত অবাধ নির্বাচনে জয়ী হয়ে স্বল্প সময়ের জন্য ক্ষমতায় ছিল মুসলিম ব্রাদারহুড। এরদোয়ান ইসলামি ভাবধারা উঠে এসছেন। তাঁর চিন্তাধারার সাথে মিলে যায় মিশরের নির্বাচনের ফলাফল। সে নির্বাচনের মাধ্যমে ইসলামপন্থী মুসলিম বাদ্রারহুড ক্ষমতায় আসে। কিন্তু মোহাম্মদ মোরসি সরকারের বিরুদ্ধে গণ আন্দোলনের পর সেনাবাহিনীর সহায়তায় ক্ষমতা দখল করেন জেনারেল সিসি। জেনারেল সিসির সাথে মি: এরদোয়ানের বৈরিতার কোন পাল্টা জবাব ছাড়া শেষ হয়নি। মাইকেল রবিনসন বলেন, " মিশরে সরকার নিয়ন্ত্রিত গণমাধ্যমে তুরস্কের নেতাকে নেতিবাচক-ভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। সেজন্য মিশরে এরদোয়ানের খারাপ ফল হয়েছে জরিপে।" "মিশরের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে মি: এরদোয়ান পরিষ্কারভাবে একটি পক্ষ নিয়েছিলেন," বলেন ফেহিম তাসতেকিন। সেজন্য এরদোয়ান সম্পর্কে মিশরের মানুষের মতামত অনেক বেশি বিভক্ত।
চার আঙ্গুলে স্যালুট , যেটি রাবা নামে পরিচিত, ২০১৩ সালে মিশরে মুসলিম ব্রাদারহুড সমর্থকরা এটি চালু করেছে।

মডেল দেশ 
শুধু মিশর এবং লিবিয়া নয়, ইরাকের ক্ষেত্রেও এটি হয়েছে। গোষ্ঠি সংঘাতে বিপর্যস্ত ইরাক। প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান সুন্নি মুসলিমদের পক্ষ নিয়েছেন। এ কথা মনে রাখা দরকার যে একটা সময় পশ্চিমা দেশগুলো মি: এরদোয়ানকে সম্পর্ক অনেক উচ্চ ধারণা পোষণ করতো। ২০১১ সালে যখন আরব বসন্তের সূচনা হয় তখন সে অঞ্চলের ভবিষ্যৎ নিয়ে অনেকে উঁচু আশাবাদ ব্যক্ত করেছিলেন। পশ্চিমা সংবাদমাধ্যম তুরস্ককে একটি 'মডেল দেশ' হিসেবে উপস্থাপন করেছিল। সে বছর ফেব্রুয়ারি মাসে নিউইয়র্ক টাইমস মন্তব্য করেছিল যে তুরস্ক হচ্ছে একটি 'শক্তিশালী গণতন্ত্রের' দেশ যেখানে প্রকৃতপক্ষে একজন নির্বাচিত নেতা আছে। এছাড়া তুরস্কের অর্থনীতি সমগ্র আরব অর্থনীতির প্রায় অর্ধেকের সমান বলে মন্তব্য করেছিল নিউইয়র্ক টাইমস। আট বছর পরে সে আশাবাদের সামন্য কিছু অবশিষ্ট আছে।

'মরিয়া হয়ে ওঠা' 
মত প্রকাশের স্বাধীনতা এবং গণতন্ত্রের সূচকে তুরস্কের অবস্থান ক্রমাগত নিচের দিকে যাচ্ছে। সম্প্রতি দেশটির অর্থনৈতিক অবস্থাও বেশ টালমাটাল। তুরস্কের গণতন্ত্রকে সামরিক বাহিনীর প্রভাবমুক্ত করার জন্য এক সময়ে পশ্চিমা বিশ্বে যারা মি: এরদোয়ানের প্রশংসা করতেন, তারা এখন মি: এরদোয়ানের সমালোচনা করছেন। পৃথিবীর অন্য যে কোন দেশের তুলনায় তুরস্কে বহু সাংবাদিককে কারাগারে যেতে হয়েছে। "আরব বিশ্ব এখনো তার দিকে তাকিয়ে আছে। কারণ তারা অন্য কোন মুসলিম নেতা দেখছেন না যিনি গণতন্ত্রের স্বপ্ন এবং ভালো ভবিষ্যতের মাধ্যমে তাদের অনুপ্রাণিত করতে পারেন," বলছিলেন ফেহিম তাসতেকিন। অধিকাংশ আরব এখনো এরদোয়ানের সাথে আছে। এ বিষয়টিকে 'মরিয়া হয়ে ওঠার প্রতীক' হিসেবে দেখছেন ফেহিম তাসতেকিন।
মহান আল্লাহ মানব জাতিকে সৃষ্টি করেছেন একমাত্র তাঁরই ইবাদতের জন্য। আল্লাহ সুবহানাহুতায়ালা বলেছেন, ‘আমি জিন ও মানবজাতিকে একমাত্র আমারই ইবাদতের জন্য সৃষ্টি করেছি।’ (সূরা জারিয়াত, আয়াত : ৫৬)। আল্লাহতায়ালার একান্ত ইচ্ছা তাঁর প্রত্যেক বান্দা তাঁর ইবাদত সম্পন্ন করার মাধ্যমে ইহ ও পরকালীন জীবনকে সুন্দরভাবে গড়ে তুলবে। ইবাদত মূলত দুই প্রকার। ফরজ ইবাদত; যেমন- নামাজ, রোজা, হজ, জাকাত ইত্যাদি। নফল ইবাদত; যেমন- নফল নামাজ, কোরআন তেলাওয়াত, দরুদ শরিফ, দান-খয়রাত, নফল রোজা রাখা ইত্যাদি।
মানব জাতি মূলত তখনই মহান আল্লাহতায়ালার কাছে প্রকৃত সম্মানিত ও প্রিয় হবে, যখন তার প্রতিটি কাজ হবে একমাত্র আল্লাহতায়ালারই উদ্দেশ্যে। সুখে-দুঃখে একমাত্র তাঁরই ইবাদত করবে, তাঁকেই ভালোবাসবে। তাঁরই নৈকট্য লাভের চেষ্টায় সব সময় ব্যস্ত থাকবে। ফরজ ইবাদত সুসম্পন্ন করার সঙ্গে সঙ্গে নফল ইবাদতে অধিক মনোযোগী হবে। নফল ইবাদতগুলোর মধ্যে নফল রোজা বান্দাকে অতি সহজেই মহান আল্লাহর সান্নিধ্যে পৌঁছে দেয়। কারণ, রোজা এমন একটি ইবাদত যা জাহান্নাম থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য ঢালস্বরূপ এবং এর প্রতিদান স্বয়ং আল্লাহতায়ালা নিজেই দিয়ে থাকেন বলে হাদিসে কুদসিতে সুস্পষ্টভাবে বলা হয়েছে।

রমজান চলে যাওয়ার পরও বান্দা যেন সিয়াম সাধনা অব্যাহত রাখেন সে জন্য প্রতি চান্দ্র মাসের ১৩ থেকে ১৫ তারিখের রোজা, আশুরার রোজা, ৯ জিলহজ আরাফার দিনের রোজা, ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) এর রোজাসহ অন্যান্য নফল রোজার বিধান দিয়েছেন প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ মোস্তফা (সা.)। ফরজ নামাজের কমতিগুলো পূরণ করতে যেমন নফল নামাজ রয়েছে তেমনি ফরজ রোজার পরও শাওয়ালের সুন্নত রোজা রয়েছে রমজানের পূর্ণতা প্রদান করতে। রোজাদার যদি অনর্থক বাক্যালাপ, কুদৃষ্টি পাপাচার-কামাচার প্রভৃতি কাজ থেকে সম্পূর্ণ বাঁচতে না পারে, তাহলে তার রোজার সওয়াব কমে যায়। আর কমতির সওয়াব পূর্ণ করতেই শাওয়ালের ছয়টি রোজাসহ বছরজুড়েই রয়েছে নানা উপলক্ষে নফল রোজা। এই শাওয়াল মাসের ছয়টি রোজার মাধ্যমে রমজানের রোজার শুকরিয়া আদায় করা হয়। যখন কোনো বান্দার আমল আল্লাহতায়ালা কবুল করেন তখন তাকে অন্য নেক আমলের তৌফিক দেন। সুতরাং এ রোজাগুলো রাখতে পারা রমজানের রোজা কবুল হওয়ার লক্ষণও বটে। রসুলুল্লাহ (সা.) নিজে এ রোজা রাখতেন এবং সাহাবায়ে কেরামদের রোজা রাখার নির্দেশ দিতেন। জলীলুল কদর সাহাবি হজরত আবু আইয়ুব আনসারি (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি রমজানের রোজা রাখল, অতঃপর শাওয়ালের ছয়টি রোজা রাখল, সে যেন সারা বছরই রোজা রাখল।’ (মুসলিম শরিফ, হাদিস নং ৮২২)। এ হাদিসের ব্যাখায় মুহাদ্দিসগণ বলেন, রমজানের ৩০টি রোজার সঙ্গে শাওয়ালের ছয়টি রোজা যুক্ত হলে মোট রোজার সংখ্যা হয় ৩৬টি। আর প্রতিটি পুণ্যের জন্য ১০ গুণ পুরস্কারের কথা উল্লেখ রয়েছে কোরআনুল কারিমে। সূরা আনআমের ১৬০ নম্বর আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি একটি সৎ কাজ করল সে ১০ গুণ সওয়াব পাবে।’ এ হিসাবে যে ব্যক্তি রমজানের এক মাস রোজা রাখল সে ১০ মাস রোজা রাখার সওয়াব পাবে। আর ছয়টি রোজার ১০ গুণ ৬০ দিন। অর্থাৎ দুই মাস। আর এ দুই মাস মিলে ১২ মাস রোজার সওয়াব। তাহলে ৩৬টি রোজার ১০ গুণ হলে ৩৬০টি রোজার সমান (এটি পুরস্কারের দিক থেকে)। অর্থাৎ সারা বছর রোজার সমান সওয়াব হবে।’
হজরত সাওবান (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘রমজানের রোজা ১০ মাসের রোজার সমতুল্য আর (শাওয়ালের) ছয় রোজা দুই মাসের রোজার সমান। সুতরাং এই হলো এক বছরের রোজা।’ (নাসায়ি শরিফ, ২য় খ-, পৃষ্ঠা. ১৬২)।
হজরত উবাইদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদিন রসুলুল্লাহ (সা.)-কে জিজ্ঞেস করলাম, ‘ইয়া রসুলুল্লাহ, আমি কি সারা বছর রোজা রাখতে পারব?’ তখন রসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, ‘তোমার ওপর তোমার পরিবারের হক রয়েছে। কাজেই তুমি সারা বছর রোজা না রেখে রমজানের রোজা রাখ এবং রমজান-পরবর্তী শাওয়ালের ছয়টি রোজা রাখ, তাতেই সারা বছর রোজা রাখার সওয়াব পাবে। ’ (তিরমিজি শরিফ, খ-, ১ পৃ. ১৫৭)।
লেখক : এম ফিল গবেষক, মুফাসসিরে কোরআন, বেতার ও টিভির ইসলামী উপস্থাপক; খতিব, মণিপুর বাইতুর রওশন (মাইকওয়ালা) জামে মসজিদ, মিরপুর, ঢাকা।
বাঙালি ইতিহাসমনস্ক নয়, এমন অভিযোগ আছে। পাল্টা নালিশও আছে যে বাঙালি অতীতচারী। পুরোনো কাসুন্দি ঘাঁটতেই সে পছন্দ করে, সামনের দিকে তাকানোর তার সময় কই। দুটোই সত্য। আমরা অতীত থেকে শিখি না। অতীতের নির্যাসটুকু পাথেয় হিসেবে ঝুলিতে ভরে ভবিষ্যতের পথ তৈরি করি না। বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর দিকে তাকালে এমনটিই মনে হয়।

একসময় ভারত নামে ইংরেজদের বিশাল এক উপনিবেশ ছিল। ইংরেজ চলে গেছে। ভারত তিন টুকরা হয়ে এখন হিন্দুস্তান, পাকিস্তান এবং বাংলাদেশ নামে মানচিত্রে বহাল আছে। ইংরেজরা তাদের উপনিবেশগুলোতে সীমিত আকারে গণতন্ত্রের চর্চা করত। এতে অনেক লাভ ছিল। জনবিক্ষোভ প্রশমিত রাখার জন্য স্পেস তৈরি হতো। এভাবেই তৈরি হয়েছিল ১৮৮৫ সালে ভারতের জাতীয় কংগ্রেস এবং ১৯০৬ সালে নিখিল ভারত মুসলিম লীগ। ১৯৩০-এর দশকে শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হকের নেতৃত্বে বাংলা মুলুকে কৃষক-প্রজা পার্টি বেশ জোরকদমে এগিয়েছিল। কংগ্রেসে টিকতে না পেরে সুভাষ চন্দ্র বসু তৈরি করেছিলেন ফরোয়ার্ড ব্লক। তাঁদের অবর্তমানে ওই দলগুলো হারিয়ে গেছে। পুরোনো উল্লেখযোগ্য আরেকটি দল হলো কমিউনিস্ট পার্টি। এটা কখনোই জনপ্রিয় হয়ে উঠতে পারেনি। এলিটিস্ট নেতৃত্বের এই দলটি খণ্ডবিখণ্ড হয়ে এখন সিন্দুকে ঠাঁই পেয়েছে।

১৯৪৯ সালের ২৩ জুন ঢাকায় জন্ম নিয়েছিল পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ। আজ তার বয়স সত্তর। সময়ের বিচারে দলটি নিঃসন্দেহে প্রবীণ। নানা চড়াই-উতরাইয়ের মধ্য দিয়ে এই দলটি এখনো প্রবল প্রতাপে ক্ষমতার কেন্দ্রে টিকে আছে। একদা মহা পরাক্রমশালী কংগ্রেস এখন হিন্দুস্তানের রাজনীতিতে রীতিমতো কোণঠাসা। সেখানে নবশক্তির উত্থান হয়েছে। মুসলিম লীগের প্রদীপ পাকিস্তানে নিবুনিবু। বাংলাদেশে (একদা পূর্ব বাংলায়) এই দলটির দাফন হয়ে গিয়েছিল ১৯৫৪ সালের সাধারণ নির্বাচনে। কংগ্রেস এবং মুসলিম লীগ কেন ক্ষমতার বৃত্ত থেকে ছিটকে পড়ল, কমিউনিস্ট পার্টি কেন রাষ্ট্রক্ষমতা হাতের মুঠোয় পুরতে পারল না, কেন আওয়ামী লীগ এখনো নিজ বলয়ে নিরঙ্কুশ ক্ষমতা ধরে রাখতে পারছে, এ নিয়ে বিস্তর গবেষণা হতে পারে।

একটা কথা সত্য যে আওয়ামী লীগ ক্রমাগত নিজেকে বদলে দিচ্ছে। আজকের প্রজন্ম হয়তো জানেও না, কারা কীভাবে আওয়ামী লীগ তৈরি করেছিল। এ নিয়ে বেশ কিছু কিতাব থাকলেও কে আর ওই সব পড়ে। হাতের তালুতে আছে উইকিপিডিয়া। সেখানে হঠাৎ করেই কেউ যদি ঢুঁ মারে, সে কিছু তথ্য পেয়ে যেতে পারে। তবে উইকিপিডিয়ার তথ্যের সত্যতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন আছে অনেক।
পুরান ঢাকার ১৫০ নম্বর মোগলটুলীতে ছিল মুসলিম লীগের ‘ওয়ার্কার্স ক্যাম্প’ বা কর্মী শিবির। কলকাতা এবং ঢাকায় যারা মুসলিম লীগের হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও আবুল হাশিমের সমর্থক-ভক্ত ছিলেন, তাঁরা চালাতেন এই কর্মী শিবির। মুসলিম লীগের বিক্ষুব্ধ তরুণেরা তখন ঢাকার নবাববাড়িকেন্দ্রিক মুসলিম লীগ নেতৃত্বের বিরুদ্ধে একজোট হয়েছিলেন। তাঁদের এই পথচলা গিয়ে থামে টিকাটুলীর কে এম দাস লেনে অবস্থিত রোজ গার্ডেনে। মুসলিম লীগের গণতন্ত্রায়ণের দাবিতে তাঁরা তৈরি করেন পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ। ১৯৫৫ সালে দলের নাম থেকে ‘মুসলিম’ বাদ পড়ে। ১৯৭১ সালে পূর্ব পাকিস্তানের জায়গায় আসে বাংলাদেশ।

২৩ জুন (১৯৪৯) বেলা তিনটায় রোজ গার্ডেনের দোতলার হলঘরে আতাউর রহমান খানের সভাপতিত্বে মুসলিম লীগ কর্মীদের এক অধিবেশনে তৈরি হয় এই ইতিহাস। দলের নাম প্রস্তাব করেছিলেন মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী। তিনিই দলের ৪০ জনের একটি সাংগঠনিক কমিটি ঘোষণা করেছিলেন। তিনি সভাপতি, টাঙ্গাইলের যুবনেতা সামসুল হক সাধারণ সম্পাদক। পাঁচজন সহসভাপতির মধ্যে ছিলেন আতাউর রহমান খান, সাখাওয়াত হোসেন, আলী আহমেদ খান, আলী আমজাদ খান এবং আবদুস সালাম খান। কোষাধ্যক্ষ ছিলেন ইয়ার মোহাম্মদ খান। যুবনেতা শেখ মুজিবুর রহমান তখন কারাবন্দী। তাঁকে কার্যনির্বাহী কমিটির যুগ্ম সম্পাদক করা হয়। এটি করা হয়েছিল মাওলানা ভাসানীর আগ্রহে ও চাপে। তিনি শেখ মুজিবের পেছনে ভবিষ্যতের ইঙ্গিত দেখতে পেয়েছিলেন। জানি না, সত্তর বছর পরে দলের নেতা-কর্মীরা দলের প্রতিষ্ঠাতাদের স্মরণ করেছেন কি না।

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কমিটির প্রথম সভা হয়েছিল ১৫০ নম্বর মোগলটুলীতে। সামসুল হকের লেখা ‘মূল দাবি’ অনুসরণ করে দলের খসড়া ঘোষণাপত্র তৈরি হয়েছিল। এরপর দলের প্রথম অফিসটি চালু হয় ইয়ার মোহাম্মদ খানের ১৮ নম্বর কারকুনবাড়ি লেনে। মাওলানা ভাসানী ঢাকায় এলে এ বাড়িতেই থাকতেন। পরে আওয়ামী লীগের অফিস নেওয়া হয় সিমসন রোডে এবং পরে ৯৪ নম্বর নবাবপুর রোডে। সেখান থেকে পুরানা পল্টন হয়ে আওয়ামী লীগ অফিস এখন বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে।
আওয়ামী লীগের পথচলা শুরু হয় গণতন্ত্রের দাবিতে। এরপর এর সঙ্গে যোগ হয় আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসনের দাবি। প্রধানত এ দুটো দাবি নিয়েই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ জনসম্পৃক্ত রাজনীতির শক্ত ভিত তৈরি করতে পেরেছিল, সারা দেশে ছড়িয়ে দিতে পেরেছিল এর ব্যাপ্তি। সত্তরের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিপুল ম্যান্ডেট এসেছিল এই দাবির পরিপ্রেক্ষিতেই। তবে এ কথা স্বীকার করতেই হবে, আওয়ামী লীগ তৃণমূলে ছড়িয়ে পড়লেও সাংগঠনিকভাবে ততটা শক্তিশালী হয়ে ওঠেনি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব প্রায়ই বলতেন, তাঁর মূল শক্তি হলো ছাত্রলীগ। তিনি আওয়ামী লীগের নেতা থেকে রূপান্তরিত হলেন জাতীয় নেতায়। তিনি হলেন ‘বঙ্গবন্ধু’। দলকে ছাড়িয়ে তিনি তখন অনেক ওপরে। দল তাঁকে ধারণ করতে পারেনি। যে যুবশক্তি এবং জনগোষ্ঠী তাঁকে ‘জাতির পিতার আসনে বসিয়েছিল, তাঁরা তাঁকে রক্ষা করতে পারেনি ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টে। বাঙালি জাতির প্রাণভোমরা এখন আওয়ামী লীগের লোগো। আওয়ামী লীগের নেতারা এখন নতুন করে ইতিহাসের কথা বলছেন। সেই সঙ্গে পাওয়া যাচ্ছে সরকারি ব্যাখ্যা, বিশ্লেষণও। আমরা দেখছি, দলের প্রচারে থাকে সংকীর্ণতা, আত্মসন্তুষ্টি।

আওয়ামী লীগ যখন বিরোধী রাজনৈতিক শক্তি ছিল, তখন ছিল তার এক ধরনের রূপ। তাতে ধৈর্য ছিল, গতি ছিল, ত্যাগ ছিল, স্বপ্ন ছিল। দলটি সরকারে যাওয়ার পর থেকেই এটি বদলে যেতে থাকে। মাঠের রাজনীতি আর রাষ্ট্র পরিচালনা যে এক বিষয় নয়, এটা তাঁরা অনেক সময় বুঝতে চান না। যে কথা যে ভাষায় পল্টন ময়দানের মঞ্চে বলা যায়, সেটি সংসদ অধিবেশনে বলা যায় না। দেশটা এগিয়েছে অনেক। রাজনৈতিক দলগুলো সে অনুযায়ী এগোয়নি, আওয়ামী লীগও নয়।
টানা দশ বছরেরও বেশি ক্ষমতায় আওয়ামী লীগ। এখন দল, সরকার ও রাষ্ট্র একাকার। দল সরকার চালায় না। সরকার দল চালায়। ক্ষমতার কেন্দ্র এখন ২৩ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ নয়, যেমনটি ছিল ১৯৭০-৭১ সালে ৫১ পুরানা পল্টন।

শরৎচন্দ্রের বিলাসী গল্পে পড়েছিলাম, ‘টিকিয়া থাকাটাই চরম সার্থকতা নহে। অতিকায় হস্তী লোভ পাইয়াছে, কিন্তু তেলাপোকা টিকিয়া আছে।’ আওয়ামী লীগ সরকার টিকে থাকবে ততদিন, যতদিন দলটির পক্ষে দুটো শর্ত কাজ করবে। এক, রাষ্ট্রশক্তির নিরঙ্কুশ সমর্থন। দুই. চ্যালেঞ্জ জানানোর মতো সক্ষম রাজনৈতিক বিকল্প দৃশ্যমান না হওয়া। শর্তগুলো এখনো আওয়ামী লীগের পক্ষে।

মহিউদ্দিন আহমদ : লেখক ও গবেষক
mohi2005@gmail.com

সৌজন্যে - প্রথম আলো
বগুড়া-৬ আসনের উপনির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ আওয়ামী লীগ প্রার্থীর চেয়ে ৫৭ হাজার ভোট বেশি পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন, এটি অবিশ্বাস্য ঘটনা নয়। বরং ফলাফল উল্টো হলেই অবিশ্বাস্য মনে হতো। আবার এখানে আওয়ামী লীগ প্রার্থী টি জামান নিকেতা যে ৩২ হাজার ভোট পেয়েছেন, তাতে প্রমাণ করে না যে সারা দেশে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা বিএনপির কাছে শোচনীয়ভাবে পরাজিত হবেন।

বহু বছর ধরে বগুড়া বিএনপির শক্ত ঘাঁটি। ১৯৯১ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত বগুড়ার সাতটি আসনই বিএনপির দখলে ছিল; যেমন গোপালগঞ্জের সব আসন আওয়ামী লীগ পেত, এখনো পাচ্ছে, ভবিষ্যতেও পাবে। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের মহাবিজয়ের সময়ও বিএনপি বগুড়ায় পাঁচটি আসন ধরে রেখেছিল। ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনে বিএনপি, আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি বগুড়ায় দুটি করে আসন পায়। একটি পান স্বতন্ত্র প্রার্থী।

৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে এই আসনে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর পেয়েছিলেন ২ লাখ ৫ হাজার ৯৮৭ ভোট এবং তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী জাতীয় পার্টির নুরুল ইসলাম ওমর পান ৩৯ হাজার ৯৬১ ভোট। বগুড়ার সাংবাদিক বন্ধুরা বলেছেন, ৩০ ডিসেম্বর বগুড়া-৬ আসনে সুষ্ঠু নির্বাচন হয়েছে। অন্যান্য আসনে বিরোধী দলকে নানাভাবে নাজেহাল করার চেষ্টা হয়েছে। কিন্তু দলীয় সংহতির স্বার্থে মির্জা ফখরুল শপথ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। ফলে আসনটি শূন্য হয়ে যায়। যদিও বিএনপির অপর সাত বিজয়ী প্রার্থী শপথ নিয়েছেন এবং সংসদেও গিয়েছেন।

বগুড়া-৬ আসনের উপনির্বাচন বিশ্লেষণ করলে আমরা যেসব বৈশিষ্ট্য পাই, তা হলো: এই নির্বাচনে ভোটার কেন্দ্রে উপস্থিত না থাকলেও কমিশন ভোটের হার অবিশ্বাস্য রকম বাড়িয়ে দেয়নি। ভোটের আগের দিন বিরোধী দলের প্রার্থী এজেন্টদের ভয়ভীতি দেখানো হয়নি। ভোটের দিন সকালে সরকারি দলের প্রার্থীর পক্ষে কাউকে সশস্ত্র মহড়া দিতেও দেখা যায়নি। ভোটারের উপস্থিতি ছিল ৩৪ শতাংশ, যা ৩০ ডিসেম্বরের অর্ধের কিছু বেশি। ৩০ ডিসেম্বর ভোট পড়েছিল ৬৫ দশমিক ৮ শতাংশ। এই নির্বাচনের ফলাফলের সঙ্গে মাঠের ভোটচিত্রের খুব একটা ফারাক নেই।

এই প্রেক্ষাপটে নির্বচন কমিশন বগুড়া উপনির্বাচনকে সুষ্ঠু ও অবাধ বলে দাবি করতে পারে। তাদের এ দাবি হয়তো পুরোপুরি অন্যায্য নয়। কিন্তু একটি প্রশ্নটি করতেই হয়, সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের কৃতিত্ব কার? নির্বাচন কমিশনের, না সরকারের? প্রশাসন হস্তক্ষেপ করেনি বলেই নির্বাচনটি সুষ্ঠু হয়েছে। আর নির্বাচন কমিশন যদি এর কৃতিত্ব দাবি করে, তাহলে দ্বিতীয় প্রশ্ন, তারা আগে নির্বাচনগুলো কেন সুষ্ঠু করল না? শুধু জাতীয় নির্বাচন না, সিটি করপোরেশন ও উপজেলা পরিষদ নির্বাচন, যেখানেই হুদা কমিশন হাত দিয়েছে, সেখানে নির্বাচনের বারোটা বেজেছে। জনগণ ভোটকেন্দ্রে এক চিত্র দেখেছে। আর কমিশনের ফলাফলে অন্য চিত্র উঠে এসেছে। বগুড়া-৬–এর উপনির্বাচনে সেটি তারা করেনি বলে ধন্যবাদ জানাই। তাহলে এই নির্বাচন কমিশনের অধীনে অন্তত একটি উপনির্বাচন সুষ্ঠু হলো।
সিইসি কে এম নূরুল হুদা একবার খেদের সঙ্গে বলেছিলেন, ভোটাররা ভোটকেন্দ্রে না এলে তাঁদের কিছু করার নেই। খুবই হক কথা বলেছেন। নির্বাচন কমিশন তো ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ধরে বেঁধে কেন্দ্রে নিয়ে আসতে পারে না। কিন্তু ভোটাররা ভোটকেন্দ্রে না আসা সত্ত্বেও নির্বাচন কমিশন যে প্রায় সব ক্ষেত্রে অবিশ্বাস্য ভোটের হার দেখিয়েছে, সেটি ভোটের নামে একধরনের জালিয়াতি। নির্বাচন কমিশনারদের বিবেকের কাছে (যদি আদৌ বিবেক বলে কিছু থেকে থাকে) একটি প্রশ্ন রাখতে চাই, ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে শতকরা ৮০ ভাগ ভোট পড়েছে বলে যে প্রচার তাঁরা করেছেন, সেটি কি তাঁরা নিজেরা বিশ্বাস করেন?

বগুড়া-৬ আসনের উপনির্বাচনে কোন দলের প্রার্থী জিতেছেন বা কোন দলের প্রার্থী হেরেছেন, তার চেয়েও বড় হলো নির্বাচনটি পরাজিত হয়নি। নির্বাচন কমিশনও কেন্দ্রে ভোটার থাকুক আর না-ই থাকুক, ভোট প্রদানের অবিশ্বাস্য হার ঘোষণা করেনি। বলতে হবে, তাদের শুভবুদ্ধির উদয় হয়েছে। কিন্তু এই শুভবুদ্ধি একটি উপনির্বাচনে সীমিত থাকবে, না পরবর্তী সব নির্বাচনে, সেই প্রশ্নের উত্তর একমাত্র নির্বাচন কমিশনই দিতে পারে।

ঘোষিত ফলাফল অনুযায়ী বিএনপি প্রার্থী গোলাম মোহাম্মদ সিরাজের ধানের শীষ পেয়েছেন ৮৯ হাজার ৭৪২ ভোট। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ মনোনীত টি জামান নিকেতা নৌকা প্রতীকে পেয়েছেন ৩২ হাজার ২৯৭ ভোট। অন্যদিকে, জাতীয় পার্টির প্রার্থী নুরুল ইসলাম ওমরের লাঙ্গল প্রতীকে পড়েছে ৭ হাজার ২২১ ভোট। বগুড়া সদর উপজেলার ১১টি ইউনিয়ন এবং একটি পৌরসভার ২১টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত বগুড়া সদর আসন। এই আসনে ভোটার ৩ লাখ ৮৭ হাজার ৪৫৮ জন। এবারে এ আসনে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি ছাড়াও মোট ছয়জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। ১৪১টি কেন্দ্রে ইভিএম মেশিনে ভোটাররা ভোট দিয়েছেন। ভোট পড়েছে ৩৪ দশমিক ৫৫ শতাংশ। সব দলের প্রার্থীরা বলছেন, বগুড়ার এই আসনে এবার ভোটের চিত্র সম্পূর্ণ আলাদা। স্থানীয় প্রশাসন এবং পুলিশ নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করেছে এবং সব প্রার্থীকে প্রচার-প্রচারণায় সমানভাবে সহযোগিতা করেছে।
গত ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনের আগে ও পরে বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে অনেক মামলা হয়েছে। অনেকে পালিয়ে বেড়িয়েছেন। অনেকে গ্রেপ্তার এবং হয়রানির শিকার হয়েছেন। ভোটের দিন সহিংসতা হয়েছে। কিন্তু উপনির্বাচনের আগে বা পরে এসবের কিছুই ঘটেনি। যে কারণে বিজয়ী ও পরাজিত সব প্রার্থী বলেছেন, নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়েছে।

নির্বাচন কমিশন কি দেশবাসীকে এই নিশ্চয়তা দিতে পারবে যে ভবিষ্যতে প্রতিটি নির্বাচন বগুড়ার উপনির্বাচনের মতো সুষ্ঠু হবে। পরাজিত প্রার্থীও সেই নির্বাচন সম্পর্কে কোনো প্রশ্ন তুলতে পারবে না।

সোহরাব হাসান: লেখক ও সাংবাদিক।
সৌজন্যে - প্রথম আলো

আমাদের পূর্বপুরুষরা প্রথম কবে কথা বলতে শিখেছিল? এখন যে হাজার হাজার ভাষায় মানুষ কথা বলে সেগুলো কি ওই একজন পূর্বপুরুষের কাছ থেকেই এসেছিল? এসব ভাষার ইতিহাস থেকে কি তার উৎস খুঁজে বের করা সম্ভব? লেখক ও ভাষা-প্রেমিক মাইকেল রোজেন সেটাই অনুসন্ধান করে দেখছেন... "পৃথিবীতে মানুষই হলো একমাত্র প্রাণী যাদের ভাষা আছে, এই ভাষার কারণে আমরা অন্যসব প্রাণী থেকে আলাদা হয়েছি," বলেছেন নিউক্যাসেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ম্যাগি টলারম্যান।
ভাষার মাধ্যমে এই যে ভাবের বিনিময়, কথার আদান প্রদান, সেটাকে দেখা হয় বিবর্তনের গুরুত্বপূর্ণ একটি দিক হিসেবে। সবকিছুকে বদলে দিয়েছে এই ভাষা। আর একারণেই মানুষ ভাষার উৎস সম্পর্কে জানতে দারুণ উৎসাহী।
"জটিল যতো বিষয় আছে তার একটি এই ভাষা এবং এটিই আমাদের মানুষ বানিয়েছে, বলেন কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে মানব বিবর্তন বিভাগের শিক্ষক ও নৃবিজ্ঞানী রবার্ট ফোলি।

মানুষকে বুঝতে হলে তার ভাষাও বুঝতে হবে।

ভাষার বয়স কতো

বর্তমানে পৃথিবীতে মানুষ সাড়ে ছ'হাজারের মতো ভাষায় কথা বলে। কিন্তু এর মধ্যে সবচেয়ে প্রাচীন ভাষা কোনটি? সবচেয়ে পুরনো ভাষার নাম জানতে চাইলে আমরা অনেকেই ভাবি ব্যাবিলনীয়, সংস্কৃত কিম্বা মিশরীয় ভাষার কথা। কিন্তু অধ্যাপক টলারম্যান বলছেন, এসব ভাষা তার ধারে-কাছেও নেই। সাধারণত আমরা বলি যে ভাষা ছ'হাজার বছর পুরনো। কিন্তু ভাষার প্রকৃত উৎস যদি খুঁজে দেখতে হয় তাহলে অন্তত ৫০ হাজার বছর পেছনে ফিরে যেতে হবে। বহু ভাষাবিজ্ঞানী মনে করেন, ভাষার ইতিহাস আসলে এর চেয়েও পুরনো। "আমাদের অনেকেই বিশ্বাস করেন যে ভাষার উৎপত্তি পাঁচ লাখ বছর আগেও হতে পারে," বলেন অধ্যাপক টলারম্যান।

ভাষার উৎস খুঁজতে আমাদের কতো পেছনে যেতে হবে?

একই পূর্বপুরুষ

পৃথিবীতে যতো ভাষা আছে সেগুলোর চরিত্র আলাদা আলাদা হলেও "এটাও সম্ভব যে বর্তমানে সব ভাষাই একজন পূর্বপুরুষের কাছ থেকে এসেছে," বলেন অধ্যাপক ফোলি। জীববিজ্ঞানের বিবর্তনের ইতিহাসের সূত্র ধরে বিজ্ঞানীরা ভাষা কবে শুরু হয়েছিল তার কাছাকাছি যেতে পেরেছেন। জিন-বিজ্ঞানীদের ধারণা অনুসারে আমরা কমবেশি সবাই এসেছি আফ্রিকার একটি ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীর কাছ থেকে। ভাষার এই তালিকার বাইরেও হয়তো অন্যান্য ভাষাও থাকতে পারে, কিন্তু আজকের দিনে যেসব ভাষায় কথা বলতে শোনা যায় সেগুলোর সবই সম্ভবত একই ভাষা থেকেই বিবর্তিত হয়েছে।
জীবাশ্ম থেকে অনেক কিছু জানা সম্ভব।

জীবাশ্ম থেকে প্রমাণ

আমাদের পূর্বপুরুষদের জীবাশ্ম থেকে কিছু ধারণা পাওয়া যায় যে আমরা ঠিক কবে থেকে কথা বলতে শুরু করেছিলাম। অধ্যাপক ফোলি বলছেন, "কথা হচ্ছে একধরনের শ্বাস প্রশ্বাস নেওয়া। এটা নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমেই আমরা শব্দ তৈরি করে থাকি।" এটা করার জন্যে শরীরের পেশীর ওপর আমাদের নিয়ন্ত্রণ থাকতে হয়। "আমাদের বক্ষ এবং উদরের মাঝখানে যে ঝিল্লির পর্দা সেটি অন্যদের থেকে আলাদা। আমাদের কাছাকাছি যে প্রাণী, অর্থাৎ বানর বা এইপ, যারা কথা বলতে পারে না, তাদের ঝিল্লির তুলনায় আমাদের ঝিল্লিতে নার্ভের সংখ্যা বহুগুণে বেশি।" এসব নার্ভের অর্থ হচ্ছে "আমাদের স্পাইনাল কর্ড এইপের স্পাইনাল কর্ডের চেয়ে মোটা এবং আমাদের ভার্টিব্রাল কলামও একটু বেশি প্রশস্ত। নিয়েন্ডারথাল নামে আমাদের যে আত্মীয় বিলুপ্ত হয়ে গেছে, যারা ছ'লাখ বছর আগেও পৃথিবীতে বেঁচে ছিল, তাদের দিকে তাকালে দেখা যাবে যে তাদের স্পাইনাল কলামও প্রশস্ত ছিল। কিন্তু আপনি যদি দশ লাখ বছর আগের হোমো ইরেক্টাসের দিকে তাকান, যারা মানবজাতির প্রাচীনতম পূর্বপুরুষ, তাদের দেহে এরকম ছিল না। এ থেকে একটা ধারণা পাওয়া যায় যে মানুষ কবে থেকে কথা বলতে শুরু করেছিল।
কারা কথা বলেছিল প্রথম?

জিন-বিজ্ঞানের ভূমিকা

বিজ্ঞানীরা বলছেন, জীবাশ্মের রেকর্ডের বাইরেও জিন-বিজ্ঞানের অগ্রগতির কারণে ভাষার বয়স জানা সম্ভব হচ্ছে। "এফওএক্সপিটু নামের একটি জিন আছে। স্তন্যপায়ী প্রায় সকল প্রাণীর শরীরেই আছে এই জিন। কিন্তু মানবদেহে যেটি আছে সেটি এর রূপান্তরিত জিন," বলেন অধ্যাপক ফোলি। "জিনের এই রূপান্তর গবেষণা করেও বোঝা যায় কেন মানুষ কথা বলতে পারে, কিন্তু শিম্পাঞ্জি পারে না। কথা বলা ও ভাষার বিকাশে এই জিনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে। কারণ যেসব মানুষের শরীরে এই জিনটি রূপান্তরিত অবস্থায় থাকে না, তাদের কথা বলতে অসুবিধা হয়।" মজার বিষয় হচ্ছে, এখনকার মানুষদের মতো নিয়েন্ডারথালদেরও এই এফওএক্সপিটু ধরনেরই জিন ছিল। এর ফলে ধারণা করা যায় যে তাদের মধ্যেও কোন না কোন ধরনের কথা বা ভাষা ছিল। তবে তাদের সেই ভাষা সম্পূর্ণ এবং উন্নত ছিল কিনা সেটা ভিন্ন বিষয়। অধ্যাপক টলারম্যান বলছেন, কথার সাথে ভাষার তফাৎ আছে। তবে কী কারণে কথা একসময় ভাষা হয়ে উঠে সেটা জিনগত তথ্যপ্রমাণ থেকে নির্ণয় করা কঠিন।
আকারে বড় হওয়া সত্ত্বেও বিলুপ্ত হয়ে গেছে নিয়েন্ডারথাল।

মস্তিষ্কের আকার

আদি-মানবের মাথার খুলির আকৃতি থেকে কি ভাষার উৎপত্তির সময় খুঁজে বের করা সম্ভব? অবশ্যই না। সবচেয়ে সহজ কারণ হলো আমরা ঠিক জানি না যে একটি ভাষা তৈরির জন্যে কতো বড় মস্তিষ্কের প্রয়োজন হয়। "নিয়েন্ডারথালসের মস্তিষ্ক আমাদের চেয়েও বড় ছিল। কারণ প্রাণী হিসেবেও তারা বড় ছিল," বলেন অধ্যাপক টলারম্যান।
প্রথম শব্দ কী ছিল
আমরা যখন মানবজাতির শুরুর দিকের ভাষা নিয়ে কথা বলছি, আমরা কি বলতো পারবো তখন মানুষের মুখ থেকে প্রথম কোন শব্দটি উচ্চারিত হয়েছিল? "সৎ উত্তর হচ্ছে: আমাদের আসলে কোন ধারণাই নেই," বলেন প্রফেসর ফোলি। মানব ইতিহাসের শুরুর দিকে যে শব্দগুলো চালু ছিল বলে ধারণা করা হয় সেগুলোর অর্থ হতে পারে 'ঈগল', 'চিতা' অথবা 'দেখো।' অনেকে মনে করেন, আমাদের পরিবেশের আশেপাশে সহজ ও সুনির্দিষ্ট কোন জিনিসই হয়তো মানুষের মুখ থেকে প্রথম এসেছিল। আরেকটি তত্ত্ব হচ্ছে প্রথম দিককার শব্দগুলোর মধ্যে এমন শব্দগুলোই ছিল যেগুলো আমরা এখন সবসময় ব্যবহার করি। যেমন: ইশ, হেই, ওয়াও, থ্যাংকস, গুডবাই- এধরনের শব্দ। এসব শব্দ প্রায় সব ভাষাতেই আছে। কিন্তু এগুলোর মধ্যে মিল হচ্ছে যে এসবের কোন সিনটেক্স বা ব্যাকরণ নেই।
আদিম জীবনের একটি চিত্র।

খাওয়ার সময় ভাষা তৈরি হয়েছিল?

মানবজাতির শুরুতে কথা বলা শুরু হয়েছিল একে অপরকে সহযোগিতা করার পাশাপাশি খাদ্য গ্রহণ করতে গিয়েও। আমাদের পূর্বপুরুষরা বড় বড় শিকারি প্রাণীদের হাতে নিহত পশুর মৃতদেহ থেকে মাংস খেয়ে জীবন ধারণ করতো। "হায়েনাদের হাতে নিহত পশুদের মরদেহ থেকে মাংস খেতে হলে আপনার সাথে আরো কিছু মানুষের প্রয়োজন হতো। কারণ এটা একটা বিপদজনক কাজ ছিল," বলেন অধ্যাপক টলারম্যান। "আপনি যখন খাবারের খোঁজে ঘর থেকে বের হলেন, একটা পশুর ভালো মৃতদেহও খুঁজে পেলেন এবং আপনার গ্রুপের লোকজনদের জানাতে চান যে আশেপাশেই ভালো খাবার আছে তখন তো একটা ভাষার দরকার হবে," বলেন তিনি। বিজ্ঞানীদের ধারণা খাদ্য গ্রহণের তাড়না এবং বেঁচে থাকার চেষ্টার কারণে মানুষের মধ্যে একে অপরকে জানানোর প্রবণতা তৈরি হয়েছে।

পরচর্চা বা গসিপের ভূমিকা

বিজ্ঞানীরা বলছেন, একসাথে মিলে কাজ করার ক্ষমতা থেকেও ভাষা ব্যবহারের দক্ষতা তৈরি হয়েছে। "পরস্পরকে সহযোগিতা করাই এক্ষেত্রে পালন করেছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা, বলেন অধ্যাপক ফোলি, "বিশেষ করে জোটবদ্ধ হওয়া এবং চারপাশে কী হচ্ছে সেটা জানার চেষ্টা করা।"
"এই আড্ডা মারার মতো করে কথা বলার গুরুত্বও কম ছিল না। টুকটাক কথা বলা, পরচর্চা বা গসিপ এগুলো প্রতিদিনেরই অংশ," বলেন কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষা ইতিহাসবিদ ড. লরা রাইট।
ইথিওপিয়ার একটি শহর আকসুম। প্রায় ৭৩ হাজার অধিবাসীর এই শহরে ১০ শতাংশ মুসলিম। কিন্তু এই শহরে নেই কোনো স্থায়ী মসজিদ। এমনকি মসজিদ স্থাপন করতেও দেওয়া হয় না সেখানে। তবুও 'জাস্টিস ফর আকসুম মুসলিম' এর ব্যানারে একদল মুসলিম সেখানে মসজিদ নির্মাণের জন্য ব্যাপক প্রচারণা চালাচ্ছেন। তাদের দাবি, মসজিদ নির্মাণ ও প্রার্থনার সুযোগ পাওয়া তাদের অধিকার। আর তাদের এ তৎপরতায় আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে এসেছেন সেখানকার অর্থোডক্স খ্রিষ্টানরা।

খ্রিষ্টান ধর্মীয় নেতারা অবশ্য এই বিষয়টিকে মানতে পারছেন না। খ্রিষ্টানদের সিনিয়র ধর্মীয় নেতা গডেফা মেরহা বলেন, আকসুম তাদের কাছে মক্কা। তাদের বিশ্বাস ইসলামের পবিত্র স্থানগুলোতে যেমন গির্জা নিষিদ্ধ, তেমনি আকসুমেও কোনো মসজিদ থাকতে পারে না।
গডেফা বলেন, ‘আকসুম একটি পবিত্র স্থান। সিটি অব মনেস্ট্রি। এখানে কেউ যদি মসজিদ নির্মাণ করতে আসেন তাহলে আমরা মরব। কখনোই এটা মেনে নেয়া হবে না। আমাদের জীবদ্দশায় এটা আমরা অনুমোদন করব না।’
যদিও সেখানকার অনেকে বিশ্বাস করেন যে এ বিতর্ক অর্থহীন। কারণ প্রাচীন এ শহরটি অনাদিকাল থেকেই ধর্মীয় সহনশীলতার জন্য সুপরিচিত।
ধর্মদুটির অনুসারীদের মতে ইসলামের সূচনালগ্নে মক্কায় অমুসলিম শাসকদের অত্যাচারে পালিয়ে প্রথম মুসলিমরা এসেছিল এই শহরে। তৎকালীন খ্রিষ্টান রাজা সে সময় তাদের স্বাগত জানিয়েছিলেন। মূলত আরব উপত্যকার বাইরে এটাই ছিল মুসলিমদের প্রথম কোনো উপস্থিতি।
এখন আকসুমের ৭৩ হাজার অধিবাসীর শতকরা ৮৫ ভাগ অর্থোডক্স খ্রিষ্টান, ১০ ভাগ মুসলিম, আর ৫ ভাগ খ্রিষ্টান ধর্মের অন্য ধারার অনুসারী।
শহরের ৪০ বছর বয়সী আব্দু মোহাম্মদ আলী নামে এক মুসলিম বলেন, তারা কয়েক প্রজন্ম ধরে খ্রিষ্টানদের একটি বাড়ি প্রার্থনার জন্য ব্যবহার করছেন। তিনি বলেন, শহরে আমাদের তেরটি অস্থায়ী মসজিদ আছে। শুক্রবার আমরা মাইক ব্যবহার করলে তারা বলে আমরা সেন্ট ম্যারিকে অসম্মান করছি।
চিকিৎসক আজিজ মোহাম্মদ প্রায় ২০ বছর ধরে আকসুমে বাস করছেন। মসজিদ না থাকায় অনেক মুসলিম খোলা জায়গায় প্রার্থনা করতে বাধ্য হয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এখানে আমরা মুসলিম ও খ্রিষ্টান সবাই একই সঙ্গে বাস করি। খ্রিষ্টানরা বাধা দেয় না। কিন্তু বহু বছর ধরেই আমরা রাস্তায় নামাজ পড়ছি, আমাদের একটি মসজিদ দরকার।’
প্রায় পঞ্চাশ বছর আগে যখন ইথিওপিয়ায় সম্রাট হাইল সেলেসি ক্ষমতায় ছিলেন তখন আকসুমেও একই রকম মতপার্থক্য দেখা দেয়। সে সময় রাজ পরিবারের সদস্য ও শহরের তৎকালীন প্রধান একটি সমঝোতা করে দেন। এর ফলে মুসলমানরা ভুকিরো-মারে শহর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে একটি মসজিদ নির্মাণ করেন।
ওই শহরে মুসলিমদের জন্য রান্নার কাজ করেন কেরিয়া মেসুদ। তিনি বলেন, ‘মসজিদের জন্য আমরা জোর করতে পারি না। আমাদের শান্তিতে থাকতে হবে।’
খ্রিষ্টান নেতা গডেফা মেরহা বলেন, আকসুমে উভয় ধর্মের মানুষ শান্তিতে বসবাস করছে। উভয় সম্প্রদায় নবী ইব্রাহিম (আ.) সম্পর্কে কিছু কিছু ক্ষেত্রে একই বিশ্বাস পোষণ করেন।
তিনি বলেন, তার বেস্ট ফ্রেন্ড হলো একজন মুসলিম। তারা একসঙ্গেই বিয়ে, শেষকৃত্যের মতো নানা অনুষ্ঠানে যোগ দেন। তার ধারণা আকসুমে মসজিদ বানানোর এই প্রচারণার পেছনে ইথিওপিয়ার অন্য অঞ্চলের মুসলিমরা আছেন। কিন্তু অর্থোডক্স খ্রিষ্টানরা শহরের পবিত্রতা রক্ষায় সেটি হতে দেবে না।
এদিকে অনেকেরই আশা সম্রাট হেইলি সেলাসিসের সরকার এ বিষয়ে একটি সমঝোতা তৈরি করতে পারবেন। এই সরকারের প্রধানমন্ত্রী আবিই আহমেদের বাবা একজন মুসলিম আর মা খ্রিষ্টান ছিলেন।
রিজিওনাল কাউন্সিল অব মুসলিম বলছে তারা খ্রিষ্টানদের সঙ্গে আলোচনা করবেন। কাউন্সিল কর্মকর্তা মোহাম্মদ কাহসে বলেন, আশাকরি খ্রিষ্টানরা মসজিদ নির্মাণে আমাদের সহায়তা করবেন।
সূত্র: বিবিসি বাংলা
“ট্রাফিক আইন মেনে চলুন”- এ কথা গুলো আমাদের দেশে বিভিন্ন জায়গায় বহুল ব্যবহৃত এবং আমাদের কাছে বহুল শ্রুত। সারাদেশে যেভাবে মোটরগাড়ির সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে সড়ক দূর্ঘটনা। মোটরগাড়ি চালানোর আইন-কানুন না জানা কিংবা আইন-কানুনকে তোয়াক্কা না করার প্রবণতাই এসব দূর্ঘটনার মূল কারণ। পৃথিবীর অন্য দেশগুলোর মতো বাংলাদেশেও রয়েছে মোটরগাড়ির জন্য প্রযোজ্য বিশেষ আইন। যা অমান্য করলে আপনার বিরুদ্ধে জরিমানা কিংবা মামলা হতে পারে। অতএব রাস্তায় গাড়ি নিয়ে নামার আগে জানতে হবে এর সাথে সংশ্লিষ্ট আইন ও বিধি সমূহ।

সেটি জানাতে ১৯৮৩ সালের ‘মোটরযান আইন’ অনুযায়ী কোন অপরাধে কি শাস্তির বিধান আছে তা সংক্ষেপে পাঠকদের কাছে তুলে ধরছে মুক্ত বার্তা ব্লগ
১) নিষিদ্ধ হর্ণ/হাইড্রোলিক হর্ণ ব্যবহারঃ জরিমানা ১০০ টাকা (ধারাঃ ১৩৯)
২) আদেশ অমান্য বাধা সৃষ্টি ও তথ্য প্রদানে অস্বীকৃতিঃ জরিমানা ৪০০ টাকা {ধারা ১৪০(১)}
৩) ওয়ানওয়ে সড়কে বিপরীত দিকে গাড়ি চালানোঃ জরিমানা ২০০ টাকা {ধারাঃ ১৪০(২)}
৪) অতিরিক্ত গতি বা নির্ধারিত গতির চেয়ে দ্রুত গতিতে গাড়ি চালানোঃ জরিমানা ৩০০ টাকা, অপরাধের পুনরাবৃত্তি করলেঃ জরিমানা ৫০০ টাকা (ধারাঃ ১৪২)
৫) দূর্ঘটনা সংক্রান্ত যে সকল অপরাধ থানায় ব্যবস্থা নেওয়া হয় নাইঃ জরিমানা ৫০০ টাকা, অপরাধের পুনরাবৃত্তি করলেঃ জরিমানা ১০০০ টাকা (ধারাঃ ১৪৬)
৬) নিরাপত্তা বিহীন অবস্থায় গাড়ি চালানোঃ জরিমানা ২৫০ থেকে ১০০০ টাকা (ধারাঃ ১৪৯)
৭) কালো বা অতিরিক্ত ধোঁয়া বের হওয়া মোটরযান ব্যবহারঃ জরিমানা ২০০ টাকা (ধারাঃ ১৫০)
৮) মোটরযান আইনের সাথে সঙ্গতিবিহীন অবস্থায় গাড়ি বিক্রয় বা ব্যবহার, গাড়ির পরিবর্তন সাধনঃ জরিমানা ২০০০ টাকা (ধারাঃ ১৫১)
৯) রেজিষ্ট্রেশন সার্টিফিকেট বা ফিটনেস সার্টিফিকেট অথবা রুট পারমিট ব্যতীত মোটরযান ব্যবহারঃ জরিমানা ১৫০০ টাকা, অপরাধের পুনরাবৃত্তি করলেঃ জরিমানা ২৫০০ (ধারাঃ ১৫২)
১০) অনুমোদন বিহীন এজেন্ট বা ক্যানভাসার নিয়োগঃ জরিমানা ৫০০ টাকা, অপরাধের পুনরাবৃত্তি করলেঃ জরিমানা ১০০০ টাকা (ধারাঃ ১৫৩)
১১) অতিরিক্ত মাল বা অনুমোদিত ওজন অতিক্রম পূর্বক গাড়ি চালনাঃ জরিমানা ১০০০ টাকা, অপরাধের পুনরাবৃত্তি করলেঃ জরিমানা ২০০০ টাকা (ধারাঃ ১৫৪)
১২) বীমা ব্যতীত গাড়ি চালানোঃ জরিমানা ৭৫০ টাকা (ধারাঃ ১৫৫)
১৩) অনুমতি ব্যতীত গাড়ি চালানোঃ জরিমানা ৭৫০ টাকা (ধারাঃ ১৫৬)
১৪) প্রকাশ্য সড়কে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিঃ জরিমানা ৫০০ টাকা (ধারাঃ ১৫৭)
১৫) গাড়ীর ব্রেক কিংবা কোন যন্ত্র অথবা গাড়ির বডি কিংবা স্পিড গর্ভণর সীল বা ট্যাক্সি মিটারের উপর অন্যায় হস্তক্ষেপ করাঃ জরিমানা ৫০০ টাকা (ধারাঃ ১৫৮)
১৬) যে সকল অপরাধের জন্য মোটরযান আইনে সুনির্দিষ্ট কোন শাস্তির ব্যবস্থা নেইঃ জরিমানা ২০০ টাকা, অপরাধের পুনরাবৃত্তি করলেঃ জরিমানা ৪০০ টাকা (ধারাঃ ১৩৭)।
ট্রাফিক আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন, নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত করুন।

সূর্য থেকে আকারে বহুগুণ ছোট হলেও সূর্য-গ্রহণের সময় চাঁদ কিভাবে সূর্যকে পুরোপুরি ঢেকে ফেলে?

পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণ
চাঁদ সূর্য থেকে অনেক ছোট, এটা সবারই জানা। কিন্তু দেখা যায় যে, সূর্য-গ্রহণের সময় এ ছোট চাঁদই সূর্যকে পুরোপুরি ঢেকে ফেলে। সূর্য থেকে আকারে ছোট হয়েও এটা কিভাবে সম্ভব?
তাহলে কি ধরে নিতে হবে সূর্য চাঁদের চেয়ে অনেক বড় হলেও আকাশে দেখতে চাঁদ ও সূর্য উভয়ই একই আকারের হয়ে যায়। হ্যাঁ, প্রকৃতপক্ষে ব্যাপারটা ঐ রকমই এবং নিতান্তই একটি আকস্মিক ঘটনা।
বাস্তবে, সূর্যের ব্যাস চাঁদের চেয়ে ৩৭৫ গুণ বড় কিন্তু পৃথিবী থেকে সূর্যের দূরত্বও চাঁদের চেয়ে প্রায় ৩৭৫ গুণ বেশি। যার ফলে, পৃথিবী থেকে দেখলে চাঁদ এবং সূর্যের কৌণিক দূরত্ব ও ব্যাস সমান দেখায়। তাই, পৃথিবী থেকে এই দুই মহাজাগতিক বস্তুর আকার প্রায় সমান দেখায়, যা একেবারেই কাকতালীয়।

চাঁদে মানুষ থাকলে তারা কি আমাদের মতোই সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দেখতে পেত?

চাঁদের আবর্তন
আমরা জানি, পৃথিবী সূর্যের চারদিকে ঘোরে। পৃথিবীর এ ঘূর্ণনের ফলেই আমরা পৃথিবী থেকে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দেখতে পাই।
অপর দিকে, চাঁদ কিন্তু মূলত পৃথিবীর চারদিকে ঘোরে। চাঁদের ষোলকলা পূর্ণ করে এক অমাবশ্যা থেকে আরেক অমাবশ্যায় পৌঁছাতে সময় লাগে সাড়ে ২৯ দিন। অর্থাৎ চাঁদ সাড়ে ২৯ দিনে পৃথিবীকে একবার প্রদক্ষিন করে। সুতরাং চাঁদে কোনও মানুষ থাকলে সে দেখতো সূর্য ওঠার পর ধীরে ধীরে সাড়ে ২৯ দিনে অস্ত যায়।

আমরা চাঁদকে কেমন দেখি? চাঁদ থেকেই বা পৃথিবী কেমন দেখা যায়?

নিকট পার্শ্ব
এটা আবার কেমন প্রশ্ন, আমরা তো চাঁদকে স্পষ্টই দেখি- কখনও গোল, কখনও অর্ধেক অথবা মাঝেমাঝে পৃথিবীর ছায়ার কারণে অদৃশ্য। এতো রূপের কারনও তো আমরা ভালোমতোই জানি। নতুন আবার কোন রূপ সৃষ্টি হলো?
না, না, নতুন কোনও রূপ সৃষ্টি হয়নি। বরংচ আপনি বরাবরই চাঁদের অর্ধেক রূপ দেখেছেন, দেখছেন এবং দেখবেন। বাকি অর্ধেক কখনই না। মানে?

দূর পার্শ্ব
চাঁদের ঘূর্ণনটি সঙ্কালিক অর্থাৎ ঘূর্ণনের সময় সবসময় চাঁদের একটি পৃষ্ঠই পৃথিবীর দিকে মুখ করা থাকে। চাঁদের যে পৃষ্ঠটি পৃথিবীর দিকে মুখ করে থাকে তাকে নিকট পার্শ্ব বলা হয় এবং এর বিপরীত পৃষ্ঠটিকে বলা হয় দূর পার্শ্ব।

চন্দ্রপৃষ্ঠ থেকে পৃথিবী
চাঁদের যে পিঠটি আমরা দেখি তার ঠিক মধ্যবিন্দুতে কেউ অবস্থান করলে দেখবে, পৃথিবী ঠিক তার মাথার উপর। আর সে যদি চাঁদের প্রান্তবিন্দুতে অবস্থান করে তাহলে সে দেখবে, পৃথিবী যেন দিগন্তরেখায় ঝুলে রয়েছে। যা মাঝেমাঝে অস্ত যায় আবার মাঝেমাঝে উঁকি মারে। এরকম হওয়ার কারন হলো, চাঁদ তার কক্ষপথে ঘোরার সময় সামান্য এপাশ-ওপাশ দুলে ঘোরে। এ কারনেই পৃথিবীকে ওঠা-নামা করতে দেখা যাবে।

চাঁদে মানুষ থাকলে কি পৃথিবীর মানুষের চেয়ে লম্বা হতো?

চাঁদের ঘূর্ণন
ধরা যাক, কোনও শিশু ভুমিষ্ঠ হওয়ার সাথে সাথে তাকে চাঁদে নিয়ে রাখা হলো এবং সেখানে তাকে বড় করা হলো। এখন প্রশ্ন হলো, ঐ শিশুটি কি পৃথিবীর মানুষের তুলনায় আকারে লম্বা হবে?
এরকম অদ্ভুত প্রশ্ন জাগার কারন হলো চাঁদের মাধ্যাকর্ষণ শক্তির তুলনায় অনেক কম, মাত্র ছয় ভাগের এক ভাগ। অর্থাৎ কারো ওজন পৃথিবীতে ৬০ কেজি হলে চাঁদে তার ওজন হবে ১০ কেজি। সুতরাং প্রশ্ন জাগে যেহেতু চাঁদ মানুষকে বেশি জোরে টেনে ধরবে না বা আকর্ষণ করবে না, তাই সেখানে বাস্তবে মানুষ লম্বা হবে কিনা তা পরীক্ষা সাপেক্ষ ব্যাপার।
কিন্তু এটা মনে রাখা দরকার যে- মানুষের উচ্চতার উপর মাধ্যাকর্ষণ শক্তির প্রভাব নগণ্য। লম্বা হওয়ার বিষয়টি পুরোপুরি জেনেটিক কোড দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। হাঁড় ও পেশীর বৃদ্ধি ঘটে কোষ বিভাজনের মাধ্যমে। তাই এটা একটি জীনগত বৈশিষ্ট্য। যেমন- লম্বা বাবা-মায়ের ছেলে-মেয়েরা সাধারণত লম্বা হয়। পাশাপাশি প্রয়োজনীয় পুষ্টি ও খাদ্য শরীর গঠনে একান্ত অপরিহার্য।
তাই, চাঁদে মানুষ থাকলে তারা লম্বা হতো, এ ধারনাটি নিয়ে মাথা ঘামানোর কোনও দরকার নেই। আর যেহেতু অভিকর্ষজ শক্তির প্রভাব নগণ্য তাই নির্দ্বিধায় হাঁটা-চলা করুন, সারাদিন শুয়ে থেকে লম্বা হওয়ার চিন্তা বাদ দেয়াই ভালো।
ধন্যবাদ সবাইকে...
প্রাচীনকাল থেকেই মানুষ নিমপাতা ব্যবহার করে আসছেন।কারো শরীরে বসন্ত বা পক্স হলে শরীরে জ্বালাপোড়া কমাতে নিম পাতা ব্যবহার করা হয়।তাছাড়া নিম পাতা ত্বকের বিভিন্ন ধরনের সমস্যায় ভেষজ ওষুধ হিসেবে কাজ করে থাকে। এগুলো ছাড়াও নিমের রয়েছে আরো অনেক স্বাস্থ্যকর গুণ।


নিমের মধ্যে রয়েছে অ্যান্টিফাংগাল এবং অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান, যা খুশকি রোধে খুব কার্যকরী ভূমিকা রাখে। 
খুশকি থেকে মুক্তি পেতে গোসলের পানির মধ্যে কিছু নিমপাতা মিশিয়ে মাথায় ঢালুন।
যে জায়গায় চুলকানি হচ্ছে সেখানে নিমপাতা বেটে লাগাতে পারেন। এটি ত্বককে নিরাময় হতে সাহায্য করবে এবং ত্বকের ওপরের মৃত চামড়া দূর করবে।

নিমপাতার গুঁড়ো পানিতে মিশিয়ে মুখ ধুতে পারেন। আর এতে করে আপনার মুখের ব্রণ দূর হবে এবং ব্রণের কারণে হওয়া জ্বালাপোড়া ভাবও দূর হবে।অন্যান্য উপায়ের চেয়ে ব্রণ দূর করার এটি একটি কার্যকর পদ্ধতি। 

নিমপাতা ক্ষত নিরাময়েও বেশ কার্যকরি ভূমিকা রাখে।কোনো জায়গায় ক্ষত হলে নিমপাতা বেটে ক্ষতস্থানে লাগিয়ে রাখতে পারেন।কেননা এর অ্যান্টিমাক্রোবাইয়াল উপাদান ক্ষত নিরাময়ে দ্রুত কাজ করে থাকে। 

একজিমা, ফোঁড়া অথবা বিভিন্ন ধরনের ত্বকের সমস্যা নিরাময়ে নিম পাতার ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।আর ত্বকের যেসব জায়গায় এ ধরনের সমস্যা রয়েছে সেখানে নিমপাতা বেটে লাগাতে পারেন। এবং ত্বককে স্বাস্থ্যকর রাখতে নিমের তেলও ব্যবহার করতে পারেন।
সুন্দর এই পৃথিবীতে বাঁচতে চাইলে ধূমপান অবশ্যই ছেড়ে দিন। কারণ ‘ধূমপান মৃত্যুর কারণ’। আর আমরা এটা সবাই জানি।
আজকাল দেশ-বিদেশে অনেক সিগারেটের প্যাকেটে এধরনের সতর্ক সংকেত লেখা হয়ে থাকে। “ধূমপান স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর”। মূলত ধূমপানের কুফল হিসেবে ফুসফুসের ক্যান্সার, হার্টের রক্তনালি সরু হয়ে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বৃদ্ধি, মস্তিষ্কে রক্ত চলাচলে বাধা, যৌন ক্ষমতা হ্রাসসহ নানা প্রকার মারাত্মক ক্ষতিকর দিক রয়েছে।
আপনারা অনেকেই ধূমপান নামক এই ঘাতককে চিরতরে নির্বাসনে দিতে চান কিন্তু নানা কারণে ধূমপান আর ছাড়তে পারেন না। বিশেষজ্ঞগণ ধূমপানের আসক্তি থেকে নিজেকে রক্ষার কয়েকটি উপায় বলে দিয়েছেন। এসব অনুসরণ করলে অবশ্যই ধূমপান ছাড়া সম্ভব বলে মনে করা হয়।
তাই আসুন দেখে নিই ধূমপানের আসক্তি থেকে নিজেকে রক্ষার কয়েকটি উপায়:
  • প্রথমে সিদ্ধান্ত নিন কেন ধূমপান ছাড়া আপনার জন্য জরুরি।অর্থাৎ কি কারণে আপনি ধূমপান ছাড়তে চান। যেমন ক্যান্সার ও হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমাতে।
  • নিকোটিনের বিকল্প হিসেবে গাম, লজেন্স ইত্যাদি ব্যবহার করতে হবে।
  • নিকোটিনের বিকল্প ওষুধ সেবন করা যেতে পারে।
  • একা একা ধূমপান না ছেড়ে পরিবারের অন্যান্য সদস্য (যদি ধূমপায়ী থাকেন), বন্ধু-বান্ধব ও সহকর্মীদের উৎসাহিত করে একসঙ্গে ধূমপান ত্যাগের ঘোষণা দিন।
  • মানসিক চাপ কমাতে চেষ্টা করুন। প্রয়োজনে হালকা ম্যাসাজ নিন।
  • অ্যালকোহল পরিহার করুন।
  • মনোযোগ অন্যদিকে নিতে ঘরের কাজ করতে চেষ্টা করুন।
  • ধূমপান ত্যাগের জন্য বার বার চেষ্টা করুন।একবার ছেড়ে দিলে দ্বিতীয় বার আর ধূমপান করবেন না।
  • নিয়মিত ব্যায়াম করুন।
  • প্রচুর পরিমাণ সবুজ শাক-সবজি ও রঙিন ফলমূল খান।
  • ধূমপান বন্ধ করে যে আর্থিক সাশ্রয় আপনার হবে তার একটা অংশ জনকল্যাণ অথবা হালকা বিনোদনে ব্যয় করুন।
  • আর ধূমপান ছাড়ুন বন্ধু-বান্ধব বা প্রেমিক-প্রেমিকাকে খুশি করার জন্য নয়, বরং আপনার সুস্বাস্থ্যের জন্যই এটা করেছেন।এমন জোরালো অবস্থান নিন।
ক্লান্তি দূর করে কর্মব্যস্ত জীবনে কর্মোদ্যম থাকতে এক কাপ চা অনেকের কাছেই বেশ পছন্দের।তাই দিনের শুরুতে কিংবা পড়ন্ত বিকালে এক কাপ ধোঁয়া উঠা চায়ের জুড়ি নেই।

কিন্তু শরীরের জন্য কোন চা ভালো তা অধিকাংশ মানুষই জানেন না।এক গবেষণায় দেখা গেছে যে, চায়ে রয়েছে ফ্ল্যাভোনয়েড নামক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা শরীরের জন্য উপকারী।
এই ফ্ল্যাভোনয়েড বেশি পাওয়া যায় হালকা জাল এর রং চা-তেই।ঐ গবেষণায় এছাড়া আরও বলা হয়, রং চা রক্তনালীর প্রসারণ ঘটায় যা উচ্চরক্তচাপ ও হৃদরোগ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক ভূমিকা পালন করে থাকে।
তাছাড়া ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রেও রং চা উপকারী কারণ এটি কোষ থেকে সাধারণের তুলনায় প্রায় ১৫ গুণ বেশি ইনসুলিন নিঃসৃত করে এবং রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে থাকে।
এছাড়া দুধ চা কিংবা অনেকক্ষণ জ্বাল দেওয়া চাপাতা থেকে ট্যানিন নিঃসৃত হয় যা ক্যানসারের অন্যতম উপাদান। তাই হালকা জ্বাল এর রং চা স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।

ত্রিশ বছর আগে, ১৯৮৯ সালে বেইজিংয়ের তিয়েনআনমেন স্কোয়ারে বিশাল এক বিক্ষোভ শুরু হয়েছিল, যা দমন করে চীনের ক্ষমতাসীন কম্যুনিস্ট পার্টি।
ধারণা করা হয়, তিয়েনআনমেন স্কোয়ারের বিক্ষোভে অংশ নিয়েছিল দশ লাখ মানুষ
ওই বিক্ষোভের সময়কার একটি ছবি বিংশ শতাব্দীর সবচেয়ে প্রতীকী ছবিগুলোর একটি হয়ে উঠেছিল - যাতে দেখা যাচ্ছিল, সেনা ট্যাংকের সামনে একা দাঁড়িয়ে আছেন একজন আন্দোলনকারী।

কি কারণে বিক্ষোভ?

১৯৮০'র দশকে চীন অনেক পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিল।
বেসরকারি কোম্পানি এবং বিদেশী বিনিয়োগকারীদের অনুমোদন দিতে শুরু করেছিল ক্ষমতাসীন কম্যুনিস্ট পার্টি।
নেতা ডেং শিয়াওপিং আশা করছিলেন, এর ফলে দেশের অর্থনীতি আরো বাড়বে এবং মানুষের জীবনযাত্রার উন্নতি হবে।
তবে এই পদক্ষেপের ফলে দুর্নীতিও বাড়ছিল, সেই সঙ্গে রাজনৈতিক উদারতার আশাও তৈরি হয়েছিল।
চীনের কম্যুনিস্ট পার্টির মধ্যেও বিভেদ তৈরি হয়েছিল। একটি পক্ষ চাইছিল দ্রুত পরিবর্তন, আরেকটি পক্ষ চাইছিল যেন বরাবরের মতোই রাষ্ট্রের কঠোর নিয়ন্ত্রণ বজায় থাকে।
আশির দশকের মাঝামাঝিতে ছাত্রদের নেতৃত্বে বিক্ষোভ শুরু হয়ে যায়।
এদের মধ্যে অনেকেই ছিলেন যারা একটা সময় বিদেশে কাটিয়েছেন এবং নতুন চিন্তাভাবনা ও উন্নত জীবনযাত্রার সঙ্গে পরিচিত ছিলেন।
তিয়েনআনমেন স্কোয়ারের আন্দোলনকারী
কীভাবে বিক্ষোভ দানা বেঁধে ওঠে?
আরো বেশি রাজনৈতিক স্বাধীনতার দাবিতে ১৯৮৯ সালের বসন্তে বিক্ষোভ আরো জোরালো হয়ে উঠছিল।
সেটি আরো জোরালো হয় হু ইয়াওবাং নামের একজন রাজনৈতিক নেতার মৃত্যুতে, যিনি কিছু অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক পরিবর্তনের বিষয় দেখভাল করতেন।
রাজনৈতিক বিরোধীদের কারণে দুই বছর আগে দলের শীর্ষ পর্যায়ের পদ থেকে তাকে নীচে নামিয়ে দেয়া হয়।
হু'র শেষকৃত্যানুষ্ঠানে হাজার হাজার মানুষ জড়ো হন। এপ্রিল মাসের ওই অনুষ্ঠানে তারা জড়ো হয়ে বাকস্বাধীনতা এবং কম সেন্সরশিপের দাবি জানাতে থাকেন।
এর পরের কয়েক সপ্তাহে বিক্ষোভকারীরা তিয়েনআনমেন স্কোয়ারে জড়ো হতে শুরু করে। সেই সংখ্যা একপর্যায়ে দশ লাখে পৌঁছেছিল বলে ধারণা করা হয়।
ওই স্কোয়ারটি হচ্ছে বেইজিংয়ের সবচেয়ে বিখ্যাত স্থাপনা।
এটি মাও সেতুং-এর সমাধিস্থলের কাছাকাছি, যিনি আধুনিক চীনের প্রতিষ্ঠাতা। সেই সঙ্গে কম্যুনিস্ট পার্টির সভাস্থল গ্রেট হল অব দি পিপলেরও কাছাকাছি।
ডেং শিয়াওপিং (বামে), সঙ্গে হু ইয়াওবাং

চীনের সরকারের প্রতিক্রিয়া কেমন ছিল?

প্রথমদিকে বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে সরাসরি কোন পদক্ষেপ নেয়নি সরকার।
কিভাবে এক্ষেত্রে ব্যবস্থা নেয়া হবে, তা নিয়ে মতভিন্নতা ছিল দলের নেতাদের মধ্যে। অনেকে কিছুটা ছাড় দেয়ার পক্ষে ছিলেন, আবার অনেকে ছিলেন কঠোর পন্থা বেছে নেয়ার পক্ষে।
এই বিতর্কে শেষপর্যন্ত কট্টরপন্থীদের জয় হয়। মে মাসের শেষ দুই সপ্তাহে বেইজিংয়ে মার্শাল ল' জারি করা হয়।
৩রা ও ৪ঠা জুনে তিয়েনআনমেন স্কোয়ারের দিকে এগোতে শুরু করে সৈনিকরা। ওই এলাকার নিয়ন্ত্রণ নেয়ার জন্য তারা গুলি করে, বাধা ভেঙেচুরে এবং বিক্ষোভকারীদের গ্রেপ্তার করতে শুরু করে।
৫ই জুনের একটি ছবিতে দেখা যায়, স্কোয়ারের দিকে এক সাড়ি ট্যাংকের যাত্রাপথে দাঁড়িয়ে রয়েছেন একা একজন ব্যক্তি

ট্যাংকের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষটি কে?

৫ই জুনের একটি ছবিতে দেখা যায়, স্কোয়ারের দিকে এক সাড়ি ট্যাংকের যাত্রাপথে দাঁড়িয়ে রয়েছেন একা একজন ব্যক্তি।
তার হাতে দুটি শপিং ব্যাগ দেখা যায়। তিনি হেঁটে ট্যাংকগুলোকে অতিক্রম করতে বাধা দিচ্ছেন বলে ধারণ করা চিত্রে দেখা যায়।
দুইজন ব্যক্তি এর পর তাকে সরিয়ে নিয়ে যান।
পরে তার কি হয়েছে, তা আর জানা যায়নি। কিন্তু তিনি বিক্ষোভের এক প্রতীক হয়ে ওঠেন।

ওই বিক্ষোভে কতজন মারা যান?

কারো জানা নেই, সেই বিক্ষোভে আসলে কতজন মারা গেছে।
১৯৮৯ সালে জুনের শেষ নাগাদ, চীনের সরকার জানিয়েছিল যে, বেসামরিক ব্যক্তি এবং নিরাপত্তা কর্মী মিলিয়ে বিক্ষোভে দুইশোজন নিহত হয়েছে।
অনেকে ধারণা করেন, সেখানে কয়েকশত থেকে শুরু করে কয়েক হাজার মানুষ মারা গিয়েছে।
২০১৭ সালে ব্রিটিশ কূটনৈতিক বার্তার প্রকাশ করা হলে জানা যায়, সে সময় চীনে ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত স্যার অ্যালান ডোনাল্ড বার্তা পাঠিয়েছিলেন যে, সেখানে ১০ হাজার মানুষ নিহত হয়েছে।
তিয়েনআনমেন স্কয়ারের ঘটনাবলী নিয়ে আলোচনা করা চীনে অত্যন্ত স্পর্শকাতর একটি বিষয়

চীনের মানুষ কি জানে সেখানে কী ঘটেছিল?

তিয়েনআনমেন স্কোয়ারের ঘটনাবলী নিয়ে আলোচনা করা চীনে অত্যন্ত স্পর্শকাতর একটি বিষয়।
ওই হত্যাকাণ্ডের ঘটনাবলী নিয়ে বক্তব্য বা পোস্ট ইন্টারনেট থেকে নিয়মিত সরিয়ে নেয়া হয়, যা দেশটির সরকার কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করে।
সুতরাং দেশটির যে তরুণ প্রজন্ম কখনো বিক্ষোভ-আন্দোলনের মধ্য দিয়ে যায়নি, তিয়েনআনমেন স্কোয়ারের সেদিনকার ঘটনা সম্পর্কে তারা খুব কমই জানে।