October 2019
অনেকেরই অল্প বয়সে চুল পেকে যায়। কখনও দীর্ঘদিন ধরে চলা হজমের সমস্যা বা লিভারের সমস্যায় অকালে চুলে পাক ধরে, কখনও বা মাথার ত্বকে পর্যাপ্ত ভিটামিন আর খনিজের অভাবে এমনটা হয়। কিন্তু কারণ যা-ই হোক না কেন, অসময়ে মাথায় পাকা চুল কেউ-ই পছন্দ করেন না। তবে দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায় কয়েকটি বিশেষ খাবার-দাবার রাখতে পারলে সহজেই অকালে চুল পেকে যাওয়ার সমস্যা থেকে রেহাই পাওয়া সম্ভব।আসুন এ বিষয়ে সবিস্তারে জেনে নেওয়া যাক। অকালে চুল পেকে যাওয়া ঠেকাতে খাবার তালিকায় রাখুন এই ৭ খাবার: বাদাম: আখরোটে, আমন্ড বা যে কোনও ধরনের বাদামেই রয়েছে প্রচুর পরিমাণে কপার যা চুলের স্বাস্থ্যের পক্ষে খুবই উপকারী! অকালে চুল পাকার সমস্যা ঠেকাতে বাদাম তেলও মাথায় মেখে দেখুন। উপকার পাবেন। সবুজ শাক-সবজি: যে কোনও সবুজ সবজিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফোলিক অ্যাসিড যা চুলের স্বাস্থ্য রক্ষার পাশাপাশি অকালে চুল পাকার সমস্যা ঠেকাতেও সাহায্য করে। ছোলা: ছোলায় রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন বি-৯ বা ফোলিক অ্যাসিড। তাই অকালে চুল পেকে যাওয়া ঠেকাতে প্রতিদিন ছোলা খাওয়ার অভ্যাস করুন। মুরগীর মাংস: মুরগীর মাংসে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন বি-১২ আর ফোলিক অ্যাসিড যা অকালে চুল পেকে যাওয়া ঠেকাতে সাহায্য করে। লিভার বা মেটে: পাঁঠার মাংসের লিভার বা মেটেতে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন বি-১২ যা অকালে চুলে পাক ধরা ঠেকাতে সাহায্য করে। চিংড়ি: অকালে চুলে পাক ধরার সমস্যা ঠেকাতে পাতে রাখুন চিংড়ি। চিংড়িতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে জিঙ্ক যা চুলের গোড়ার রঞ্জক ধরে রেখে অকালে চুল পাকার সমস্যা রোধে সাহায্য করে। স্যামন মাছ: এই মাছে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড যা চুলের স্বাস্থ্যের পক্ষে খুবই উপকারী!
খাবার খাওয়ার সময়, গুরুত্বপূর্ণ কোনো কাজের মধ্যে অথবা অবসর কাটানোর সময় হঠাৎ হেঁচকির প্রকোপ শুরু হওয়াটা খুব সাধারণ একটি বিষয়। এমনকি কোনো কারণ ছাড়াই যখন তখন মানুষের হেঁচকি শুরু হলে তা নিয়ে অবাক হওয়ার কিছু নেই। বিশেষজ্ঞদের মতে, পরিপাকতন্ত্রের গোলমালের কারণেই মানুষের হেঁচকি আসে। মানুষের হেঁচকি আসে কেন? বিজ্ঞানীরা শত শত বছর ধরে আপাতদৃষ্টিতে ক্ষতিহীন এই শ্বাসপ্রশ্বাসজনিত সমস্যার সুনির্দিষ্ট কারণ খোঁজার চেষ্টা করেছেন। হেঁচকির সময় শ্বাসনালীতে সামান্য খিঁচুনির মত হয় যার ফলে শ্বাসযন্ত্রে দ্রুত বাতাস প্রবেশ করে। তখন ভোকাল কর্ড হঠাৎ বন্ধ হয়ে 'হিক' শব্দ তৈরি হয়। ফুসফুসের নীচের পাতলা মাংসপেশীর স্তর, যেটিকে ডায়াফ্রাম বলে, হঠাৎ সংকোচনের ফলেই হেঁচকি তৈরি হয়। হেঁচকি ওঠার একশো'র বেশি মেডিক্যাল কারণ থাকতে পারে, তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সেগুলো খুবই সামান্য কারণেই হয়ে থাকে। ওষুধ নির্মাতা সংস্থা অ্যাকমে'র সিনিয়র ম্যানেজার ও চিকিৎসক আফরোজা আখতার বলেন, "হেঁচকির সবচেয়ে সাধারণ কারণ দ্রুত খাবার গ্রহণ করা।" দ্রুত খাওয়ার কারণে খাবারের সাথে সাথে পেটের ভেতর বাতাস প্রবেশ করার কারণে 'ভ্যাগাস' নার্ভের কার্যকলাপ বাধাগ্রস্ত হয়, ফলে হেঁচকি তৈরি হয়। চেতনানাশক, উত্তেজনাবর্ধক, পার্কিনসন্স রোগ বা কেমোথেরাপির বিভিন্ন ধরণের ওষুধ নেয়ার ফলেও হেঁচকি তৈরি হতে পারে। এছাড়া কিছু অসুখের ক্ষেত্রেও মানুষের হেঁচকি হতে পারে। মিজ. আখতার বলেন, "কিডনি ফেল করলে, স্ট্রোকের ক্ষেত্রে, মাল্টিপল স্ক্লেরোসিস বা মেনিনজাইটিসের ক্ষেত্রেও অনেকের হেঁচকি তৈরি হতে পারে।" কিন্তু অধিকাংশ সময়ই হেঁচকি শুরু হওয়ার জন্য এসব কোনো কারণেরই দরকার হয় না। হাসি বা কাশির মধ্যে, অতিরিক্ত মদ্যপান, অতিদ্রুত খাবার গ্রহণ করা বা ঝাঁঝসহ পানীয় বেশি পরিমাণে খেলে হেঁচকি শুরু হতে পারে, তবে কোনো ধরণের কারণ ছাড়াও হেঁচকি আসাটা একেবারেই অস্বাভাবিক কোনো বিষয় নয়। হেঁচকি ওঠাটা খুবই স্বাভাবিক একটি ঘটনা এবং সাধারণত মিনিটখানেকের মধ্যেই তা স্বাভাবিক পর্যায়ে পৌঁছে যায়। তবে অতিরিক্ত মাত্রায় হেঁচকির উদাহরণও কিন্তু রয়েছে। যেমন সবচেয়ে বেশি সময় ধরে হেঁচকি ওঠার বিশ্ব রেকর্ডের উদাহরণ হিসেবে মনে করা হয় যুক্তরাষ্ট্রের চার্লস অসবোর্নের ঘটনাকে। ১৯২২ সালে হেঁচকি তোলা শুরু করেন তিনি, কথিত আছে সেসময় তিনি একটি শূকর ওজন করার চেষ্টা করছিলেন। মি. অসবোর্ন হেঁচকি তোলা থামান ১৯৯০ সালের ফেব্রুয়ারিতে - মোট ৬৮ বছর পর। হেঁচকি থামানোর উপায় ঘরোয়াভাবে হেঁচকি থামানোর প্রচেষ্টার ক্ষেত্রে মূলত দুইটি মূলনীতি অনুসরণ করা হয়। একটি হলো রক্তে কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়া যেন শ্বাসনালীতে খিঁচুনি বন্ধ হয়। আরেকটি হলো শ্বাসপ্রশ্বাস ও গলধকরণের মধ্যে সমন্বয় সাধন করা 'ভ্যাগাস' স্নায়ুকে উদ্দীপ্ত করা। যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসের ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী কয়েকটি পদ্ধতিতে হেঁচকি থামানো যায়। ১. কাগজের ব্যাগে নিশ্বাস ফেলা (ব্যাগ মাথা দিয়ে ঢুকাবেন না) ২. দুই হাঁটু বুক পর্যন্ত টেনে ধরে সামনের দিকে ঝুঁকে পড়া ৩. বরফ ঠাণ্ডা পানি খাওয়া ৪. কিছু দানাদার চিনি খাওয়া ৫. লেবুতে কামড় দেয়া বা একটু ভিনেগারের স্বাদ নেয়া ৬. স্বল্প সময়ের জন্য দম বন্ধ করে রাখা কখন চিকিৎসার পরামর্শ নিতে হবে হেঁচকি সাধারণত আপনা থেকেই ভাল হয়ে যায়, তবে যদি অতি দীর্ঘসময় ধরে হেঁচকি উঠতে থাকে তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া প্রয়োজন। মিজ. আখতার বলেন, "হেঁচকি নিরাময়ে ঘরোয়া চিকিৎসা যদি কাজ না করে সেক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।" হেঁচকির তীব্রতার ওপর নির্ভর করে ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত বলে মন্তব্য করেন মিজ. আখতার। এছাড়া নিয়মিত হেঁচকিতে দৈনন্দিন জীবনের কার্যক্রম ব্যহত হলেও চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়ার উপদেশ দেন বিশেষজ্ঞরা। সূত্র : বিবিসি।
গবেষণায় দেখা গেছে, যারা ধীরে হাঁটে তাদের মস্তিষ্ক ও শরীরের বয়স বেশি বেড়ে গেছে। চল্লিশ বছর বয়সে আপনি কত দ্রুত হাঁটতে পারেন তা বলে দেবে আপনার মগজ এবং শরীরের বয়স কত দ্রুত বাড়ছে বা বাড়ছে না- এ তথ্য দিয়েছেন বিজ্ঞানীরা।হাঁটার গতির ওপর সহজ এক পরীক্ষা চালিয়ে গবেষকরা কতো দ্রুত বয়স বাড়ছে সেটা পরিমাপ করতে সক্ষম হয়েছেন। যারা ধীরে হাঁটেন তারা যে শুধু তাড়াতাড়ি বুড়িয়ে যান তাই নয়, তাদের মুখও দেখায় বুড়োটে এবং তাদের মস্তিষ্কের আকৃতিও ছোট হয়ে যায়। আন্তর্জাতিক গবেষকদের দলটি বলেছে, তাদের এই গবেষণার ফলাফল ''দারুণ চমকপ্রদ।'' চিকিৎসকরা সাধারণত হাঁটার গতি ও ভঙ্গী দেখে কারো স্বাস্থ্যের সার্বিক অবস্থা বুঝতে পারেন, বিশেষ করে ৬৫ বছরের বেশি বয়স যাদের। কারণ হাঁটার গতিপ্রকৃতি থেকে মাংসপেশীর শক্তি, ফুসফুসের সুস্থতা, মেরুদণ্ডের শক্তি এবং দৃষ্টিশক্তির উজ্জ্বলতা বোঝা যায়। বৃদ্ধ বয়সে হাঁটার গতি ধীর হয়ে যাওয়ার সাথে স্মৃতিভ্রমের যোগাযোগও করেছেন কোন কোন বিজ্ঞানী। 'সমস্যার লক্ষণ' এই গবেষণা চালানো হয়েছে নিউজিল্যান্ডে এক হাজার লোকের ওপর। যাদের জন্ম ১৯৭০ এর দশকে। ৪৫ বছর বয়স পর্যন্ত তাদের সবরকম তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করা হয়েছে। তাদের হাঁটার গতিপ্রকৃতির ওপর পরীক্ষা চালানো হয় আরো আগে থেকে। এই গবেষণায় যারা অংশ নিয়েছিলেন তাদের বিভিন্ন শারীরিক পরীক্ষা করা হতো, বিভিন্ন সময়ে তাদের মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতার পরীক্ষা নেয়া হতো এবং মস্তিষ্কের বিভিন্ন স্ক্যান করা হতো। তাদের শিশু বয়স থেকে প্রতি দুই বছর অন্তর বুদ্ধিবৃত্তি ও চিন্তাশক্তির সক্ষমতা পরীক্ষা করে দেখা হতো। ''এই গবেষণায় দেখা গেছে বৃদ্ধ বয়স হওয়ার আগেই ধীরগতিতে হাঁটা সমস্যার প্রতি একটা ইঙ্গিত,'' বলছেন লণ্ডনের কিংস কলেজ এবং আমেরিকার ডিউক ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক এবং এই গবেষণা পত্রের প্রধান লেখক টেরি মফিট। তিনি বলছেন, এমনকী ৪৫ বছর বয়সী যারা ধীরে হাঁটেন তাদের মধ্যেও হাঁটার গতিতে বিস্তর ফারাক দেখা যায়। তবে তার কথায় মোদ্দা বিষয়টা হলো, যাদের হাঁটার গতি যত ধীর হয়ে যায় তাদের বয়স বাড়ার প্রক্রিয়াও তত দ্রুততা পায়। তাদের ফুসফুসের ক্ষমতা, দাঁতের অবস্থা এবং রোগ প্রতিরোধ সক্ষমতা যারা দ্রুত হাঁটেন তাদের থেকে খারাপ হয়ে যায়। এই গবেষণায় সবচেয়ে অপ্রত্যাশিত যে ফলাফল পাওয়া গেছে তা হলো মস্তিষ্কের স্ক্যান থেকে দেখা গেছে যাদের হাঁটার গতি যত ধীর হয়ে গেছে, তাদের মস্তিষ্কের বয়স তত বেশি বেড়ে গেছে। গবেষকরা আরো দেখেছেন, মাত্র তিন বছর বয়সে মানুষের বুদ্ধি, ভাষা ও স্নায়বিক দক্ষতা পরীক্ষা করে তারা নির্ধারণ করতে পারেন ৪৫ বছর বয়সে তাদের হাঁটার গতি কী হবে। তারা বলছেন, চল্লিশের বেশি বয়সে যাদের হাঁটার গতি ধীর হয়ে যায়, শিশুকালে তাদের আই.কিউ. (বুদ্ধিমত্তার মাপকাঠি) যারা ৪৫ বছরেও দ্রুত হাঁটেন তাদের থেকে ১২ পয়েন্ট কম ছিল। 'জীবনযাপনের সাথে যোগাযোগ' আন্তর্জাতিক গবেষক দল তাদের গবেষণা ফলাফলে লিখেছেন, স্বাস্থ্য এবং বুদ্ধিমত্তার মধ্যে পার্থক্যের একটা কারণ শিশুকাল থেকে জীবনযাপনের মান। জীবনের শুরুতে যারা ভাল মানের জীবনযাপনের সুযোগ পেয়েছেন তাদের বুদ্ধিমত্তা ও স্বাস্থ্যের ওপর তার একটা প্রভাব পড়েছে। গবেষকরা বলছেন, অল্প বয়সে হাঁটার গতি পরিমাপ করে মানুষের বয়স বাড়ার প্রক্রিয়াকে ধীরগতি করার পদ্ধতি বা চিকিৎসা নিয়ে গবেষণা সম্ভব। নিচু ক্যালরির খাবার খাওয়া থেকে শুরু করে মেটফরমিন জাতীয় ওষুধ খাওয়ার উপযোগিতা নিয়ে এখন গবেষণা চালানো হচ্ছে। তারা বলছেন, এই গবেষণার ফলাফল বয়স কম এবং স্বাস্থ্য ভাল থাকা অবস্থায় মানুষকে মস্তিষ্কের বয়স বাড়া বা সাধারণভাবে স্বাস্থ্য ভাল রাখার জন্য জীবনযাপনের মান বদলানোর বিষয়গুলো বিবেচনায় নিতে সাহায্য করবে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, ১৯৭৫ সালের পরে বিশ্বে স্থূলতার হার প্রায় তিনগুণ বেড়ে গেছে।
জাতিসঙ্ঘের এই এজেন্সি ধারণা করছে, ২০১৬ সালে বিশ্বে ১৯০ কোটির বেশি মানুষের ওজন অতিরিক্ত ছিল, যাদের মধ্যে ৬৫ কোটি মানুষ স্থূলতা রয়েছে।

এই সংখ্যা থেকে বোঝা যায় কেন নানা ক্ষেত্রের মানুষজন 'স্থূলতার মহামারি' শব্দ ব্যবহার করতে শুরু করেছেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাবে এই রোগে প্রতি বছর কমপক্ষে ৩০ লাখ মানুষের মৃত্যু হচ্ছে।
বিজ্ঞানী এবং নীতি নির্ধারকরা সতর্ক করে দিয়েছেন যে, যেভাবে স্থূলতার বিষয়টি মোকাবেলা করা হচ্ছে তা ভুল এবং কুসংস্কার নির্ভর হয়ে পড়েছে। কিন্তু মোটা হওয়া বা স্থূলতার বিরুদ্ধে এই লড়াইয়ে কোনটা সত্যি আর কোনটা মিথ্যা?
এসব প্রশ্নের উত্তর হয়তো আপনাকে অবাক করে দেবে।
'স্থূলতা একটি রোগ, পছন্দের ব্যাপার নয়'
স্থূলতা মহামারিতে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত দেশের অন্যতম হলো যুক্তরাষ্ট্র।
আমেরিকান স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা ধারণা করছেন যে, দেশটির ৩৬ শতাংশের বেশি জনগোষ্ঠী এখন স্থূলতায় ভুগছে। ২০১৩ সাল থেকে স্থূলতাকে একটি রোগ হিসাবে বিবেচনা করে আসছে আমেরিকান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন।
তা সত্ত্বেও, ২০১৮ সালেও চিকিৎসকদের সংবাদ পোর্টাল 'মেডস্কেপে'র জরিপে দেখা গেছে, দেশটির ৩৬ শতাংশ চিকিৎসক আর ৪৬ শতাংশ সেবিকা এটিকে রোগ বলে মনে করেন না। ৮০ শতাংশ চিকিৎসক উত্তর দিয়েছেন যে, স্থূলতার পেছনের বড় কারণটি হলো জীবনযাপনের ধারা।
তবে ব্রিটিশ সাইকোলজিক্যাল সোসাইটি থেকে গত সেপ্টেম্বর মাসে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, স্থূলতা কোন পছন্দের ব্যাপার নয়।
''শারীরিক এবং মানসিক কিছু বিষয় পরিবেশ ও সামাজিক প্রভাবের সঙ্গে একত্রিত হয়ে মানুষের অতিরিক্ত ওজন বা স্থূলতা কারণ তৈরি হয়।'' ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
'স্থূলতাকারো ইচ্ছা অনিচ্ছার ব্যাপার নয়।'
১৯৯০ এর দশক থেকেই বিজ্ঞানীরা ধারণা করে আসছেন যে, স্থূলতার সাথে বংশগত সম্পর্ক রয়েছে।
গত জুলাই মাসে নরওয়েজিয়ান ইউনিভার্সিটি অফ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির একদল গবেষক আবিষ্কার করেন যে, যাদের পরিবারের পূর্বে স্থূলতার ইতিহাস রয়েছে, তাদের বংশধরদের মধ্যে এটির বিস্তারের ঝুঁকিও বেশি। যা সাম্প্রতিক দশকগুলোয় অনেক বেশি দেখা যাচ্ছে।
উচ্চতার সাথে ওজন মিলিয়ে সহজেই বুঝতে পারা যায় যে, আমাদের ওজন ঠিক এবং স্বাস্থ্যসম্মত আছে কিনা।
ওই দলটি নরওয়ের এক লাখ ১৯ হাজার মানুষের ওপর গবেষণা করেছে, যারা নিয়মিতভাবে তাদের উচ্চতার সাথে ওজন মেপেছেন। সেখানে দেখা গেছে, সময়ের সাথে সাথে উচ্চতার সঙ্গে তাল মিলিয়ে তাদের ওজন বেড়েছে। কিন্তু জিনগত কারণে কিছু মানুষের ওজন অতিরিক্ত বেড়ে গেছে।
''বর্তমানে ৩৫ বছর জিনগত প্রবণতার কারণে বয়সী একজন গড় উচ্চতার নরওয়েজিয়ানের ওপর প্রায় সাত কেজি বেশি হয়ে থাকে, যা অন্যদের ক্ষেত্রে দেখা যায় না,'' বলছেন মারিয়া ব্রান্ডকভিস্ট, ওই দলের একজন গবেষক।
'অতিরিক্ত ওজন সবসময়ের জন্য অস্বাস্থ্যকর'
অতিরিক্ত ওজন এবং স্বাস্থ্যগত জটিলতার ব্যাপারটি অনেকেরই জানা এবং অনেকটাই প্রমাণিত একটি ব্যাপার।
তবে সাম্প্রতিক গবেষণায় প্রশ্ন উঠেছে যে, অতিরিক্ত ওজন বা স্থূলতা সবসময়েই কারো স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর কিনা?
২০১২ সালে ইউরোপিয়ান সোসাইটি অফ কার্ডিওলোজি বড় একটি গবেষণার প্রতিবেদন প্রকাশ করে যেখানে স্থূলতা নিয়ে প্রচলিত কিছু ধারণার বিপরীত তথ্য তুলে ধরা হয়।
সেখানে দেখা যায় যে, কিছু মানুষের স্থূলতা থাকলেও সত্ত্বেও হজমের দিক থেকে স্বাস্থ্যবান এবং সুস্থ রয়েছেন, সাধারণ মানুষের তুলনায় হৃদরোগ বা ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ার কোনো ঝুঁকিতে নেই। তারা উচ্চ কোলেস্টেরল, রক্তচাপে ভোগেন না এবং অন্য স্থূল মানুষদের চেয়ে অনেক বেশি শারীরিকভাবে সুস্থ থাকেন।
অনেকগুলো দীর্ঘস্থায়ী রোগের সাথে স্থূলতার সম্পর্ক রয়েছে বলে সবাই জানে, যেমন হৃদরোগ ও ক্যান্সার। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, স্থূল মানুষদের মধ্যেও এমন কিছু মানুষ আছেন যাদের এরকম বিপাকীয় জটিলতায় ভুগতে হয় না। লিখেছেন ইউনিভার্সিটি অফ গ্রানাডা ইন স্পেনের অধ্যাপক ফ্রান্সিসকো অর্টেগা, যিনি ওই প্রতিবেদনের প্রধান লেখক।
''চিকিৎসকদের এই বিষয়টি বিবেচনায় নেয়া উচিত যে, সব স্থূল মানুষের একই ধরণের সমস্যা থাকে না।''
'সব ক্যালোরি একই রকম'
ওজন নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে 'বেশি না খাওয়া' নীতি হচ্ছে সবচেয়ে ভালো নীতি। কিন্তু খাবারের ক্ষেত্রে ক্যালোরির পরিমাপের চেয়ে ক্যালোরির মানের বিষয়টি কি বেশি গুরুত্ব পাওয়া উচিত নয়?
স্বাস্থ্যকর খাবারের বর্ণনা করতে গিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছেন, একজন প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষের প্রতিদিন গ্রহণ করা ক্যালোরির পরিমাণ হওয়া উচিত ২০০০ ক্যালোরি। কিন্তু সেখানে সতর্কবাণীও আছে। সংস্থাটি পরামর্শ দিয়েছে যে, ওই ক্যালোরির ৩০ ভাগেরও কম আসা উচিত চর্বিযুক্ত খাবার থেকে।
২০১১ সালের হার্ভাড বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, 'ক্যালোরি মানে শুধু ক্যালোরি নয়' এবং কিছু খাবারের কারণে দীর্ঘদিন ধরে ওজন বাড়তে পারে।
গবেষকরা চারবছর পর পর এক লাখ ২০ হাজার স্বাস্থ্যবান পুরুষ ও নারীর ওপর গবেষণা করেছেন যাদের বয়স সর্বোচ্চ বিশ বছর।
গবেষণায় অংশগ্রহণকারীরা প্রতি চার বছরে গড়ে ১.৫২ কেজি ওজন বেড়েছে আর পুরো বিশ বছরে ওজন বেড়েছে ৭.৬ কেজি।
ওজন বাড়ার পেছনে বড় ভূমিকা রেখেছে প্রক্রিয়াজাত খাবার, পরিশোধিত শস্য, চর্বি এবং চিনি। শুধুমাত্র ফ্রেঞ্চ ফ্রাই খাওয়ার কারণে প্রতি চার বছরে দেড় কেজি ওজন বেড়েছে। অন্যদিকে বেশি পরিমাণে সবজি খাওয়ার কারণে ওজন উল্টো ০.০৯ কেজি কমে গেছে।
গবেষণায় বলা হয়েছে, ''কম ক্যালোরিযুক্ত খাবার খাওয়ার কৌশল সবচেয়ে ভালো কাজ দেবে তখনি যখন, বিশেষ কিছু খাবার এবং পানীয় কম (বা বেশি) পরিমাণে খাওয়া হবে।''
'ওজন কমানো নিয়ে হতাশা এড়াতে হলে আমাদের অবশ্যই বাস্তববাদী হতে হবে।'
অনেক বেশি প্রত্যাশা করা না হলে সেটি জীবনের জন্য একটি ইতিবাচক দিক হতে পারে।
তবে গবেষণা বলছে, উচ্চকাঙ্খী লক্ষ্যমাত্রা এর ওজন কমানোর ক্ষেত্রে নেতিবাচক কোন সম্পর্ক নেই।
আমেরিকান অ্যাকাডেমি অফ নিউট্রিশন এন্ড ডায়েটিক্স এর একটি জার্নালে ২০১৭ সালের একটি গবেষণায় বলা হয়েছে, মারাত্মক স্থূলতায় ভোগা ৮৮জন ব্যক্তির মধ্যে ওজন কমানোর উচ্চাকাঙ্ক্ষা অনেক ভালো ফল এনেছে।
'শুধুমাত্র ধনী দেশগুলোয় স্থূলতার সমস্যা আছে'
অবশ্যই উন্নত দেশগুলোয় স্থূলতার হার অনেক বেশি, কিন্তু বিশ্বের স্থূলতার তালিকার দিকে তাকালে অনেককেই অবাক হতে হবে।
স্থূলতার ব্যাপকতার দিক থেকে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হলো প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপ, আমেরিকান সামোয়া, যেখানে বাসিন্দাদের ৭৫ শতাংশই স্থূলতায় আক্রান্ত বলে ধারণা করা হয়।
এটা সত্যি যে এসব দ্বীপের মানুষদের সংখ্যা অনেক কম। কিন্তু বেশি জনগোষ্ঠী রয়েছে, এমন উন্নয়নশীল দেশ- যেমন মিসর ও তুরস্কে-৩২ শতাংশ মানুষ স্থূলতায় ভুগছে (২০১৬ সালের বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য।)
''সামাজিক বৈষম্যের কারণে তৈরি হওয়া অন্যতম একটি জিনিস হলো স্থূলতা। যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে বেশি স্থূলতার রাজ্য হলো আরাকানসাস, যেটি দেশের চতুর্থ গরিব রাজ্য। সবচেয়ে দরিদ্র রাজ্য মিসিসিপি স্থূলতার দিক থেকে তৃতীয় অবস্থায় রয়েছে।'' বলছেন মার্টিন কোহেন, যিনি 'খাবার আগে আমি ভাবি' নামের বই লিখেছেন।
যুক্তরাজ্যে ২০১৫-২০১৬ সালের জাতীয় স্বাস্থ্য সেবার তথ্য থেকে জানা যাচ্ছে যে, সচ্ছল এলাকাগুলোর তুলনায় সবচেয়ে অসচ্ছল এলাকা গুলোয় বসবাসকারী শিশুদের মধ্যে স্থূলতার হার প্রায় দ্বিগুণ।
গবেষকরা বলছেন, এই তারতম্যের প্রধান কারণ হলো, স্বাস্থ্যকর খাবারের দাম অনেক বেশি।
'বুকের দুধের সাথে স্থূলতার কোনো সম্পর্ক নেই'
গত কয়েক দশক ধরে বুকের দুধের বিকল্প হিসাবে গুড়া দুধের ব্যাপক প্রচারণা চালানো হয়েছে।
কিন্তু গত এপ্রিল মাসে প্রকাশিত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গবেষণায় জানা যাচ্ছে যে, বুকের দুধ খাওয়ার কারণে শিশুর স্থূল হওয়ার ঝুঁকি অনেকটা কমে যেতে পারে।
ইউরোপের ১৬টি দেশের তিন লাখ শিশুর ওপর গবেষণা করে বিজ্ঞানীরা দেখতে পেয়েছেন, যে শিশুরা কখনো বুকের দুধ খায়নি, তাদের স্থূল হওয়ার সম্ভাবনা ২২ শতাংশ বেড়ে গেছে।
যদিও বিশেষজ্ঞরা এটাও বলছেন, যে নারী বুকের দুধ খাওয়াবেন, তার স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের ব্যাপারটিও এক্ষেত্রে অনেকটা ভূমিকা রাখে। তারপরেও স্থূলতার বিরুদ্ধে বুকের দুধের ভূমিকা অকাট্য, বলছেন গবেষক জায়ো ব্রেডা।
''বুকের দুধের সত্যিই অনেক সুরক্ষা গুণ রয়েছে। সেসব প্রমাণ রয়েছে। এর সুবিধা যে এতো অসামান্য সেটি মানুষকে জানানো উচিত।''
জাপানের সম্রাট নারুহিতো আজ এক জাঁকজমকপূর্ণ ও ঐতিহ্যমণ্ডিত অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে জাপানের সিংহাসনে আরোহণ করেছেন।
তার পিতা সাবেক সম্রাট আকিহিতো স্বাস্থ্যগত কারণে সিংহাসন ত্যাগ করার পর এ বছর মে মাস থেকেই ৫৯ বছর বয়স্ক সম্রাট নারুহিতোর শাসনকাল শুরু হয়েছিল, তবে মঙ্গলবার তার আনুষ্ঠানিক অভিষেক হলো।
টোকিও রাজপ্রাসাদে এই অনুষ্ঠানে ব্রিটেনের প্রিন্স চার্লস সহ কয়েকশ বিদেশী অতিথি উপস্থিত ছিলেন। সাড়ে ছয় মিটার উঁচু তাকামিকুরা সিংহাসনে বসা সম্রাট নারুহিতোর পোশাক ছিল হলুদ ও কমলা রঙের।
তার স্ত্রী সম্রাজ্ঞী মাসাকো ১২ স্তরের কাপড়ের তৈরি একটি পোশাক পরেন। তিনি বসা ছিলেন অপেক্ষাকৃত ছোট আরেকটি সিংহাসনে।
সম্রাট তার সিংহাসনে আরোহনের ঘোষণা পাঠ করার পর প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে তাকে অভিনন্দন জানিয়ে একটি বার্তা পড়েন, এবং 'সম্রাট দীর্ঘজীবী হোন' বলে হাঁক দেন।
১৯৯০ সালের পর এই প্রথম জাপানের সম্রাটের অভিষেক অনুষ্ঠান হলো। তবে সাম্প্রতিক ঘুর্ণিঝড়ে নিহতদের সম্মান দেখাতে রাস্তায় রাজকীয় শোভাযাত্রার কর্মসূচি বাদ দেয়া হয়। শিন্টো ধর্মীয় রীতিনীতি অনুযায়ী এই সিংহাসনে আরোহণের অনুষ্ঠানগুলো হয়।
সম্রাটের তিন সম্পদ: আয়না, তলোয়ার ও মূল্যবান পাথর
এর কেন্দ্রস্থলে আছে জাপানের সম্রাটের তিনটি সম্পদ। অতি প্রাচীন তিনটি রাজকীয় সামগ্রী, যা রাজকীয় ক্ষমতার প্রতীক। এগুলো হচ্ছে একটি আয়না, একটি তলোয়ার এবং একটি মূল্যবান পাথর। প্রাচীন তলোয়ার এবং রত্ন অভিষেক অনুষ্ঠানে রাখা ছিল, তবে তা দেখানো হয় না।
রহস্য ও গোপনীয়তা
এই তিনটি রহস্যময় বস্তু কীভাবে জাপানের সম্রাটের রাজকীয় ঐশ্বর্যের মর্যাদা পেলো - সেই ইতিহাস কঠোর গোপনীয়তায় ঘেরা।
শিন্টো ধর্মমতে অতীত এবং মানুষের জীবনে প্রভাব বিস্তারকারী অশরীরী আত্মার সাথে সংযোগ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই তিনটি রাজকীয় সম্পদ এরই একটা অংশ মনে করা হয় জাপানের সম্রাটরা ঈশ্বরের বংশধর এবং দেবতারাই এগুলো তাদের পূর্বপুরুষদের দিয়েছেন।
এগুলো এতই পবিত্র যে জাপানের বিভিন্ন মন্দিরে সর্বদা লোকচক্ষুর অন্তরালে এসব রাখা হয়।
"এগুলো কখন তৈরি হয়েছিল তা কেউ জানে না, এমনকি সম্রাটও কখনো এগুলো দেখেন নি" - বলেন জাপানের নাগোইয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হিদেয়া কাওয়ানিশি।
সম্রাট নারুহিতোর অভিষেকেও এগুলো দেখা যায়নি, পরিবর্তে ব্যবহার করা হয় তার অবিকল নকল। এমনকি সেই নকল সামগ্রীগুলোও কেউ দেখতে পায় না।
পবিত্র আয়না 'ইয়াতা নো কাগামি'
মনে করা হয় এই আয়না এক হাজার বছরেরও বেশি পুরোনো, এবং এটি রাখা হয়েছে ইসে জিঙ্গু মন্দিরে। সম্রাটের রাজকীয় ধনরত্নের মধ্যে এটিই সবচেয়ে মূল্যবান।
জাপানী উপকথায় বলা হয়, আয়নার স্বর্গীয় ক্ষমতা আছে এবং তা সত্য প্রকাশ করতে পারে। জাপানের প্রাচীন ইতিহাস অনুযায়ী ইয়াতা নো কাগামি নামের এই আয়না তৈরি করেছিলেন দেবতা ইশিকোরিদোম। এর সাথে জড়িয়ে আছে সূর্যের দেবী আমাতেরাসুর নাম।
কুসানাগি নোৎসুরুগি: পবিত্র তলোয়ার
এর অর্থ হচ্ছে 'ঘাস কাটা তলোয়ার' এবং সম্ভবত এটা রাখা আছে নাগোইয়ার আৎসুতা মন্দিরে। একে ঘিরে কাহিনি রয়েছে যে আটটি মাথাওয়ালা এক মানুষখেকো সাপের লেজে এই তলোয়ার ছিল।
সমুদ্র ও ঝড়ের দেবতা সুসানু ওই সাপকে কৌশলে মদ্যপান করিয়ে মাতাল করে তাকে হত্যা করেন, এবং তার লেজ কেটে ভেতর থেকে ওই তরবারি বের করেন।
গুজব রয়েছে আসল তলোয়ারটি দ্বাদশ শতাব্দীতে এক যুদ্ধের সময় সমুদ্রে পড়ে হারিয়ে গেছে।
ইতিহাসবিদরা বলেন, এখন যেটি আছে তা নকল। তারও একটি নকল রাজার অভিষেকে ব্যবহৃত হয়। ১৯৮৯ সালে সম্রাট আকিহিতোকে একটি বাক্সে করে এই তলোয়ার দেয়া হয়েছিল বলে জানা যায়, কিন্তু তা কখনো খোলা হয়নি।
ইয়াসাকানি নো মাগাতামা : পবিত্র রত্ন
মাগাতামা হচ্ছে এক রকম খোদাইয়ের কাজ করা ছিদ্রবিশিষ্ট পাথর- যা দিয়ে মালা বানানো যায়। খ্রীষ্টপূর্ব ১০০ সাল থেকে জাপানে এরকম পাথর তৈরি হতো।
বলা হয়, ইয়াসাকানি নো মাগাতামা হচ্ছে এমন একটি নেকলেসের অংশ যা দেবী আমে-নো-উজুমের জন্য বানিয়েছিলেন তামানুয়া-নো-মিকোতো।
বলা হয় এটি সবুজ জেড পাথরের তৈরি, এবং রাজকীয় ধনরত্নের মধ্যে এটিই একমাত্র -যার আসলটিই এখনো টিকে আছে। এটি রাখা আছে টোকিওর রাজকীয় প্রাসাদে।
জাপানের সম্রাটরা আমাতেরাসুর বংশধর বলে মানা হলেও, তারা এখন নিজেদেরকে দেবতা বলে দাবি করেন না। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে পরাজয়ের পর জাপানের সম্রাট হিরোহিতো তার দেবতার মর্যাদা ত্যাগ করেছিলেন।
অধ্যাপক কাওয়ানিশি বলেন, জাপানের কিছু লোক এখনো মনে করেন যে সম্রাটের এই তিনটি জিনিসের স্বর্গীয় শক্তি আছে, তবে অন্য অনেকেই এগুলোকে রাজকীয় অলংকার বলেই মনে করেন।
এগুলোর গুরুত্ব এখানেই যে তারা সম্রাটের মহিমার সাথে সম্পর্কিত এবং এ পরিবারের প্রাচীন ঐতিহ্যের প্রতীক।
‘ক্যাসিনো’ শব্দটি ইতালিয়ান। ক্যাসিনো বলতে বোঝায় যেখানে জুয়া, নাচ, গান ও বিভিন্ন খেলাধুলার সংমিশ্রণ থাকে। অভিধানে এর অর্থ হলো নাচঘর; জুয়া খেলার ঘর; তাসখেলা; বা আমোদপ্রমোদের কক্ষ। বাংলা একাডেমির ‘ইংলিশ-বাংলা ডিকশনারিতে’ এর অর্থ বলা হয়েছে, ‘জুয়া ও অন্যান্য বিনোদনমূলক ক্রিয়াকলাপের জন্য ব্যবহৃত কক্ষ বা ভবন; সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত নৃত্যশালা।’ জুয়াকে আরবিতে বলা হয় ‘আল-কিমার’ ও আল-মায়সির’। আর খিমার এবং মাইসির শব্দ দু’টি সমার্থবোধক। বাংলা ও উর্দুতে এর প্রতিশব্দ হচ্ছে জুয়া।
১৬৩৮ সালে ইতালির ভেনিসে সর্বপ্রথম জুয়ার মাধ্যমে ক্যাসিনো ব্যবসায় শুরু হয় বলে বিভিন্ন প্রতিবেদনের মাধ্যমে জানা গেছে। ইসলামের সূচনালগ্নের আগেও নবী করিম সা:-এর আগমনের সময় তৎকালীন মক্কায় নানা ধরনের জুয়ার প্রচলন ছিল। তিনি সবগুলোকে নিষিদ্ধ করেছিলেন। ইসলামী শরিয়তে জুয়ার যাবতীয় প্রক্রিয়াকে হারাম ও নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, ‘হে মুমিনগণ! মদ, জুয়া, প্রতিমা এবং ভাগ্য নির্ধারক শরগুলো শয়তানের কার্য ছাড়া কিছু নয়। অতএব, এগুলো থেকে বেঁচে থাক, যাতে তোমরা কল্যাণপ্রাপ্ত হও। শয়তান তো চায়, মদ ও জুয়ার মাধ্যমে তোমাদের পরস্পরের মধ্যে শত্রুতা ও বিদ্বেষ সঞ্চারিত করে দিতে এবং আল্লাহর স্মরণ ও নামাজ থেকে তোমাদের বিরত রাখতে। অতএব, তোমরা এখন কি নিবৃত্ত হবে?’ (সূরা মায়েদা : ৯০-৯১)। আবদুুল্লাহ ইবনে আমর রা: থেকে বর্ণিতÑ রাসূলুল্লাহ সা: বলেন, ‘বাবা-মায়ের অবাধ্য সন্তান, জুয়ায় অংশগ্রহণকারী, খোঁটাদাতা ও মদ্যপায়ী জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না’ (দারেমি, হাদিস নং ৩৬৫৬)। কিছু লোকের কাছে মনে হতে পারে, জুয়া একটি লাভজনক ব্যবসায়। কিন্তু এর সামান্য কিছু লাভ থাকলেও ক্ষতির পরিমাণ তার চেয়ে বহুগুণে বেশি। যেমনÑ সূরা বাকারার ২১৯ নম্বর আয়াতে এসেছে, ‘হে মুহাম্মদ! তারা আপনাকে মদ এবং জুয়া সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে। আপনি বলে দিন, এ দুটোর মধ্যে রয়েছে মহাপাপ। আর এতে মানুষের জন্য সামান্য কিছু উপকারিতাও রয়েছে। তবে এগুলোতে উপকারিতা অপেক্ষা ক্ষতির পরিমাণ অনেক বেশি।’জাহেলি যুগে শুধু ধন-সম্পদের উপরেই জুয়া হতো না, বরং কখনো কখনো স্ত্রীদেরকেও জুয়ার সওদা হিসেবে পেশ করা হতো। যা ধীরে ধীরে আমাদের সমাজ ব্যবস্থায় প্রবেশ করতে শুরু করেছে। লটারি, জুয়া খেলাকে আপাতদৃষ্টিতে নির্দোষ আনন্দ মনে হলেও এর সামাজিক, অর্থনৈতিক প্রভাব ভয়ঙ্কর। শুধু আমেরিকাতেই বছরে ৫৪ বিলিয়ন ডলার অর্থনৈতিক ক্ষতি হয় জুয়ার কারণে। প্রতি রাতে বা প্রায়ই ক্যাসিনোয় যাওয়া, গিয়ে কিছুক্ষণ ঘুরে আসা, বা পকেট খালি করে বা পকেট ভরে নীড়ে ফেরা লোকগুলো জুয়াশক্ত আসল জুয়াড়ি। এরা এক ধরনের মানসিক রোগীও বটে। এই রোগ থেকে বেরিয়ে আসা অনেক কঠিন। জুয়া যখন একজন মানুষের চিন্তাভাবনা, কাজ-কর্ম, আচার-আচরণ সব কিছু নীরবে গ্রাস করে নেয়, যখন বারবার চেষ্টা করার পরও সেই কাজ থেকে বিরত থাকা যায় না। ধীরে ধীরে অর্থনৈতিক, পারিবারিক বা সামাজিক সব সম্পর্ক নষ্ট হতে থাকে, তখন ব্যক্তি মানসিক রোগীতে পরিণত হওয়ার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। কেউ ব্যবসায়ের নামে, কেউ লোভনীয় পুরস্কারের অফার দিয়ে সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে এটাকে ছড়িয়ে দিচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় সমাজের প্রভাবশালী লোকেরা এর পেছনে ইন্ধন জোগায়। এ ক্ষেত্রে অনেকে জানে, তারা যা করছে সেটা হারাম বা অন্যায়। আবার অনেকে জানেই না যে, লটারি বা জুয়া খেলা হারাম। আমাদের সমাজে লটারির নামে প্রকাশ্যে-অপ্রকাশ্যে, অলিতেগলিতে, শহরে কিংবা গ্রামে নামে-বেনামে জুয়ার রমরমা ব্যবসায় চলছে। কৃষক, তরুণ, শ্রমিক, ব্যবসায়ী, শিক্ষার্থীরা জড়িয়ে পড়ছেন মরণনেশা জুয়ায়। এসব আসরে উড়ছে লাখ লাখ টাকা। বর্তমানে জুয়াবাজির জন্য বিভিন্ন রকমের আসর বসে বিভিন্ন স্থানে। কোথাও হাউজি আবার কোথাও সবুজ টেবিল নামে। ফুটবল ও অন্যান্য খেলাধুলার প্রতিযোগিতায়ও বাজি ধরা হয়। প্রাচীন পদ্ধতি ছাড়াও জুয়ার আরো বহু নতুন নতুন পদ্ধতি আবিষ্কার হয়েছে। যেমন- ফ্লাস, পাশা, বাজি রেখে ঘোড়দৌড়, তাসখেলা, চাকতি ঘোরানো ও রিং নিক্ষেপ প্রভৃতি। এগুলোর সবই কিন্তু হারাম। আজ যদি ধর্মপ্রাণ মানুষেরা অনৈতিক এসব কর্মকাণ্ড বন্ধে প্রতিবাদ না করে মুখ বন্ধ করে বসে থাকেন, সমাজের কর্তাব্যক্তিরা নিজ নিজ অবস্থান থেকে এর প্রতিরোধে কাজ না করেন, তাহলে প্রকাশ্যে আল্লাহর সাথে বিদ্রোহের শাস্তি থেকে আমরা কেউই রক্ষা পাবো না। হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, তিন প্রকার লোকের জন্য আল্লাহ তায়ালা জান্নাত হারাম করে দিয়েছেন- ১. সদা মদ পানকারী; ২. বাবা-মায়ের অবাধ্য; ৩. দাইয়ুস (মুসনাদে আহমদ : ৫৩৭২)। অন্যত্র আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা: থেকে বর্ণিত, রাসূল সা: বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা মদ, জুয়া ও বাদ্যযন্ত্র হারাম করেছেন’ (বায়হাকি : ৪৫০৩; মিশকাত : ৪৩০৪)। বর্তমান ক্যাসিনো সংস্কৃতি মদ-জুয়াকে দিয়েছে দুর্ধর্ষ গতি। জুয়ার আধুনিক সংস্করণ ক্যাসিনোর মাধ্যমে পুরো জাতির অর্থ জমা হচ্ছে গুটিকয়েক জুয়াড়িদের লকারে। শত শত কোটি টাকা অচল হয়ে পড়ে আছে ওদের গুদামঘরে। এই টাকাগুলো কুক্ষিগত না হলে জাতীয় জীবনে আসতে পারত অনেক সমৃদ্ধি। ক্যাসিনো সংস্কৃতির কবলে পড়ে আজ জাতীয় অর্থনীতি হুমকির মুখে। সরকারের বহুবিধ উন্নয়ন ম্লান করে দিয়েছে জুয়াড়িদের এই ক্যাসিনো সংস্কৃতি। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর রা: থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসূল সা: বলেন, ‘বাবা-মায়ের অবাধ্য সন্তান, জুয়ায় অংশগ্রহণকারী, খোঁটাদাতা ও মদ্যপায়ী জান্নাতে যাবে না’ (দারেমি : ৩৬৫৩; মিশকাত : ৩৪৮৬)।লেখক : মাওলানা আমিনুল ইসলাম
খুব দ্রুত মানুষের অপছন্দের তালিকায় যেতে না চাইলে বাদ দিতে হবে কিছু স্বভাব।সবার মন জয় করে চলা সম্ভব নয়। তবে নিজের অজান্তেই হয়ত কিছু আচরণের কারণে অযথাই অপছন্দের পাত্রে পরিণত হচ্ছেন। দিন শেষে কেনো মানুষ আপনাকে দেখতে পারছেনা তা নিয়ে ভেবে কুল কিনারা পাচ্ছেন না।এরকম পরিস্থিতির শিকার হওয়া নিয়ে সম্পর্ক-বিষয়ক একটি ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদন অবলম্বনে জানানো হল বিস্তারিত। ফেইসবুকে অনেক বন্ধু: ২০০৮ সালে কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের নিয়ে একটি জরিপ চালায় যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান ইউনিভার্সিটির গবেষকরা। এই জরিপে শিক্ষার্থীদের কিছু কাল্পনিক ফেইসবুক প্রোফাইল দেখিয়ে জিজ্ঞেস করা হয় ওই প্রোফাইলে মানুষগুলোকে তাদের কেমন লেগেছে।ফলাফলে দেখা যায়, যার প্রায় ৩শ’ বন্ধু আছে ফেইসবুকে তাদেরকেই মানুষ বেশি পছন্দ করে। বন্ধুর সংখ্যা যদি ১শ’ বা তার কাছাকাছি হয় তবেও তাকে অংশগ্রহণকারীরা পছন্দ করছেন না। আবার যার ৩শ’র বেশি বন্ধু তাদেরকেও ঠিক ভালো ঠেকছে না। বেশি বন্ধু হলে অপছন্দ করার কারণ সম্পর্কে গবেষকরা বলেন, “অনেক বেশি বন্ধু থাকলে অপরের ধারণা হয় ওই ব্যক্তির কাছে ফেইসবুক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আর তার আসলে জনপ্রিয়তা নেই, হতাশা মেটাতে ফেইসবুকে বন্ধু বাড়িয়েছে।” অপরদিকে যারা এই কাল্পনিক প্রোফাইল দেখে পেছনের মানুষগুলোকে বিচার করছিল তাদের প্রত্যেকেরই নিজেদের ফেইসবুকে বন্ধুর সংখ্যা প্রায় ৩শ’।গবেষকরা বলেন, “মানুষের যে দলে ফেইসবুক বন্ধুর সাধারণ সংখ্যা প্রায় ১ হাজার সেখানে মানুষকে পছন্দ করার জন্য আদর্শ ফেইসবুক বন্ধুর সংখ্যাও ১ হাজার হওয়া উচিত ছিল। তবে মনে রাখতে হবে, ২০১৪ সালের এক জরিপ থেকে আমরা জেনেছি প্রাপ্তবয়স্কদের ফেইসবুক বন্ধুর সংখ্যা গড়ে ৩৩৮ জন।”“গবেষণায় আরেকটি মজার বিষয় উঠে আসে। আর তা হল, যাদের ফেইসবুক বন্ধুর সংখ্যা খুব কম বা খুব বেশি তাদেরকে যে অংশগ্রহণকারীরা পছন্দ করছেন না সেটা তারা নিজেরাই বুঝতে পারছেন না।” সম্পর্কের শুরুতেই ব্যক্তিগত কথা জানিয়ে দেওয়া: পরস্পরের সঙ্গে নিজেদের ব্যক্তিগত তথ্য নিয়ে আলোচনা সম্পর্ককে জোরদার করে। পরিণত বয়সে এসে নতুন বন্ধুত্ব গড়ে তোলার অন্যতম উপায় এটি। তবে মাত্র কদিনের পরিচয়ে কাউকে নিজের অত্যন্ত ব্যক্তিগত কথা বলে ফেলার কারণে অপর ব্যক্তি আপনাকে ভরসার অযোগ্য মনে করার পাশাপাশি অপছন্দ করতে পারে।তাই গোপন কথা বলার আগে সময়জ্ঞান থাকতে হবে। ২০১৩ সালে শিকাগোর এলেনোয় স্টেট ইউনিভার্সিটির সুস্যান স্প্রিচারের করা গবেষণা অনুযায়ি, “যেকোনো সম্পর্কের প্রাথমিক পর্যায়ে নিজেদের শখ ও পছন্দের বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করাই নিজেকে আন্তরিক হিসেবে তুলে ধরার জন্য যথেষ্ট।”নিজের কথা না বলেই অপরের সম্পর্কে প্রশ্ন: স্প্রিচারের ২০১৩ সালের ওই গবেষণায় আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় জানা যায়, নিজের সম্পর্কে জানানো সম্পর্ক গভীর করতে গুরুত্বপূর্ণ। আর তা দুই পক্ষ থেকেই হতে হবে।নিজের সম্পর্কে একান্ত কোনো তথ্য ভাগাভাগি করে না নিলে মানুষ তার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হওয়ার আগ্রহ হারায়।এই গবেষণায় অপরিচিত ব্যক্তিদের গল্প করতে দেওয়া হয়। একদল কথার পিঠে কথা বলে গল্প করেছে আর অপর দলে একজন ব্যক্তিই ১২ মিনিট নিজের কথা বলেছে। পরে অপরজন নিজের সম্পর্কে বলেছে। ফলাফলে দেখা গেছে যে দল কথার পিঠে কথা বলে গল্প করেছেন তাদের পারস্পারিক সম্পর্ক হয়েছে জোরালো। গবেষকরা বলেন, “লাজুক ব্যক্তিরা হয়ত নিজের উপর থেকে অপরের মনোযোগ সরানোর জন্য তাদের সম্পর্কে প্রশ্ন করতে পারে। তবে আমাদের গবেষণা বলে সম্পর্কের সুত্রপাতের ক্ষেত্রে এই কৌশল হিতে বিপরীত হতে পারে। সম্পর্ক গড়তে চাইলে উভয়কেই এগিয়ে আসতে হবে।” অনুভূতি লুকিয়ে রাখা: মানুষের পছন্দের পাত্র হতে নিজের সত্য অনুভূতিটাই তাদের সামনে তুলে ধরা উচিত।২০১৬ সালে এবিষয়ে গবেষণা চালান ইউনিভার্সিটি অফ ওরেগন’য়ের গবেষকরা। এতে অংশগ্রহণকারীদের দুটি সিনেমার অংশ দেখানো হয়, একদলকে মন খুলে অনুভূতি প্রকাশ করার স্বাধীনতা দেওয়া হয়। আরেকদলকে নিজেদের অনুভূতি চেপে রাখতে বলা হয়।অংশগ্রহণকারীরা যখন এই দৃশ্যগুলো দেখছিলেন, গবেষকরা তখন পর্যবেক্ষণ করছেন তাদের প্রতিক্রিয়া। ফলাফলে দেখা যায়, যারা অনুভূতি লুকিয়ে রেখেছিলেন তাদেরকে অন্যান্যরা পছন্দ করছেন না। গবেষকরা বলেন, “ভালো সম্পর্ক গড়ে তোলার ক্ষেত্রে মানুষ স্বার্থপরতা দেখায়। তারা দেখে কাদের কাছে তাদের সখ্যতার মূল্য আছে। আর এই মানুষটি যখন দেখবে কেউ তার অনুভূতি লুকিয়ে রাখে তখন তার প্রতি সে আগ্রহ হারাবে।”অতিরিক্ত ভালো ব্যবহার: একজনের সঙ্গে যত ভালো ব্যবহার করবেন তার সঙ্গে সম্পর্ক ততই ভালো হওয়া উচিত, তাই না? তবে সবসময় তেমনটা ঘটে না।২০১০ সালে ওয়াশিংটন স্টেট ইউনিভার্সিটি এবং ডেজার্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউট কলেজ শিক্ষার্থীদের নিয়ে গবেষণা চালায়। প্রত্যেক অংশগ্রহণকারীকে পাঁচজনের একটি দলে অন্তর্ভুক্ত করে কম্পিউটার গেইমস খেলতে বলা হয়। যার মধ্যে চারজনই গবেষকদের নিজস্ব প্রভাবক।প্রত্যেকেই তাদের নিজেদের অর্জন অপরকে দান করে দিতে পারবে পুরোপুরি কিংবা আংশিক। নিজের অর্জনের পরিমাণ বাড়ানোর লোভও তৈরি করে দেন গবেষকরা। যার অর্জন বেশি হবে সে লটারির মাধ্যমে পুরষ্কার পাবে। চারজন নকল অংশগ্রহণকারী তাদের অর্জন পঞ্চম জনকে দিয়ে দেয় অনেকটাই, আন্তরিকতার প্রকাশ হিসেবে। তবে প্রকৃত অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে মধ্যে অনেকেই তা নেতিবাচক দৃষ্টিতে দেখে।তাদের মনে হয় অন্যদের এই আন্তরিকতা তাকে হেয় করেছে। কারও আবার মনে হয়েছে এই আন্তরিকতার পেছনে অন্য রহস্য আছে। ভদ্রভাবে নিজের বড়াই: অপরকে আকর্ষণ করতে অনেকেই আত্মসমালোচনার সুরে নিজের গুণগান গায়, যা আসলে সম্পর্ক গড়ে ওঠার আগেই দূরে সরিয়ে দেয়।এই ধারণা প্রমাণ করতে হার্ভার্ড বিজনেস স্কুলের শিক্ষার্থীদের নিয়ে গবেষণা চালান সেখানকার গবেষকরা।শিক্ষার্থীদের বলা হয় নিজেদের দুর্বলতা সম্পর্কে লিখতে। দেখা যায় চারভাগের তিনভাগই দুর্বলতার অন্তরালে নিজের বড়াই করেছে।চাকরির সাক্ষাৎকারের ক্ষেত্রে এমন প্রশ্ন মোকাবেলা করার একটি বিশেষ উপায় হল এমন একটি দুর্বলতা তুলে ধরা যা ওই চাকরির জন্য প্রযোজ্য নয়। যেমন লেখালেখির কাজ করতে হবে এমন পদের জন্য সাক্ষাৎকারে জনসমাবেশে কথা বলতে না পারাকে দুর্বলতা হিসেবে প্রকাশ করা।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও বলেছেন, উত্তর সিরিয়ায় হামলা চালাতে তুরস্ককে ‘সবুজ সংকেত’ দেয়নি যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সিরিয়া থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের ঘোষণা ঘিরে অঞ্চলটিতে নতুন করে অস্থিরতা শুরু হয়েছে। ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন পম্পেও। খবর বিবিসি অনলাইনের।ট্রাম্পের ঘোষণাটি শোনার সঙ্গে সঙ্গে ওই অঞ্চলে সেনা পাঠানোর প্রস্তুতি নিতে শুরু করে তুরস্ক। এ ঘটনায় ট্রাম্প তুরস্ককে অর্থনৈতিকভাবে পঙ্গু করে দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন। তুরস্ক গতকাল বুধবার থেকে কুর্দি নেতৃত্বাধীন বাহিনী পরিচালিত অঞ্চলটিতে অভিযান শুরু করেছে।তুরস্কের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এক টুইট বার্তায় বলা হয়েছে, তুর্কি সশস্ত্র বাহিনী এবং সিরিয়ার জাতীয় সেনাবাহিনী অপারেশন পিস স্প্রিংয়ের অংশ হিসেবে ফোরাত নদীর পূর্ব দিকে অভিযান শুরু করেছে। এরদোয়ান বলেন, এ হামলার উদ্দেশ্য ছিল সীমান্তে সন্ত্রাসীদের আস্তানা তৈরি বন্ধ করা।তুর্কি বাহিনী কুর্দি মিলিশিয়াদের সাফ করে একটি ‘নিরাপদ অঞ্চল’ তৈরির পরিকল্পনা করছে। এখানে সিরিয়ার শরণার্থীদেরও জায়গা দেওয়া হবে। কুর্দি-নেতৃত্বাধীন বাহিনী এ হামলা প্রতিহত করার অঙ্গীকার করেছে। এরই মধ্যে তুরস্কের সেনাদের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ বেধেছে।তুরস্কের পাঠানো জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের এক চিঠির বরাতে বলা হচ্ছে, চলমান সামরিক অভিযানটি হবে ‘সংগতিপূর্ণ, পরিমিত ও দায়িত্বশীল’। ১৫ সদস্যের এই সংস্থা আজ বৃহস্পতিবার পাঁচ ইউরোপীয় সদস্য ব্রিটেন, ফ্রান্স, জার্মানি, বেলজিয়াম ও পোল্যান্ডের অনুরোধে সিরিয়ার বিষয়ে বৈঠক করবে।কুর্দিরা সিরিয়ায় ইসলামিক স্টেটকে (আইএস) পরাস্ত করতে সহায়তা করেছিল। সেই লড়াইয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মূল সহযোগী ছিল তারা। হাজার হাজার আইএস যোদ্ধা এবং তাদের আত্মীয়স্বজন কুর্দিনিয়ন্ত্রিত অঞ্চলে কারাগার এবং শিবিরে দিন কাটাচ্ছে। লড়াই শুরু হলে কুর্দিরা তাদের সুরক্ষা দিতে পারবে কি না, তা এখনো ঠিক বোঝা যাচ্ছে না।মার্কিন সেনাবাহিনী জানিয়েছে, তারা কুখ্যাত দুজন ব্রিটিশ বন্দীকে নিজেদের হেফাজত নিয়েছে। আইএসের একটি সেলে প্রায় ৩০ জন পশ্চিমা জিম্মিকে নির্যাতন ও হত্যার সঙ্গে তারা জড়িত ছিল। যুক্তরাষ্ট্রের টিভি চ্যানেল পিবিএসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মাইক পম্পেও মার্কিন সেনাবাহিনীকে ফিরিয়ে আনার ট্রাম্পের আকস্মিক সিদ্ধান্তকে সমর্থন জানান। তিনি বলেন, তুরস্কের বৈধ নিরাপত্তাসংক্রান্ত উদ্বেগ এবং দক্ষিণাঞ্চলে সন্ত্রাসবাদী হামলার হুমকি রয়েছে। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র তুরস্ককে হামলা চালানোর অনুমতি দিয়েছে বলে যে অভিযোগ উঠেছে, তা ‘একেবারেই মিথ্যা’। তিনি জানান, যুক্তরাষ্ট্র তুরস্ককে সবুজ সংকেত দেয়নি।এর আগে দেওয়া এক বিবৃতিতে ট্রাম্প এই হামলাকে ‘খারাপ বুদ্ধি’ বলে আখ্যায়িত করে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র এই হামলা সমর্থন করবে না। পরে এক সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প বলেন, তুর্কি ও কুর্দিরা যুগ যুগ ধরে পরস্পরের সঙ্গে লড়ছে। তিনি বলেন, ‘কুর্দি যোদ্ধারা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে আমাদের সহায়তা করেনি। এত কথার পরেও আমরা কুর্দিদের পছন্দ করি।’রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাট উভয়ই একই সুরে মার্কিন সেনা ফিরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্তের নিন্দা জানিয়েছে।ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ মিত্র সিনেটর লিন্ডসে গ্রাহামও বলেন, যুক্তরাষ্ট্র তার মিত্রকে ‘লজ্জাকরভাবে’ ত্যাগ করেছে। ডেমোক্রেটিক সিনেটর ক্রিস ভ্যান হোলেন ও গ্রাহাম তুরস্কের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিল প্রকাশ করে বলেছেন, ‘প্রশাসন তুরস্কের বিরুদ্ধে কাজ করতে অস্বীকৃতি জানালেও, আমি দ্বিপক্ষীয় শক্তিশালী সমর্থন আশা করছি।’
গাছ বেশি থাকলে ভালো? আজ আমরা গাছ উজাড় করে ফেলছি, আমাজন পুড়িয়ে ছাই করে দিচ্ছি। এখন গাছ বাঁচানোই হয়ে গেছে সবচেয়ে বড় সমস্যা। কিন্তু একটা সময় ছিল, যখন গাছ বেশি হয়ে যাওয়ায় পৃথিবী বিপদে পড়েছিল।
আজ থেকে প্রায় ৩৫ কোটি বছর আগে বাতাসে অক্সিজেনের মাত্রা ছিল আজকের মাত্র ২০ শতাংশ। এর পরের পাঁচ কোটি বছরের মধ্যে পৃথিবীতে গাছের পরিমাণ এত বেড়ে যায় যে, বাতাসে অক্সিজেনের পরিমাণ হয়ে যায় ৩৫ শতাংশের মতো। এর ফল ভালো হয়নি। অক্সিজেন দাহ্য। ফলে পৃথিবীজুড়ে তখন দাবানল লেগেই থাকত। আর এত বেশি অক্সিজেন থাকলে আজকের মানুষের পক্ষে বাঁচা সম্ভব হতো না।
কিন্তু আজকের দুনিয়ার কী অবস্থা? পৃথিবীতে আজকে গাছের সংখ্যা কত? ২০১৫ সালে ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ে এক গবেষণা হয়েছে। জাতিসংঘের পরিবেশ কার্যক্রমের ‘বিলিয়ন ট্রি’ প্রচারের অনুরোধে করা সেই গবেষণায় পাওয়া গেছে যে, পৃথিবীতে মোট গাছের সংখ্যা তিন ট্রিলিয়ন, অর্থাৎ তিন লাখ কোটির বেশি। এই গাছের প্রায় অর্ধেক আছে গ্রীষ্মপ্রধান অঞ্চলে। প্রত্যেক মানুষপ্রতি প্রায় ৪২২টি গাছ আছে!
এই গবেষণা ছিল বেশ জটিল। অ্যান্টার্কটিকা বাদ দিয়ে পৃথিবীর সব মহাদেশের সব গাছ আছে—এমন এলাকাকে চার লাখ ভাগে ভাগ করে স্যাটেলাইট দিয়ে তার ছবি নেওয়া হয়। এরপর সেই জায়গাগুলোর আবহাওয়া, সেখানে মানুষের কর্মকাণ্ড, মাটির অবস্থা ইত্যাদি তথ্য কাজে লাগিয়ে পৃথিবীর মোট গাছের এই সংখ্যা বের করা হয়েছে। এ কাজে ব্যবহার করা হয়েছে সুপার কম্পিউটার।
আজ থেকে ১২ হাজার বছর আগে কৃষিকাজ শুরু হওয়ার আগে ছিল আজকের থেকে দ্বিগুণ গাছ। তার মানে আমরা এই সময়ের মধ্যে অর্ধেক গাছ শেষ করে ফেলেছি। আর এখন গাছ নিধন করছি প্রতিবছর ১৫ বিলিয়ন করে।
গবেষণায় আরও কিছু তথ্য পাওয়া গেছে, যা চমকে দেওয়ার মতো। গাছ বেশি গ্রীষ্মপ্রধান অঞ্চলে হলেও গাছের ঘনত্ব বেশি চরম ঠান্ডা অঞ্চলে। মেরু প্রান্তে গাছের ঘনত্ব প্রতি মিটারে একটি করে। উত্তর আমেরিকা, স্ক্যান্ডেনেভিয়া আর রাশিয়ার সরু লম্বা কোনিফার-জাতীয় গাছের বোরিয়াল অরণ্য পৃথিবীর সবচেয়ে গহিন বন। সেখানে আছে ৭৫০ বিলিয়ন গাছ। পৃথিবীর মোট গাছের ২৪ শতাংশ আছে এই অঞ্চলে।
আবার যদি দেখতে যাই যে, পৃথিবীর কোন দেশগুলোতে সবচেয়ে বেশি গাছ আছে, তাহলে শোনা যাবে সব অচেনা ছোট ছোট দেশের নাম। দক্ষিণ আমেরিকার সবচেয়ে ছোট দেশ সুরিনাম। এর আয়তন ৬৩ দশমিক ২৫২ বর্গমাইল। দেশটির ৯৮ দশমিক ৩ শতাংশ অরণ্যে ঢাকা। দেশটির আদিবাসীরা তাদের অরণ্যের সুরক্ষার জন্য রাজনৈতিকভাবেও খুব তৎপর।
এরপর আসবে মাইক্রোনেশিয়া। প্রশান্ত মহাসাগরের কয়েক হাজার দ্বীপ নিয়ে তৈরি এই দেশের আয়তন সব মিলিয়ে মাত্র ১ হাজার বর্গমাইল। এই দ্বীপগুলোর ৯২ শতাংশ ঘন অরণ্যে ঢাকা।
মধ্য আফ্রিকার আটলান্টিক উপকূলের দেশ গ্যাবন। আয়তনে ছোট নয়, এক লাখ বর্গমাইল। জনসংখ্যা মাত্র ২০ লাখ। গ্যাবনের ৯০ শতাংশ গাছে ঢাকা। পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরের দেশ পালাউ। আয়তন মাত্র ১৮০ বর্গমাইল। তার প্রায় ৮৮ শতাংশ অরণ্য। ভারত মহাসাগরের ছোট দ্বীপদেশ সেশলস। মাত্র ১৭৭ বর্গমাইল আয়তনের এই দেশটির ৮৫ শতাংশ অরণ্যে ঢাকা। ৮৩ বর্গমাইলের দেশ গায়ানা। দক্ষিণ আমেরিকার একমাত্র ইংরেজিভাষী এই দেশটির ৮৪ শতাংশ অরণ্য।
এই তালিকায় এশিয়ার একমাত্র দেশ লাওস। ৯১ দশমিক ৮৭৫ বর্গমাইলের এই দেশটি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার একমাত্র দেশ, যার কোনো সমুদ্রতীর নেই। পাহাড়ে ঢাকা এই দেশটির ৮২ শতাংশ অরণ্যের অধিকারে।
বর্তমান জীবনযাত্রায় ঘুম কমে গেছে অনেকেরই। অনেক রাত পর্যন্ত চলে কাজ। ফলে ঘুমের সময় ক্রমশ কমে আসছে। এর ফলেই বাড়ছে রোগ বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, যারা কম ঘুমায় কিংবা যারা বেশি ঘুমায় তারা নানা রোগে আক্রান্ত হয় এবং কম বাঁচে। এমনকি মোটাও হয়ে যেতে পারে কম ঘুমালে। মোটের উপর অন্তত ৬ ঘণ্টা ঘুম প্রত্যেকের প্রয়োজন।গবেষণা বলছে, বয়ঃসন্ধিকালের আগ পর্যন্ত প্রতি রাতে ১১ ঘণ্টা ঘুমানো উচিৎ। সদ্যজাতদের প্রতিদিন ১৮ ঘণ্টা ঘুম প্রয়োজন। যাদের বয়স ১৩ থেকে ১৯ বছর তাদের প্রতিরাতে ১০ ঘণ্টা ঘুমানো উচিত।ডাবলিনের ট্রিনিটি কলেজের মস্তিষ্ক বিষয়ক গবেষক শেন ও’মারা বলেন, শুধু কম ঘুমের কারণেই স্বাস্থ্য খারাপ হয় কি না সেটি বলা খুব কঠিন। তবে একটির সাথে আর একটির সম্পর্ক আছে। অনেকে আছেন যারা সাংঘাতিকভাবে ঘুম বঞ্চিত। রাতে এক-দু’ঘণ্টার বেশি তাদের ঘুম হয় না। বিজ্ঞানীরা বলছেন, এর কারণে স্বাস্থ্য খারাপ হয়ে যায়। ঘুম কম হওয়ার কারণে শারীরিকভাবে নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে। পৃথিবীজুড়ে ১৫৩টি গবেষণা পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, কম ঘুমের কারণে ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ এবং মোটা হয়ে যাবার সম্পর্ক আছে। প্রায় ৫০ লক্ষ মানুষের উপর এসব গবেষণা চালানো হয়েছে। গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, একটানা কয়েক রাত যদি ঘুম কম হয় তাহলে সেটি ডায়াবেটিসের দিকে নিয়ে যেতে পারে। এই ধরনের নিদ্রাহীনতা রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে শরীরের কার্যকারিতা কমিয়ে দেয়। ঘুম কম হলে টিকার কার্যকারিতা এবং শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও কমে যায়। একটি গবেষণায় দেখা গেছে, ঘুম হলে ক্ষুধার তীব্রতা বাড়ে এবং এতে বেশি খাবারের চাহিদা তৈরি হয়। ফলে মোটা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
তেল, ঝাল, মশলা খেয়ে হাত তো ঠিকই ধুচ্ছেন, তবে কিডনি কি পরিষ্কার করছেন? না, তা কি সম্ভব নাকি! উত্তর হবে- হ্যাঁ, সম্ভব। হাতের কাছেই আছে এর সমাধান। কীভাবে পরিষ্কার করবেন? জেনে নিন, কিডনি পরিষ্কারের ঘরোয়া উপায়। তাও আবার মাত্র পাঁচ টাকায়।

১. পরিষ্কার পানিতে ধুয়ে নিন এক আঁটি ধনেপাতা।
২. এরপর কুচি কুচি করে কেটে একটি পাত্রে রাখুন।
৩. পাত্রে কিছুটা পানি দিয়ে ১০ মিনিট ফুটিয়ে নিন।
৪. ঠান্ডা হলে ছেঁকে পরিষ্কার বোতলে রেখে দেন। ফ্রিজেও রেখে দেয়া যেতে পারে ওই বোতল।
৫. এরপর প্রতিদিন একগ্লাস করে ধনেপাতার জুস খেলেই হাতেনাতে মিলবে ফল।
কিডনির মধ্যে জমে থাকা লবণ এবং বিষাক্ত পদার্থ প্রস্রাবের মাধ্যমে বেরিয়ে যাবে। শুধু কিডনিই নয়। এক আঁটি ধনেপাতায় আছে ১১% ফাইবার, ৪% প্রোটিন, ১% ক্যালরি, ১% কার্বোহাইড্রেট, ১% ফ্যাট। ম্যাঙ্গানিজ ২১%, পটাসিয়াম ১৫%, কপার ১১%, আয়রন ১০%, ক্যালসিয়াম ৭%। এতে রয়েছে ৩৮৮% ভিটামিন k, ১৩৫% ভিটামিন A, ৪৫% ভিটামিন C, ১৬% ফলেট।
বছরের পর বছর, দিনের পর দিন কিডনি ঠিক এভাবেই ছাঁকনির কাজ করে চলে। লবণ, বিষ এবং অবাঞ্ছিত পদার্থ শরীরে ঢুকতে বাধা দেয়। কিন্তু কিডনি অকেজো হয়ে গেলে শরীরের ক্ষতিকর বর্জ্য রক্তে জমা হয়। তখন বেঁচে থাকাই মুশকিল।
শরীরে রক্তের মূল উপাদান আয়রন কমে গেলে তার সরাসরি প্রভাব পরে চেহারায়। শরীরে আয়রন ডেফিসিয়েন্সি বা অ্যানিমিয়ার মবল কারণ অপুষ্টি, কৃমি, রক্তপাত ইত্যাদির পাশাপাশি ভুল জীবনযাপন। সঠিক খাবার ঠিক সময়ে না খাওয়াও এই অসুখকে ডেকে আনে।
পুষ্টিবিদদের মতে, এই রোগ ঠেকাতে সব অভ্যাস রাতারাতি বদলানো যায় না। তবে তাতে চিন্তা করার কিছু নেই। একটা–দু’টো করে বদলাতে শুরু করলেই কাজ হয় ম্যাজিকের মতো।
খাবার খাওয়ার এক ঘণ্টা আগে–পরে চা, কফি, কোলা খেলে খাবারের আয়রন শরীরে ঠিক ভাবে শোষিত হতে পারে না। কাজেই এই অভ্যাস বদলে ফেলুন।
খালিপেটে নয়, ফল খান খাবার খাওয়ার পর। ফলের ভিটামিন সি খাবারের আয়রনকে শোষিত হতে সাহায্য করে। দিনে অন্তত দু’বার ঘরে বানানো টাটকা সুষম খাবার খান। ঘুমাতে যাওয়ার ঘণ্টা দুয়েক আগে রাতের খাবার খান।
আয়রন ও ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার একসঙ্গে খেলে কে আগে শোষিত হবে তা নিয়ে শুরু হয় লড়াই। সে জন্য মাছ-মাংস-ডিম খাওয়ার পর দুধের খাবার খাওয়া ঠিক নয়।
আমলকি। ভেষজ গুণে অনন্য একটি ফল।এর ফল ও পাতা দুটিই ওষুধরূপে ব্যবহার করা হয়। বিভিন্ন অসুখ সারানো ছাড়াও আমলকি রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তুলতে দারুণ সাহায্য করে। আমলকির গুণাগুণের জন্য আয়ুর্বেদিক ওষুধেও এখন আমলকির নির্যাস ব্যবহার করা হয়।আমলকিতে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন ‘সি’। পুষ্টি বিজ্ঞানীদের মতে, আমলকিতে পেয়ারা ও কাগজি লেবুর চেয়ে তিন গুণ ও ১০ গুণ বেশি ভিটামিন ‘সি’ রয়েছে। আমলকিতে কমলালেবুর চেয়ে ১৫ থেকে ২০ গুণ বেশি, আপেলের চেয়ে ১২০ গুণ বেশি, আমের চেয়ে ২৪ গুণ এবং কলার চেয়ে ৬০ গুণ বেশি ভিটামিন ‘সি’ রয়েছে। চলুন জেনে নিই আমলকি খাওয়ার ১০টি উপকারিতা সম্পর্কে- ১. আমলকি চুলের টনিক হিসেবে কাজ করে এবং চুলের পরিচর্যার ক্ষেত্রে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এটি কেবল চুলের গোড়া মজবুত করে তা নয়, এটি চুলের বৃদ্ধিতেও সাহায্য করে। এটি চুলের খুসকির সমস্যা দূর করে ও পাকা চুল প্রতিরোধ করে।২. আমলকির রস কোষ্ঠকাঠিন্য ও পাইলসের সমস্যা দূর করতে পারে। এছাড়াও এটি পেটের গোলযোগ ও বদহজম রুখতে সাহায্য করে। ৩. এক গ্লাস দুধ বা পানির মধ্যে আমলকি গুঁড়ো ও সামান্য চিনি মিশিয়ে দিনে দু’বার খেতে পারেন। এ্যাসিডেটের সমস্যা কম রাখতে সাহায্য করবে। ৪. আধা চূর্ণ শুষ্ক ফল এক গ্লাস পানিতে ভিজিয়ে খেলে হজম সমস্যা কেটে যাবে। খাবারের সঙ্গে আমলকির আচার হজমে সাহায্য করে। ৫. প্রতিদিন সকালে আমলকির রসের সঙ্গে মধু মিশে খাওয়া যেতে পারে। এতে ত্বকের কালো দাগ দূর হবে ও ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়বে। ৬. আমলকির রস দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। এছড়াও চোখের বিভিন্ন সমস্যা যেমন চোখের প্রদাহ। চোখ চুলকানি বা পানি পড়ার সমস্যা থেকে রেহাই দেয়। আমলকি চোখ ভাল রাখার জন্য উপকারী। এতে রয়েছে ফাইটো-কেমিক্যাল যা চোখের সঙ্গে জড়িও ডিজেনারেশন প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। ৭. প্রতিদিন আমলকির রস খেলে নিঃশ্বাসের দুর্গন্ধ দূর হয় এবং দাঁত শক্ত থাকে। আমলকির টক ও তেতো মুখে রুচি ও স্বাদ বাড়ায়। রুচি বৃদ্ধি ও খিদে বাড়ানোর জন্য আমলকী গুঁড়োর সঙ্গে সামান্য মধু ও মাখন মিশিয়ে খাওয়ার আগে খেতে পারেন। ৮. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং মানসিক চাপ কমায়। কফ, বমি, অনিদ্রা, ব্যথা-বেদনায় আমলকি অনেক উপকারী। ব্রঙ্কাইটিস ও এ্যাজমার জন্য আমলকির জুস উপকারী। ৯. শরীর ঠাণ্ডা রাখে, শরীরের কার্যক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে, পেশী মজবুত করে। এটি হৃদযন্ত্র, ফুসফুসকে শক্তিশালী করে ও মস্তিষ্কের শক্তিবর্ধন করে। আমলকির আচার বা মোরব্বা মস্তিষ্ক ও হৃদযন্ত্রের দুর্বলতা দূর করে। শরীরের অপ্রয়োজনীয় ফ্যাট ঝরাতে সাহায্য করে। ১০. ব্লাড সুগার লেভেল নিয়ন্ত্রণে রেখে ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। কোলেস্টেরল লেভেলেও কম রাখাতে যথেষ্ট সাহায্য করে।
আপেল, কলা, শসা, বেগুন, লাউ, কুমড়া- এই স্বাস্থ্যকর ফল বা সবজিগুলির পুষ্টিগুণ সম্পর্কে মোটামুটি আমরা প্রায় সকলেই জানি। কিন্তু জানেন কি, এই স্বাস্থ্যকর ফল বা সবজিগুলির খোসাও খুবই উপকারী। আমাদের আজকের এই প্রতিবেদন থেকে আসুন জেনে নেওয়া যাক, কোন সব ফল বা সবজির খোসার কী গুণাগুণ-১) আলুর খোসায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আয়রন আর পটাসিয়াম। এছাড়াও এতে রয়েছে ভিটামিন বি, সি এবং প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট উপাদান। ২) শসার খোসায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট উপাদান, পটাসিয়াম আর ভিটামিন-কে! ৩) লাউ বা কুমড়ার খোসায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে জিঙ্ক যা ত্বককে সতেজ রাখে। বাড়ায় ত্বকের উজ্জ্বলতাও! ৪) আপেলের খোসায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পেকটিন। এই পেকটিন হল এক ধরনের ফাইবার যা কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে। একই সঙ্গে পেকটিন রক্তে সুগার আর কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতেও সাহায্য করে। ৫) বেগুনের খোসায় রয়েছে ‘নাসুনিন’ নামের অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট যা অ্যান্টি-এজিং-এ সহায়ক। এ ছাড়াও বেগুনের খোসা ত্বককে সতেজ রেখে উজ্জ্বলতা বাড়াতে সাহায্য করে। ৬) কলার খোসায় রয়েছে লুটেন, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট যা দৃষ্টিশক্তি ভাল রাখতে সাহায্য করে। কলার খোসায় থাকা ট্রিপটোফ্যান শরীরে সেরোটনিনের মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করে। আর এই সেরোটনিন মন মেজাজ ভাল রাখতে সাহায্য করে।
সুস্বাদু খাবার তৈরিতে এলাচ একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মশলা। রান্নার পাশাপাশি পানের স্বাদ বৃদ্ধিতে ব্যবহৃত হয়ে থাকে এলাচ। এলাচের রয়েছে নানা ভেষজও গুণ যা শরীরে নানা সমস্যা দূর করে থাকে। এলাচের স্বাস্থ্যগুণ;হজমশক্তি বৃদ্ধি করতে২ বা ৩টি এলাচ, ১টি ছোট আদার টুকরো, ২-৩ টি লং এবং কয়েকটি ধনিয়া একসাথে গুঁড়ো করে নিন। এটি গরম পানিতে মিশিয়ে পান করুন। এটি হজমশক্তি বৃদ্ধি করে গ্যাস, বমি বমি ভাব দূর করে থাকে।মুখের দুর্গন্ধ দূর করতেখাবার খাওয়ার পর এক টুকরো এলাচ কিছুক্ষণ চিবিয়ে নিন। অথবা এলাচ চা পান করুন প্রতি দিন সকালে। এটি আপনার পাচনতন্ত্র শক্তিশালী করে তোলে। এর অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান মুখের দুর্গন্ধ দূর করে থাকে।হেচঁকি দূর করতেআপনি যদি ঘন ঘন হেঁচকি সমস্যায় ভুগে থাকেন, তবে এলাচি খাওয়া শুরু করুন। এটি আপনার পেশি রিল্যাক্স করে হেঁচকি দূর করে থাকে। ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া দূরএলাচি একটি ভেষজ উপাদান। এটি শরীরে অভ্যন্তরীণ ফাঙ্গাস, ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া দূর করে শরীরকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। রক্তস্বল্পতা দূর করতেএক বা দুই চিমটি এলাচ গুঁড়ো এবং হলুদ গুঁড়ো এক গ্লাস গরম দুধের সাথে মিশিয়ে নিন। এরসাথে অল্প পরিমাণে চিনি মিশিয়ে নিতে পারেন। প্রতি রাতে এটি পান করুন। এটি রক্তস্বল্পতা দূর করে দুর্বলতা দূর করে থাকে। এলাচে রিবোফ্লাবিন, ভিটামিন সি, নিয়াচিন আয়রন, কপার রক্ত স্বল্পতা দূর করতে সাহায্য করে।অ্যাসিডিটি দূর করতেসমপরিমাণে এলাচ গুঁড়ো, জিরা গুঁড়ো, মৌরি একটি প্যানে ভেঁজে গুঁড়ো করে নিন। এক কাপ গরম পানিতে আধা চা চামচ এই গুঁড়ো মিশিয়ে নিন এবং পান করুন। এটি অ্যাসিডিটি , পেটের গ্যাস এবং পেট ফাঁপা রোধ করে থাকে। বাচ্চাদের গ্যাসের সমস্যা দূর করে থাকে এই পানীয়।
Back To Top