সালমান শাহ
সালমান শাহ ১৯৭১ সালে সিলেট জেলায় অবস্থিত জকিগঞ্জ উপজেলায় জন্মগ্রহণ করেন, এবং তাঁর রাশি ছিল বৃশ্চিক। তাঁর পিতা কমর উদ্দিন চৌধুরী ও মাতা নীলা চৌধুরী। তিনি পরিবারের বড় ছেলে। যদিও তাঁর মুল নাম চৌধুরী সালমান শাহরিয়ার ইমন, কিন্তু চলচ্চিত্র জীবনে এসে হয়ে যান ‘সালমান শাহ’। সালমানের দাদার বাড়ি সিলেট শহরের শেখঘাটে আর নানার বাড়ি দারিয়া পাড়ায় । যে বাড়ির নাম এখন ‘সালমান শাহ হাউস’ । নানার মুলবাড়ি ছিল মৌলভিবাজারে। সালমান শাহ ১২ আগস্ট ১৯৯২ বিয়ে করেন, এবং তাঁর স্ত্রীর নাম সামিরা।
সালমান শাহ ১৯৭১ সালে সিলেট জেলায় অবস্থিত জকিগঞ্জ উপজেলায় জন্মগ্রহণ করেন, এবং তাঁর রাশি ছিল বৃশ্চিক। তাঁর পিতা কমর উদ্দিন চৌধুরী ও মাতা নীলা চৌধুরী। তিনি পরিবারের বড় ছেলে। যদিও তাঁর মুল নাম চৌধুরী সালমান শাহরিয়ার ইমন, কিন্তু চলচ্চিত্র জীবনে এসে হয়ে যান ‘সালমান শাহ’। সালমানের দাদার বাড়ি সিলেট শহরের শেখঘাটে আর নানার বাড়ি দারিয়া পাড়ায় । যে বাড়ির নাম এখন ‘সালমান শাহ হাউস’ । নানার মুলবাড়ি ছিল মৌলভিবাজারে। সালমান শাহ ১২ আগস্ট ১৯৯২ বিয়ে করেন, এবং তাঁর স্ত্রীর নাম সামিরা।
১৯৮৫/৮৬ সালের দিকে হানিফ সংকেতের গ্রন্থনায় কথার কথা নামে একটি ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান প্রচারিত হত। এর কোন একটি পর্বে ‘নামটি ছিল তার অপূর্ব’ নামের একটি গানের মিউজিক ভিডিও পরিবেশিত হয়। হানিফের সংকেতের স্বকন্ঠে গাওয়া এই গান এবং মিউজিক ভিডিও দুটোই অনুষ্ঠানের জন্য বিশেষভাবে নির্মিত। একজন সম্ভাবনাময় সদ্য তরুন তার পরিবারের নানারকমের ঝামেলার কারনে মাদকাসক্ত হয়ে মারা যায়, এই ছিল গানটার থিম। গানের প্রধান চরিত্র অপূর্বর ভূমিকায় অভিনয়ের মাধ্যমেই সালমান শাহ মিডিয়াতে প্রথম আলোচিত হন। তখন অবশ্য তিনি ইমন নামেই পরিচিত ছিলেন। মিউজিক ভিডিওটি জনপ্রিয়তা পেলেও নিয়মিত টিভিতে না আসার কারনে দর্শক আস্তে আস্তে ইমনকে ভুলে যায়। আরও কয়েক বছর পর অবশ্য তিনি আব্দুল্লাহ আল মামুনের প্রযোজনায় পাথর সময় নাটকে একটি ছোট চরিত্রে এবং কয়েকটি বিজ্ঞাপনচিত্রেও কাজ করেছিলেন।

এক নজরে সালমান শাহ

আসল নাম : চৌধুরী সালমান শাহরিয়ার ইমন
জন্ম : ১৯ সেপ্টেম্বর ১৯৭১, রবিবার
বাবা : কমর উদ্দিন চৌধুরী
মা : নীলা চৌধুরী স্ত্রী : সামিরা
উচ্চতা : ৫ ফুট ৮ ইঞ্চি
রাশি : বৃশ্চিক
প্রথম চলচ্চিত্র : কেয়ামত থেকে কেয়ামত
শেষ ছবি : বুকের ভেতর আগুন
প্রথম নায়িকা : মৌসুমী
সর্বাধিক ছবির নায়িকা : শাবনূর (১৪টি)
মোট ছবি : ২৭টি
বিজ্ঞাপনচিত্র : মিল্ক ভিটা, জাগুরার, কেডস, গোল্ড স্টার টি, কোকাকোলা, ফানটা।
ধারাবাহিক নাটক : পাথর সময়, ইতিকথা একক নাটক : আকাশ ছোঁয়া, দোয়েল, সব পাখি ঘরে ফেরে, সৈকতে সারস, নয়ন, স্বপ্নের পৃথিবী।
মৃত্যু : ৬ সেপ্টেম্বর, ১৯৯৬, শুক্রবার
সালমান শাহ অভিনীত ছবির তালিকা
ছবির নাম ও ছবি মুক্তির তারিখ:









  • কেয়ামত থেকে কেয়ামত – ১৯৯৩ সালের ২৫ মার্চ
  • তুমি আমার – ১৯৯৪ সালের ২২ মে
  • অন্তরে অন্তরে – ১৯৯৪ সালের ১০ জুন
  • সুজন সখী – ১৯৯৪ সালের ১২ আগস্ট
  • বিক্ষোভ – ১৯৯৪ সালের ৯ সেপ্টেম্বর
  • স্নেহ – ১৯৯৪ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর
  • প্রেমযুদ্ধ – ১৯৯৫ সালের ২৩ ডিসেম্বর
  • কন্যাদান – ১৯৯৫ সালের ৩ মার্চ
  • দেনমোহর – ১৯৯৫ সালের ৩ মার্চ
  • স্বপ্নের ঠিকানা – ১৯৯৫ সালের ১১ মে
  • আঞ্জুমান – ১৯৯৫ সালের ১৮ আগস্ট
  • মহামিলন – ১৯৯৫ সালের ২২ সেপ্টেম্বর
  • আশা ভালোবাসা – ১৯৯৫ সালের ১ ডিসেম্বর
  • বিচার হবে- ১৯৯৬ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি
  • এই ঘর এই সংসার – ১৯৯৬ সালের ৫ এপ্রিল
  • প্রিয়জন – ১৯৯৬ সালের ১৪ জুন
  • তোমাকে চাই – ১৯৯৬ সালের ২১ জুন
  • স্বপ্নের পৃথিবী – ১৯৯৬ সালের ১২ জুলাই
  • সত্যের মৃত্যু নেই – ১৯৯৬ সালের ৪ অক্টোবর
  • জীবন সংসার – ১৯৯৬ সালের ১৮ অক্টোবর
  • মায়ের অধিকার – ১৯৯৬ সালের ৬ ডিসেম্বর
  • চাওয়া থেকে পাওয়া – ১৯৯৬ সালের ২০ ডিসেম্বর
  • প্রেম পিয়াসী – ১৯৯৭ সালের ১৮ এপ্রিল
  • স্বপ্নের নায়ক – ১৯৯৭ সালের ৪ জুলাই
  • শুধু তুমি – ১৯৯৭ সালের ১৮ জুলাই
  • আনন্দ অশ্রু – ১৯৯৭ সালের ১ আগস্ট 
  • বুকের ভেতর আগুন – ১৯৯৭ সালের ৫ সেপ্টেম্বর
  • বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের ধ্রুব তারা হয়ে সবার মনে সিংহাসনে আসন গড়ে নিয়েছিলেন ১৯৯০-এর দশকের অন্যতম শ্রেষ্ঠ নায়ক সালমান শাহ। সালমান চলে গেছেন ওই দূর আকাশে। কখনোই ফিরে আসবেন না। টিভি সেটের সামনে বসে প্রিয় নায়কের ছবি দেখে নীরবে, নিভৃতে হয়তো অনেকেরই দু’ফোঁটা অশ্রু চোখের কোণে ঝিলিক দিয়ে ওঠে।

    কর্মমুখর এফডিসি, চলচ্চিত্র শিল্পের ২০টি বছর কেটে গেল বাংলা চলচ্চিত্রের নক্ষত্র সালমান শাহকে ছাড়া। ৬ সেপ্টেম্বর ছিল অমর এই নায়কের ২০তম মৃত্যুবার্ষিকী। সালমান শাহ বাংলাদেশের ১৯৯০-এর দশকের অন্যতম শ্রেষ্ঠ নায়ক। প্রকৃত নাম শাহরিয়ার চৌধুরী ইমন। ৫ ফুট ৬ ইঞ্চি উচ্চতার এই অভিনেতা সর্বমোট ২৭টি চলচ্চিত্র অভিনয় করেন। এছাড়াও টেলিভিশনে তার অভিনীত গুটি কয়েক নাটক প্রচারিত হয়।
    সালমান শাহ ও শাহরুখ খান
    ১৯৯৩ সালে তার অভিনীত প্রথম চলচ্চিত্র সোহানুর রহমান সোহান পরিচালিত কেয়ামত থেকে কেয়ামত মুক্তি পায়। একই ছবিতে নায়িকা মৌসুমী ও গায়ক আগুনের অভিষেক হয়। জনপ্রিয় এই নায়ক নব্বইয়ের দশকের বাংলাদেশে সাড়া জাগানো অনেক চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন।
    সালমান শাহ্‌ ১৯৭১ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর,সিলেট জেলায় অবস্থিত জকিগঞ্জ উপজেলায় জন্মগ্রহণ করেন, এবং তাঁর রাশি ছিল বৃশ্চিক। তাঁর পিতা কমর উদ্দিন চৌধুরী ও মাতা নীলা চৌধুরী। তিনি পরিবারের বড় ছেলে। যদিও তাঁর মুল নাম শাহরিয়ার চৌধুরী ইমন, কিন্তু চলচ্চিত্র জীবনে তিনি সবার কাছে 'সালমান শাহ' বলেই পরিচিত ছিলেন। সালমান শাহ ১২ আগস্ট ১৯৯২ বিয়ে করেন, এবং তাঁর স্ত্রীর নাম সামিরা।
    প্রখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক সোহানুর রহমান সোহানের হাত ধরে সালমান শাহ চলচ্চিত্রে অভিনয় করার সু্যোগ পান। প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান আনন্দ মেলা তিনটি হিন্দি ছবি 'সনম বেওয়াফা' 'দিল' ও 'কেয়ামত সে কেয়ামত তক' এর কপিরাইট নিয়ে সোহানুর রহমান সোহানের কাছে আসে এর যে কোন একটির বাংলা পুনঃনির্মাণ করার জন্য কিন্তু তিনি উক্ত ছবিগুলোর জন্য উপযুক্ত নায়ক-নায়িকা খুঁজে না পেয়ে সম্পূর্ণ নতুন মুখ দিয়ে ছবি নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেন। নায়িকা হিসেবে 'মৌসুমী' কে নির্বাচিত করলেও নায়ক খুঁজে পাচ্ছিলেন না। তখন নায়ক আলমগীরের সাবেক স্ত্রী খোশনুরের মাধ্যমে 'ইমন' নামে একটি ছেলের সন্ধান পান।
    সালমান শাহ
    প্রথম দেখাতেই তাকে পছন্দ করে ফেলেন পরিচালক এবং সনম বেওয়াফা ছবির জন্য প্রস্তাব দেন, কিন্তু যখন ইমন 'কেয়ামত সে কেয়ামত তক' ছবির কথা জানতে পারেন তখন তিনি উক্ত ছবিতে অভিনেয়র জন্য পীড়াপীড়ি করেন। তাঁর কাছে কেয়ামত সে কেয়ামত তক ছবি এতই প্রিয় ছিলো যে তিনি মোট ২৬ বার ছবিটি দেখেছেন বলে পরিচালক কে জানান। শেষ পর্যন্ত পরিচালক সোহানুর রহমান সোহান তাঁকে নিয়ে কেয়ামত থেকে কেয়ামত চলচ্চিত্রটি নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেন এবং ইমন নাম পরিবর্তন করে সালমান শাহ রাখা হয়।
    সালমান শাহ মৃত্যুর আগে মন মানে না ছবির ৫০% কাজ শেষ করতে পেরেছিলেন, তাঁর মৃত্যুর পর চিত্রনায়ক রিয়াজ কে দিয়ে ছবিটি করানো হয়।
    সালমান শাহ মোট ২৭ টি ছবিতে অভিনয় করেন। সবচেয়ে বেশি ছবিতে অভিনয় করেছেন নায়িকা শাবনূরের সঙ্গে জুটি বেধে (মোট ১৪ বার)। সালমান শাহকে নিয়ে একটি ছবি প্রযোজনা করেছিলেন কিংবদন্তি অভিনেতা খলিল। মালেক আফসারির পরিচালনায় ছবিটির নাম ‘এই ঘর এই সংসার’।
    ১৯৯৬ সালের ৬ই সেপ্টেম্বর কোটি ভক্তকে কাঁদিয়ে পরপারে চলে যান সালমান শাহ। রাজধানী ঢাকার ইস্কাটনে তাঁর নিজ বাস ভবনে সিলিং ফ্যানের সাথে ঝুলন্ত অবস্থায় তাঁর লাশ পাওয়া যায়। ময়না তদন্ত রিপোর্টে আত্মহত্যা বলে উল্লেখ করা হলেও তাঁর মৃত্যু নিয়ে রহস্য এখনো কাটেনি।
    অনেকেই সালমান শাহ-এর মৃত্যুর জন্য তাঁর স্ত্রী সামরার দিকে অভিযোগের আঙুল তোলেন, এমনকি পরবর্তীকালে সালমানের পরিবারের পক্ষ থেকে স্ত্রী সামিরা ও আরো কয়েকজন কে আসামি করে মামলা দায়ের করা হয় কিন্তু পরে এই মামলার আর কোন অগ্রগতি হয়নি ফলে সালমানের মৃত্যু নিয়ে রহস্য আর উদঘাটিত হয়নি। হজরত শাহজালাল (র.)-এর পুণ্যভূমি সিলেটের মাটিতে চিরনিদ্রায় শুয়ে আছেন প্রবাদপ্রতিম এই নায়ক।

    নায়ক সালমান শাহ'র মৃত্যু: কী ঘটেছিল সেদিন

    বাংলাদেশের পত্র-পত্রিকায় প্রয়াত নায়ক সালমান শাহকে স্মরণ
    ১৯৯৬ সালের ৬ই সেপ্টেম্বর দিনটি ছিল শুক্রবার।
    সেদিন সকাল সাতটায় বাবা কমর উদ্দিন চৌধুরী ছেলে শাহরিয়ার চৌধুরী ইমনের সঙ্গে দেখা করতে ইস্কাটনের বাসায় যান। কিন্তু ছেলের দেখা না পেয়ে তিনি ফিরে আসেন।
    এই শাহরিয়ার চৌধুরী ইমন ঢাকার তৎকালীন সিনেমা জগতের সুপারস্টার সালমান শাহ।
    সেদিনের ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে সালমান শাহ'র মা নীলা চৌধুরী বলেন, বাসার নিচে দারোয়ান সালমান শাহ'র বাবাকে তাঁর ছেলের বাসায় যেতে দিচ্ছিল না ।
    নীলা চৌধুরীর বর্ণনা ছিল এ রকম, "বলেছে স্যার এখনতো উপরে যেতে পারবেন না। কিছু প্রবলেম আছে। আগে ম্যাডামকে (সালমান শাহ'র স্ত্রীকে) জিজ্ঞেস করতে হবে। এক পর্যায়ে উনি (সালমান শাহ'র বাবা) জোর করে উপরে গেছেন। কলিং বেল দেবার পর দরজা খুললো সামিরা (সালমান শাহ'র স্ত্রী)।"
    "উনি (সালমান শাহ'র বাবা ) সামিরাকে বললেন ইমনের (সালমান শাহ'র ডাক নাম) সাথে কাজ আছে, ইনকাম ট্যাক্সের সই করাতে হবে। ওকে ডাকো। তখন সামিরা বললো, আব্বা ওতো ঘুমে। তখন উনি বললেন, ঠিক আছে আমি বেডরুমে গিয়ে সই করিয়ে আনি। কিন্তু যেতে দেয় নাই। আমার হাজব্যান্ড প্রায় ঘণ্টা দেড়েক বসে ছিল ওখানে।"
    বেলা এগারোটার দিকে একটি ফোন আসে সালমান শাহ'র মা নীলা চৌধুরীর বাসায়।
    ঐ টেলিফোনে বলা হলো, সালমান শাহকে দেখতে হলে তখনই যেতে হবে।
    কেমন ছিল পরিবেশ?
    টেলিফোন পেয়ে নীলা চৌধুরী দ্রুত ছেলে সালমান শাহ'র বাসার দিকে রওনা হয়েছিলেন।
    তবে সালমানের ইস্কাটনের বাসায় গিয়ে ছেলে সালমান শাহকে বিছানার ওপর দেখতে পান নীলা চৌধুরী।
    "খাটের মধ্যে যেদিকে মাথা দেবার কথা সেদিকে পা। আর যেদিকে পা দেবার কথা সেদিকে মাথা। পাশেই সামিরার (সালমান শাহ'র স্ত্রী) এক আত্মীয়ের একটি পার্লার ছিল। সে পার্লারের কিছু মেয়ে ইমনের হাতে-পায়ে সর্ষের তেল দিচ্ছে। আমি তো ভাবছি ফিট হয়ে গেছে।"

    "আমি দেখলাম আমার ছেলের হাতে পায়ের নখগুলো নীল। তখন আমি আমার হাজব্যান্ডকে বলেছি, আমার ছেলে তো মরে যাচ্ছে," বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন নীলা চৌধুরী।
    ইস্কাটনের বাসা থেকে সালমান শাহকে হলি ফ্যামিলি হাসপাতালে নেয়া হলে সেখানকার ডাক্তাররা তাকে মৃত ঘোষণা করে।
    এরপর ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে ময়না তদন্ত শেষে বলা হয় সালমান শাহ আত্মহত্যা করেছে।
    সালমান শাহ্ ও তার স্ত্রী সামিরা
    পরিবারের দাবি
    বাংলাদেশে সালমান শাহ অভিনীত প্রথম সিনেমা 'কেয়ামত থেকে কেয়ামত' সিনেমার শেষ দৃশ্যের মতো তাঁর জীবনের রথও থেমে গিয়েছিল ওই ছবি করার ঠিক চার বছর পর।
    এরপর তাঁর পরিবারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, সালমান শাহকে হত্যা করা হয়েছে।
    নীলা চৌধুরীর অভিযোগ ছিল তারা হত্যা মামলা করতে গেলে পুলিশ সেটিকে অপমৃত্যুর মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করে।
    পুলিশ বলেছিল, অপমৃত্যুর মামলা তদন্তের সময় যদি বেরিয়ে আসে যে এটি হত্যাকাণ্ড, তাহলে সেটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে হত্যা মামলায় মোড় নেবে।
    বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে অন্যতম শ্রেষ্ঠ নায়কের আকস্মিক মৃত্যুতে স্তম্ভিত হয়ে যায় পুরো দেশ।
    সে সময় সারা দেশজুড়ে সালমানের অসংখ্য ভক্ত তাঁর মৃত্যু মেনে নিতে না পারায় বেশ কয়েকজন তরুণী আত্মহত্যা করেন বলেও খবর আসে পত্রিকায়।
    সালমানের মৃত্যুর সঠিক কারণ জানতে না পারায় তাঁর ভক্তদের মাঝে তৈরি হয় নানা প্রশ্নের।
    আরও প্রশ্ন
    সালমান শাহের মৃত্যুকে ঘিরে যখন একের পর এক প্রশ্ন উঠতে থাকে, তখন পরিবারের দাবির মুখে দ্বিতীয়বারের মতো ময়না তদন্ত করা হয়। মৃত্যুর আটদিন পরে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজে তিন সদস্য বিশিষ্ট মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়।
    সে বোর্ডের প্রধান ছিলেন ডা. নার্গিস বাহার চৌধুরী।
    তিনি বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন, "লাশটা আমি দেখেছি মরচুয়েরিতে। আমার কাছে মনে হয়েছে যেন সদ্য সে মারা গেছে। এ রকম থাকলে তাঁর মৃত্যুর কারণ যথাযথভাবে নির্ণয় করা যায়। আত্মহত্যার প্রত্যেকটা সাইন (চিহ্ন) সেখানে অত্যন্ত নিবিড়ভাবে ছিল। তাঁর শরীরে আঘাতের কোন নিশানা ছিল না।"
    সালমান শাহ
    দ্বিতীয় ময়নাতদন্তে আত্মহত্যার বিষয়টি নিশ্চিত করা হলে মামলার কাজ সেখানেই থেমে যায়।
    সালমান শাহ'র পারিবারিক বন্ধু চলচ্চিত্র পরিচালক শাহ আলম কিরণ বলছিলেন, শেষের দিকে অনেক মানসিক চাপে ছিলেন সালমান শাহ। পরিবারের সদস্যদের সাথে সম্পর্কের টানাপোড়েন এবং প্রযোজকদের সাথে বোঝাপড়ার ঘাটতি তৈরি হয়েছিল।
    সালমান শাহ'র মৃত্যুর পরে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র অভাবনীয় ক্ষতির মুখে পড়ে।
    প্রযোজকরা লোকসান কমিয়ে আনতে সালমান শাহ'র মতো দেখতে কয়েকজন তরুণকে নিয়ে অসমাপ্ত সিনেমার কাজ সম্পন্ন করার জন্য উঠে-পড়ে লাগেন।
    "পুরনো ঢাকার একটি ছেলেকে পেছন থেকে দেখতে সালমানের মতো মনে হয়। তার চুলের স্টাইল দেখতে পেছন দিকে থেকে সালমানের মতো। তখন তার ওপর পুরো ইন্ডাস্ট্রির দায়িত্ব পড়ে গেল। সালমানের অসমাপ্ত ছবিগুলোতে লং শট, ব্যাক টু ক্যামেরা, ওভার-দ্যা-শোল্ডার শটের মাধ্যমে সে ছেলেটাকে ব্যবহার করা শুরু হলো," বিবিসি বাংলাকে বলেন শাহ আলম কিরণ।
    সালমান শাহ'র মৃত্যুর সংবাদ দর্শকদের মনে এতটাই দাগ কেটেছিল যে এত বছর পরেও অনেকে তার প্রিয় নায়ককে ভুলতে পারেননি। সালমানের মৃত্যুর দুই দশকের বেশী পরেও তাকে নিয়ে দর্শকদের মাঝে আলোচনা থামেনি।
    কিন্তু সালমান শাহ'র বিশেষত্ব কী ছিল? কেন তিনি এতোটা জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিলেন?
    চলচ্চিত্র বিশ্লেষক এবং বেসরকারি ইনডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটির শিক্ষক জাকির হোসেন রাজু মনে করেন, সালমান শাহ যে সময়টিতে অভিনয়ে এসেছিলেন, তখন ছিল বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে পালাবদলের সময়।
    ১৯৯২ সালে 'কেয়ামত থেকে কেয়ামত' সিনেমার মাধ্যমে চলচ্চিত্রে আসেন সালমান শাহ। জনপ্রিয় একটি হিন্দি সিনেমার অফিসিয়াল রিমেক ছিল 'কেয়ামত থেকে কেয়ামত'।
    এ সিনেমাটি মুক্তির পর থেকেই চলচ্চিত্রে ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে উঠেন সালমান।
    পর্দায় তাঁর পোশাক-পরিচ্ছদ, সংলাপ বলার ধরন, অভিনয়-দক্ষতা - সবকিছু মিলিয়ে দর্শকের মনে স্থান করে নিতে সময় লাগেনি এ নায়কের।
    বাংলাদেশের সিনেমায় তিনি 'রোমান্টিক হিরো' হিসেবে পরিচিত পান।
    পরিচালক শাহ আলম কিরণ বলেন, "ও যাই করতো, সেটাই ভালো লেগে যেত। অল্প সময়ের মধ্যে এ ছেলেটা চলচ্চিত্রমোদীদের মনে জায়গা করে নিয়েছিল।"
    মাত্র চার বছরে ২৭টি সিনেমায় অভিনয় করে ১৯৯০'র দশকে বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে আলোড়ন তুলেছিলেন নায়ক সালমান শাহ। সাতাশটি সিনেমার বেশিরভাগই ছিল আলোচিত এবং ব্যবসা সফল।
    চলচ্চিত্র বিশ্লেষক জাকির হোসেন রাজু বলছিলেন, ১৯৭০-৮০'র দশকের নায়কদের পরে চলচ্চিত্রে সালমানের আবির্ভাব এক ধরণের তারুণ্যের উচ্ছ্বাস তৈরি করেছিল।
    প্রতিশ্রুতিশীল অভিনেতা
    নায়ক রাজ্জাক, আলমগীর এবং ফারুকের পর সে সময় নতুন একদল তরুণ অভিনেতার আবির্ভাব হয়েছিল ঢাকার সিনেমা জগতে।
    নব্বইয়ের দশকের প্রথম দিকে বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে যত নায়কের আবির্ভাব ঘটেছিল তাদের মধ্যে সালমান শাহ সবচেয়ে প্রমিজিং (প্রতিশ্রুতিশীল) ছিলেন বলে উল্লেখ করেন জাকির হোসেন রাজু।
    তাঁর বর্ণনায়, সালমান শাহ'র অভিনয়ের মধ্যে দর্শক একটা ভিন্নধারা খুঁজে পেয়েছিল। অনেকে আবার সালমান শাহ'র মধ্যে বলিউড নায়কদের ছায়াও খুঁজে পেয়েছিলেন।
    সালমান শাহকে নিয়ে আলোচনা কখনোই থামেনি।
    মাত্র চার বছরের সিনেমা ক্যারিয়ারে সালমান শাহ বাংলা সিনেমার অভিনয় জগতে নিজের এমন একটি স্থানটি করে নিয়েছিলেন যে তাঁর অভাব এখনো অনুভব করেন দর্শক, পরিচালক, প্রযোজক - সবাই।
    এখনো প্রতি বছর সালমান শাহ'র মৃত্যু দিবসে তাঁর অনেক ভক্ত তাঁকে স্মরণ করেন ভালোবাসার সঙ্গে।
    আর সালমানের অনেক ভক্তের কাছে তাঁর মৃত্যু এখনো একটি বড় রহস্য হিসেবেই রয়ে গেছে।
    আমরা সকলে তাঁর বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করি আমিন।

    সূত্র : বিভিন্ন ব্লগ থেকে সংগৃহিত ও সম্পাদিত
    Share To:

    Naim Khan

    Post A Comment:

    0 comments so far,add yours