বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সবচাইতে দক্ষ ও এলিট স্পেশাল ফোর্স ব্যাটেলিয়ন হচ্ছে এই "১ প্যারা কমান্ডো ব্যাটেলিয়ন"। যেকোনো পরিস্থিতি তে শত্রুকে ধ্বংস করে নিজেদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা এই ব্যাটেলিয়ন এর মুখ্য উদ্দেশ্য। অফিসিয়ালি এই স্পেশাল ফোর্স এর কোড নেম "চিতা"।


গঠনকাল:-
১৯৯২ সালে ব্রিটিশ স্পেশাল এয়ার সার্ভিস-SAS এর কার্যক্রমে অনুপ্রাণিত হয়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী গড়ে তুলে এই স্পেশাল ফোর্স "চিতা"। তবে শুরুর দিকে এর নাম খুব একটা না ছড়ালেও ২০০০ সালের পরবর্তী সময় যখন 'সায়েখ আব্দুর রহমান' ও 'বাংলাভাই' এর "জেএমবি" জঙ্গিবাদ বাংলাদেশে মাথা চারা দিয়ে ওঠে তখন 

সরকার কিছু এলিট ফোর্স মাঠে নামানোর সিদ্ধান্ত নেয় এবং সেই সিদ্ধান্ত এর জের ধরে ২০০৪ সালে সেনাবাহিনী, পুলিশ,বিডিআর ও বিমান বাহিনীর সদস্যদের নিয়ে গঠন করা হয় ৩ টি স্পেশাল এলিট ফোর্স। এর ভেতর সেনাবাহিনীর '১ প্যারাকমান্ডো ব্যাটেলিয়ন' এর কিছু সদস্য নিয়ে গঠন করা হয় ★চিতা★ কমান্ডো হামলার জন্য,,,কিছু সেনা অফিসার ও পুলিশ এবং অন্য কিছু সদস্যদের নিয়ে গঠন করা হয় "RAB" ঝটিকা অভিজন পরিচালনার জন্য এবং আরেকটি ফোর্স গঠন করা হয় যার কোড নেম "কোব্রা"। পরে জেএমবি নিধন মিশন শেষ হলে RAB হয়ে যায় পুলিশ এর সায়েত্তশাসিত এন্টি-টেরেরিজাম & নারকোটিক স্কোয়াড এবং কোব্রা হয়ে যায় গায়েব আর "#চিতা" মিশে যায় সেনাবাহিনীতে অর্থাৎ ১ প্যারাকমান্ডো ব্যাটেলিয়নে। কিন্তু টুইস্ট টা আসে পরের কিছু বছরে যখন দেখা যায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর "১ প্যারাকমান্ডো ব্যাটেলিয়ন" অফিসিয়ালি স্পেশাল এলিট ফোর্স হিসেবে আত্তপ্রকাশ করে এবং জানা যায় যে এই স্পেশাল ফোর্সের কোড নাম ই চিতা।

নিয়োগ:-বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বিভিন্ন রেজিমেন্ট থেকে যোগ্যতা ভিত্তিতে আগ্রহী ব্যক্তিদের রেকর্ড যাচাই বাছাই করে সিলেক্ট করা হয়। তারপর কিছু প্রসিডিওর এর মাঝ দিয়ে সেরাদের বাছাই করে পাঠিয়ে দেয়া হয় সবুজে ঘেরা অপরূপ সুন্দরের লীলাভূমি বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর প্যারাকমান্ডো দের আতুর ঘর বলে পরিচিত "জালালাবাদ ক্যান্টনমেন্ট" সিলেটে। আর সেখানেই যাত্রা শুরু হয় ১ প্যারাকমান্ডো ব্যাটেলিয়নের।

  ট্রেনিং :-

ভাইরে এরা এতোটাই সাইলেন্স মেইন্টেন করে যে বাংলাদেশের শেরা স্পেশাল ফোর্স "নেভি সোয়াডস" এর ট্রেনিং সমন্ধে আমরা তাও অনেকটাই জানতে পারি কিন্তু এদেরটার ৮০% জানা যায় না বললেই চলে তবে একটু বলি ব্যক্তিগত ভাবে শোনা থেকে।

খুব কম সংখ্যক সেনারাই কমান্ডো ইউনিটে যোগদানে আগ্রহী হয় কারনটা অনেকে জানেন অনেকে জানেন না,, সুধু একটা কথা বলি…"বলা হয়ে থাকে যে একটা ৬ মাসের বেসিক কমান্ডো ট্রেনিং সম্পূর্ন করতে মায়ের বুকের দুধ মুখ দিয়ে উগলে আসে"। এতটাই কঠর ট্রেনিং পায় আমাদের কমান্ডোরা, আর এদের আরো একধাপ উপড়ে ওঠে যারা তারাই " ১ প্যারাকমান্ডো ব্যাটেলিয়ন *চিতা*  প্রথমে ৬ মাসের বেসিক কমান্ডো এবং এয়ারবর্ন কোর্স কমপ্লিট করে, তারপর নিয়মিত বাংলাদেশে এভেইলেবল সমস্ত ট্রেনিং,ড্রিল,কমান্ডো ড্রিল কমপ্লিট করা ছারাও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক এক্সেরসাইজে বিভিন্ন দেশ এর স্পেশাল ফোর্স গুলোর সাথে অংশ নেয়। তবে এরা কোন বিদেশি স্পেশাল ফোর্স এর কাছ থেকে ট্রেনিং পায় কিনা তা জানা যায় নাই।


একজন কমান্ডো কে যে কোন পরিবেশে সার্ভাইভ করে যুদ্ধ করতে সক্ষম করে গড়ে তোলা হয় তাই তাদের প্রায় সব কিছুই খেতে হয় বা সব অবস্থাতেই নিজেকে টিকিয়ে রাখার় মতো সক্ষমতার অর্জন করতে হয়,, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কমান্ডো ট্রেনিং এর শেষটা হয় পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি বন জঙ্গলে,, ট্রেনিং প্রিয়ড এর শেষের দিকে তাদের জঙ্গল সার্ভাইভাল মিশনে পাঠান হয় সুধুমাত্র একটা কমান্ডো নাইফ দিয়ে যেখানে এই কমান্ডোদের কে বিভিন্ন প্রাকৃতিক ও কৃত্তিম বিপদের সাথে লড়াই করে একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত থাকতে হয়। যে সময় বন থেকে নিজের খাবার নিজেই যোগাড় করে নিতে হয়। অনেকটা নেভি সোয়াডস এর "হেল উইক" এর মতন এদের ও একটি নরকিয় যন্ত্রণাময় অভিজ্ঞতা সম্বলিত সার্ভাইভাল মিশন টাইম কাটাতে হয় পাহাড়-পর্বতের গহীন অরণ্যে।
  
কার্যক্ষেত্র -আপনারা আমরা যেই পর্যন্ত চিন্তা করতে পারি একজন প্যারাকমান্ডো এর ক্ষমতার তা হয়তো মাত্র ৩০-৪০% কিন্তু বাস্তবে একজন প্যারাকমান্ডো আমাদের কল্পনার চাইতেও কয়েক ধাপ এগিয়ে। কেননা শারীরিক ও মানুষিক দিক দিয়ে এদের এতটাই মজবুত করে গড়ে তুলা হয় যেনো যে কোন পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে সক্ষম হয়।

 Amphibious warfare
 Counter-insurgency
 Counter-narcotics
 Counter-terrorism
 Covert insertions/extractions
 Special reconnaissance
 Hostage rescue and personnel recovery
 Raids
 Underwater demolition

আর তাছাড়া গুলশান রেস্টুরেন্ট এট্যাকের মিশন অপারেশন থান্ডারবোল্ট এ কি পরিমাণ দক্ষতা এই স্পেশাল ফোর্স টি দেখিয়েছে তাতো পুরো বিশ্ব দেখেছে।


.
 M4A1 Assault Rifle
 BD-08 Assault Rifle
 H&K G3A2 Assault Rifle
Type-56 Assault Rifle Full Metal Version
 H&K-MP5 A3 Submasingun
 Accuracy International AWM
 Dragunov SVD & Type-81
 Short Barrel S.Addition Carbine
 M1911 9mm Pistols
 Barrett 9mm Pistols
 Commando Grenade
 Commando Knife

এছাড়াও এরা বিভিন্ন ধরনের এসল্ট ও ইলেকট্রিকাল ইকুইপমেন্ট ব্যাবহার করে থাকে যা এক কথায় হাইড ওয়েপন্স।
 

দায়িত্ব


আমেরিকান স্পেশাল ফোর্সের সঙ্গে যৌথ মহড়া দিচ্ছে বাংলাদেশের কমান্ডোরা
কমান্ডোরা প্রশিক্ষিত থাকে দেশে এবং বাহিরে যেকোনো ধরনের মিশনে অংশগ্রহন করতে। তাদের কাজ হল (কিন্তু এগুলোতেই কেবল সীমাবদ্ধ নয়):

  • উন্নত ওয়ারফেয়ার
  • উভচর যুদ্ধবিগ্রহ
  • কাউন্টার-বিদ্রোহ
  • কাউন্টার মাদক
  • সন্ত্রাসবাদ বিরোধী
  • কোভার্ট সন্নিবেশ / extractions
  • বিশেষ পরিদর্শনকরণ
  • জিম্মি উদ্ধার এবং কর্মীদের পুনরুদ্ধারের
  • রেইড
  • জলতলের ধ্বংস
  • রীতিবিরুদ্ধ ওয়ারফেয়ার


হলি আর্টিসান বেকারী জিম্মি সংকট

১ জুলাই ২০১৬, স্থানীয় সময় রাত ০৯:২০ মিনিটে,নয়জন হামলাকারী ঢাকার গুলশান এলাকায় অবস্থিত হলি আর্টিসান বেকারিতে গুলিবর্ষণ করে। হামলাকারীরা বোমা নিক্ষেপ ও কয়েক ডজন মানুষকে জিম্মি করে এবং পুলিশের সঙ্গে তাদের বোমাবর্ষণের ফলে অন্তত চার পুলিশ কর্মকর্তা নিহত হয়। প্রত্যক্ষদর্শী একজন জানায় হামলার সময় তারা "আল্লাহু আকবার" (আল্লাহ সর্বশক্তিমান) ধ্বনি উচ্চারণ করে গুলি ছুড়ে ও বোমা ফাটায়।সরকার প্রধানের নির্দেশে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ১নং প্যারা-কমান্ডো ব্যাটালিয়ন 'অপারেশন থান্ডারবোল্ট' পরিচালনা করে। ৬ জুলাই শুক্রবার রাত থেকে সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে অবস্থানরত আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দা বাহিনীর সদস্যদের কাছ থেকে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করে। সেনাবাহিনীর ১নং প্যারা-কমান্ডো ব্যাটালিয়নের নেতৃত্বে নৌবাহিনী, বিমান বাহিনী, বিজিবি, পুলিশ, র‌্যাবসহ যৌথভাবে অপারেশন থান্ডারবোল্ট পরিচালনা করা হয়। সেনাবাহিনীর ১নং প্যারা-কমান্ডোর নেতৃত্বে ঘটনা শুরুর পরদিন, শনিবার, সকাল ৭টা ৪০ মিনিটে অপারেশন শুরু করে ১২-১৩ মিনিটে ঘটনাস্থলের নিয়ন্ত্রণ নেয়া হয়। পরবর্তীতে সকাল সাড়ে ৮টার দিকে অভিযানের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়। ঘটনাস্থল থেকে প্রাথমিকভাবে সন্ত্রাসীদের ব্যবহৃত ৪টি পিস্তল, একটি ফোল্ডেডবাট একে-২২, ৪টি অবিস্ফোরিত আইআইডি, একটি ওয়াকিটকি সেট ও ধারালো দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করা হয়।

হতাহত

বিশ জন বিদেশী নাগরিক, ছয় জন বন্দুকধারী এবং দুই জন পুলিশ কর্মকর্তা ঘটনার রাতেই নিহত হন। বিদেশীদের ধারালো অস্ত্র দিয়ে হত্যা করা হয়। যেখানে আরও পঞ্চাশ জন, যাদের বেশিরভাগ পুলিশ সদস্য,আহত হন।নিহতদের মধ্যে দুই জন পুলিশ কর্মকর্তা ছিলেন, যাদের একজন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ গোয়েন্দা বিভাগের সহকারী কমিশনার, এবং অন্যজন বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। নিহতদের মধ্যে জাপানি ও ইতালীয় নাগরিক ছিল।১৯ বছর বয়সী এক ভারতীয় নাগরিকও নিহত হয়। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রাথমিকভাবে ঘোষণা করে যে নিহতদের সকলে বিদেশী ছিল, এবং তারা অপরাধীরা যাদের "ধারালো অস্ত্র দ্বারা নির্মমভাবে হত্যা করেছিল"।এদের মধ্যে যারা কুরআনথেকে একটি আয়াত বলতে পেরেছিল শুধুমাত্র সেসকল অ-মুসলিমরা রক্ষা পেয়েছিল।
নিহতদের মধ্যে সাত জন জাপানি নাগরিক ছিল – পাঁচ জন পুরুষ এবং দুই জন নারী – যাদের জাপান ইন্টারন্যাশনাল কোঅপারেশন এজেন্সির সাথে যুক্ত করা হয়েছে।পরবর্তীতে অপারেশন থান্ডারবোল্টের সময় ছয় সন্ত্রাসী নিহত হয় এবং সন্দেহভাজন একজন সন্ত্রাসীকে আটক করা হয়। এছাড়া এই অভিযানে জিম্মিদশা থেকে তিন বিদেশিসহ ১৩ জনকে মুক্ত করা হয়।

নিহত জিম্মিদের জাতীয়তা
দেশসংখ্যা
                                ইতালি
                                জাপান
                              বাংলাদেশ
                               ভারত
                         মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
সর্বমোট২৪
Share To:

Naim Khan

Post A Comment:

0 comments so far,add yours