কাউকে যদি সূর্য আঁকতে বলা হয় দেখা যাবে সূর্যের গোল চাকতি বা সূর্যের আলো সে এঁকেছে হলুদ রঙ দিয়ে, কেউ দেবে লাল রঙ, কেউ ম্যাজেন্টা। কেউ নিশ্চয়ই বেগুনি, নীল, সাদা বা সবুজ রঙ দেবে না।


ভোরে ঘুম থেকে ওঠার পর আমরা দেখি সূর্য থাকে হলুদ রঙের। ধীরে ধীরে বেলা বাড়তে থাকলে সূর্যের রঙ হয়ে উঠে কমলা। আর দিনের শেষভাগে সূর্য হয়ে উঠে টকটকা লাল।
সূর্যের এ রঙ পরিবর্তন নিয়ে আমরা কি কখনও ভেবেছি, কেন এমনটা হয়? সূর্য আসলে কোন রঙের- লাল, হলুদ নাকি কমলা, নাকি অন্য কোনো রঙের! আমরা জানি সূর্য একটা নক্ষত্র, আর সব নক্ষত্রেরই কোনো না কোনো রঙ আছে। রঙগুলো হলো রেড জায়ান্ট, রেড ডোয়ার্ফ, ব্লু জায়ান্ট, সুপার জায়ান্ট ইত্যাদি।

নক্ষত্রের রঙ কী হবে তা তার তাপমাত্রার উপর নির্ভর করে। একটি নক্ষত্রের ভেতর থেকে ফোটন বের হয়ে মহাশূন্যে হারায়, ফলে ফোটন থেকে বের হওয়া শক্তির পরিমান হয় আলাদা আলাদা। একারণে দেখা যায় একটি নক্ষত্র ইনফ্রারেড, আল্ট্রাভায়োলেট, লাল অথবা নীল রঙের আলোকরশ্মির বিকিরণ ঘটাচ্ছে একই সময়ে। এমনকি সেখানে থাকতে পারে এক্স ও গামা রশ্মিও।
একটি নক্ষত্রের তাপমাত্রা যদি হয় সাড়ে পঁয়ত্রিশ হাজার কেলভিনের নিচে তবে তার রঙ হবে লাল। কারণ তখন আমাদের দৃশ্যমান আলোর বর্ণালির মধ্যে লাল রঙের ফোটন অন্যান্য রঙের চাইতে বেশি হারে নির্গত হয়। আবার কোনো নক্ষত্রের তাপমাত্রা যদি দশ হাজার কেলভিনের বেশি হয় তবে তা হবে নীল রঙের। কারণ আগের মতোই, এবার শুধু নীল রঙের ফোটন বেশি নির্গত হয়।

আমাদের সূর্যের তাপমাত্রা প্রায় ছয় হাজার কেলভিনের মতো। এ তাপমাত্রার নক্ষত্রগুলো সাধারণত হয়ে থাকে সাদা রঙের। সেক্ষেত্রে সূর্যের আসল রঙ হলো সাদা। হ্যাঁ, সূর্য আসলে সাদা রঙের। কারণ খুব সহজ। এ তাপমাত্রায় সব রঙের ফোটন একই সময়ে নির্গত হয়। আর সব রঙের সমষ্টিই তো সাদা রঙ।
মহাশূন্যে গিয়ে যদি আমরা সূর্যকে দেখে আসতে পারতাম তবে দেখতে পেতাম, সূর্য আসলে একেবারে সাদা। সূর্য ও সূর্যলোকের রঙ সাদা। তাহলে সূর্যকে লাল, হলুদ বা কমলারঙে দেখি কেনো?এর কারণ হলো বায়ুমণ্ডলে সূর্যরশ্মির বিচ্ছুরণ ঘটে থাকে। অপসারিত হয়ে যায় ছোট ছোট তরঙ্গদৈর্ঘের নীল ও বেগুনি আলোকরশ্মি। সূর্য থেকে আসা আলোক বর্ণালির এ দুটো রঙ সরিয়ে নিলে তা অনেকটা হলুদের মতো হয়ে যায়। সূর্যকে আমরা তখন হলুদ দেখি। অন্যান্য রঙের বেলায়ও এ ঘটনা ঘটে। এভাবে সূর্যের আলো যখন বায়ুমণ্ডলের বিভিন্ন স্তর ভেদ করে পৃথিবীতে আসে তখন তা রঙ বদলে হলুদ, কমলা বা ম্যাজেন্টা রঙ ধারণ করে।

আবার প্রশ্ন হলো সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের সময় সূর্যকে লাল দেখায় কেন? সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের সময় ভাসমান ধূলিকণা ও বাতাসের অন্যান্য উপাদান সূর্যরশ্মির নীল প্রান্তের কম তরঙ্গদৈর্ঘ্যের বর্ণকে বেশি বিক্ষিপ্ত করে ও লাল প্রান্তের বেশি তরঙ্গদৈর্ঘ্যের বর্ণকে কম বিক্ষিপ্ত করে। ফলে সূর্যকে লাল দেখায়।
তথ্যসূত্র:
১. ন্যাশনালজিওগ্রাফিক ডটকম
২. ইউনিভার্সটুডে ডটকম
Share To:

Naim Khan

Post A Comment:

0 comments so far,add yours