May 2019

কাউকে যদি সূর্য আঁকতে বলা হয় দেখা যাবে সূর্যের গোল চাকতি বা সূর্যের আলো সে এঁকেছে হলুদ রঙ দিয়ে, কেউ দেবে লাল রঙ, কেউ ম্যাজেন্টা। কেউ নিশ্চয়ই বেগুনি, নীল, সাদা বা সবুজ রঙ দেবে না।


ভোরে ঘুম থেকে ওঠার পর আমরা দেখি সূর্য থাকে হলুদ রঙের। ধীরে ধীরে বেলা বাড়তে থাকলে সূর্যের রঙ হয়ে উঠে কমলা। আর দিনের শেষভাগে সূর্য হয়ে উঠে টকটকা লাল।
সূর্যের এ রঙ পরিবর্তন নিয়ে আমরা কি কখনও ভেবেছি, কেন এমনটা হয়? সূর্য আসলে কোন রঙের- লাল, হলুদ নাকি কমলা, নাকি অন্য কোনো রঙের! আমরা জানি সূর্য একটা নক্ষত্র, আর সব নক্ষত্রেরই কোনো না কোনো রঙ আছে। রঙগুলো হলো রেড জায়ান্ট, রেড ডোয়ার্ফ, ব্লু জায়ান্ট, সুপার জায়ান্ট ইত্যাদি।

নক্ষত্রের রঙ কী হবে তা তার তাপমাত্রার উপর নির্ভর করে। একটি নক্ষত্রের ভেতর থেকে ফোটন বের হয়ে মহাশূন্যে হারায়, ফলে ফোটন থেকে বের হওয়া শক্তির পরিমান হয় আলাদা আলাদা। একারণে দেখা যায় একটি নক্ষত্র ইনফ্রারেড, আল্ট্রাভায়োলেট, লাল অথবা নীল রঙের আলোকরশ্মির বিকিরণ ঘটাচ্ছে একই সময়ে। এমনকি সেখানে থাকতে পারে এক্স ও গামা রশ্মিও।
একটি নক্ষত্রের তাপমাত্রা যদি হয় সাড়ে পঁয়ত্রিশ হাজার কেলভিনের নিচে তবে তার রঙ হবে লাল। কারণ তখন আমাদের দৃশ্যমান আলোর বর্ণালির মধ্যে লাল রঙের ফোটন অন্যান্য রঙের চাইতে বেশি হারে নির্গত হয়। আবার কোনো নক্ষত্রের তাপমাত্রা যদি দশ হাজার কেলভিনের বেশি হয় তবে তা হবে নীল রঙের। কারণ আগের মতোই, এবার শুধু নীল রঙের ফোটন বেশি নির্গত হয়।

আমাদের সূর্যের তাপমাত্রা প্রায় ছয় হাজার কেলভিনের মতো। এ তাপমাত্রার নক্ষত্রগুলো সাধারণত হয়ে থাকে সাদা রঙের। সেক্ষেত্রে সূর্যের আসল রঙ হলো সাদা। হ্যাঁ, সূর্য আসলে সাদা রঙের। কারণ খুব সহজ। এ তাপমাত্রায় সব রঙের ফোটন একই সময়ে নির্গত হয়। আর সব রঙের সমষ্টিই তো সাদা রঙ।
মহাশূন্যে গিয়ে যদি আমরা সূর্যকে দেখে আসতে পারতাম তবে দেখতে পেতাম, সূর্য আসলে একেবারে সাদা। সূর্য ও সূর্যলোকের রঙ সাদা। তাহলে সূর্যকে লাল, হলুদ বা কমলারঙে দেখি কেনো?এর কারণ হলো বায়ুমণ্ডলে সূর্যরশ্মির বিচ্ছুরণ ঘটে থাকে। অপসারিত হয়ে যায় ছোট ছোট তরঙ্গদৈর্ঘের নীল ও বেগুনি আলোকরশ্মি। সূর্য থেকে আসা আলোক বর্ণালির এ দুটো রঙ সরিয়ে নিলে তা অনেকটা হলুদের মতো হয়ে যায়। সূর্যকে আমরা তখন হলুদ দেখি। অন্যান্য রঙের বেলায়ও এ ঘটনা ঘটে। এভাবে সূর্যের আলো যখন বায়ুমণ্ডলের বিভিন্ন স্তর ভেদ করে পৃথিবীতে আসে তখন তা রঙ বদলে হলুদ, কমলা বা ম্যাজেন্টা রঙ ধারণ করে।

আবার প্রশ্ন হলো সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের সময় সূর্যকে লাল দেখায় কেন? সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের সময় ভাসমান ধূলিকণা ও বাতাসের অন্যান্য উপাদান সূর্যরশ্মির নীল প্রান্তের কম তরঙ্গদৈর্ঘ্যের বর্ণকে বেশি বিক্ষিপ্ত করে ও লাল প্রান্তের বেশি তরঙ্গদৈর্ঘ্যের বর্ণকে কম বিক্ষিপ্ত করে। ফলে সূর্যকে লাল দেখায়।
তথ্যসূত্র:
১. ন্যাশনালজিওগ্রাফিক ডটকম
২. ইউনিভার্সটুডে ডটকম
বর্তমান প্রজন্ম সোভিয়েত-আমেরিকার স্নায়ুযুদ্ধের উত্তাপ টের পায়নি। টের পাচ্ছে উত্তর কোরিয়া আর যুক্তরাষ্ট্রের ‘পারমাণবিক’ হম্বিতম্বির উত্তাপ। কিছুদিন আগে পর্যন্তও অবস্থা এতটা নাজুক ছিল না। তবে তখন যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ছিলেন বারাক ওবামা। এখন যিনি প্রেসিডেন্ট হয়ে এসেছেন তিনি সোজা কথায় ওবামা নন। তিনি কূটকৌশলের চেয়ে বরং টুইটারে বাগযুদ্ধ করে সব কিছুর সমাধান করতে পছন্দ করেন। একদিকে উত্তর কোরিয়ার সর্বোচ্চ নেতা কিম জং উন তার স্বভাবজাত গর্জন করে যাচ্ছেন, অন্যদিকে সে গর্জনের লাগাসই জবাব দিয়ে বিশ্ববাসীর ঘুম হারাম করে ছেড়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। শত হোক তিনি আমেরিকার প্রেসিডেন্ট। ছেড়ে কথা বলার লোক তিনি নন! তবে দুই নেতার এই বাকযুদ্ধকে যে যতই নিছক ‘কথার লড়াই’ বলে উড়িয়ে দিক না কেন, একটা চাপা উত্তেজনা কিন্তু ঠিকই ছড়াচ্ছে। একদিকে যুক্তরাষ্ট্র, যারা বর্তমান বিশ্বের তর্কসাপেক্ষে একমাত্র সুপারপাওয়ার। অন্যদিকে উত্তর কোরিয়া, যাদের রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ নেতা থেকে শুরু করে পারমাণবিক অস্ত্র পর্যন্ত সবই বেশ রহস্যময়। তবে এই রহস্যের মাঝে একটা ব্যাপার নিশ্চিত, আজকের এই পারমাণবিক যুদ্ধের উত্তেজনা দীর্ঘদিনের প্রক্রিয়ায় সৃষ্টি হয়েছে। সে প্রক্রিয়ারই পরিপ্রেক্ষিতে কিছু অতি জরুরি বিষয়ের উপর আলোকপাত না করলেই নয়।

উত্তর কোরিয়ায় পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির প্রক্রিয়ার শুরু কবে?
উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির প্রক্রিয়া শুরু হয় গত শতাব্দীর ৬০ এর দশক থেকে। উত্তর কোরিয়ার তৎকালীন প্রিমিয়ার এবং দেশের প্রতিষ্ঠাকালীন সর্বোচ্চ নেতা কিম ইল সাং পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির প্রক্রিয়া শুরু করার একটা প্রচেষ্টা চালান। এখানে দুটি বিষয় উল্লেখ করা জরুরি। ১৯৪৮ সালে উত্তর কোরিয়া প্রতিষ্ঠার বছর থেকে ১৯৭২ সাল পর্যন্ত উত্তর কোরিয়ার সর্বোচ্চ নেতার পদ ছিল ‘প্রিমিয়ার’। ১৯৭২ সালে প্রিমিয়ার পদের বিলুপ্তি ঘটিয়ে প্রেসিডেন্ট পদের সূচনা করেন তৎকালীন প্রিমিয়ার কিম ইল সাং। পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি সময় শাসন করা এক নায়কদের মধ্যে একজন এই কিম ইল সাং। তার পরবর্তীতে উত্তর কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট হয়ে আসেন তার ছেলে কিম জং ইল। আর বর্তমানে দেশটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন তার দৌহিত্র কিম জং উন। যা হোক, কিম ইল সাং পারমাণবিক অস্ত্র কর্মসূচী চালু করার জন্য তৎকালীন উত্তর কোরিয়ার সবচেয়ে বড় মিত্র সোভিয়েত ইউনিয়নের দ্বারস্থ হয়। কিন্তু স্নায়ুযুদ্ধের আবহে সোভিয়েত ইউনিয়ন কোরিয়াকে পারমাণবিক অস্ত্র কর্মসূচী চালু করতে সাহায্য না করে বরং ‘নিউক্লিয়ার নন-প্রোলিফারেশন ট্রিটি’ তথা পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তার রোধ নামক একটি চুক্তিতে সই করার পরামর্শ দেয়। উত্তর কোরিয়া অবশ্য সে পরামর্শে সায় দিয়ে সই করেছিল পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তার রোধ করার চুক্তিতে।
কিম ইল সাং এর পুত্র কিম জং ইল ছিলেন বাবার চেয়ে কিছুটা আগ্রাসী। তিনি আর চুক্তি বা যুক্তরাষ্ট্রের হুমকির কথা বিবেচনা না করে পারমাণবিক অস্ত্র কর্মসূচী শুরু করেন। তবে প্রাথমিকভাবে তা ছিল গোপনে। ২০০৩ সালে উত্তর কোরিয়া ঘোষণা দেয় যে তারা পারমাণবিক অস্ত্র রোধের সে চুক্তিটি থেকে সরে এসেছে এবং তারা একটি পারমাণবিক শক্তিধর রাষ্ট্র হবার পথে এগোচ্ছে। তবে ১৯৯৪ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত কিম জং ইলের শাসনামলে উত্তর কোরিয়ায় পারমাণবিক অস্ত্র প্রক্রিয়া একরকম কচ্ছপ গতিতেই এগোচ্ছিল। কিন্তু এরপরই দৃশ্যপট দ্রুত বদলাতে থাকে। পিতামহ এবং পিতা, উভয়ের চেয়ে শতগুন বেশি আগ্রাসী কিম জং উন ২০১১ সালে উত্তর কোরিয়ার ক্ষমতা গ্রহণ করলে উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক কর্মসূচী রকেটের গতিতে এগিয়ে চলা শুরু করে। উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক অস্ত্র ও মিসাইল কর্মসূচীর সিংহভাগই তার আমলে সাফল্য লাভ করে।

উত্তর কোরিয়ার বর্তমান পারমাণবিক সক্ষমতা

যুক্তরাষ্ট্রের একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের তথ্যমতে পিয়ংইয়ং এর কাছে বর্তমানে ৬০টির মতো পারমাণবিক বোমা রয়েছে। ২০০৬ সালে উত্তর কোরিয়া প্রথমবারের মতো পারমানবিক বোমার পরীক্ষা চালায়। এরপর থেকে দেশটি মোট ছয়বার পারমাণবিক বোমার পরীক্ষা চালিয়েছে। সম্প্রতি একটি পরীক্ষায় তারা এমন বিস্ফোরণ সৃষ্টি করে যা ১৯৪৫ সালে হিরোশিমায় যুক্তরাষ্ট্রের নিক্ষেপ করা ‘লিটল বয়’ এর বিস্ফোরণের দ্বিগুণ! অন্যদিকে সম্প্রতি বেশ কিছু আন্তমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালায় উত্তর কোরিয়া যার মধ্যে কয়কটি সফলও হয়। এসব ক্ষেপণাস্ত্র অন্তত কাগজে কলমে যুক্তরাষ্ট্রের মূল ভূখণ্ডে আঘাত হানতে সক্ষম বলেই যুক্তরাষ্ট্রের যত চিন্তা। যদিও উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক সাফল্যের বিষয়ে যথেষ্ট সন্দেহের অবকাশ রয়েছে, তবুও অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করছেন যে উত্তর কোরিয়া পারমাণবিক শক্তিধর রাষ্ট্র হবার দোরগোড়ায় এসে পৌঁছে গেছে। 
উত্তর কোরিয়া, আমেরিকা, কিম জং উন, ডোনাল্ড ট্রাম্প, পারমাণবিক বোমা
যুক্তরাষ্ট্র কেন উত্তর কোরিয়ায় সামরিক হস্তক্ষেপ করছে না?
উত্তর কোরিয়া দিন দিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য বড় হুমকি হয়ে উঠছে। আর নিজেদের বিরুদ্ধে হুমকি কতটা নির্দয়ভাবে দমন করে যুক্তরাষ্ট্র তা ইরাক যুদ্ধে বিশ্ব দেখেছে। সামরিক সক্ষমতায় উত্তর কোরিয়া থেকে আলোক বর্ষ এগিয়ে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। তথাপি তারা কেন পিয়ংইয়ং এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে না? এই প্রশ্নের উত্তর আছে কোরিয়ান উপদ্বীপেই। যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র দেশ দক্ষিণ কোরিয়া হতে পারে উত্তর কোরিয়া আর মার্কিনদের যুদ্ধের বলি। কোরিয় উপদ্বীপে দুই দেশকে পৃথক করা আড়াই মাইল প্রশস্ত ‘ডিমিলিটারাইজড জোন’ বা বেসামরিক অঞ্চল থেকে দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানী সিউলের দূরত্ব মাত্র ৩০ কিলোমিটার। ফলে সে অঞ্চলে থাকা উত্তর কোরিয়ান আর্টিলারির হাতের নাগালেই রয়েছে ২৫ মিলিয়ন জনসংখ্যার এই শহর। বিশ্লেষকদের ধারণা কোরিয় উপদ্বীপে যুদ্ধ বাঁধলে সিউলের সেই ২৫ মিলিয়ন মানুষ তার বলি হতে পারে। অন্যদিকে পারমাণবিক যুদ্ধ পৃথিবীর জন্য কতটা ভয়াবহ হবে তা অনুধাবন করা শক্ত নয়। আবার যদি এমন হয় যে যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধে উত্তর কোরিয়ার সামরিক শক্তি দ্রুত সময়ে ধ্বংস করে দিয়ে উত্তর কোরিয়া দখল করে নেয়, সেক্ষেত্রেও এই দখল করার প্রক্রিয়ায় পুরো উত্তর কোরিয়া জুড়ে ধ্বংসযজ্ঞ চালাতে হবে। ফলে যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে তৈরি হতে পারে স্মরণকালের ভয়াবহতম মানবিক বিপর্যয়। সম্ভবত এসব বিষয় বিবেচনায় বড় ধরণের যুদ্ধে জড়াতে চায় না যুক্তরাষ্ট্র।
যুদ্ধের সম্ভাবনা কতটুকু?
কিম জং উনের যুদ্ধ যুদ্ধ রবকে অধিকাংশই ‘ভয় দেখানো’র নীতি বলেই মনে করছেন। বিশ্লেষকদের মতে যুদ্ধের হুমকি দিয়ে কেবল জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা থেকে বের হতে চায় উত্তর কোরিয়া। সম্প্রতি উত্তর কোরিয়ার উপর নতুন করে যেসব নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে জাতিসংঘ তাতে করে উত্তর কোরিয়ার বাৎসরিক রপ্তানি আয় কমে যেতে পারে এক-তৃতীয়াংশ। কিন্তু এই নিষেধাজ্ঞার উপর একটি প্রশ্নবোধক চিহ্ন থাকছেই। কারণ রাশিয়া আর চীন এই নিষেধাজ্ঞা কতটুকু মানবে তা নিয়ে আছে সংশয়। অন্যদিকে এক দল রাজনৈতিক বিশ্লেষক মনে করছেন যে উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক কর্মসূচী যুদ্ধের জন্য নয় বরং নিজেদেরকে একটি শক্তিশালী রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার জন্য। আবার এ কথাও সন্দেহ করা হচ্ছে যে পিয়ংইয়ং আদতে দুই কোরিয়ার একত্রীকরণ চায় যেখানে পিয়ংইয়ং এর নেতৃত্বে চলবে সমগ্র কোরিয়া। আর সেজন্যই তারা পারমাণবিক কর্মসূচী চালু রেখেছে। তবে সব তত্ত্ব একদিকে রেখে অন্তত এটা নিশ্চিত করে বলা যায় যে কোরিয় উপদ্বীপে এই উত্তেজনা বিশ্ববাসীর জন্য যথেষ্ট চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কেননা ডোনাল্ড ট্রাম্প বা কিম জং উন, কারো উপরেই যে ভরসা রাখা যাচ্ছে না!
ডিম না ফাটিয়েও সহজেই দু-একটা ছোট্ট পরীক্ষা করে বুঝে নেওয়া সম্ভব যে কোন ডিমটা পচা আর কোনটা ভাল।


পচা ডিম চেনার পদ্ধতি:

১) ডিম ভাল না পচা জানতে চান? খুব সহজে বুঝে নেওয়া সম্ভব। গামলা ভরতি পানির মধ্যে ডিমগুলো ডুবিয়ে দিন। যদি ডিমগুলো ডুবে থাকে তাহলে বুঝবেন যে সেগুলো ভাল। আর যদি ডিমগুলো ভেসে ওঠে, তো জানবেন সেগুলো পচা।

২) কানের কাছে একটি একটি করে ডিম নিয়ে আলতো করে ঝাঁকান। যে ডিমগুলোর থেকে বেশি আওয়াজ আসবে, জানবেন সেগুলো পচা।

ছোট্ট এই পরীক্ষার মাধ্যমে আগাভাগেই চিনে নিন পচা ডিম।
জামা-কাপড় আয়রনের জন্য ইস্ত্রি ছাড়াও আছে অনেক উপায়। জানা খাকলে লেগে যেতে পারে যেকোন সময়। যেকোন সমস্যা ইস্ত্রি ছাড়াই করুন কাপড় আয়রন। এর মাধ্যমে কুচকানো জামা-কাপড়ও খুব সহজেই সমান করতে পারেন।


লোহার তৈরি তলা সমান যে কোনও একটি পাত্রে অল্প পানি ফুটিয়ে নিন। এবার ফুটন্ত পানি ফেলে দিয়ে, গরম পাত্রটি দিয়েই কুচকানো জামা-কাপড়ের উপর ইস্ত্রি চালানোর মতো করে ঘষে নিন। দেখবেন কুচকানো পোশাক সমান হয়ে যাবে।

হাতের কাছে হেয়ার স্ট্রেটনার থাকতে কুচকানো জামা-কাপড় সমান করতে ভাবনা কিসের! হেয়ার স্ট্রেটনার দিয়ে পোশাকের ভাঁজে ভাঁজে সমান ভাবে টেনে ঘষে নিন। জামা-কাপড়ে ইস্ত্রি করার মতোই ফল পাবেন।
কুচকানো জামা-কাপড়ের ভাঁজের উপর সামান্য ঠান্ডা পানি ছিটিয়ে তার উপরে কিছু ক্ষণ হেয়ার ড্রায়ার চালিয়ে নিন। দেখবেন কুচকানো পোশাক অনেকটাই সমান হয়ে গেছে।
কুচকানো জামা-কাপড় সমান করতে সাদা ভিনিগার অত্যন্ত কার্যকরী। ২ কাপ পানিতে ৩/৪ চামচ সাদা ভিনিগার মিশিয়ে নিন। এবার ওই মিশ্রণটি কুচকানো জামা-কাপড়ের ভাঁজে স্প্রে করে আলতো হাতে পোশাকটা একটু সমান করে ঘষে নিলেই পোশাকের কুচকানো ভাব অনেকটাই দূর হবে।

কেটলিতে অল্প পানি গরম করুন। পানি ফুটে উঠলে, কেটলির নীচের অংশটা দিয়ে সামান্য চাপ দিয়ে জামা-কাপড়ের কুচকানো অংশের উপর ঘষুন। দেখবেন জামা-কাপড়ে ইস্ত্রি করার মতোই হয়ে গেছে। এছাড়াও অনেক ওয়াশিং মেশিনে ‘আয়রনিং’ অপশন থাকে। এই ‘আয়রনিং’ অপশন কাজে লাগিয়েও জামা-কাপড় দিব্যি আয়রন করে নিতে পারেন।
সালমান শাহ
সালমান শাহ ১৯৭১ সালে সিলেট জেলায় অবস্থিত জকিগঞ্জ উপজেলায় জন্মগ্রহণ করেন, এবং তাঁর রাশি ছিল বৃশ্চিক। তাঁর পিতা কমর উদ্দিন চৌধুরী ও মাতা নীলা চৌধুরী। তিনি পরিবারের বড় ছেলে। যদিও তাঁর মুল নাম চৌধুরী সালমান শাহরিয়ার ইমন, কিন্তু চলচ্চিত্র জীবনে এসে হয়ে যান ‘সালমান শাহ’। সালমানের দাদার বাড়ি সিলেট শহরের শেখঘাটে আর নানার বাড়ি দারিয়া পাড়ায় । যে বাড়ির নাম এখন ‘সালমান শাহ হাউস’ । নানার মুলবাড়ি ছিল মৌলভিবাজারে। সালমান শাহ ১২ আগস্ট ১৯৯২ বিয়ে করেন, এবং তাঁর স্ত্রীর নাম সামিরা।
সালমান শাহ ১৯৭১ সালে সিলেট জেলায় অবস্থিত জকিগঞ্জ উপজেলায় জন্মগ্রহণ করেন, এবং তাঁর রাশি ছিল বৃশ্চিক। তাঁর পিতা কমর উদ্দিন চৌধুরী ও মাতা নীলা চৌধুরী। তিনি পরিবারের বড় ছেলে। যদিও তাঁর মুল নাম চৌধুরী সালমান শাহরিয়ার ইমন, কিন্তু চলচ্চিত্র জীবনে এসে হয়ে যান ‘সালমান শাহ’। সালমানের দাদার বাড়ি সিলেট শহরের শেখঘাটে আর নানার বাড়ি দারিয়া পাড়ায় । যে বাড়ির নাম এখন ‘সালমান শাহ হাউস’ । নানার মুলবাড়ি ছিল মৌলভিবাজারে। সালমান শাহ ১২ আগস্ট ১৯৯২ বিয়ে করেন, এবং তাঁর স্ত্রীর নাম সামিরা।
১৯৮৫/৮৬ সালের দিকে হানিফ সংকেতের গ্রন্থনায় কথার কথা নামে একটি ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান প্রচারিত হত। এর কোন একটি পর্বে ‘নামটি ছিল তার অপূর্ব’ নামের একটি গানের মিউজিক ভিডিও পরিবেশিত হয়। হানিফের সংকেতের স্বকন্ঠে গাওয়া এই গান এবং মিউজিক ভিডিও দুটোই অনুষ্ঠানের জন্য বিশেষভাবে নির্মিত। একজন সম্ভাবনাময় সদ্য তরুন তার পরিবারের নানারকমের ঝামেলার কারনে মাদকাসক্ত হয়ে মারা যায়, এই ছিল গানটার থিম। গানের প্রধান চরিত্র অপূর্বর ভূমিকায় অভিনয়ের মাধ্যমেই সালমান শাহ মিডিয়াতে প্রথম আলোচিত হন। তখন অবশ্য তিনি ইমন নামেই পরিচিত ছিলেন। মিউজিক ভিডিওটি জনপ্রিয়তা পেলেও নিয়মিত টিভিতে না আসার কারনে দর্শক আস্তে আস্তে ইমনকে ভুলে যায়। আরও কয়েক বছর পর অবশ্য তিনি আব্দুল্লাহ আল মামুনের প্রযোজনায় পাথর সময় নাটকে একটি ছোট চরিত্রে এবং কয়েকটি বিজ্ঞাপনচিত্রেও কাজ করেছিলেন।

এক নজরে সালমান শাহ

আসল নাম : চৌধুরী সালমান শাহরিয়ার ইমন
জন্ম : ১৯ সেপ্টেম্বর ১৯৭১, রবিবার
বাবা : কমর উদ্দিন চৌধুরী
মা : নীলা চৌধুরী স্ত্রী : সামিরা
উচ্চতা : ৫ ফুট ৮ ইঞ্চি
রাশি : বৃশ্চিক
প্রথম চলচ্চিত্র : কেয়ামত থেকে কেয়ামত
শেষ ছবি : বুকের ভেতর আগুন
প্রথম নায়িকা : মৌসুমী
সর্বাধিক ছবির নায়িকা : শাবনূর (১৪টি)
মোট ছবি : ২৭টি
বিজ্ঞাপনচিত্র : মিল্ক ভিটা, জাগুরার, কেডস, গোল্ড স্টার টি, কোকাকোলা, ফানটা।
ধারাবাহিক নাটক : পাথর সময়, ইতিকথা একক নাটক : আকাশ ছোঁয়া, দোয়েল, সব পাখি ঘরে ফেরে, সৈকতে সারস, নয়ন, স্বপ্নের পৃথিবী।
মৃত্যু : ৬ সেপ্টেম্বর, ১৯৯৬, শুক্রবার
সালমান শাহ অভিনীত ছবির তালিকা
ছবির নাম ও ছবি মুক্তির তারিখ:









  • কেয়ামত থেকে কেয়ামত – ১৯৯৩ সালের ২৫ মার্চ
  • তুমি আমার – ১৯৯৪ সালের ২২ মে
  • অন্তরে অন্তরে – ১৯৯৪ সালের ১০ জুন
  • সুজন সখী – ১৯৯৪ সালের ১২ আগস্ট
  • বিক্ষোভ – ১৯৯৪ সালের ৯ সেপ্টেম্বর
  • স্নেহ – ১৯৯৪ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর
  • প্রেমযুদ্ধ – ১৯৯৫ সালের ২৩ ডিসেম্বর
  • কন্যাদান – ১৯৯৫ সালের ৩ মার্চ
  • দেনমোহর – ১৯৯৫ সালের ৩ মার্চ
  • স্বপ্নের ঠিকানা – ১৯৯৫ সালের ১১ মে
  • আঞ্জুমান – ১৯৯৫ সালের ১৮ আগস্ট
  • মহামিলন – ১৯৯৫ সালের ২২ সেপ্টেম্বর
  • আশা ভালোবাসা – ১৯৯৫ সালের ১ ডিসেম্বর
  • বিচার হবে- ১৯৯৬ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি
  • এই ঘর এই সংসার – ১৯৯৬ সালের ৫ এপ্রিল
  • প্রিয়জন – ১৯৯৬ সালের ১৪ জুন
  • তোমাকে চাই – ১৯৯৬ সালের ২১ জুন
  • স্বপ্নের পৃথিবী – ১৯৯৬ সালের ১২ জুলাই
  • সত্যের মৃত্যু নেই – ১৯৯৬ সালের ৪ অক্টোবর
  • জীবন সংসার – ১৯৯৬ সালের ১৮ অক্টোবর
  • মায়ের অধিকার – ১৯৯৬ সালের ৬ ডিসেম্বর
  • চাওয়া থেকে পাওয়া – ১৯৯৬ সালের ২০ ডিসেম্বর
  • প্রেম পিয়াসী – ১৯৯৭ সালের ১৮ এপ্রিল
  • স্বপ্নের নায়ক – ১৯৯৭ সালের ৪ জুলাই
  • শুধু তুমি – ১৯৯৭ সালের ১৮ জুলাই
  • আনন্দ অশ্রু – ১৯৯৭ সালের ১ আগস্ট 
  • বুকের ভেতর আগুন – ১৯৯৭ সালের ৫ সেপ্টেম্বর
  • বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের ধ্রুব তারা হয়ে সবার মনে সিংহাসনে আসন গড়ে নিয়েছিলেন ১৯৯০-এর দশকের অন্যতম শ্রেষ্ঠ নায়ক সালমান শাহ। সালমান চলে গেছেন ওই দূর আকাশে। কখনোই ফিরে আসবেন না। টিভি সেটের সামনে বসে প্রিয় নায়কের ছবি দেখে নীরবে, নিভৃতে হয়তো অনেকেরই দু’ফোঁটা অশ্রু চোখের কোণে ঝিলিক দিয়ে ওঠে।

    কর্মমুখর এফডিসি, চলচ্চিত্র শিল্পের ২০টি বছর কেটে গেল বাংলা চলচ্চিত্রের নক্ষত্র সালমান শাহকে ছাড়া। ৬ সেপ্টেম্বর ছিল অমর এই নায়কের ২০তম মৃত্যুবার্ষিকী। সালমান শাহ বাংলাদেশের ১৯৯০-এর দশকের অন্যতম শ্রেষ্ঠ নায়ক। প্রকৃত নাম শাহরিয়ার চৌধুরী ইমন। ৫ ফুট ৬ ইঞ্চি উচ্চতার এই অভিনেতা সর্বমোট ২৭টি চলচ্চিত্র অভিনয় করেন। এছাড়াও টেলিভিশনে তার অভিনীত গুটি কয়েক নাটক প্রচারিত হয়।
    সালমান শাহ ও শাহরুখ খান
    ১৯৯৩ সালে তার অভিনীত প্রথম চলচ্চিত্র সোহানুর রহমান সোহান পরিচালিত কেয়ামত থেকে কেয়ামত মুক্তি পায়। একই ছবিতে নায়িকা মৌসুমী ও গায়ক আগুনের অভিষেক হয়। জনপ্রিয় এই নায়ক নব্বইয়ের দশকের বাংলাদেশে সাড়া জাগানো অনেক চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন।
    সালমান শাহ্‌ ১৯৭১ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর,সিলেট জেলায় অবস্থিত জকিগঞ্জ উপজেলায় জন্মগ্রহণ করেন, এবং তাঁর রাশি ছিল বৃশ্চিক। তাঁর পিতা কমর উদ্দিন চৌধুরী ও মাতা নীলা চৌধুরী। তিনি পরিবারের বড় ছেলে। যদিও তাঁর মুল নাম শাহরিয়ার চৌধুরী ইমন, কিন্তু চলচ্চিত্র জীবনে তিনি সবার কাছে 'সালমান শাহ' বলেই পরিচিত ছিলেন। সালমান শাহ ১২ আগস্ট ১৯৯২ বিয়ে করেন, এবং তাঁর স্ত্রীর নাম সামিরা।
    প্রখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক সোহানুর রহমান সোহানের হাত ধরে সালমান শাহ চলচ্চিত্রে অভিনয় করার সু্যোগ পান। প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান আনন্দ মেলা তিনটি হিন্দি ছবি 'সনম বেওয়াফা' 'দিল' ও 'কেয়ামত সে কেয়ামত তক' এর কপিরাইট নিয়ে সোহানুর রহমান সোহানের কাছে আসে এর যে কোন একটির বাংলা পুনঃনির্মাণ করার জন্য কিন্তু তিনি উক্ত ছবিগুলোর জন্য উপযুক্ত নায়ক-নায়িকা খুঁজে না পেয়ে সম্পূর্ণ নতুন মুখ দিয়ে ছবি নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেন। নায়িকা হিসেবে 'মৌসুমী' কে নির্বাচিত করলেও নায়ক খুঁজে পাচ্ছিলেন না। তখন নায়ক আলমগীরের সাবেক স্ত্রী খোশনুরের মাধ্যমে 'ইমন' নামে একটি ছেলের সন্ধান পান।
    সালমান শাহ
    প্রথম দেখাতেই তাকে পছন্দ করে ফেলেন পরিচালক এবং সনম বেওয়াফা ছবির জন্য প্রস্তাব দেন, কিন্তু যখন ইমন 'কেয়ামত সে কেয়ামত তক' ছবির কথা জানতে পারেন তখন তিনি উক্ত ছবিতে অভিনেয়র জন্য পীড়াপীড়ি করেন। তাঁর কাছে কেয়ামত সে কেয়ামত তক ছবি এতই প্রিয় ছিলো যে তিনি মোট ২৬ বার ছবিটি দেখেছেন বলে পরিচালক কে জানান। শেষ পর্যন্ত পরিচালক সোহানুর রহমান সোহান তাঁকে নিয়ে কেয়ামত থেকে কেয়ামত চলচ্চিত্রটি নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেন এবং ইমন নাম পরিবর্তন করে সালমান শাহ রাখা হয়।
    সালমান শাহ মৃত্যুর আগে মন মানে না ছবির ৫০% কাজ শেষ করতে পেরেছিলেন, তাঁর মৃত্যুর পর চিত্রনায়ক রিয়াজ কে দিয়ে ছবিটি করানো হয়।
    সালমান শাহ মোট ২৭ টি ছবিতে অভিনয় করেন। সবচেয়ে বেশি ছবিতে অভিনয় করেছেন নায়িকা শাবনূরের সঙ্গে জুটি বেধে (মোট ১৪ বার)। সালমান শাহকে নিয়ে একটি ছবি প্রযোজনা করেছিলেন কিংবদন্তি অভিনেতা খলিল। মালেক আফসারির পরিচালনায় ছবিটির নাম ‘এই ঘর এই সংসার’।
    ১৯৯৬ সালের ৬ই সেপ্টেম্বর কোটি ভক্তকে কাঁদিয়ে পরপারে চলে যান সালমান শাহ। রাজধানী ঢাকার ইস্কাটনে তাঁর নিজ বাস ভবনে সিলিং ফ্যানের সাথে ঝুলন্ত অবস্থায় তাঁর লাশ পাওয়া যায়। ময়না তদন্ত রিপোর্টে আত্মহত্যা বলে উল্লেখ করা হলেও তাঁর মৃত্যু নিয়ে রহস্য এখনো কাটেনি।
    অনেকেই সালমান শাহ-এর মৃত্যুর জন্য তাঁর স্ত্রী সামরার দিকে অভিযোগের আঙুল তোলেন, এমনকি পরবর্তীকালে সালমানের পরিবারের পক্ষ থেকে স্ত্রী সামিরা ও আরো কয়েকজন কে আসামি করে মামলা দায়ের করা হয় কিন্তু পরে এই মামলার আর কোন অগ্রগতি হয়নি ফলে সালমানের মৃত্যু নিয়ে রহস্য আর উদঘাটিত হয়নি। হজরত শাহজালাল (র.)-এর পুণ্যভূমি সিলেটের মাটিতে চিরনিদ্রায় শুয়ে আছেন প্রবাদপ্রতিম এই নায়ক।

    নায়ক সালমান শাহ'র মৃত্যু: কী ঘটেছিল সেদিন

    বাংলাদেশের পত্র-পত্রিকায় প্রয়াত নায়ক সালমান শাহকে স্মরণ
    ১৯৯৬ সালের ৬ই সেপ্টেম্বর দিনটি ছিল শুক্রবার।
    সেদিন সকাল সাতটায় বাবা কমর উদ্দিন চৌধুরী ছেলে শাহরিয়ার চৌধুরী ইমনের সঙ্গে দেখা করতে ইস্কাটনের বাসায় যান। কিন্তু ছেলের দেখা না পেয়ে তিনি ফিরে আসেন।
    এই শাহরিয়ার চৌধুরী ইমন ঢাকার তৎকালীন সিনেমা জগতের সুপারস্টার সালমান শাহ।
    সেদিনের ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে সালমান শাহ'র মা নীলা চৌধুরী বলেন, বাসার নিচে দারোয়ান সালমান শাহ'র বাবাকে তাঁর ছেলের বাসায় যেতে দিচ্ছিল না ।
    নীলা চৌধুরীর বর্ণনা ছিল এ রকম, "বলেছে স্যার এখনতো উপরে যেতে পারবেন না। কিছু প্রবলেম আছে। আগে ম্যাডামকে (সালমান শাহ'র স্ত্রীকে) জিজ্ঞেস করতে হবে। এক পর্যায়ে উনি (সালমান শাহ'র বাবা) জোর করে উপরে গেছেন। কলিং বেল দেবার পর দরজা খুললো সামিরা (সালমান শাহ'র স্ত্রী)।"
    "উনি (সালমান শাহ'র বাবা ) সামিরাকে বললেন ইমনের (সালমান শাহ'র ডাক নাম) সাথে কাজ আছে, ইনকাম ট্যাক্সের সই করাতে হবে। ওকে ডাকো। তখন সামিরা বললো, আব্বা ওতো ঘুমে। তখন উনি বললেন, ঠিক আছে আমি বেডরুমে গিয়ে সই করিয়ে আনি। কিন্তু যেতে দেয় নাই। আমার হাজব্যান্ড প্রায় ঘণ্টা দেড়েক বসে ছিল ওখানে।"
    বেলা এগারোটার দিকে একটি ফোন আসে সালমান শাহ'র মা নীলা চৌধুরীর বাসায়।
    ঐ টেলিফোনে বলা হলো, সালমান শাহকে দেখতে হলে তখনই যেতে হবে।
    কেমন ছিল পরিবেশ?
    টেলিফোন পেয়ে নীলা চৌধুরী দ্রুত ছেলে সালমান শাহ'র বাসার দিকে রওনা হয়েছিলেন।
    তবে সালমানের ইস্কাটনের বাসায় গিয়ে ছেলে সালমান শাহকে বিছানার ওপর দেখতে পান নীলা চৌধুরী।
    "খাটের মধ্যে যেদিকে মাথা দেবার কথা সেদিকে পা। আর যেদিকে পা দেবার কথা সেদিকে মাথা। পাশেই সামিরার (সালমান শাহ'র স্ত্রী) এক আত্মীয়ের একটি পার্লার ছিল। সে পার্লারের কিছু মেয়ে ইমনের হাতে-পায়ে সর্ষের তেল দিচ্ছে। আমি তো ভাবছি ফিট হয়ে গেছে।"

    "আমি দেখলাম আমার ছেলের হাতে পায়ের নখগুলো নীল। তখন আমি আমার হাজব্যান্ডকে বলেছি, আমার ছেলে তো মরে যাচ্ছে," বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন নীলা চৌধুরী।
    ইস্কাটনের বাসা থেকে সালমান শাহকে হলি ফ্যামিলি হাসপাতালে নেয়া হলে সেখানকার ডাক্তাররা তাকে মৃত ঘোষণা করে।
    এরপর ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে ময়না তদন্ত শেষে বলা হয় সালমান শাহ আত্মহত্যা করেছে।
    সালমান শাহ্ ও তার স্ত্রী সামিরা
    পরিবারের দাবি
    বাংলাদেশে সালমান শাহ অভিনীত প্রথম সিনেমা 'কেয়ামত থেকে কেয়ামত' সিনেমার শেষ দৃশ্যের মতো তাঁর জীবনের রথও থেমে গিয়েছিল ওই ছবি করার ঠিক চার বছর পর।
    এরপর তাঁর পরিবারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, সালমান শাহকে হত্যা করা হয়েছে।
    নীলা চৌধুরীর অভিযোগ ছিল তারা হত্যা মামলা করতে গেলে পুলিশ সেটিকে অপমৃত্যুর মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করে।
    পুলিশ বলেছিল, অপমৃত্যুর মামলা তদন্তের সময় যদি বেরিয়ে আসে যে এটি হত্যাকাণ্ড, তাহলে সেটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে হত্যা মামলায় মোড় নেবে।
    বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে অন্যতম শ্রেষ্ঠ নায়কের আকস্মিক মৃত্যুতে স্তম্ভিত হয়ে যায় পুরো দেশ।
    সে সময় সারা দেশজুড়ে সালমানের অসংখ্য ভক্ত তাঁর মৃত্যু মেনে নিতে না পারায় বেশ কয়েকজন তরুণী আত্মহত্যা করেন বলেও খবর আসে পত্রিকায়।
    সালমানের মৃত্যুর সঠিক কারণ জানতে না পারায় তাঁর ভক্তদের মাঝে তৈরি হয় নানা প্রশ্নের।
    আরও প্রশ্ন
    সালমান শাহের মৃত্যুকে ঘিরে যখন একের পর এক প্রশ্ন উঠতে থাকে, তখন পরিবারের দাবির মুখে দ্বিতীয়বারের মতো ময়না তদন্ত করা হয়। মৃত্যুর আটদিন পরে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজে তিন সদস্য বিশিষ্ট মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়।
    সে বোর্ডের প্রধান ছিলেন ডা. নার্গিস বাহার চৌধুরী।
    তিনি বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন, "লাশটা আমি দেখেছি মরচুয়েরিতে। আমার কাছে মনে হয়েছে যেন সদ্য সে মারা গেছে। এ রকম থাকলে তাঁর মৃত্যুর কারণ যথাযথভাবে নির্ণয় করা যায়। আত্মহত্যার প্রত্যেকটা সাইন (চিহ্ন) সেখানে অত্যন্ত নিবিড়ভাবে ছিল। তাঁর শরীরে আঘাতের কোন নিশানা ছিল না।"
    সালমান শাহ
    দ্বিতীয় ময়নাতদন্তে আত্মহত্যার বিষয়টি নিশ্চিত করা হলে মামলার কাজ সেখানেই থেমে যায়।
    সালমান শাহ'র পারিবারিক বন্ধু চলচ্চিত্র পরিচালক শাহ আলম কিরণ বলছিলেন, শেষের দিকে অনেক মানসিক চাপে ছিলেন সালমান শাহ। পরিবারের সদস্যদের সাথে সম্পর্কের টানাপোড়েন এবং প্রযোজকদের সাথে বোঝাপড়ার ঘাটতি তৈরি হয়েছিল।
    সালমান শাহ'র মৃত্যুর পরে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র অভাবনীয় ক্ষতির মুখে পড়ে।
    প্রযোজকরা লোকসান কমিয়ে আনতে সালমান শাহ'র মতো দেখতে কয়েকজন তরুণকে নিয়ে অসমাপ্ত সিনেমার কাজ সম্পন্ন করার জন্য উঠে-পড়ে লাগেন।
    "পুরনো ঢাকার একটি ছেলেকে পেছন থেকে দেখতে সালমানের মতো মনে হয়। তার চুলের স্টাইল দেখতে পেছন দিকে থেকে সালমানের মতো। তখন তার ওপর পুরো ইন্ডাস্ট্রির দায়িত্ব পড়ে গেল। সালমানের অসমাপ্ত ছবিগুলোতে লং শট, ব্যাক টু ক্যামেরা, ওভার-দ্যা-শোল্ডার শটের মাধ্যমে সে ছেলেটাকে ব্যবহার করা শুরু হলো," বিবিসি বাংলাকে বলেন শাহ আলম কিরণ।
    সালমান শাহ'র মৃত্যুর সংবাদ দর্শকদের মনে এতটাই দাগ কেটেছিল যে এত বছর পরেও অনেকে তার প্রিয় নায়ককে ভুলতে পারেননি। সালমানের মৃত্যুর দুই দশকের বেশী পরেও তাকে নিয়ে দর্শকদের মাঝে আলোচনা থামেনি।
    কিন্তু সালমান শাহ'র বিশেষত্ব কী ছিল? কেন তিনি এতোটা জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিলেন?
    চলচ্চিত্র বিশ্লেষক এবং বেসরকারি ইনডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটির শিক্ষক জাকির হোসেন রাজু মনে করেন, সালমান শাহ যে সময়টিতে অভিনয়ে এসেছিলেন, তখন ছিল বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে পালাবদলের সময়।
    ১৯৯২ সালে 'কেয়ামত থেকে কেয়ামত' সিনেমার মাধ্যমে চলচ্চিত্রে আসেন সালমান শাহ। জনপ্রিয় একটি হিন্দি সিনেমার অফিসিয়াল রিমেক ছিল 'কেয়ামত থেকে কেয়ামত'।
    এ সিনেমাটি মুক্তির পর থেকেই চলচ্চিত্রে ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে উঠেন সালমান।
    পর্দায় তাঁর পোশাক-পরিচ্ছদ, সংলাপ বলার ধরন, অভিনয়-দক্ষতা - সবকিছু মিলিয়ে দর্শকের মনে স্থান করে নিতে সময় লাগেনি এ নায়কের।
    বাংলাদেশের সিনেমায় তিনি 'রোমান্টিক হিরো' হিসেবে পরিচিত পান।
    পরিচালক শাহ আলম কিরণ বলেন, "ও যাই করতো, সেটাই ভালো লেগে যেত। অল্প সময়ের মধ্যে এ ছেলেটা চলচ্চিত্রমোদীদের মনে জায়গা করে নিয়েছিল।"
    মাত্র চার বছরে ২৭টি সিনেমায় অভিনয় করে ১৯৯০'র দশকে বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে আলোড়ন তুলেছিলেন নায়ক সালমান শাহ। সাতাশটি সিনেমার বেশিরভাগই ছিল আলোচিত এবং ব্যবসা সফল।
    চলচ্চিত্র বিশ্লেষক জাকির হোসেন রাজু বলছিলেন, ১৯৭০-৮০'র দশকের নায়কদের পরে চলচ্চিত্রে সালমানের আবির্ভাব এক ধরণের তারুণ্যের উচ্ছ্বাস তৈরি করেছিল।
    প্রতিশ্রুতিশীল অভিনেতা
    নায়ক রাজ্জাক, আলমগীর এবং ফারুকের পর সে সময় নতুন একদল তরুণ অভিনেতার আবির্ভাব হয়েছিল ঢাকার সিনেমা জগতে।
    নব্বইয়ের দশকের প্রথম দিকে বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে যত নায়কের আবির্ভাব ঘটেছিল তাদের মধ্যে সালমান শাহ সবচেয়ে প্রমিজিং (প্রতিশ্রুতিশীল) ছিলেন বলে উল্লেখ করেন জাকির হোসেন রাজু।
    তাঁর বর্ণনায়, সালমান শাহ'র অভিনয়ের মধ্যে দর্শক একটা ভিন্নধারা খুঁজে পেয়েছিল। অনেকে আবার সালমান শাহ'র মধ্যে বলিউড নায়কদের ছায়াও খুঁজে পেয়েছিলেন।
    সালমান শাহকে নিয়ে আলোচনা কখনোই থামেনি।
    মাত্র চার বছরের সিনেমা ক্যারিয়ারে সালমান শাহ বাংলা সিনেমার অভিনয় জগতে নিজের এমন একটি স্থানটি করে নিয়েছিলেন যে তাঁর অভাব এখনো অনুভব করেন দর্শক, পরিচালক, প্রযোজক - সবাই।
    এখনো প্রতি বছর সালমান শাহ'র মৃত্যু দিবসে তাঁর অনেক ভক্ত তাঁকে স্মরণ করেন ভালোবাসার সঙ্গে।
    আর সালমানের অনেক ভক্তের কাছে তাঁর মৃত্যু এখনো একটি বড় রহস্য হিসেবেই রয়ে গেছে।
    আমরা সকলে তাঁর বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করি আমিন।

    সূত্র : বিভিন্ন ব্লগ থেকে সংগৃহিত ও সম্পাদিত
    প্রাথমিক জীবন
    জসিম ১৯৫০ সালের ১৪ আগস্ট তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের (বর্তমান বাংলাদেশ) ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলার বক্সনগর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার প্রকৃত নাম আবদুল খায়ের জসিম উদ্দিন। লেখাপড়া করেন বিএ পর্যন্ত । 
    মুক্তিযোদ্ধা
    নায়ক জসিম ‘৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধে একজন সৈনিক হিসেবে দুই নম্বর সেক্টরে মেজর হায়দারের নেতৃত্বে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলেন। দেশের কান্ডারীর ভূমিকায় থেকে আবার চলচ্চিত্রের কান্ডারী হয়ে নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছেন সমানতালে ।

    অ্যাকশন ধারার প্রবর্তক
    ভুড়িওয়ালা জসিম! শুনলে অবাক হবেন, সেই সত্তর দশকের ভুড়িওয়ালা জসিম ছিলেন বর্তমান বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে অ্যাকশন ধারার প্রবর্তক এবং ‘ফাইটিং গ্রুপ’ এর শুরুটা কিন্তু এই জসিমের হাত ধরেই । আজকের অনেক ফাইট ডিরেক্টর ও স্ট্যান্টম্যানরা জসিমের ছাত্র ছিলেন ।
    চলচিত্র জীবন
    জসিম আশির দশকে বাংলা চলচ্চিত্রে দর্শকপ্রিয়তা অর্জন করেন। জসিম চলচ্চিত্রে অভিনয় শুরু করেন দেবর চলচ্চিত্রের মাধ্যমে ১৯৭২ সালে। এই ছবিতে জসিম চলচ্চিত্র পরিচালকদের দৃষ্টি আকর্ষন করেন। ১৯৭৩ সালে জসিম প্রয়াত জহিরুল হকের ‘রংবাজ’ (বাংলাদেশের প্রথম অ্যাকশন দৃশ্য যুক্ত করা ছবি) ছবিতে খলনায়ক হিসেবে অভিনেতা হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করেন এবং যে ছবির অ্যাকশন দৃশ্যগুলোও ছিল তাঁর নিজস্ব প্রযোজনা সংস্থা জ্যাম্বস ফাইটিং গ্রুপের করা । স্বাধীনতার পর আধুনিক বাংলা চলচ্চিত্রের এগিয়ে যাওয়ার পেছনে জসিমের অবদান অনস্বীকার্য, কারণ, বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে অ্যাকশন ধারার প্রবর্তক এবং ‘ফাইটিং গ্রুপ’ এর শুরুটা জসিমের হাত ধরেই ।

    নিজের কাজের প্রতি কতোটা উৎসর্গীয় ছিলেন তার উদাহরণ দেওয়ান নজরুলের ‘দোস্ত দুশমন’ ছবিতেই পাওয়া যায় । “দোস্ত দুশমন” ছবিটি হিন্দি সাড়াজাগানো ফিল্ম “শোলে” ছবির রিমেক । ছবিটিতে তিনি গব্বারের চরিত্র করেছিলেন । খোদ শোলে ফিল্মের নামকরা চরিত্র গব্বার সিং এর আদলে থাকা ভারতীয় খলনায়ক আমজাদ খান পর্যন্ত ভুয়সী প্রশংসা করেছিলেন জসিমের । তিনি দর্শকের মাঝে এতোটাই প্রভাব ফেলেছিলেন যে, ‘আসামি হাজির’ ছবির ডাকু ধর্মার সাথে ওয়াসিমের লড়াই দেখতে দর্শক সিনেমা হলের মূল গেইট ভেঙ্গে ভেতরে প্রবেশ করেছিলো ।
    মজার ব্যাপার হলো, তিনিই একমাত্র নায়ক, যিনি শাবানার সাথে একই সাথে প্রেমিক এবং ভাইরুপে চরিত্রদান করেছিলেন এবং দুটি চরিত্রই দর্শকেরা খুব সাদরে গ্রহণ করেছিলেন । উদাহরণস্বরুপ, যে শাবানা ‘সারেন্ডার’ ছবিতে জসিমের প্রিয়তমা হিসেবে সফল হয়েছেন, সেই শাবানা ‘অবদান’, ‘মাস্তান রাজার’ মতন ছবিতে জসিমের বড় বোন হয়ে সফল হয়েছিলেন ।
    বর্তমানে দেখা যায় যে, নতুন নায়কের আবির্ভাব ঘটলেই বুড়ো হয়ে যাওয়া নায়কের কদর কমে যায়, কিন্তু এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম ছিলেন জসিম । যেই নব্বইয়ের দশকে সালমান শাহ-ওমর সানিরা শেকড় গেঁড়েছিলো, সেই যুগেও জসিমের সিনেমা দেখতে হলে উপচে পড়া ভীড় থাকতো ।
    তিনিই একমাত্র নায়ক যিনি একাধারে ধুন্ধুমার একশান দৃশ্য করে হাততালি কুড়িয়ে নিতেন আবার নায়ক হয়ে দর্শকদের আবেগে জড়াতেন, নীরবে অশ্রুবিয়োগের জন্য তাঁর অভিনয় ছিলো সাবলীল ।
    আরেকটা তথ্য না দিলেই নয়, জসিমই আবিষ্কার করেছিলেন আজকের নায়ক রিয়াজকে ।
    ১৯৯৪ সালে রিয়াজ চাচাতো বোন ববিতার সাথে বিএফডিসি’তে ঘুরতে এসে নায়ক জসিমের নজরে পড়েন। জসিম তখন তাকে অভিনয়ের প্রস্তাব দেন এবং পরবর্তীতে জসিমের সাথে ‘বাংলার নায়ক’ নামের একটি ছবিতে ১৯৯৫ সালে অভিনয় করেন রিয়াজ ।

    উল্লেখযোগ্য সিনেমাগুলো
    তাঁর উল্লেখযোগ্য সিনেমাগুলো ছিলো, ‘সবুজ সাথি’, ‘সুন্দরী’, ‘কসাই’, ‘ছোটবৌ’, ‘মোহাম্মদ আলী’, ‘রকি’, ‘হিরো’, ‘অশান্তি’ , ‘বৌমা’ , ‘স্বামীর আদেশ’ , ‘টাকা পয়সা’ , ‘অভিযান’, ‘পরিবার’, ‘সারেন্ডার’, ‘ভাই আমার ভাই’, ‘ভাইজান’, ‘গর্জন’, ‘বিজয়’, ‘লালু মাস্তান’, ‘অবদান’, ‘ন্যায় অন্যায়’ , ‘লোভ লালসা’, ‘আদিল’, ‘কাজের বেটি রহিমা’ , ‘উচিৎ শিক্ষা’, ‘লক্ষ্মীর সংসার’, ‘মাস্তান রাজা ‘ , ‘কালিয়া’, ‘ওমর আকবর’, ‘ দাগি সন্তান’, ‘ সম্পর্ক’ , ‘শত্রুতা’, ‘নিষ্ঠুর’ , ‘পাষাণ’, ‘হিংসা’, ‘ভাইয়ের আদর’, ‘হাতকড়া’, ‘ডাকাত’, ‘বাংলার নায়ক’, ‘রাজাবাবু’, ‘রাজাগুণ্ডা’, ‘ঘাত প্রতিঘাত ‘ ‘স্বামী কেন আসামী’ সহ অসংখ্য অসংখ্য ছবি, যা বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লিখা থাকবে চিরকাল ।
    ব্যক্তিগত জীবন
    জসিমের প্রথম স্ত্রী ছিলেন ড্রিমগার্লখ্যাত নায়িকা সুচরিতা। পরে তিনি ঢাকার প্রথম সবাক ছবির নায়িকা পূর্ণিমা সেনগুপ্তার মেয়ে নাসরিনকে বিয়ে করেন।
    জসীমের তিন ছেলে রাতুল, রাহুল, সামি । যার মধ্যে রাতুল ও সামি ‘Owned’ ব্যান্ডের বেইজিস্ট ও ড্রামার(Owned ইদানিং অনেক ট্রেন্ডিং ব্যান্ড) আর রাহুল ‘Trainwreck’ ব্যান্ডের গিটারিস্ট (এই ব্যান্ডের ড্রামারই অর্থহীনে যোগ দিয়েছে) আর ‘Poraho’r ড্রামার ।
    মৃত্যু
    জসিম ১৯৯৮ সালের ৮ই অক্টোবর মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণজনিত কারণে পরলোকগমন করেন। তার মৃত্যুর পর এফডিসির সর্ববৃহৎ ২ নম্বর ফ্লোরকে জসিম ফ্লোর নামকরণ করা হয় । 
    সশ্রদ্ধ সালাম আর বিদেহী আত্মার প্রতি দোয়া রইলো ।
    নায়ক রাজ বলতে বাংলাদেশী এক জনকেই বোঝানো হয় আর তিনি হচ্ছেন সদ্য প্রয়াত চলচ্চিত্রের জীবন্ত কিংবদন্তী রাজ্জাক। যে মানুষটি একাধারে একজন অভিনেতা, প্রযোজক ও পরিচালক হিসেবে চলচ্চিত্র অঙ্গনে ভূমিকা পালন যাচ্ছেন। তিনি কিশোর বয়সে কলকাতার মঞ্চ নাটকে জড়িয় পরেন। এর পর ১৯৬৪ সালে আলে দাঙ্গার উত্তাল সময়ে নতুন জীবন গড়তে একজন সাধারন মানুষ হিসাবে আবদুর রাজ্জাক পরিবার সহ ঢাকায় চলে আসেন প্রায় অসহায় অবস্থায়। কঠোর পরিশ্রম আর জীবনের প্রতিটি মহুর্তের সাথে সংগ্রাম করে উপাধি পেয়েছেন আজকের নায়ক রাজ নাজ্জাক। তবে রাজ্জাক তৎকালীন সময়েও দর্শকের কাছে জনপ্রিয় ছিল। আর এই জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন পাকিস্তান টেলিভিলশনে ঘরোয়া নামের ধারাবাহিক নাটকে অভিনয়ের মধ্য দিয়। জীবনে নানা সংগ্রামের পথ অতিক্রম করে তিনি। তার পর আব্দুল জব্বার খানের সহযোগিতায় তিনি একবাল ফিল্মে কাজ করার সুযোগ লাভ করেন। তিনি উজালা ছবিতে কাজ শুরু করেন পরিচালক কামাল আহমেদের সহকারী হিসাবে। এর পর সালাউদ্দিন প্রোডাকশন্সের তেরো নাম্বার ফেকু অস্তাগড় লেন চলচ্চিত্রে ছোট একটি চরিত্রে অভিনয় করে সবার কাছে নিজ মেধার পরিচয় দেন রাজ্জাক। পরবর্তীতে ‌কার বউ, ডাক বাবু, আখেরী স্টেশনসহ আরও বেশ কটি ছবিতে ছোট ছোট চরিত্রে অভিনয় করে তিনি। পরে বেহুলা চলচ্চিত্রে সুচন্দার বিপরীতে তিনি নায়ক হিসেবে ঢালিউডে উপস্থিত হন এবং সবার মন জয় করে নেন।
    দর্শকের ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে তিনি নায়করাজ হিসেবে পরিচিতি পান। কি যে করি ছবিতে অভিনয়ের মাধ্যমে তিনি প্রথম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। ২০১১ সালের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে তিনি আজীবন সম্মাননা অর্জন করেছেন। এই প্রযন্ত তিনি চার বার জাতীয় সম্মাননা লাভ করেন। চলচ্চিত্রের জীবন্ত কিংবদন্তী হয়েছেন, এটা যে কারো কাছেই গল্প বলে মনে হতে পারে। মনে হওয়াটাই স্বাভাবিক। রাজ্জাক অসীম মনোবল, অমানষিক পরিশ্রম আর মমতার মাধ্যমে ঠিকই নিজের লক্ষ্যে পৌঁছেছেন। রাজ্জাকের জন্ম কলকাতার সিনেমাপাড়া টালিগঞ্জে। অর্থাৎ জন্মের পর থেকেই অভিনয়ের সঙ্গে সখ্যতা। মঞ্চের সঙ্গে জড়িত থাকলেও স্বপ্ন ছিল সিনেমাকে ঘিরে। টালিগঞ্জের সিনেমাশিল্পে তখন ছবি বিশ্বাস, উত্তম কুমার, সৌমিত্র, বিশ্বজিতদের যুগ। সেখানে হালকা-পাতলা সাধারণ রাজুর অভিনয় সুযোগ পাবার কোনো সম্ভাবনাই ছিল না। এর মধ্যে শুরু হলো সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা। এক সময় কলকাতায় থাকাটাই মুশকিল হয়ে পড়ে। তখন এক সুহৃদ রাজ্জাককে পরামর্শ দিলেন ঢাকায় চলে আসতে। বললেন, ঢাকার চলচ্চিত্র নতুন করে যাত্রা শুরু করেছে। সেখানে গেলে হয়তো কিছু একটা হবে। ভদ্রলোক ঢাকার প্রথম চলচ্চিত্র মুখ ও মুখোশ-এর প্রযোজক, পরিচালক ও অভিনেতা আবদুল জব্বার খানের পরিচিত। তিনি রাজ্জাককে পাঠালেন তার কাছে একটা চিঠি দিয়ে। তিনি রাজ্জাক কে বলে দিলেন ঢাকার কমলা পুরে থকেন আবদুল জব্বার খান। তখন রাজ্জাক প্রথম এসে কমলা পুরে বাসা নেন। এর পর চিঠি নিয়ে জব্বার খানের কাছে যান তিনি রাজ্জাককে একবাল ফিল্ম লিমিটেড এর কাজ করার সুযোগ করে দেন। উজালা ছবির মধ্যদিয়ে রাজ্জাকের শুরু হল ঢাকার চলচ্চিত্র জীবন।
    পরিচালকের পাশা পাশি বেশ কিছু ছবিতে তিনি অভিনয় করেন। এসব ছবির মধ্যে ডাক বাবু, ১৩নং ফেকু ওস্তাগার লেন, আখেরী স্টেশন উল্লেখযোগ্য। পর্যায় ক্রোমে তিনি জহির রায়হানের সহকারী পরিচালক হিসেবে যোগ দান করেন। আর তখন থেকেই তার ভাগ্য খুলে যায়। সহকারী হিসাবে কয়েকটি ছবি পরিচালনা করার পর হঠাৎ এক দিন তিনি নায়ক হওয়ার সুযোগ পান। লোক কাহিনী নিয়ে জহির রায়হান তখন বেহুলা ছবির নির্মান কাজ করতেছেন। জহির রায়হান তাকে বলল আপনিই আমার ছবির নায়ক। ঐসময় রাজ্জাকের চেহারার মধ্যে কলকাতার বিশ্বজিৎ-এর ছায়া খুজে পাওয়া যেত। জহির রায়হানের সুনিপুণ হাতের ছোয়ায় অসাধারন লক্ষ্মীন্দর হয়ে দর্শকেদের সামনে উপস্থিত হলেন রাজ্জাক। তার বিপরীতে অভিনয় করেছে অপূর্ব সুন্দরী বেহুলারূপী সুচন্দা। বেহুলা ছবিটি ১৯৬৬ সালে মুক্তি পায়। দর্শকের কাছে ছবিটি সুপার হিট হয়। এই ছবির মধ্যে দিয়েই বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পায় আরেক জন নায়ক যিনি চলচ্চিত্র শিল্পের অপরিহার্য নায়ক। ঢাকার সিনামা
    হল গুলোতে তখন পাক-ভারতীয় ছবির দাপট। পাকিস্তানের মোহাম্মদ আলী, জেবা, সুধির, শামীম আরা, ওয়াহিদ মুরাদ এবং কলকাতার ছবি বিশ্বাস, উত্তম কুমার, সুচিত্রা সেন, বিশ্বজিৎ, সৌমিত্র এবং ভরতের রাজ কাপুর, নার্গিম, দিলীপ কুমার এদের ছবির সঙ্গে পালা দিয়ে চলতে শুরু করল ঢাকার নির্মাতাদের নির্মিত ছবি। আব্দুল জব্বার খান, রহমান, শবনম, খলিল, ফতেহ লোহানী, খান আতা, সুমিতা দেবী, আনোয়ার হোসেন, সুচন্দা তাদের সাথে আরো একটি নাম যোগ হল আর তা হচ্ছে আর তিনি হলেন রাজ্জাক। দেশ স্বাধীন হওয়ার আগে এখানে নির্মিত বেশিরভাগ ছবির নায়ক রাজ্জাক। দুই ভাই, আবির্ভাব, বাঁশরী, এতটুকু আশা, নীল আকাশের নীচে, যে আগুনে পুড়ি, পায়েল, দর্পচূর্ণ, যোগ বিয়োগ, ছদ্মবেশী, জীবন থেকে নেয়া, মধুর মিলন ইত্যাদি ছবির সাফল্যে রাজ্জাক হয়ে ওঠেন চলচ্চিত্রের অপরিহার্য নায়ক। দেশ যখন পাকিস্তান থেকে ভাগ হয়ে যায় তখন বাংলা দেশে পাক ভারতীয় ছবির প্রদর্শন বন্ধ হয়ে যায়।
    এমন অবস্থায় বাংলাদেশ চলচ্চিত্রকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য যাদের উপর দয়িত্ব পরে রাজ্জাক তাদের মধ্যে এক জন। এর পর সড়ক দুর্গটনায় রহমান পা হাড়ালে চলচ্চিত্রে রোমান্টিক নায়কের শূন্যতা দেখা দেয়। তখন রাজ্জাক একাই তা সামাল দেন। খুব দক্ষতা এবং নৈপুন্যতার সাথে রাজ্জাক একের পর এক ছবিতে অভিনয় করে যান। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর প্রথম মুক্তি পায় রাজ্জাক অভিনিত মানুষের মন ছবি। ছবিটি ব্যবসা সফল হওয়ার কারনে নতুন ভাবে বাংলাদেশ চলচ্চিত্রে জেগে উঠে। ছবিটি পরিচালনা করেন মোস্তফা মাহমুদ। এই ছবির মধ্য দিয়ে শুরু হল চলচ্চিত্রে নয়ক রাজ্জাকের যুগ। তার পর মুক্তি যুদ্ধ নিয়ে প্রথম ছবি চাষী নজরুল ইসলাম পরিচালিত ওরা ১১ জন, এসএম শফির ছন্দ হারিয়ে গেল, বাবুল চৌধুরীর প্রতিশোধ এবং কাজী জহিরের অবুঝ মন ছবিতে অভিনয় করে রাজ্জাক হয়ে যান বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের আইকন।
    ১৯৭৩ সালে জহিরুল হকের রংবাজ ছবির নাম ভূমিকায় অভিনয় করে রাজ্জাক বাংলা চলচ্চিত্রের নতুন ধারা প্রবর্তন করেন। তিনি সূচনা করেন চলচ্চিত্রের আধুনিক অ্যাকশন যুগেরও। রংবাজ দিয়েই রাজ্জাক তাঁর অভিনয় জীবনে বৈচিত্র নিয়ে আসেন। রাজ্জাক বলেন, রংবাজ ছবির সাফল্যের পর আমার মনে হলো, দর্শকদের একঘেয়েমি থেকে মুক্ত রাখতে হলে সব ধরনের চরিত্রে অভিনয় করতে হবে। প্রয়োজনে দর্শকদের জন্য নিজের অর্থে ছবি নির্মাণ করতে হবে।
    তিনি আরো জানান যে প্রযোজক হিসাবে আত্নপ্রকাশ করার আগে আমি আরো কিছু বৈচিত্র্যময় চরিত্রে অভিনয় করেছি। যেমন; বেঈমান, অনির্বান, স্লোগান, ঝড়ের পাখি, আলোর মিছিল, এখানে আকাশ নীল, অতিথি, অবাক পৃথিবী, উল্লেখযোগ্য।
    শুধু অ্যাকশান, রোমান্টিক নয় ত্রিরত্নের মতো কমেডি ছবিতেও অভিনয় করেছি। আমি চেয়েছি দর্শকদের আনন্দ দিতে। আপনি লক্ষ্য করবেন, আজিজুর রহমানের অতিথি ছবিতে আমি সেক্রিফাইসিং চরিত্রে অভিনয় করেছি। এসময় আলমগীর নতুন অভিনেতা। তালে তুলে ধরার জন্য শাবানার সঙ্গে রোমান্টিক চরিত্রে আমি মিলিয়ে নিয়েছি। অনুরূপ ভাবে নারায়ন ঘোষ মিতার আলোর মিছিল ছবিতে আমি ফারুককে রোমান্টিক চরিত্রে মেনে নিয়েছি। কারন আমার উদ্দেশ্য ছিল নতুন নায়ক হলে আমার উপর চাপ কমবে। আমার কাছে খুবই ভালো লাগে যে তার উভয়ে জনপ্রিয়তা লাভ করতে পেরেছে। চলচ্চিত্রে গুরুত্বপূর্ন অবদাব রেখেছে। ১৯৭৪ সালে নতুন পরিচালক মাসুদ পারভেজ পরিচালিত মাসুদ রানা এতে আমি অতিথি শিপ্লী হিসেবে একটি গানের দৃশ্যে অভিনয় করেছি। এতে নায়ক হিসাবে অভিনয় করে সোহেল রানা, তার জীবনেও এটি প্রথম ছবি। ছবিটিতে মনের রঙে রাঙাব বনের ঘুম ভাঙাব গানের সাথে নেচে গেয়ে আরেক জন নতুন শিল্পীর উত্তরনে কিছুটা হলেও ভূমিকা রেখেছি। এই সময় আমি যে অবস্থানে ছিলাম কোন নতুন নায়কের ছবিতে অতিথি শিল্পী হিসেবে কাজ করার কথা নয়।
    বর্তমান প্রজম্মের কোন জনপ্রিয় নায়ক আমার মত করবে না। আর আমি করার কারন হচ্ছে আমাদের চলচ্চিত্র জগতে নায়ক নায়িকাদের সংখা বাড়িয়ে চলচ্চিত্রকে আরো এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। অভিনেতা হিসেবে নিজেকে অন্য সবার ধরাছোঁয়ার বাইরে নিয়ে যাওয়ার জন্য রাজ্জাককে তেমন কোনো কৌশলের আশ্রয় নিতে হয়নি। রাজ্জাক বরাবরই মানুষকে যথাযোগ্য সম্মান আর ভালোবাসা দিয়েছেন। জনপ্রিয়তার তুঙ্গে নামীদামী প্রযোজক-পরিচালকদের সম্মানে পার্টির আয়োজন করেছেন বছরের পর বছর। রাজ্জাকের স্ত্রী লক্ষী রাত জেগে স্বামীর বন্ধুদের পছন্দ মতো রান্নাবান্না করে খাইয়েছেন। নির্মাতারাই তাঁকে নিয়েছে-বাদি থেকে বেগম, সমাধি, কি যে করি, সেতু, আগুন-এর মতো জনপ্রিয় ছবির সেরা চরিত্রে। এক সময় পরিচালক গন মনে করতেন পর্দায় নায়ক মারা গেলে ছবি চলবেনা। ঠিক এমন সময়ই বেঈমান, সমাধি আর সেতু ছবির শেষ দৃশ্যে জার্জাক মৃত্যুবরন করেন, এতে দর্শকদের খুব কষ্ট দিয়েছেন ঠিকই তবে ছবির সাফল্যও আদায় করে নিয়েছেন। বর্তমানে বাংলা ছবির নায়ক মানেই চকচকে শার্ট-প্যান্ট, স্যুট-টাই পরা। কিন্তু ঐ সময় রাজ্জাক অভিনয় করত ছাপার লুঙ্গি পরে, চরিত্রের প্রয়োজনটা বোঝার ক্ষমতাটাই রাজ্জাককে নায়নরাজে পরিণত করেছে।রাজ্জাক-ও-বাপ্পারাজ
    ১৯৭৭ সালে রাজ্জাক যখন পরিচালক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন, তখন তিনি বেছে নেন প্রেমের গল্পকে। ছবি করেন অনন্ত প্রেম এতে তার বিপরীতে অভিনয় করেন ববিতা। গল্প, গান, চিত্রায়ন, অভিনয় সবকিছু মিলিয়ে ছবিতে তারা দর্শকদের যা উপহার দিয়েছে দর্শক কি তা কখনো ভূলতে পারবেন? প্রেমের ছবির মূলমন্ত্র হচ্ছে মান অভিমান, প্রেম ভালোবাসা এবং সর্বশেষে মিলন। এসব ছবি দেখে দর্শক হাসতে হাসতে বাড়ি পিরেন।
    কিন্তু অনন্ত প্রেম ছবিতে নায়ক-নায়িকার মৃত্যু দিয়ে ছবি শেষ করেও সাফল্য অর্জন করে রাজ্জাক প্রমান করে পরিচালক হিসাবেও তিনি দর্শকের মন জয় করতে পারেন। তার পর বদনাম, সৎ ভাই, চাপাডাঙ্গার বউ এবং বাবা কেন চাকর নির্মাণ করে পরিচালক হিসিবে নিজের অবস্থানকে শক্তিশালী করে নেন। বিশেষ করে তারাশংকর বন্দ্যোপাধ্যায়ের চাপাডাঙ্গার বউ ছবিটি নির্মাণ করতে গিয়ে তিনি অভিনেতা রাজ্জাককে বাদ দিয়ে কেন্দ্রীয় চরিত্রে শাবানার বিপরীতে এটিএম শামসুজ্জামানকে নিয়ে একজন অভিনেতার মহত্ব প্রমাণ করেছেন। এই ছবিটির প্রযোজক তিনি, পরিচালকও তিনি, এই ছবিতে ঐ সময়ের জনপ্রিয় নায়িকা শাবানাকে নিয়েছেন নাম ভূমিকায় পূত্র বাপ্পারাজকে দিয়েছেন নায়ক হিসেবে এবং যাত্রা সম্রাট অমলেন্দু বিশ্বাসের কন্যা অরুনা বিশ্বাকেও নিয়েছেন নাইকা হিসাবে, তিনি ইচ্ছা করলে প্রধান চরিত্রে অভিনয় করতে পারতেন, প্রধান চরিত্রে নিয়েছেন খল অভিনেতে তার বন্ধু এটিএম শামসুজ্জামনকে। এখানেই পরিচয় হয় রাজ্জাকের অতুলনীয় এবং দূর দৃষ্টি সম্পন্ন মনোভাব।
    অভিনেতা রাজ্জাকের বৈচিত্রময় সাহসী চরিত্রে অভিনয়ের কথা স্মরনীয় হয়ে আছে। ১৯৭৮ সালে রাজ্জাক যখন খুবই জনপ্রিয় এক অভিনেতা তখনও তিনি আজিজুর রহমানের অশিক্ষিত ছবিতে গ্রামের পাহারাদার চরিত্রে অভিনয় করেছেন, লুঙ্গি আর শার্ট পরে, যা আজো বুলবার নয়। ছবিটির শেষ প্রযায়ে মাস্টার সুমনের মৃত্যু পর পুলিশের খাতায় রাজ্জাকের স্বাক্ষর করার দৃশ্য আজো মনে পরলে চোখে পানি এসে যায়। এর দুই বছর পর একই পরিচালক আজিজুর রহমানের ছুটির ঘণ্টা ছবিতে স্কুলের দপ্তরির চরিত্রে রাজ্জাকের অসাধারণ অভিনয় কি মন থেকে মুছে ফেলা সম্ভব? বড় কথা ওই সময় যে অবস্থানে থেকে রাজ্জাক পাহারাদার কিংবা স্কুলের দপ্তরির ভূমিকায় অভিনয় করেছেন সেটা আজকের কোনো জনপ্রিয় নায়কের কাছ থেকে আশা করা যায় ? এদিকে আবার দিলীপ বিশ্বাসের জিঞ্জির মতিন রহমানের অন্ধ বিশ্বাস ছবির দুর্দুরান্ত অভিনেতার গুন এখন কার কয়েক জন নায়কের মাঝে খুজে পাওয়া যাবে। সবছেয়ে বড় কথা রাজ্জাক খুব ভালো করে জানতেন দর্শক কখন কি চায়, দর্শকের চাহিদা কি। তার বদনাম ছবিতে তিনি জাফর ইকবালের হিট গান হয় যদি বদনাম হোক আরো ছবিটি ব্যবসা সফল হয়।
    তিনি খুব চৌকুশ ছিলেন যে কখন কাকে দিয়ে কোন চরিত্রে অভিনয় করাতে হবে বা কাকে দিয়ে কোন কাজ করাতে হবে। যার ফলে তিনি চলচ্চিত্রের খারাপ সময়েও বাবা কেন চাকর ছবির মাধ্যমে তিনি চলচ্চিত্রের চেহারা পালটিয়ে দেন। ছবিটি দ্বিতীয় বার কলকাতায় চালিয়েও সাফল্য অর্জন করেন। রাজ্জাক ছোট থেকেই সম্রাটকে চলচ্চিত্র জগতে নিয়ে আসেন। রাজ্জাক তার দুই পুত্র বাপ্পারাজ এবং সম্রাটকে নিয়ে এক সঙ্গে অভিনয় করেছেন কোটি টাকার ফকির ছবিতে। দুই ছেলেকে নিয়ে অভিনয় করাটাকেই রাজ্জাক তাঁর জীবনের সেরা প্রাপ্তি হিসেবে মনে করেন। তিনি বলেন, আমার কোনো অপ্রাপ্তি নেই। সবকিছুই আল্লাহ আমাকে দিয়েছেন। তবে একটা কষ্ট আছে, সেটা হলো আমার বড়মেয়ে শম্পার অকাল মৃত্যু। ও বেঁচে থাকলে আমরা সম্পূর্ণ এবং পরিপূর্ণ পরিবার নিয়ে গর্ববোধ করতে পারতাম।
    আবদুর রাজ্জাক থেকে যে মানুষটি এক জন নায়ক রাজ রাজ্জাকে পরিনত হয়, তিনি হচ্ছে সেই দিনের কমলাপুরের ছোট্ট ঘর থেকে গুলশানের আলিশান বাড়ি খ্যাতি, সম্মান, অর্থ, যশ, দর্শকদের অকৃতিম ভালোবাসা এবং চলচ্চিত্রের প্রতিটি মানুষের শ্রদ্ধা স্নেহ-ভালোবাসা পাওয়ার পিছনে অর্থাৎ আবদুল রাজ্জাক থেকে বর্তমান অবস্থানে আসার পিছনে যে সব মহত্ব ব্যক্তিদের অবদান রয়েছে তাদের সম্পর্কে বলেন। আমার আজকের এই অবস্থানের পিছনে যাদের অবদান রয়েছে তাদের মধ্য আছেন আবদুল জব্বার খান, জহির রায়হান, আজহারুল আনোয়ার, নজরুল ইসলাম, আবদুল লতিফ বাচ্চু, গাজী মাজহারুল আনোয়ার, সুভাষ দত্ত, আজিজুর রহমান, আমজাদ হোসেন, চাষী নজরুল ইসলাম এবং বন্ধু মজিবুর রহমান চৌধুরী মজনু। এদের সহযোগিতা না পেলে আমি আজকের অবস্থানে পৌঁছাতে পারতাম না। কৃতজ্ঞতা জানাই তাঁদেরকে যাদের ছবিতে আমি জাতীয় চলচ্চিত্র ও বাচসাস পুরস্কার পেয়েছি।
    বিশেষভাবে কৃতজ্ঞতা জানাই প্রযোজক-পরিবেশক একেএম জাহাঙ্গীর খানকে যিনি আমাকে শরৎচন্দ্রের গল্প অবলম্বনে দুটি ছবি চন্দ্রনাথ ও শুভদাতে কাজ করার সুযোগ দিয়েছেন।

    বন্ধু পরিচালক চাষী নজরুল ইসলাম এই দুই ছবির বাইরেও আমাদে নিয়ে পদ্মা-মেঘনা-যমুনা নামে আরো একটি সাহিত্য নির্ভর ছবি নির্মান করেছেন। অর্থাৎ সাবাই আমাকে নায়ক রাজ হতে সাহায্য করেছে। যাদের সাথে আমি কাজ করেছে তাদের ভালোবাসা আমাকে ঋনি করে রেখেছে। তাদের ঋন শোধ করার ক্ষমতা আমার নেই। নায়ক রাজ রাজ্জাক বাংলাদেশ চলচ্চিত্রে অসামান্য অবদানের জন্য চ্যানেল আই চলচ্চিত্র মেলা ২০০৯ তার পুরু পরিবারকে সম্মাননা প্রদান করে। বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত এই চলচ্চিত্র মেলা ও সম্মাননা অনুষ্ঠানে তিনি স্বপরিবারে উপস্থিত হল। শুধু বাপ্পারাজ দেশের বাহিরে থাকার কারনে উপস্থিত হতে পারেনি। অনুষ্ঠানে তথ্য সচিব ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী রাজ্জাক পরিবারের হাতে সম্মাননা তুলে দেন।
    রাজ্জাকের অভিনিত পরিচালিত ছবি ১৮ টি। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি ছবি হচ্ছেঃ- অনন্ত প্রেম, মৌ চোর, বদনাম, আমি বাঁচতে চাই, কোটি টাকার ফকির, মন দিয়েছি তোমাকে এবং উত্তর ফাল্গুনী। তার নির্মিত সর্বশেষ ছবি হচ্ছে আয়না কাহিনী।
    রাজ্জাক বাংলা উর্দু মিলিয়ে এই প্রযন্ত প্রায় ৫০০ টিরও বেশি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। তিনি শুধু নায়ক হিসাবে নয়। এক জন পরিচালক হিসাবেও সফল। চলচ্চিত্রের বাইরে জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিলের শুভেচ্ছাদূত হিসেবে কাজ করেছেন নায়করাজ রাজ্জাক। তার প্রযোজনা সংস্থার নাম রাজলক্ষী প্রোডাকশন। রাজ্জাক বাবা আকবর হোসেন ও মা মিরারুন্নেসার কনিষ্ঠ সন্তান। রাজ্জাকের দুই পুত্র বাপ্পারাজ এবং সম্রাট চলচ্চিত্র অভিনেতা।

    তার পুরু নাম আব্দুর রাজ্জাক। ডাক নাম রাজু, রাজ্জাক, রাজা। তিনি ১৯৪২ সালের ২৩ জানুয়ারি কলিকাতার টালিগঞ্জের নাগতলায় জম্ম গ্রহন করেন। তার পিতার নাম আকবর হোসেন এবং মাতার নাম নিসারুন নেস। রাজ্জাকের তিন ভাই তিন বোন তাদের মধ্যে তিনি ছোট। তিনি সর্বপ্রথম কলকাতার শিলালিপি নামে একটি ছবিতে অভিনয় করেন। তিনি ১৯৬২ সালে খায়রুন নেসাকে (লক্ষ্মী) বিয়ে করেন। ১৯৬৪ সালে তিনি প্রথম ঢাকায় আগমন করেন তিন পুত্র (বাপ্পারাজ, বাপ্পি, সম্রাট) দুই কন্যা (শম্পা, ময়না) এবং স্ত্রী খায়রুন নেসাকে নিয়ে কলমা পুর বসতি স্থাপন করেন। রাজ্জাক নায়ক হিসাবে প্রথম বেহুলা ছবিতে অভিনয় করেন। তার সর্বপ্রথম প্রযোজিত ছবি আকাঙাক্ষা এবং পরিচালক হিসাবে প্রথম ছবি অনন্ত প্রেম, এই প্রযন্ত তার অভিনিত মোট ছবির সংখ্যা প্রায় ৫০০। রাজ্জাকের সেরা প্রাপ্তি ইউনিসেফের শুভেচ্ছা দূত হওয়া। তার খ্যাতি নায়ক রাজ রাজ্জাক।

    সূত্র : বিভিন্ন ব্লগ থেকে সংগৃহিত ও সম্পাদিত