এস্ট্রোনমি বিষয়টিকে মানুষের আষাঢ়ে গল্পের বস্তু থেকে বিজ্ঞান রূপে মানুষের সামনে প্রতিষ্ঠা করার পেছনে যে দুজন বিজ্ঞানীর নাম প্রথমেই আসে তাদের নাম মোটামুটি সবারেই জানা: কোপার্নিকাস ও কেপলার। কোপার্নিকাস সর্ব প্রথম পৃথিবীকেন্দ্রিক বিশ্বজগতের ধারনা থেকে সূর্যকেন্দ্রিক(heliocentric system) বিশ্বজগতের ধারনা প্রতিষ্ঠা করেন।
কোপার্নিকাস
কোপার্নিকাস
অন্যদিকে কেপলার সর্ব প্রথম টাইকো ব্রাহের অবজারভেশনাল ডেটা ব্যবহার করে গ্রহ গুলোর সঠিক গতি পথের সমীকরণ নির্ণয় করেন। কেপলার তার সূত্রগুলো সম্পূর্ণ ব্রাহের সংগৃহীত তথ্য উপাত্ত থেকে নির্ণয় করে । তার যদিও অনেক পরে নিউটন তার মহাকর্ষ বলের সূত্র অবতারণা করে। আশ্চর্য হওয়ার মত ঘটনা হলেও সত্য যে নিউটনের সূত্র গ্রহ গুলোর গতির ঠিক একি ব্যখ্যা দেয়। কিন্তু নিউটনের কাজটি তত্ত্বীয়(এস্ট্রোফিজিক্স) কাজ অন্য দিকে কেপলারের কাজ পর্যবেক্ষণ প্রসূত(এস্ট্রোনমি)। দিনশেষে সবার উদ্দেশ্য একিঃ মহাবিশ্বকে সঠিক ভাবে ব্যাখ্যা করা।

তারও কিছু পরে গ্যালিলিওর টেলিস্কোপ আবিষ্কার মহাকাশ বিজ্ঞানকে এক নতুন মাত্রা দেয়। কিন্তু তখনো পর্যন্ত সবার ধারণ ছিল আমদের মহাবিশ্ব স্থির এবং আকৃতিতে নির্দিষ্ট । সব মহাজাগতিক বস্তু আমাদের নিজেস্ব মিল্কিওয়ের অন্তর্ভুক্ত সেটাই ছিল সবার বিশ্বাস। 
গ্যালিলিও

গ্যালিলিও

এস্ট্রোনমিতে এক্সট্রাগ্যলাক্টিক বলতে যা এখন বোঝায় তা তখনও মানুষের সামনে আসেনি । ১৯১৭ সালে তখনকার সবচেয়ে শক্তিশালী টেলিস্কোপ মাউন্ট উইলসন প্রতিষ্ঠিত হয়। সেই অবজারভেটরিতে এডউইন হাবল তার নিজেস্ব প্রজেক্টে কাজ করা কালীন (১৯২০) অনেক মহাজাগতিক বস্তু দেখতে পান যাদের এবসল্যুট ম্যগনিচুড থেকে দূরত্ব নির্ণয় করে হাবল আন্দাজ করতে পারেন যে ওই বস্তু গুলো আমাদের মিল্কি ওয়ের অন্তর্ভুক্ত হতে পারে না। হাবলের কাজের আগেই মিক্লিওয়ের আকার আকৃতি নিয়ে কাজ শুরু হয়ে গিয়ে ছিল। কিন্তু হাবল-ই প্রথম মিল্কিওয়ের বাইরেও যে মিল্কিওয়ের মত আরও বস্তু মহাবিশ্বে থাকতে পারে তা আমাদের ভাবতে শিখান।হাবল সেই বস্তু গুলোর নামকরণ করেন এক্সট্রাগ্যলাক্টিক নেবিউলা (নেবিউলি বহুবচন)।

হাবল তখন ফটোগ্রাফিক প্লেটের ছবি দেখে আরও বুঝতে পারেন যে এই বস্তু গুলো মূলত দুই শ্রেণিতে বিভক্ত ঃ ইলিপ্টিক্যাল ও স্পাইরাল। হাবল তার নিজের ডেটা ও পূর্বেও কিছু ডেটা থেকে এই দুই শ্রেণিরকে আরও কিছু মধ্যবর্তী শ্রেণিতে বিভক্ত করেন যার পূর্ণ বর্ণনা পেপারটিতে আছে। এই শ্রেণিবিন্যাস হাবল সিকুয়েন্স নামে এখনো প্রচলিত। যদিও হাবলের কিছু অনুমান তখন ভুল ছিল যার উপর ভিত্তি করে তিনি শ্রেণিবিন্যাসটি করেন। তিনি ধারনা করেছিলেন যে গ্রেভিটেশনাল কলাপ্স থেকে প্রথম ইলিপ্টিক্যাল গ্যলাক্সি তৈরি হয় যা ইভল্যুশনের মাধ্যামে স্পাইরাল তৈরি হয় । কিন্তু পরবর্তীতে বিভিন্ন অব্জারভেশনে ও সিমুল্যেশনে প্রমাণিত হয় যে গ্যালাক্সি ক্লাসটারে স্পাইরালের মার্জারে ইলিপ্টিক্যাল তৈরি হয়।

হাবল
হাবলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজটি আসে ১৯২৯ সালে। বিজ্ঞানীরা তখন মিল্কি ওয়ের বাইরেও গ্যালাক্সি থাকতে পারে তা ভাবা শুরু করলেও তখনও তাদের ধারনা ছিল মহাবিশ্ব স্থির(স্ট্যাটিক)। আইনস্টাইন তখন তার জেনারেল রিলেটিভিটির কাজ শেষ করেন। তার ফিল্ড ইকোয়েশনে একটি অতিরিক্ত টার্ম যোগ করেন যা কসমোলজিক্যাল কন্সটেন্ট নামে পরিচিত। তিনি ও ধারনা করতেন স্ট্যাটিক ইউনিভার্সে । তাই তিনি ব্যখ্যা দেন এই কসমোলজিক্যাল কন্সটেন্টের কাজ হবে ম্যটারের গ্যাভিটিকে ব্যলান্স করে মহাবিশ্ব কে স্থির রাখা। কিন্তু হাবল ১৯২৯ সালে দেখান যে গ্যালাক্সি গুলো মিল্কিওয়ে থেকে নির্দিষ্ট বেগে(যা তাদের দূরত্বের উপর নির্ভরশীল) সরে যাচ্ছে। এই বেগকে তাদের রিসেশন ভেলসিটি বলা হয় । এই কাজ থেকে মোটামুটি এটা বুঝা যায় ইউনিভার্স স্ট্যাটিক নয়। হাবলের এই কাজটি তাই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি কাজ।

বিজ্ঞানীরা এখনো হাবল কন্সটেন্ট / কসমোলজিক্যাল কন্সটেন্ট কোনটার প্রিসাইজ মান নির্ণয় করে উঠতে পারেননি । তত্ত্বীয় কসমোলজিক্যাল কন্সটেন্টের মান অব্জারভেশনাল মান থেকে অনেক বেশি । এই কন্সটেন্ট সরাসরি ডার্ক এনার্জির সাথে জড়িত। তাই যেদিন বিজ্ঞানীরা তত্ত্ব থেকে সঠিক মান নির্ণয় করতে পারবেন সেদিন আমাদের কাছে মহাবিশ্বের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ রহস্য উন্মোচিত হবে। শুধু তাই নয় সেদিন কোয়ান্টাম জগত আর গ্রেভিটেশনাল জগতের মাঝেও একটা মেলবন্ধন স্থাপিত হবে ।
Share To:

Naim Khan

Post A Comment:

0 comments so far,add yours